Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Migrant Workers

আবর্জনার নাম শ্রমিক

স্যানিটাইজ়ার দিয়ে করোনাভাইরাস মুছে ফেলার মতো, ‘পরিযায়ী শ্রমিক’ নামক আবর্জনা দূর করা হল।

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০৬
Share: Save:

‘লজ্জা’ (সম্পাদকীয়, ১৭-৯) প্রসঙ্গে এই চিঠি। কেন্দ্রের অবিবেচনাপ্রসূত লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষময় পরিণতি, এবং ফিরে-আসা শ্রমিকদের প্রতি চূড়ান্ত অবহেলা সরকারের অমানবিক দিকটি উন্মোচন করেই দিয়েছিল। তদুপরি সংসদে মৃতদের রেকর্ড ও ক্ষতিপূরণ বিষয়ক উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে শ্রমমন্ত্রীর মন্তব্য দেখিয়ে দিল, ‘সবকা বিকাশ’ ঘোষণা আসলে কত বড় প্রতারণা। পরিযায়ী শ্রমিকদের মর্মান্তিক প্রাণহানির কোনও তথ্য সরকারের কাছে নেই। ফলে মৃতের পরিজনদের প্রতি আর কোনও দায় সরকারের রইল না। স্যানিটাইজ়ার দিয়ে করোনাভাইরাস মুছে ফেলার মতো, ‘পরিযায়ী শ্রমিক’ নামক আবর্জনা দূর করা হল।

১৯৭৯ সালে প্রণীত পরিযায়ী শ্রমিক আইনের প্রয়োগ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি না করায় আজ তা কার্যত তামাদি হয়ে গিয়েছে। অথচ, তার প্রয়োগ হলে নথিভুক্তকরণ, ন্যূনতম মজুরি, স্বাস্থ্যসম্মত কর্মক্ষেত্র, বাসস্থান, বিনামূল্যে চিকিৎসা, সুরক্ষা ইত্যাদির সুযোগ ছিল। ‘গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান’ ঘোষিত হল শুধুমাত্র বিজেপি-শাসিত ছয় রাজ্যের জন্য। পশ্চিমবঙ্গ-সহ বাকি রাজ্যগুলির জন্য নয়। ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজে একটি টাকাও বরাদ্দ নেই নিজ রাজ্যে বসবাসকারী শ্রমজীবীদের জন্য। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য তা ভাবা তো কল্পনাবিলাস।

জয়ন্ত সাহা

স্বরূপনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

হারানো কাজ

‘২ কোটিরও বেশি বাঁধা চাকরি খোয়া গিয়েছে পাঁচ মাসে’ (১০-৯) পড়লাম। ভারতে ১৩৫ কোটি মানুষ, সংগঠিত ক্ষেত্রে মোট শ্রমশক্তির বড় জোর ৭ শতাংশ কাজ করেন। এই হিসেবে বাঁধা চাকরি করেন খুব জোর সাড়ে ন’কোটি। এর মধ্যে ২ কোটির চাকরি খোয়া গেল।

এমনিতেই ১৯৯০ পরবর্তী উদার, মুক্ত ও বাজার অর্থনীতির দাপটে, বেসরকারিকরণ, আধুনিকীকরণ ইত্যাদির কোপে বাঁধা চাকরি ক্রমশ কমেছে। প্রতিরক্ষা, বিমান, বিদ্যুৎ, ব্যাঙ্ক, বিমা, রেল, ভারী শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রচুর বাঁধা চাকরি খোয়া গিয়েছে। পাট, চা, তুলো, বস্ত্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ইত্যাদি উৎপাদন ক্ষেত্রে যে শ্রমিকরা কাজ করতেন, তাঁদের পাকা চাকরি না থাকলেও বাঁধা মাসমাইনে পেতেন। তাঁদের অবস্থা আরও মন্দ হয়েছে। সরকারের কি কিছুই করার নেই? প্রতিবেদনের শেষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবির উল্লেখ আছে, ‘‘পাঁচ বছরে নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হবে শুধু ছোট-মাঝারি শিল্পেই।’’ লক্ষণীয়, ‘কাজের সুযোগ’, বাঁধা চাকরি নয়। আসলে বিনিয়োগকারী বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, কেউ ‘বাঁধা’ চাকরি চাইছেন না। নাগরিক দেখছেন, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ভাষায় নেতানেত্রীর মুখে ‘চাকরি’ শব্দের বদলে ‘কর্মসংস্থান’ ব্যবহার চালু হয়ে গিয়েছে। এ বার বুঝি ‘কর্মসংস্থান’-ও করতে পারবেন না, বা করতে চাইছেন না। তাই ‘কাজের সুযোগ’ পড়ে পাওয়া নিয়তি। মানুষ বছরে সামান্য কয়েক দিনের ‘কাজের সুযোগ’ পেলে সেটাই ‘বাঁধা’ ধরে নিতে হবে। তা হলেই পরিসংখ্যানে বেকারত্ব হুহু করে কমবে।

যদি অতিমারি শাপ হয়, তবে তাকে বর করতে পারে শ্রম ও পুঁজির সম্মিলিত শক্তি। ভারতে কি পুঁজির অভাব পড়েছে যে, বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হবে? যদি বেসরকারি পুঁজি দায়িত্ব না নেয়, তা হলে সরকারি পুঁজির সে দায়িত্ব নেওয়া উচিত। বিশ্বব্যাপী নতুন অবস্থানে শ্রম ও পুঁজি, দুইয়ের চরিত্র বদলাতে বাধ্য। পরিবর্তন হোক, কিন্তু একটাই শর্ত— মানবসম্পদের অপচয় করে নয়।

শুভ্রাংশু কুমার রায়

চন্দননগর, হুগলি

যোগ্যতার প্রমাণ

কুড়ি-পঁচিশ বছর চাকরি করার পর যদি কাউকে যোগ্যতা প্রমাণের পরীক্ষায় বসতে হয়, তবে নিশ্চিত বলা যায়, উদ্দেশ্য মহৎ নয় (‘ছাঁটাই যেন উদ্দেশ্য না হয়’, ১৯-৯)। চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে তাঁকে অনেকগুলি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রমাণ করতে হয়েছে যে, তিনি উপযুক্ত। এর পর দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন তিনি। প্রতিটি চাকরিতেই কাজ ও দক্ষতার মূল্যায়ন হওয়া দরকার এবং সেটা হওয়া উচিত চাকরিজীবনের শুরু থেকেই। অযোগ্যদের সতর্কবার্তা, আর্থিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, বদলি, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মদক্ষতা বাড়ানো— এই ভাবে নিজেকে পরিবর্তন করার সময় ও সুযোগ দেওয়ার পরেও পরিবর্তন না এলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

পঞ্চাশোর্ধ্বদের যদি পরীক্ষার মূল্যায়নের ফলে চাকরি যায়, তবে তাঁরা চূড়ান্ত দুর্দশায় পড়বেন। এঁদের নতুন করে চাকরি পাওয়া দুষ্কর। তার ওপর এখন সরকারি পেনশন নেই। প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে যে পেনশন পাওয়া যায়, তা যৎসামান্য এবং অনিশ্চিত। সংসার প্রতিপালন, সন্তানের উচ্চশিক্ষা, বিয়ে, চিকিৎসার দায়িত্ব থাকবেই। বর্তমানকে সামাল দিতে ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ, পিএফ, সঞ্চিত টাকা ভেঙে ফেলতে হবে। ভবিষ্যৎ ডুবে যেতে পারে গভীর অন্ধকারে।

গৌতম পতি

তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর

একতরফা

সংসদের বাদল অধিবেশনে তাড়াহুড়ো করে অনেক বিল পাশ করানো হচ্ছে, যেগুলো শ্রমজীবী মানুষের উপর তীব্র প্রভাব ফেলবে। এই সময় তিনটি শ্রম কোড পেশ হয়েছে। এর ফলে একতরফা ভাবে নিয়োগ ও ছাঁটাই করতে পারবেন মালিক। শ্রমিকরা ধর্মঘট করলে কড়া জরিমানা ও শাস্তি হবে। নতুন নিয়মে, যেখানে ৩০০ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করেন, সেখানেই শুধু সরকারি অনুমতি নিতে হবে ছাঁটাই করতে বা কারখানা বন্ধ করে দিতে। এত দিন সেই সংখ্যা ছিল ১০০। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের প্রায় ৭৫ ভাগ কারখানাতে ৩০০ জনের কম শ্রমিক কাজ করেন। ‘ফিক্সড টার্ম এমপ্লয়মেন্ট’-এর নামে ঠিকা ও চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ বেড়ে চলেছে। নানা শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলন সত্ত্বেও, ত্রিপাক্ষিক কমিটি গঠন ও আলোচনার মাধ্যমে নিজ নিজ ক্ষেত্রে আইন গঠনে সদিচ্ছা দেখায়নি কেন্দ্রীয় সরকার। মালিক ও কর্পোরেটদেরকেই একতরফা ভাবে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

জয়ন্ত কুমার পাঁজা

কোন্নগর, হুগলি

ভাতা কেন?

যুবশ্রী, রূপশ্রী, ইমাম-মুয়াজ্জিন ভাতা ইত্যাদি অনুদান প্রকল্প কর্মঠ মানুষদের জন্য আগেই চালু হয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে পুরোহিত ভাতা। যখন কাজ দেওয়ার কোনও পথ খোলা নেই, তখনই কেবল অনুদান চালু হতে পারে। যেমন দাবি উঠেছিল লকডাউনের সময়। স্বাভাবিক সময়ে মানুষ শ্রমের বিনিময়ে পারিশ্রমিক চাইবেন, সেটাই দস্তুর। সেই ব্যবস্থা না করে কিছু সাহায্য দিয়ে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করা, এটা কর্মক্ষম ব্যক্তিকে অনুগ্রহপ্রার্থী করে রাখা নয় কি?

কৃষ্ণা কারফা

বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া

কৃষ্ণগহ্বর

‘অভাবে চায়ের দোকান ইঞ্জিনিয়ারের’ এবং ‘আত্মহত্যায় শীর্ষে দিনমজুর, তার পরেই কৃষিক্ষেত্র’ শীর্ষক সংবাদ দু’টির (৩-৯) প্রেক্ষিতে এই চিঠি। স্বাধীনতার ৭৩ বছর পার করেও সাধারণ মানুষের উপার্জনের ক্ষেত্রটিকে প্রশস্ত করতে পারেনি দেশ। এখনও গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কর্মসংস্থান মুখ্য বিষয়। ভোটারদের প্রভাবিত করতে প্রতিটি ভোটপ্রার্থীর মুখে কর্মসংস্থানের নানা আশাব্যঞ্জক কথাবার্তা শোনা যায়। মানুষও অলীক স্বপ্নের জাল বুনতে থাকেন। তার পর কর্মসংস্থানের বন্ধ দরজা আর খোলে না। শত শত পরিকল্পনা আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। সমাজ এক কৃষ্ণগহ্বরে প্রবেশ করতে চলেছে, যেখানে এক বিন্দু আলোর নিশানাও নেই।

সঞ্জয় রায়

দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Workers Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy