ভাবতেই অবাক লাগছে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করছেন তাঁরই একদা সহকর্মীর বিরুদ্ধে। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে অনেক কথাই বার হয়ে আসছে। “বন সহায়ক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’, মুখ্যমন্ত্রীকে জবাব প্রাক্তন বনমন্ত্রীর” (৪-২) খবরে তাই ঝটকা লাগল। সদ্য-প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকাকেই চ্যালেঞ্জের সুরে বলছেন, “আপনি (মুখ্যমন্ত্রী) ফোন করে আমাকে বলেছিলেন, সব জেলায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কিছু কিছু করে কোটা তুমি দিয়ে দাও। আজ আমাকে বলছেন, আমি কারসাজি করছি!” প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তারিখ, সময় উল্লেখ করে এ-ও অভিযোগ করেছেন, বীরভূমের এক বড় নেতা নাকি তাঁকে ধমকে বলেছেন, বন সহায়কের সব চাকরি তাঁকে দিতে হবে।
এ কোন রাজত্বে আমরা বাস করছি? লক্ষ, লক্ষ শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়ে দিনরাত পড়াশোনা করে চাকরির পরীক্ষায় বসছে, তা শুধুমাত্র লোক দেখানো! কারা নিয়োগপত্র পাবে, তা নেতারা ঠিক করবেন? তা হলে এত দিন যে চাকরিপ্রার্থীরা অস্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছিলেন, বা অনেক সময়ে আদালতে মামলাও হয়েছে, সবটাই ঠিক? এখন স্পষ্ট হয়ে গেল যে, চাকরির পরীক্ষা প্রহসনমাত্র; যা ঠিক হওয়ার, আগে থেকেই হয়ে আছে। বাম শাসন কালে এই রকম শোনা যেত যে, আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে নির্ধারিত হয়, কে কোন স্কুল, কোন কলেজে চাকরি করবে। সেখান থেকে পার্টির প্যানেল তৈরি হত। এই অবস্থা যে অপরিবর্তিত রয়েছে, বোঝা গেল মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রাক্তন বনমন্ত্রীর বিবৃতিতে। এর পর আশা করি সকলের বোধোদয় ঘটবে। শুধুমাত্র প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া যোগ্য প্রার্থীদেরই নিয়োগপত্র দেওয়া হবে, কোনও সুপারিশ বা পার্টির প্যানেল কার্যকর হবে না।
পরেশনাথ কর্মকার, রানাঘাট, নদিয়া
অস্বচ্ছ নিয়োগ
“বন সহায়ক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’, মুখ্যমন্ত্রীকে জবাব প্রাক্তন বনমন্ত্রীর” সংবাদ থেকে পরিষ্কার যে, এই নিয়োগ পুরোটাই অস্বচ্ছতায় ভরা। বাংলার শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা যেখানে কাজের আশায় দিশাহীন ভাবে ছুটে বেড়াচ্ছেন, অনেকেই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন, তখন এই রকম খবর আরও হতাশার কারণ হয়ে উঠছে। প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, উনি মুখ খুললে বটগাছ নড়ে যাবে। আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, এই নিয়োগে ‘কারসাজি’ করেছেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী। এখন তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থান দুটো ভিন্ন দলে হলেও, যখন বন সহায়ক পদে নিয়োগ হয়েছিল, তখন দু’জনে একই রাজনৈতিক দলে অবস্থান করতেন। সুতরাং, কোনও দুর্নীতি হয়ে থাকলে তার দায় দু’জনেরই। স্বাভাবিক ভাবেই নাগরিক সমাজের দাবি, এই নিয়োগ সম্পূর্ণ বাতিল করে স্বচ্ছতার সঙ্গে নতুন ভাবে বন সহায়ক পদে লোক নিয়োগ করা হোক। এই রকম কারচুপি করে শিক্ষিত কর্মপ্রার্থীদের বঞ্চিত করে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশের ভিত্তিতে, বা অন্য কোনও অসৎ উপায়ে কোথাও নিয়োগ হয়ে থাকলে সেগুলিকেও বাতিল করা হোক।
পার্থসারথী মণ্ডল, কৃষ্ণনগর, নদিয়া
তদন্ত চাই
নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগের উত্তর দিতে গিয়ে প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। শুধু বন সহায়ক কেন, বিগত দিনে যত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়েছে, সবেরই তদন্ত হোক। সরকার কি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবে?
কৃষ্ণা কার্ফা, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
তিনশো প্রকল্প
‘২৪ ঘণ্টায় ৩০০ প্রকল্পে ছাড়পত্র’ (৫-২) শীর্ষক সংবাদে প্রকাশ, অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ১০০টি প্রকল্প ধরে সব প্রকল্পেরই ওয়ার্ক অর্ডার দ্রুত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতায় আসার প্রথম পাঁচ বছরেই সব কাজ করে ফেলা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করতেন। তা সত্ত্বেও জারি ছিল বছরের শুরুতে বিভিন্ন দফতরের পরিকল্পনার ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যালেন্ডার’ তৈরি, জেলায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে তার রূপায়ণের পর্যালোচনা এবং বছর-শেষের রিপোর্ট কার্ড পেশ। সরকারের সাফল্যের রিপোর্ট কার্ড নিয়ে শাসক দলের বিধায়করা সম্প্রতি এলাকায় প্রচারেও বেরিয়েছিলেন। তড়িঘড়ি এত কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার তা হলে প্রয়োজন হল কেন?
নিয়মের বেড়াজাল এড়াতে বড় অঙ্কের প্রকল্প ছোট ছোট ভাগে ভাগ করার জন্য কারিগরি দিকটা অনেকাংশে লঘু করে দেখা হবে। সময় কম থাকায় টেন্ডার প্রক্রিয়ার সঙ্গেও আপস করা হবে। যথেষ্ট অভিজ্ঞতা-সম্পন্ন ঠিকাদারের পরিবর্তে স্থানীয় এবং কম অভিজ্ঞ ঠিকাদারের দ্বারা কাজ হওয়ার সম্ভাবনা। তাতে দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কর্মী এবং আধিকারিকদের একটা বড় অংশ নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। ফলে নজরদারির বিষয়টি উপেক্ষিত হবে। প্রকল্পের গুণগত মান বজায় না থাকলে সরকারের ভাবমূর্তি কি ধাক্কা খাবে না?
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা , কলকাতা-১০৭
মানুষের দাম
‘পশু নিগ্রহ আইন বদলের প্রস্তাব’ (৭-২) সংবাদে পড়লাম, রাস্তার কুকুরকে আঘাত করলে ৭৫০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা, মেরে ফেললে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে প্রস্তাবিত আইনে। শাস্তি শুনে মনে হচ্ছে, সমাজে মানুষের দাম কমছে। বাড়ছে রাস্তার কুকুরের দাম। আইনে কোথাও বলা নেই রাস্তার কুকুর কাউকে কামড়ালে সরকার আক্রান্তকে কী সাহায্য করবে। কোনও সভ্য দেশে কি রাস্তায় যত্রতত্র কুকুর ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়? ভারতে রাস্তায় কুকুরের সংখ্যা এত বেশি যে, রাতে কি দিনে নিরাপদে হাঁটা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। মল, মূত্র ত্যাগ করে তারা রাস্তা অপরিষ্কার করে, আবর্জনা টেনে ছড়িয়ে দূষণ বাড়ায়। রাস্তার কুকুরদের বন্ধ্যত্বকরণের মাধ্যমে সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত সরকারের। পশু নিগ্রহে নতুন আইন কার্যকর হলে অনেক নির্দোষ মানুষ বিপদে পড়ার আশঙ্কা।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি
নেতার উদ্ধৃতি
রাজনৈতিক তর্জায় কবি-সাহিত্যিকদের উক্তি যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। সাহিত্যিক তাঁর রচনায় যে প্রসঙ্গে সেই উক্তির অবতারণা করেছিলেন, তার সঙ্গে কোনওরকম সঙ্গতি থাকছে না। সাহিত্যের মূল ভাবনা সেখানে অধরাই থেকে যাচ্ছে। এই প্রচেষ্টা অবিলম্বে বন্ধ না হলে বাংলা সাহিত্য বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ব্যবহারিক প্রয়োগ যথাযথ না হলে সাহিত্য তার তাৎপর্য হারাবে। ওয়েব সিরিজ়ে বাংলা ছোট গল্প অবলম্বনে উপস্থাপনা দেখেও সাহিত্যপ্রেমীদের মনে অস্বস্তি হয়। কারণ, গল্পগুলি যথাযথ ভাবে উপস্থাপিত হয় না। তবে মুঠোফোনে পিডিএফ আকারে সাহিত্যপাঠ কিছুটা স্বস্তির স্থান।
বিশাখা দত্ত বণিক, হাবরা, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy