১ জুলাই থেকে দেশে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক তৈরি, সরবরাহ এবং বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। ‘এক বার ব্যবহারযোগ্য’ প্লাস্টিক মানে, এক বার ব্যবহারের পরেই যাকে ফেলে দেওয়া হয়। যেমন— প্লাস্টিকের কাপ, প্লেট, গ্লাস, স্ট্র-সমেত বিভিন্ন দ্রব্য। বলা হয়েছে, পরিবেশ মন্ত্রকের এই নির্দেশিকা না মানলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হবে।
এই নিষেধাজ্ঞা অনেক পূর্বেই আরোপ করা প্রয়োজন ছিল। বিদেশে বহু বছর আগে থেকেই দোকান থেকে কেনা জিনিস প্লাস্টিকের ব্যাগে না দিয়ে, ব্রাউন পেপার ব্যাগে মুড়ে দেওয়া নিয়ম। সেখানে এই নিয়ম চালু করতে এ দেশে এত সময় লাগল! শুধু বিদেশ কেন, এই দেশের অনেক রাজ্যও প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে সদর্থক পদক্ষেপ করেছে। যেমন, বছর তিনেক আগে সিকিমে বেড়াতে গিয়ে দেখলাম, সেখানে প্লাস্টিক নিয়ে সচেতনতা এই রাজ্যের চেয়ে অনেক বেশি। জিনিসপত্র কিনলে দোকান থেকেই কাগজের মোড়ক দিয়ে মুড়ে দেওয়া হচ্ছে। গাড়ির চালকরা পর্যটকদের নিষেধ করছেন বোতল, স্ট্র যেখানে-সেখানে না ফেলতে।
এই রাজ্যে কিন্তু এমন সচেতনতা এখনও দেখা যায় না। এর আগেও প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও ক্রেতা-বিক্রেতা, কেউই প্লাস্টিক দেওয়া ও নেওয়ার বদভ্যাস ছাড়তে পারেননি। ফলে, এই বারও কত দূর তা সফল হবে, সন্দেহ আছে। তাই চাই অন্য রকম ভাবনা। আইনের পাশাপাশি যে সব দোকান নিজেদের প্লাস্টিকমুক্ত রাখতে পারবে, তাদের বিশেষ সার্টিফিকেট প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক। যে সমস্ত বাজার প্লাস্টিক দেওয়া-নেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে পারবে, তাদের পুরসভা কর মকুব-সহ বিশেষ কিছু সুবিধা দানের কথা ভাবুক। অন্য দিকে, শপিং মলগুলোর উপরও নজরদারি চলুক, যাতে দোকানগুলো পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহারে বাধ্য হয়। বাজারের বাইরে যাতে সুলভ মূল্যে কাপড়ের ব্যাগ, থলে ইত্যাদি পাওয়া যায়, তার ব্যবস্থা করা হোক। মাস্ক পরায় অনিচ্ছুক নাগরিককে যদি নরমে-গরমে মাস্ক পরিধানে বাধ্য করা যায়, তবে প্লাস্টিকে হবে না কেন?
অনুলেখা মিত্র, বর্ধমান
প্লাস্টিকের পথ
রাস্তা নির্মাণে প্লাস্টিক ব্যবহারের নতুন দিশাকে বাধ্যতামূলক করার পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারকে অসংখ্য সাধুবাদ জানাই (‘দূষণ এড়াতে রাস্তা নির্মাণে প্লাস্টিক বর্জ্য’, ২২-৬)। আমরা এই ডিজিটাল মাধ্যমের যুগে ফলাও করে পরিবেশ দিবস নিয়ে অনেক সচেতনতামূলক পোস্ট করে থাকি। কিন্তু পরিবেশের ভাল কতটা মন থেকে চাইছি, তা প্লাস্টিকের অপব্যবহার ও জনগণের প্লাস্টিক নিয়ে চরম উদাসীনতা দেখলেই আন্দাজ করা যায়।
প্রশাসন সক্রিয় ভাবে প্লাস্টিকের কুপ্রভাব ও ব্যবহার নিয়ে সতর্কতা জারি করলেও আমাদের এই উদাসীনতা কিন্তু থেকেই যায়। তাই প্লাস্টিককে রাস্তা নির্মাণে ব্যবহার করলে এর একটি বৃহৎ অংশ পরিবেশ থেকে সরিয়ে ফেলে পুনর্ব্যবহার করা যাবে। এবং প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ যে ভাবে ক্রমশ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে, তার হাত থেকেও কিছুটা রেহাই পাওয়া যাবে।
সব্যসাচী মাইতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
রাস্তায় বোতল?
এই সংবাদপত্রে গত ২০ জুন প্রকাশিত ‘স্বচ্ছতা অভিযান’ শীর্ষক চিত্র আমাদের মুগ্ধ করে। চিত্রটিতে দেখা যাচ্ছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মাটিতে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের বোতল নিজ হাতে সরাচ্ছেন। প্রশ্ন হল, প্রধানমন্ত্রী যেখান দিয়ে পায়ে হেঁটে যাবেন, সেখানে কী করে প্লাস্টিকের বোতল আগে থেকেই পড়ে থাকতে পারে? এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কর্তব্যে গাফিলতির জন্যে উপযুক্ত সাজা হওয়া উচিত নয় কি?
অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি
পলিইথিলিন
‘পলিথিন ব্যবহার’ (২৫-৬) শীর্ষক চিঠি প্রসঙ্গে এক জন প্লাস্টিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কিছু সংযোজন করতে চাই।
কেন্দ্রীয় সরকারের খসড়াতে কোথাও বলা নেই ‘পলিথিন’ ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদেরও কোনও নির্দেশিকা নেই। প্রথমেই বলি, ‘পলিথিন’ একটি প্রচলিত শব্দ, পণ্য বা প্রোডাক্ট নয়। প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রির একটি কাঁচামাল। কথাটি আসলে ‘পলিইথিলিন’। ইথিলিন থেকে পলিইথিলিন। ‘পলি’ গ্রিক শব্দ। এর অর্থ, বহু বা অনেক। অর্থাৎ, অনেকগুলি ইথিলিন এক বিশেষ পদ্ধতিতে একত্রিত হওয়া যৌগই ‘পলিইথিলিন’। এই পলিইথিলিন (পলিমার) সাদা কথায় ‘প্লাস্টিক দানা’।
পত্রে উল্লিখিত একটি অংশ “তা ছাড়া পলিথিন তৈরি যদি না হয়...”— এটি বাস্তবিক অর্থেই অসম্ভব। তার কারণ হল, এই মুহূর্তে বিশ্বে যদি বছরে ৩৮০ মিলিয়ন টন বিভিন্ন প্রকারের ‘প্লাস্টিক মেটিরিয়াল’ তৈরি হয়ে থাকে, তা হলে তার এক-তৃতীয়াংশই হল পলিইথিলিন। আমাদের দেশে বর্তমানে বছরে প্রায় ৫.৫ মিলিয়ন টন পলিইথিলিনের জোগান রয়েছে। এই পলিইথিলিন থেকে যে কেবলমাত্র দূষণ সৃষ্টিকারী ক্যারিব্যাগ তৈরি হয়, এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। তাই পলিইথিলিন (পলিথিন)-কে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার অর্থ দেশের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পেরও ধ্বংস। পলিইথিলিন নামক কাঁচামাল থেকে উৎপন্ন পণ্যের ব্যাপ্তি বিশাল। তার বিস্তৃত বর্ণনার এখানে প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র এইটুকু বলা যায় যে, জলের ট্যাঙ্ক থেকে পাইপ এবং কেবল ইন্ডাস্ট্রি বাদ দিলেও কৃষিক্ষেত্র থেকে চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদিতে হাজার হাজার পলিইথিলিনের পণ্য ব্যবহৃত হয়। তবে পরিবেশের স্বার্থে এক বার ব্যবহারযোগ্য এবং পর্ষদ নির্দিষ্ট প্লাস্টিকের পণ্য আক্ষরিক অর্থেই সমস্ত জায়গায় নিষিদ্ধ হোক। এই প্রসঙ্গে বলি, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ উঠে যাচ্ছে না। কিন্তু সেটা হবে ৭৫ মাইক্রনের উপরে এবং আগামী ৩১ ডিসেম্বর পরবর্তী সময়ে ১২০ মাইক্রন ঘনত্বের। তবে এ কথাও ঠিক, এক বার ব্যবহারের পর মানুষের ছুড়ে ফেলা এবং নিষ্করুণ অবহেলার সহজাত প্রবৃত্তিটুকু দূর হলেই প্লাস্টিক দূষণের অর্ধেক সমস্যার সমাধান সম্ভব হতে পারত। নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি একই সঙ্গে গবেষণাতেও উঠে আসুক পচনশীল এবং অল্প দামের বিকল্প ভাবনা, যা মানুষ এবং পরিবেশকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারবে।
অনস্বীকার্য যে, পরিবেশকে ঠিক রাখার দায়িত্ব প্রশাসনের একার নয়। এর জন্য প্রয়োজন নাগরিক সদিচ্ছাও। শিক্ষা এবং নাগরিক সচেতনতা গড়ে না উঠলে বিগত তিন দশকের মতোই পরিবেশের এই জ্বলন্ত সমস্যাটি থেকেই যাবে। তবে দেরিতে হলেও সূর্যোদয় ঘটুক, এইটুকুই প্রার্থনা।
সুব্রত পাল, শালবনি, বাঁকুড়া
অপব্যবহার
আজকের দিনে সব কাজেই লাগছে আধার কার্ড। মোবাইলের সিম কার্ড কিনতে গেলে প্রথমেই চাওয়া হচ্ছে আধার কার্ডের তথ্য। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ক্রেডিট কার্ড, রেশন দোকান থেকে চাকরির বাজার— সর্বত্রই আধারের প্রয়োজনীয়তা আজ সর্বজনবিদিত। আমজনতার হাতে এ যেন এক জাদুর কাঠি। যে কাঠির ছোঁয়ায় সব সুযোগ-সুবিধাই পাওয়া সম্ভব।
কিন্তু এই আধার কার্ডও বিপদে ফেলছে পদে পদে। এক জনের আধারের প্রতিলিপি কম্পিউটারে কারিকুরি করে ছবি পাল্টে অন্যের বলে চালানো— এ যেন আজ জলভাত। আধারের প্রতিলিপি ব্যবহার করে প্রতারণার ঘটনাও আসছে সামনে। আধারের এই অপব্যবহার রুখতে কার্যকর ব্যবস্থা করা একান্ত জরুরি।
প্রদ্যুৎ সিংহ, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy