—প্রতীকী ছবি।
সুগত মারজিতের ‘রাজনীতি, আর আদর্শের মৃত্যু’ (২১-১২) সম্পর্কে কিছু কথা। পরাধীন ভারতে মানুষের ধ্যান-জ্ঞান ছিল স্বাধীনতা অর্জন। নেতাদের লক্ষ্য ছিল, যে কোনও ত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশকে স্বাধীন করতে হবে। তাঁদের জীবনযাপনও ছিল অতি সাধারণ, তা দিয়েই তাঁরা সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন।
ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে ভোটের প্রচারে রাজনৈতিক দলগুলি তাদের ইস্তাহারে নতুন ভারত গঠনের দিশা দেখিয়েছিল। তাদের কথায় ছল-চাতুরির জায়গা ছিল না। কোনও কিছু বিনা পরিশ্রমে পাইয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার ছিল না। একটা আদর্শ ছিল সেই অঙ্গীকারে। মানুষও বুঝেছিল, নিজের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশেরও উন্নয়নের প্রয়োজন।
তখন নেতাদের চিন্তা ছিল দেশ গঠনের পাশাপাশি মানুষের অন্ন, বস্ত্র আর বাসস্থানের চাহিদা মেটানো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করা। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়নের যে রূপরেখা টানা হয়েছিল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার লক্ষ্যপূরণে অনেক ঘাটতি দেখা দিল। দারিদ্র ও নিরক্ষরতা মোচনের আশানুরূপ ফল পাওয়া গেল না।
তদানীন্তন এক প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে বিশ দফা কর্মসূচি এনেছিলেন, কিন্তু তার ফলও সেই ভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। তারও পরে আর এক প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এক টাকা উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ করলে, তার চোদ্দো পয়সা উন্নয়নের জন্য ব্যয় হয়। এই ঘাটতিরই সুযোগ নিয়েছে পরবর্তী কালে আবির্ভূত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তাদের বেশির ভাগই আঞ্চলিক, অথবা রাজ্যভিত্তিক। মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি পাইয়ে দেওয়ার সস্তা রাজনীতি শুরু করল। সর্বাত্মক ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন প্রাধান্য পেল না। এর ফলে নীতি, আদর্শের আর কোনও বালাই রইল না। একমাত্র লক্ষ্য হল, মানুষের ভোটে জিতে ক্ষমতা দখল করে থাকা। প্রকৃত শিক্ষার অভাবে সাধারণ মানুষের চেতনার উন্মেষও তেমন ভাবে ঘটল না। ফলস্বরূপ, আজকের রাজনৈতিক দলগুলি নীতি, আদর্শ সব বিসর্জন দিয়ে অনুদানের রাজনীতিতে মেতে উঠল। এর ফলে আজ আদর্শ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও যেমন হারিয়ে গেল, তেমনই সাধারণ মানুষের আদর্শও অবশিষ্ট রইল না।
সন্তোষ কুমার দে, হাওড়া
ভরসা অনুদান
সুগত মারজিতের সঙ্গে আমি সহমত পোষণ করছি। গত শতকেও ভারতীয় রাজনীতি অনেক ক্ষেত্রেই আবর্তিত হয়েছে আদর্শ অনুসরণ করে। যেমন, বিজেপির রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে হিন্দুত্বকে ঘিরে। হিন্দুত্বে ভর করেই একদা সংসদে দুই সদস্যের দল বিজেপি আজ ভারতে ক্ষমতাসীন, সেই সঙ্গে সতেরো রাজ্যে তাদের সরকার।
সেই বিজেপিকে সরাতেই বিভিন্ন মতাবলম্বী দল অনৈতিক ভাবে একজোট হয়েছে। বিজেপির হিন্দুত্বের মোকাবিলায়, অযোধ্যার রামমন্দিরের ধাঁচে দিঘায় তৃণমূল সরকার জনগণের পয়সায় পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরের ধাঁচে মন্দির গড়ছে। এ সবের মধ্যে রাজনীতিই বেশি। দেশের নির্বাচকমণ্ডলী নেতাদের এই ভণ্ডামি বুঝতে পেরেছে। তাই এখন ধর্মের জারিজুরি ভোটের রাজনীতির ময়দানে ভাল বিক্রি হচ্ছে না। সব রাজনৈতিক দলকে আশ্রয় নিতে হচ্ছে অনুদান বা ‘ডোল’ রাজনীতির। তা প্রতিযোগিতার পর্যায়ে নেমে এসেছে। রাজ্য কোষাগারের হাঁড়ির হাল হলেও অনুদান দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে বা ক্ষমতা পেতে আগ্রহী সব দল।
এ রাজ্যে সরকারি কর্মচারীদের ডিএ না দিয়ে, সরকারি পদ শূন্য রেখে দুর্গাপুজোর কমিটিগুলোকে অনুদান দিচ্ছে সরকার। বিপরীতে, এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ঘোষণা করেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মীর ভান্ডারের অনুদান বৃদ্ধি করবেন। প্রবন্ধকার উল্লেখ করেছেন যে, আদর্শের মৃত্যু তখনই হয়, যখন আদর্শের অনুগামীরা নিজেদের ভোট এমন কাউকে দেন, যিনি বা যাঁরা সেই আদর্শটিকে সম্মান করেন না। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সুগতবাবু মুসলিম সমাজের মহিলাদের কথা উল্লেখ করেছেন। হিন্দুত্ববাদী সরকার মহিলাদের উপর উৎপীড়ন বন্ধ করতে আইন প্রণয়ন করেছে। তাই মহিলাসমাজ ধর্মীয় ফতোয়া উপেক্ষা করে সেই দলকে ভোট দিচ্ছে।
প্রবন্ধকার সঠিক ভাবে বলেছেন, কোনও দেশ, সম্প্রদায় বা ব্যক্তি কতটা ক্ষমতাবান, সেটাই সকলের শ্রদ্ধা আদায় করে। সেখানে আদর্শবাদের জায়গা নেই। ভোগবাদী সমাজে সেটাই আদর্শ দেশ, যা জনগণের চাহিদা মেটায়। সেই সরকারই জনবাদী, যে জনগণের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারে।
তারক সাহা, হিন্দমোটর, হুগলি
বঞ্চিত লেখক
অর্ণব চন্দ্রের ‘সাহিত্যে প্রতারণা’ (সম্পাদক সমীপেষু, ১৮-১২) পত্রটির পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্রের অবতারণা। আমার একটি বই প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে। প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তি ছিল, প্রথমে ৩০০ কপি ছাপা হবে। প্রকাশকের কথা অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বইমেলায় বইটি ভাল ব্যবসা করে। ২০২০-র বইমেলায় প্রকাশকের দোকানে বইটির খোঁজ করে এক পাঠক পাননি। সকল মুদ্রিত কপি নাকি নিঃশেষিত! আদৌ কি ৩০০ কপি বই ছাপা হয়েছিল? আর যদি ছাপানো হয়ে থাকে, এবং তা সমস্ত বিক্রি হয়ে থাকে, তা হলে লেখককে তার প্রাপ্য টাকা (রয়্যালটি) দেওয়া হয়নি কেন?
প্রকাশকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে, এক দিন সশরীরে উপস্থিত হই কলেজ স্ট্রিটে, প্রকাশকের বিপণিতে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের দেখা পাইনি। এর পর আমি রয়্যালটির টাকা দাবি করে চিঠি লিখি। তার উত্তর মেলেনি। সেই ২০১৮ সাল থেকে আজ অবধি একটি টাকাও রয়্যালটি পাইনি। কেন এক জন লেখককে তাঁর ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হবে? এই ঘটনা শুধু আমার সঙ্গে নয়, বহু লেখকের সঙ্গেই ঘটে চলেছে।
রাজীব রায় গোস্বামী, সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
কাজের নেপথ্যে
রাজ্য সরকার একশো দিনের কাজের প্রকল্পের হিসাব না দেওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে কিছু কথা জানাতে চাই। বেশির ভাগ পঞ্চায়েত এলাকায় একশো দিনের কাজ যতটা না সহায়তা দেয় দরিদ্র মানুষকে, তার তুলনায় বেশি লাভ দেয় স্থানীয় অসাধু রাজনৈতিক ব্যক্তিদের। এই প্রভাবশালী, অসাধু রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রত্যেকের নাম থেকে যায় প্রতিটি মাস্টার রোলে। তাঁরাই পান প্রায় একশো দিন কাজ। এ ছাড়াও প্রতিটি মাস্টার রোলে থেকে যায় অনেক এমন লোকের নাম, যাঁরা প্রকৃতপক্ষে কাজ করেন না, বিনিময়ে হয়ে ওঠেন সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সর্বক্ষণের প্রচারক ও সমর্থক। সংশ্লিষ্ট দলের বিরুদ্ধে কেউ বললেই গর্জে ওঠেন তাঁরা। আবার অনেকে কাজ না-করে টাকা পাওয়ার বিনিময়ে কমিশন দেন অসাধু কর্মীদের। অনেকের জব কার্ড থাকে স্থানীয় নেতার কাছে। সাধারণ মানুষ জানতেও পারেন না, কাদের নাম উঠছে মাস্টার রোলে! বিরোধী সমর্থকরা কাজ করেও টাকা পান কম, কিন্তু ঘরে বসে যাঁদের মাস্টার রোলে নাম ওঠে, তাঁরা পান বেশি।
অতএব রাজ্যের শাসক দল প্রকাশ্যে আনুক, কারা কত দিন কাজ করে বকেয়া টাকা পাননি। সেই নামের তালিকা বুথে বুথে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে দিক, যাতে সবাই দেখতে পান। অথচ, এ কাজটি কখনও করতে রাজি হবে না রাজ্য সরকার। হয়তো তাতে সত্য প্রকাশ হয়ে পড়ার ভয় থাকবে। অপর দিকে, কেন্দ্রীয় সরকার তার নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে মাস্টার রোল ও জব কার্ডের তথ্যগুলো সরিয়ে নিয়েছে। এই সমস্ত অনিয়ম সরিয়ে প্রকৃত উপভোক্তার হাতে সুবিধা তুলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন যথাযথ নজরদারি।
শুভজিৎ বিশ্বাস, গোপীনাথপুর, নদিয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy