—ফাইল চিত্র।
বাসুদেব ঘোষের প্রতিবেদন ‘স্বীকৃতি-প্রাপ্তির ফলকে নেই রবীন্দ্রনাথের নাম’ (২১-১০) পড়ে লজ্জায় মাথা নত হয়ে গেল। বিশ্বভারতীর সদ্য-প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নিজের কর্তৃত্ব আর কৃতিত্বকে অহং-এর মোড়কে নজিরবিহীন ভাবে পরিবেশন করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেলপ্রাপ্তির মতোই, বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যক্ষেত্র হিসাবে শান্তিনিকেতনের ইউনেস্কোর স্বীকৃতি-প্রাপ্তি বাঙালির গৌরব। সেই স্বীকৃতির জন্য শ্বেতপাথরের ফলক অবশ্যই শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন স্থানে সঠিক ভাবে বসানো দরকার। সেটা উপাচার্যের দায়িত্ব। অথচ, সদ্য-প্রাক্তন উপাচার্য ফলকে নিজের নাম, আর বিশ্বভারতীর আচার্য নরেন্দ্র মোদীর নাম ফলাও করে খোদাই করেছেন। প্রাক্তন আশ্রমিক থেকে সকল বিভাগীয় প্রাক্তনীরাও মনে করছেন যে, বিশ্বভারতীকে তিনি নিজের সম্পত্তি বলে ভেবে নিয়েছেন, আর তার কারণেই বিশ্ববরেণ্য কবি এবং বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতাকে মুছে ফেলে আত্মপ্রচারে নেমেছেন। অবশ্য তার এ-হেন কাজকর্মের মধ্যে অবাক হওয়ার মতো তেমন কিছুই তিনি দেখছেন না, কারণ তিনি এমন কাজে অভ্যস্ত। আরও এক প্রাক্তন আশ্রমিক, স্বনামধন্যা অমিতা সেনের পুত্র নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনকে একই রকম ভাবে অপদস্থ করেছেন তিনি। বিশ্বভারতীর সদ্য-প্রাক্তন উপাচার্য পদাধিকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতন বাঙালি তথা ভারতবাসীর আবেগের জায়গা। রাজনীতির মোড়কে সেই ঐতিহ্যপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কাজকর্ম চালানো হচ্ছে, এটা দেখা কঠিন।
স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০
তুচ্ছ নয়
তৃষ্ণা বসাকের ‘মেয়েদের কথা তুচ্ছ অতি’ (২১-১০) প্রবন্ধটি প্রাসঙ্গিক। দেখি, শ্রেণিকক্ষে, তার বাইরে, এমনকি রাস্তায় চলার সময়ও ছাত্রীরা বকবক করছে। বকুনি দিই, “তোদের পেটে কত কথা জমা আছে রে, যে শেষই হয় না।” তবে ছাত্ররাও কম যায় না, শ্রেণিকক্ষেই গুজগুজ-ফিসফিস করে, বোর্ডে লেখার সময় আমার পিছনে ওরা তো হালকা খুনসুটিও করে। আসলে ছাত্রীদের গলার স্বরের তীক্ষ্ণতা বেশি বলে হয়তো বেশি কানে লাগে, এবং ওরা বেশি বকুনি খায়। মেয়ে-মজলিশ না হলে মেয়েদের বুকে জমা ব্যথা-অভিমান, না বলতে পারা কথা, খচখচ করা অস্বস্তি বেরোনোর পথ পায় না। অন্যদের কাছে তুচ্ছ হলেও অনেকের কাছে তা অতি মূল্যবান, অনেক সময়ে সমস্যা সমাধানের দিশাও মেলে গল্পগুজব থেকে।
সারা ক্ষণ সংসারে দায়িত্ব-কর্তব্যের ঠাসবুনোটে কাজ আর কাজ, কাজের ফাঁকে একটুখানি অবসরে পাশের বাড়ির মাসিমা কিংবা বৌদির সঙ্গে আলাপচারিতায় অনেকটা হালকা হওয়া যায়, পরবর্তী কাজেও মনোযোগী হওয়া যায়। মানসিক ক্লান্তিও দূর হয় বইকি। একটা সময় ছিল, যখন পুকুরঘাটে এঁটো বাসন ধুতে গিয়ে মজলিশ চলত, পাড়াপড়শির খবর জানা যেত, ভাল-মন্দ খবরাখবরে পারস্পরিক হৃদ্যতাও গড়ে উঠত। কেজো জীবনে এগুলো তো খোলা জানলা। স্মার্টফোনের যুগে এ সবের ধরন বদলেছে, সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন ‘গ্ৰুপ’ খুলে মতবিনিময় চলছে। তবে সেটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। প্রত্যেকের জীবনে ভাব আদানপ্রদানের এই সব পরিসর থাকা উচিত। আমি তো সহকর্মীর কাছে নানান সমস্যা মেলে না ধরে থাকতে পারি না, শলাপরামর্শ করে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি। সারা ক্ষণ কিচিরমিচির করা ছাত্রছাত্রীদের এক দিকে বকুনি দিই, অন্য দিকে স্টাফরুমটা সরগরম রাখি আমরা দিদিমণি-মাস্টারমশাইরা। মেয়েদের ‘বাজে’ কথা, ‘তুচ্ছ’ কথা তাদের কাছে কাজের কথা, দামি কথাও।
শুভ্রা সামন্ত, বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর
নারীর অধিকার
শাশ্বতী নন্দর ‘ঐতিহাসিক অসম্মান’ (২৪-১০) শীর্ষক প্রবন্ধটি সময়োপযোগী ও যুক্তিসঙ্গত। ভারতের সংবিধান নারী-পুরুষকে সমান অধিকার, সমান মর্যাদা দিয়েছে। কিন্তু পুরুষশাসিত সমাজ সেই অধিকারকে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেয়নি। বরং অবহেলায়, উপেক্ষায় তার অমর্যাদা করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে মেয়েরা প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর পদ সামলেছেন যোগ্যতার সঙ্গে। সুযোগ পেলে মহিলারা যে রাজনীতিতে যথেষ্ট দক্ষতা ও যোগ্যতা দেখাতে পারেন, সেটা প্রমাণিত। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৬ বছর পরেও পুরুষরা তাঁদের দাবিয়ে রেখেছেন, দমিয়ে রেখেছেন। তাই দীর্ঘ ২৬ বছরের চেষ্টার পর এ বছর লোকসভার বিশেষ অধিবেশনে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হল, সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হল। রাজ্যসভায় পাশ হওয়ার পর সেটি মাননীয়া রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেয়ে এখন আইন হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি স্বীকৃতি পেতে দেরি হল, কারণ কোনও রাজনৈতিক দল মেয়েদের রাজনীতিতে চায় না। মনে রাখতে হবে, মহিলা সংরক্ষণ বিল কারও দয়া বা কৃপা নয়। এটা মেয়েদের ন্যায্য অধিকারের স্বীকৃতি। তাই এক-তৃতীয়াংশ না হয়ে এটা ৫০ শতাংশ হওয়া উচিত ছিল। তার পরও এই আইন চালু করার জন্য চালাকির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। দেশের জনগণনা ও আসন পুনর্বিন্যাসের সঙ্গে মহিলা সংরক্ষণ আইনের কোনও সম্পর্ক নেই। অথচ তাকে এর সঙ্গে জুড়ে দিয়ে এই আইনের রূপায়ণ অনির্দিষ্ট কালের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হল। এতে মহিলাদের অসম্মানই করা হয়েছে। আমাদের রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন আছে। সেই আসনগুলোতে মহিলারা প্রার্থী হন। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, জয়ী মহিলা প্রার্থীর কাজ হয় তাঁর স্বামী, অথবা ছেলে, অথবা অন্য কোনও পুরুষ করছেন। তাঁদের মাতব্বরিই সহ্য করতে হচ্ছে গ্রামের মানুষকে। অথচ অবাক করার মতো বিষয় হল, পঞ্চায়েতে জয়ী মহিলা প্রার্থীরা অনেকেই শিক্ষিত, এবং তাঁদের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তবু তাঁরা সংসারের শান্তি রক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করছেন। যতই আমরা নারীকে সংসারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা করি না কেন, তাঁরা এখন সংরক্ষণ ছাড়াই সমাজ ও দেশের সব রকম পেশায় নিজেদের কৃতিত্ব এবং দক্ষতা প্রকাশ করছেন। রাজনীতিতে সুযোগ পেলে মহিলারা দেশের উন্নয়নের জন্য তৎপর হবেন, দক্ষ প্রশাসক হয়ে উঠবেন, আশা করা যেতেই পারে।
গৌতম পতিত, মলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
বাংলার জন্য
‘বাংলা ফ্লেক্স খুলে ক্ষমাপ্রার্থনা উদ্যোক্তাদের’ (২৩-১০) শীর্ষক সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সংবিধানের কোন ধারায় কোনও গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের সঙ্গে এ রকম বিদ্বেষমূলক আচরণ করা যায়! সারা দেশে যে কোনও রাজ্যেই সেই রাজ্যের ভাষিক সংখ্যালঘুরা তাঁদের সম্প্রদায়ের যে কোনও অনুষ্ঠানে নিজস্ব ভাষায় ব্যানার অথবা বোর্ড লাগিয়ে থাকেন। অথচ অসমের বিশ্বনাথ ও নগাঁও জেলায় পুজোর অনুষ্ঠানে বাঙালি কর্মকর্তাদের চাপ দিয়ে এমন দু’টি আপত্তিকর ঘটনা ঘটিয়েও অসমের ‘বীর লাচিত সেনা’ নামের সংগঠনটি কোনও শাস্তির মুখে পড়েনি, উল্টে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
সারা দেশে, বিশেষ করে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে ধর্মীয় ও ভাষিক সংখ্যালঘুদের উপর বিভিন্ন ভাবে হেনস্থার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ‘বিভেদের মধ্যে ঐক্য’, ‘বিভিন্নতার মধ্যে একতা’— এ সবই এখন কথার কথা। মানুষের সঙ্গে মানুষের অবিশ্বাস ও ঘৃণার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। সমাজমাধ্যমে চোখ বোলালেই দেখা যায়, একে অপরের প্রতি বিষোদ্গার। যত বিভেদের রাজনীতি আমাদের জীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে, যত দিন রাজনৈতিক দলগুলো মসনদ লাভের উদ্দেশ্যে ঘৃণার রাজনীতি করবে, তত বেশি ঘৃণা আর বিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে যাবে দেশে।
সুরজিৎ কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy