সমাজমাধ্যমের দেওয়ালটাই এখন ভালবাসা-মন্দবাসা। প্রতীকী ছবি।
জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের “আমার ‘আমি’র খোঁজে” (১৮-৩) শীর্ষক প্রবন্ধটি অনেক মেয়েকেই আত্মবিশ্লেষণের সুযোগ করে দিল। নিজেকে সমাজমাধ্যমে বিলিয়ে দিতে না পারলে এখন যেন মানুষের শান্তি নেই। নিজের ভাল লাগা-মন্দ লাগা, দুঃখ-মনখারাপ, আনন্দ-উল্লাস, শখ-আহ্লাদ, সাফল্য-ব্যর্থতা সবই উন্মুক্ত করে দিতে না পারলে স্বস্তি নেই। সমাজমাধ্যমের দেওয়ালটাই এখন ভালবাসা-মন্দবাসা। নিজেকে বিকিয়ে দেওয়ার ভয়ঙ্কর প্রবণতার রাহুগ্রাসের ছায়া এখন বৃহত্তর সমাজজীবনে। বাদ যায়নি নারীসমাজের একাংশও। যত ক্ষণ না সে বিপণনযোগ্য সাফল্যের নজির গড়তে পারে, তত ক্ষণ যেন তার মধ্যে অস্থিরতা চলে। প্রকৃতপক্ষে সাধনার চেয়ে আত্মরতির আবেদনটাই প্রকট হতে থাকে। কিন্তু এ ভাবে যে আত্মবিলোপের সম্ভাবনা তৈরি হয়, খেয়াল করে না নারীসমাজ।
নারীদিবস এলেই মেয়েদের নিয়ে আদিখ্যেতার শেষ থাকে না। সমাজমাধ্যমে উপচে পড়ে নারীদের সাফল্যের খতিয়ান। কিন্তু সেই সাফল্যের পিছনে কত যে লড়াই, কত যে আত্মত্যাগ আছে, তা উল্লিখিত থাকে না। সংগোপনে থেকে যায় তাদের লাঞ্ছনা-যন্ত্রণা-বঞ্চনার সাতকাহন, শুধু সাফল্যটিকে মেলে ধরা হয়। নারীদের নানা সাফল্যের আলগা বাহারে ঝলমল করে সমাজমাধ্যমের চিত্রপট।
এমনিতেই তো নারী-শরীরের নখ থেকে চুল পর্যন্ত বাজার অর্থনীতির লক্ষ্য, তাকে সৌন্দর্য-লাবণ্যের রূপটান বিকিয়ে চাঙ্গা হয় বিজ্ঞাপন দুনিয়া। তার উপর নারীর সাফল্যটাও যদি দুনিয়াদারির হাটে বিক্রি হয়ে যায়, তাদের ‘আপনার’ বলে কিছু থাকে না! এ ভাবে আমার ‘আমি’-র অস্তিত্বটাই হারিয়ে যেতে থাকে! তাই মেয়েদেরই সজাগ-সতর্ক হতে হবে। ‘আমি’-ই সবচেয়ে মূল্যবান, তাকে গোপন সম্পদের মতো আগলে রাখতে হবে, সেখানে কারও প্রবেশাধিকার নেই।
শুভ্রা সামন্ত, বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর
সাফল্যের শর্ত
শুধুমাত্র নারীদের নয়, পুরুষদেরও দু’টি ‘আমি’ থাকে, বাইরের আমি ও ভিতরের আমি। দৃশ্যমান পৃথিবীর তালে তাল মেলানোর কাজে ব্যস্ত থাকে বাইরের আমি। ভিতরের আমি মানুষের একান্ত নিজস্ব। মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়, বিশাল কর্মযজ্ঞে নিজেকে যুক্ত করার মাধ্যমে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মেয়েটি পণ্য হয়ে যায়। এর কারণ, পুরুষশাসিত সমাজ মেয়েদের পণ্য হিসাবেই দেখতে চায়। নারীর সাফল্যের মানদণ্ড যে-হেতু এখনও পুরুষরাই ঠিক করে দেয়, তাই এই ছকের বাইরে যাওয়া মেয়েদের পক্ষে কঠিন। তার ‘বিক্রয়যোগ্যতা’র বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার সাফল্যের মাত্রারও বৃদ্ধি ঘটে। এখন প্রশ্ন হল, তা হলে এই অবস্থায় নারী কি বাইরের আমিকে আর প্রশ্রয় না দিয়ে তার ভিতরের আমির কাছে ফিরে যাবে? থাকবে ‘নিজ মনে’? না, সেটা আর সম্ভব নয়, কারণ ভিতরের আমি তাকে অন্তরের ঐশ্বর্যের সন্ধান দিলেও সে আর তাতে সন্তুষ্ট নয়। যে নারী বাস্তবের ভূমিতে দাঁড়িয়ে সাফল্য অর্জন করেছে, বা করতে যাচ্ছে, সে কেন ভিতরের আমির টানে পিছন ফিরে তাকাবে?
এটা ঠিক, এই সাফল্য অর্জন করতে গিয়ে যদি তাকে আত্মসম্মান খোয়াতে হয়, তা হবে দুঃখজনক। কিন্তু সব দিক বজায় রেখে এক জন নারী যদি সমাজে প্রতিষ্ঠা পায়, সাফল্য লাভ করে, তবে অসুবিধা কোথায়? প্রবন্ধকার তাঁর প্রবন্ধটি ‘বিক্রয়যোগ্য’ করতে পেরেছেন বলেই সেটি এই পত্রিকায় জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। না হলে হয়তো সমাজমাধ্যমে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে হত। কাগজে রান্নার ছবি দিয়ে লিখলে দোষের নয়, আর সেটা ফেসবুকের মাধ্যমে প্রচার করলে দোষার্হ?
এ বার আসি নারীদিবস ও নারীবাদের সঙ্গে কর্পোরেট কালচারের সম্পর্কের কথায়। মানুষ যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন, সে নিজের লাভটা খুঁজে নিতে সচেষ্ট হবে। কর্পোরেট বা বিনোদনের জগতের আচরণে এর অন্যথা হবে কেন? আসলে এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী একটি ভ্রান্ত ধারণায় আচ্ছন্ন হয়ে আছেন। সেটা হল, বাজারি মুনাফার ফাঁদে ফেলে নারীদের নিরন্তর শোষণ করাই কর্পোরেট সংস্কৃতির কাজ। সমাজের নানা স্তরে শোষণ ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু এর মধ্যে থেকে মেয়েরা যে তাঁদের পাওনাটুকুর অন্তত কিছুটা বার করে নিতে পেরেছেন, তার জন্য নারীবাদী আন্দোলনের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। বাইরের আমি নারী-আন্দোলনের পথ ধরে আরও এগিয়ে যাক, ভিতরের আমিকে জোর করে বাইরে আনতে গেলে হিতে বিপরীত হবে।
অশোক বসু, বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
সন্দীপের সম্পদ
সন্দীপ দত্ত প্রসঙ্গে ‘কলকাতার কড়চা’য় প্রকাশিত প্রতিবেদনটির জন্য (তাঁকে নিয়ে, ২৫-৩) ধন্যবাদ। লিটল ম্যাগাজ়িনকে লালন-পালন করা, সেগুলির অমর্যাদার প্রতিবাদ এবং যোগ্য মর্যাদার দাবি করার কাজটি যে ভাবে করেছিলেন সন্দীপ দত্ত, সে কাজের যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়েছে। কলেজ স্ট্রিট পাড়ার টেমার লেনের তাঁর ছোট্ট বাড়িটি আজও ঠাসা আছে সারা বাংলা থেকে সংগ্রহ করা অসংখ্য লিটল ম্যাগাজ়িনে। দুর্লভ এই সংগ্রহ। গত শতকের সত্তরের দশকে সন্দীপবাবু অনুভব করেছিলেন, বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ছোট পত্রিকাগুলির যথাযথ সংরক্ষণ প্রয়োজন। আকারে-আয়তনে, বয়সে-ঐতিহ্যে ছোট হলেও বেশ কিছু পত্রিকা তন্নিষ্ঠ গবেষণার ফসল। অনন্য বিষয়-বৈচিত্রে সমৃদ্ধ এই পত্রিকাগুলির বিশেষ সংখ্যা। চার দশকের অধিক সময় ধরে অসংখ্য ছাত্র-গবেষক থেকে কৌতূহলী রসিকজনের প্রয়োজন মিটিয়ে চলেছে এই সংগ্রহ। প্রায় একক প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা সংগ্রহটি আগামী দিনে যথাযথ সংরক্ষণের প্রয়োজন।
কৌশিক চিনা, মুন্সিরহাট, হাওড়া
ট্রফির খরা
‘ভারত সেরা মোহনবাগান’ (১৯-৩) শীর্ষক প্রথম পাতার প্রতিবেদনটি পড়ে যেমন আনন্দ পেয়েছি, ততোধিক দুঃখ পেয়েছি সাম্প্রতিক কালে সর্বভারতীয় পর্যায়ে ইস্টবেঙ্গলের ক্রমাগত ব্যর্থতায়। সর্বপ্রথমে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বী বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য পেশাদার মনোভাব-সম্পন্ন মোহনবাগান কর্তৃপক্ষকে কুর্নিশ জানাই। মোহনবাগানের ঘরে ট্রফির হাত ধরে জয় বাংলার ফুটবল প্রেমেরও। তবে গোষ্ঠ পাল সরণি যখন ট্রফি জয়ের উৎসবে মাতোয়ারা, তখন হতাশায় নিমজ্জিত লেসলি ক্লডিয়াস সরণি। প্রসঙ্গত, সর্বভারতীয় পর্যায়ে ট্রেভর জেমস মরগানের তত্ত্বাবধানে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২ শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে গোয়ান জায়ান্ট ডেম্পো স্পোর্টস ক্লাবকে ৩-২ গোলে হারিয়ে ফেডারেশন কাপ জেতে ইস্টবেঙ্গল। কলকাতা পর্যায়ে শেষ ট্রফি এসেছে ২০১৭-১৮ মরসুমে ক্যালকাটা ফুটবল লিগ এবং ২০১৮ সালে আইএফএ শিল্ড। কয়েক বার আই লিগ জয়ের কাছাকাছি গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। আই লিগ জিততে না পারলেও, ধারাবাহিক ভাবে ভাল পারফর্ম্যান্স ছিল ক্লাবের। কিন্তু আইএসএল-এ টানা তিন বছর চরম ব্যর্থ দল। আন্তর্জাতিক স্তরের টুর্নামেন্টে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা শতাব্দীপ্রাচীন ইস্টবেঙ্গলের এ রকম হাল কেন? ১০ বছর সর্বভারতীয় ট্রফি পায়নি ক্লাব। এই ট্রফি-খরা আর কত দিন? যখন থেকে ইস্টবেঙ্গল আইএসএল-এ খেলছে, তখন থেকেই স্পনসর পাওয়া এবং দল গঠন নিয়ে প্রচুর জটিলতা দেখা দিচ্ছে। সাম্প্রতিক শোচনীয় পারফর্ম্যান্স নিয়ে ক্লাবকর্তাদের থেকে কোনও সদর্থক উত্তর পাওয়া যায় না। ক্লাবের প্রাণপুরুষ প্রয়াত সচিব জ্যোতিষচন্দ্র গুহ, দীপক (পল্টু) দাস প্রমুখ ক্লাবের জন্য জীবন উজাড় করে দিতেন। সে দিনের ইস্টবেঙ্গল আজ কাগুজে বাঘে পরিণত।
অমিয় বিশ্বাস, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy