অনিতা অগ্নিহোত্রীর ‘যে বিপন্নতার হিসেব নেই’ (২৩-৬) নিবন্ধ প্রসঙ্গে এই পত্র। এ কথা ঠিক যে, অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ যে মারণরূপ ধারণ করেছিল, তাতে বিধিনিষেধ চালু করা ছাড়া উপায় ছিল না রাজ্য সরকারের। কিন্তু কেন্দ্র, রাজ্য— উভয় সরকারের সদিচ্ছা থাকলে অনেকাংশে এই ধ্বংসলীলা এড়ানো যেত। প্রয়োজন ছিল পরিকল্পিত নির্বাচনী নির্ঘণ্ট, পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় টিকাকরণ ইত্যাদির। কিন্তু সে দায়িত্ব পালনে তারা ডাহা ফেল। এই ব্যর্থতার দায় কতটা কেন্দ্রের, আর কতটা রাজ্যের, সেই সূক্ষ্ম বিচারে না গিয়েও বলা যায়, ভুক্তভোগী শেষমেশ সেই সাধারণ মানুষ।
এ বারের অতিমারির দাপটে শ্মশানে সার সার চিতার আগুনের ছবি জনমানসে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। কিন্তু এ তো অতিমারির প্রত্যক্ষ বিষফল। এর চেয়েও বড় বিপদ আমাদের সামনে। সংখ্যাতত্ত্বের কোনও হিসাবেই বোধ হয় লেখা থাকবে না, কত জন রোজগার হারালেন; পাওনাদারের লাঞ্ছনা কত জনের কপালে জুটল, আর কত ভবিষ্যৎ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হল।
শুধু কি দু’বেলা কোনও মতে খেতে পেলেই বেঁচে থাকা যায়? শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, আনন্দানুষ্ঠান, ন্যায়বিচার— এরও তো প্রয়োজন। বিচারব্যবস্থার কথাই ধরা যাক! এমনিতে এ দেশের বিচারব্যবস্থা দীর্ঘসূত্রতা রোগে আক্রান্ত। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো হাজির অতিমারি। ন্যাশনাল জুডিশিয়াল ডেটা গ্রিড-এর তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে কলকাতা হাই কোর্টে বকেয়া মামলা ২ লক্ষ ৭২ হাজারেরও বেশি। অনুমোদিত বিচারকের সংখ্যা ৭২। এখন সেখানে রয়েছেন অর্ধেকেরও কম। এ বছরের গোড়ায় মাসতিনেক চালু থাকলেও এখন ফের কার্যত বন্ধ কলকাতা হাই কোর্ট (অতি জরুরি ফৌজদারি মামলা ছাড়া)।
তাই গণপরিবহণ বন্ধ রেখে করোনা কিছুটা রোখা গেল বটে, কিন্তু এর বিনিময়ে সাধারণ মানুষের কত হতাশা, আর কত চোখের জল ঝরল, তার হিসেব কোথাও রাখা গেল না।
অসীম তালুকদার,কলকাতা-৯৪
পেটের জ্বালা
জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিবন্ধটি সময়োপযোগী (‘কী করে বাঁচবে লোকে’, ২৭-৬)। নোটবন্দির ধাক্কা না সামলাতেই লকডাউনের সঙ্গে জীবনে নেমে এল অন্ধকার। শিক্ষিত তরুণ-তরুণী, শ্রমিক, ছোটখাটো দোকানদার, রাজমিস্ত্রি, পরিচারিকা, হকার, ফেরিওয়ালা, ভ্যানওয়ালা, ঠেলাওয়ালা— এঁদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। পেশা পরিবর্তন করেও পেটে টান পড়ছে। পরিবার নিয়ে উপোস করছেন, আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। এর শেষ কোথায়?
স্বপন আদিত্য কুমার, অশোক নগর, উত্তর ২৪ পরগনা
একটাই উপায়?
তা হলে সারা জীবনই লকডাউন করে রাখা হোক। এ ছাড়া অতিমারি মোকাবিলার আর কোন উপায় জানে আমাদের সরকার? ভারতের মানুষের ধৈর্য আছে, যদি এক বেলাও খেতে না পায়, তবু কেউ মুখ খুলবে না। প্রতিটি সংসারে আজকাল খরচ বেড়েছে, সেই তুলনায় অর্থ উপার্জন নেই। তার মধ্যে লকডাউন করে একের পর এক বিধিনিষেধ চাপানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতি মানা যেত, যদি ইউরোপ এবং আমেরিকায় সরকার যেমন সুযোগ-সুবিধে দেয় নাগরিকদের, তেমন আমরা পেতাম সরকারের থেকে। তার কতটুকু মিলছে? অবশ্য সরকারকে দোষারোপ করা চলে না— এর জন্য সাধারণ মানুষই দায়ী। এক্ষুনি বলা হোক মিছিল-মিটিং আছে, অতিমারিকে ভুলে দলের পতাকা হাতে সবাই জড়ো হবেন। তখন থাকবে না কোনও লকডাউন, বিধিনিষেধ।
যাঁদের টাকা আছে, তাঁরা বলবেন— আগে মানুষের জীবন, তাই লকডাউন করে রাখা হোক। অবশ্যই আগে জীবন। বেঁচে থাকার অধিকার সব মানুষেরই আছে। তবে যাঁদের টাকা আছে, লকডাউন চললেও তাঁদের সংসার চলে যাবে। কিন্তু যাঁদের উপার্জন বন্ধ, তাঁরাও বাঁচতে চান। বাঁচতে গেলে টাকাপয়সা খরচ করে কিনে খেতে হবে, এটা কেন বুঝতে পারছেন না লকডাউনের সমর্থকরা? সেই খাবার কোথায় পাবেন তাঁরা, রোজগার না থাকলে?
পরাশর চট্টোপাধ্যায়, দত্তপুকুর, কলকাতা
চাই আর্থিক ত্রাণ
‘ক্ষুধা বাড়ছে, বিপন্নতাও’ (২১-৬) নিবন্ধে দীপজ্যোতি চৌধুরী অতিমারি কালে পণ্যদ্রব্যের অগ্নিমূল্য পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করে গরিব মানুষের চরম দুর্দশার কথা প্রসঙ্গে লিখেছেন, “...বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতে দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পাওয়ার মতো মৌলিক অধিকারও বৃহৎ অংশের নাগরিকের জন্য সুরক্ষিত নয়।” অতিমারির দ্বিতীয় তরঙ্গে দেশের গরিব ও প্রান্তিক মানুষের জীবনে বিপর্যস্ত। চিকিৎসা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের চড়া দামের ধাক্কায় তাঁরা আজ সর্বস্বান্ত। তাই বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা। সম্প্রতি কর্নাটকের এক প্রান্তিক কৃষক অতিমারির চিকিৎসা ও সংসারের খরচ চালাতে না পেরে পরিবারের তিন সদস্য-সহ আত্মহত্যা করেন। এ রাজ্যে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদে এক বেকার ভ্যানচালক তিন শিশু-সহ পরিবারের ৫ জনকে নিয়ে আত্মঘাতী হন। খুব সম্প্রতি মেদিনীপুরে, চূড়ান্ত অভাবে দেনা শোধ করতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছেন এক ধান ব্যবসায়ী। এ দেশে অনেক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প আছে, তবু কেন তাঁদের আত্মহননের পথে যেতে হল?
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন থেকে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বহু বিশিষ্ট পরিসংখ্যানবিদ অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নগদ আর্থিক ত্রাণের কথা বলেছিলেন। এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় পাই, ভারতে ১৬ মে, ২০২১ পর্যন্ত বেকারত্বের হার ছিল ১৪.৫ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের সুবিধাকে বাড়িয়ে ২০০ দিন করার। প্রশ্ন হল, কেন তবে অর্থনীতিবিদদের নগদ আর্থিক ত্রাণের বিষয়টি উপেক্ষিত হল, এবং কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও ঠিকমতো রূপায়িত হল না? কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের আগে, অনেক বারই ‘সর্বজনীন ন্যূনতম আয়’ নিয়ে কথা ওঠে। এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র এ ধরনের প্রকল্প চালু করার বিষয়ে নির্বিকার কেন? অতিমারির দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কটে দরিদ্রের ভয়াবহতা মোকাবিলায় চিকিৎসা, কর্মসংস্থান, খাদ্যসহায়তা-সহ কোভিড-প্যাকেজের ব্যবস্থা কেন এ দেশে সঠিক পদ্ধতিতে গড়ে তোলা গেল না? একটা কল্যাণকামী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের এমন অবিবেচক ও বৈষম্যপূর্ণ ভূমিকা কখনওই কাম্য নয়। দরিদ্র ও প্রান্তিক নাগরিকের কাছে সরকার কিন্তু দায়বদ্ধ।
পৃথ্বীশ মজুমদার, কোন্নগর, হুগলি
কোভিডের গ্রাস
প্রতি দিনের মতো সকালে উঠে নিজের কাজের জায়গায় গিয়ে হঠাৎ ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ নোটিস দেখে ভেঙে পড়লেন হুগলির কুন্তীঘাটের কেশরাম রেয়ন-এর কর্মীরা। এপ্রিল মাসের পর থেকে বেতন নেই, নাভিশ্বাস উঠেছিল সংসার চালাতে। কিন্তু কাজ তো ছিল, এখন সেটাও নেই। করোনা পরিস্থিতির জন্য বিক্রির বাজার নেমে আসার কারণ দেখিয়ে বন্ধ করা হল ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেল বহু পরিবারের। লকডাউনের ফলে সাধারণ পরিবারগুলি আরও দারিদ্রের অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। এই লকডাউন এবং আর্থিক টানাটানি ২০১৯-এর কথা মনে করিয়ে দেয়! ওই সময় চাষিদের মানসিক অবসাদ তাদের ভয়ঙ্কর পথ বেছে নিতে বাধ্য করে। প্রশাসনকে অনুরোধ, যাতে প্রতিটি পরিবার খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার রসদ পায় লকডাউনের দিনগুলোতে, তা নিশ্চিত করা হোক।
সুমি ভট্টাচার্য, চন্দননগর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy