—প্রতীকী ছবি।
‘শাসক বনাম সংবিধান’ (২০-২) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। আগেও রাজনৈতিক দলগুলি ভয় বা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বা জোরজুলুমের বলে এমন চাঁদা আদায় করে দলের কোষাগারকে পূরণ করার চেষ্টা করত। এখনও চলছে আর আবহমান কাল ধরে চলবে। শুধুমাত্র উপায়গুলির পরিবর্তন হয়। কোষাগারকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে না রাখলে রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারকার্যের জন্য প্রচুর টাকা দেবে কে? তার উপায় কী? এখন তো কোনও নিঃস্বার্থ গৌরী সেন নেই। তবে হ্যাঁ, গৌরী সেনের মতো সংস্থা বা ব্যক্তি এখনও আছেন। তাঁরা টাকা বা চাঁদা দেন সুবিধা বা সুযোগ নেওয়া বা পাওয়ার বিনিময়ে। সরাসরি তেমন টাকা নেওয়াটা অনৈতিক বুঝে তার উপায়ও বার করা হল। ২০১৮ সালে বাজারে আনা হল নির্বাচনী বন্ড বিক্রির প্রকল্পটি। এর বিরুদ্ধে অবশ্য জনস্বার্থ মামলা রুজু করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল যে, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে যে কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা তাঁদের পরিচয় গোপন রেখে রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে যত খুশি চাঁদা দিতে পারবেন। এ বিষয়ে প্রথমে নির্বাচন কমিশন এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সায় ছিল না। ফলে সরকার কিছুটা মরিয়া হয়ে বাজারে নির্বাচনী বন্ড বিক্রি প্রকল্প নিয়ে এল, যার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলি তাদের কোষাগার ভরাটের জন্য চাঁদা তুলতে শুরু করে দিল। খবরে প্রকাশ, এখনও পর্যন্ত বিজেপি, কংগ্রেস ও তৃণমূল দল নির্বাচনী বন্ড বিক্রির মাধ্যমে যথাক্রমে ৬৫৬৪ কোটি, ১১৩৫ কোটি এবং ১০৯৬ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেছে। ফলে যে সমস্ত অগ্রণী কর্পোরেট সংস্থা বা ব্যক্তি বিশেষত যাঁরা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে (সরকার প্রদত্ত শর্ত অনুযায়ী) নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলকে টাকা দিয়েছেন, তাঁদের অঙ্গুলি হেলন তো সরকারকে মেনে নিতেই হবে। আর সাধারণ মানুষের পরিবর্তে কর্পোরেট সংস্থাকে আয়করে সুবিধা প্রদানের ফল, কয়েক হাজার কোটি টাকা সরকারের ঘরে কম প্রাপ্তি, যেখানে আয়করের টাকা দেশের আয়ের অন্যতম উৎস।
অবশেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই সরকারের ‘নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প’ চালু করার যুক্তিকে নস্যাৎ করে প্রকল্পটিকে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করল ১৯(১)(ক) ধারা লঙ্ঘন করার কারণে। যেখানে বলা আছে সব নাগরিকের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্য জানার অধিকারের কথা। সুখের কথা যে, আদালত অবিলম্বে বন্ড বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে এবং ২০১৮ সালে এই প্রকল্প শুরুর পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলির বন্ডের মাধ্যমে চাঁদা প্রাপ্তির বিশদ বিবরণের তালিকা প্রকাশ করতে বলেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ সদস্য নিয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চের এমন রায়ে কোনও রাজনৈতিক দল খুশি হবে না। কারণ তাদের তৈরি কোষাগার ভরার পদ্ধতিতে আঘাত এসেছে। তবে আমজনতার মনে স্বস্তি ও খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে, কারণ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই ন্যায়াদেশ দেরিতে হলেও নির্ভীকতা ও নিরপেক্ষতার দৃষ্টান্ত।
লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে আদালতের এমন রায়ে রাজনৈতিক দলগুলি বিপদে পড়ে এই সিদ্ধান্ত খারিজ করে অধ্যাদেশ আনার কথা বলছে সম্ভবত এই কথা মাথায় রেখে যে, নির্বাচনের পূর্বে ও পরে রাজনীতির ময়দানে লাগামহীন টাকা ছড়ানোর কর্মকাণ্ড চরম ভাবে ব্যাহত হতে পারে। তবে বাস্তবে ব্যাহত আদৌ হবে কি না, তা ভবিষ্যৎই বলবে।
স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০
বিচক্ষণ দিদি
রণবীর সমাদ্দারের ‘পুরধর্ম ও রাজনীতি’ (২৭-২) বিষয়ক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে নারীর স্থান ও ভূমিকা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। রামায়ণ ও মহাভারতে নারীর কোথাও সম্মানজনক স্থান পরিলক্ষিত হয় না। রামের সীতাকে পাতাল প্রবেশ করতে হয়েছিল। আর দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করেছিল কৌরবপক্ষ। বর্তমান ভারতের রাজনীতির নিরিখে নারীশক্তির উত্থানের বিষয়টি স্পষ্ট ভাবে পরিলক্ষিত। পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধানসভা ও সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে।
রাজ্যগুলি নারী-শক্তির বিকাশে তাঁদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প নিয়ে এসেছে। কিন্তু তাতে প্রকৃতপক্ষে কত জন মেয়ের সমস্যার সমাধান হয়েছে, তার জন্য একটা সঠিক সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন। নারীর চিন্তা, চেতনার উন্মেষ হয়েছে, কিন্তু সমাজে নারী নানা রকম বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এই সময়কার কিছু কিছু ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ। খবরে প্রকাশ, নাবালিকাদের বিবাহ বেড়েই চলেছে। মহিলা-শ্রমিকেরা সামাজিক নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এই সকল প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সঠিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কোনও মহিলা আধিকারিকের উপর দায়িত্ব অর্পণ এবং এর প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা করা উচিত।
সন্দেশখালির বর্তমান ঘটনা, নারীদের জনরোষ এক দিনে হয়নি। বছরের পর বছর ধূমায়িত হতে হতে শেষে এক দিন তার বিস্ফোরণ ঘটেছে। সেখানে মহিলাদের সম্মিলিত জনরোষই বলে, তাঁদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। মহিলারাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই আন্দোলনের প্রথম সারিতে। লাঠি-ঝাঁটা হাতে মেয়েরা তাঁদের মানসম্ভ্রম রক্ষার্থে ও জমিজমা ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে পথে নেমেছেন। পুলিশ, প্রশাসন প্রথম দিকে এই জনরোষ স্তিমিত করার চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত আদালতের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা হয়েছে। পরে রাজ্যের মহিলা কমিশন এবং মহিলা পুলিশ আধিকারিকদের পাঠিয়ে মহিলাদের সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে।
এক সময় ‘বাংলা তার মেয়েকেই চায়’ এবং ‘দিদিকে বলো’ স্লোগান দু’টি বাংলার রাজনীতির নিরিখে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সন্দেশখালির বঞ্চিত, শোষিত ও অন্যায়-অত্যাচারের শিকার মহিলাদের কণ্ঠেও বাংলার মেয়েকেই চাওয়ার কথা শোনা গেল এবং তাঁরা তাঁদের কথা দিদিকেই বলতে চাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। বিচক্ষণ দিদি নারী-শক্তির অগ্রগতির লক্ষ্যে জননেত্রী হিসাবে এত দিন বিরাট ভূমিকা পালন করেছেন এবং এখনও করে চলেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও যে সাম্প্রতিক অপ্রীতিকর ঘটনাগুলি ঠেকানো গেল না, এটাই দুঃখের।
সন্তোষ কুমার দে, হাওড়া
অ-সম্মান
‘সুড়ঙ্গের উদ্ধারকারীও উচ্ছেদ হলেন দিল্লিতে’ (১-৩) শীর্ষক খবরে মর্মাহত হলাম। ১২ নভেম্বর, ২০২৩ উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে নির্মীয়মাণ সিল্কিয়ারা-বারকোট সুড়ঙ্গটিতে ধস নামার কারণে ১৬ দিন ধরে সুড়ঙ্গের মধ্যে আটকে ছিলেন ৪১ জন শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে এ রাজ্য থেকেও তিন জন শ্রমিক ছিলেন। সেই শ্রমিকদের মৃত্যুর মুখ থেকে নিরাপদে বার করে আনতে নিজেদের জীবন বাজি রেখে ১২ জন র্যাট হোল মাইনার নিখুঁত দক্ষতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ সম্পন্ন করেন। সেই দলেরই অন্যতম সদস্য ওয়াকিল হাসানের উত্তর-পূর্ব দিল্লির খজুরী খাসের বাড়িটিকে পূর্ব পরিকল্পিত উন্নয়ন কাজের জন্য গুঁড়িয়ে দিয়েছে দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এই ১২ জন র্যাট হোল মাইনার ওই কাজে যে অভূতপূর্ব এবং অতীব প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, সেটা সমগ্র বিশ্বের কাছে সম্ভ্রম আদায় করেছিল। ওই উদ্ধারকার্যে সাফল্যের জন্য উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী উদ্ধারকারীদের ১ লক্ষ টাকা করে পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু ওয়াকিলরা গোড়ায় সেই পুরস্কারের টাকাও নিতে রাজি হননি। তাঁরা হাসিমুখে বলেছিলেন, তাঁরা যে ৪১ জন আটকে পড়া শ্রমিককে উদ্ধার করতে পেরেছেন, সেটাই পুরস্কার।
সুতরাং, দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে আমার অনুরোধ, তাঁরা যেন ওয়াকিল হাসানের জন্য অতি শীঘ্র কোনও উপযুক্ত সম্মানজনক বাসস্থানের বন্দোবস্ত করেন। তা না হলে এই লজ্জার ভাগীদার আমাদের সবাইকে হতে হবে।
অমিত কুমার চৌধুরী, কলকাতা-৭৫
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy