Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: সত্যিই সচেতন

নিজেদের দাবি প্রকাশ করার এবং অধিকার বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা এঁদের আছে। মেরুদণ্ড সোজা রেখে তাঁরা ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে জানেন।

হস্টেল ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে জেএনইউ-র পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

হস্টেল ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে জেএনইউ-র পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যেটা পারেন, সারা ভারতের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তা পারেন না। জেএনইউ-এর ছাত্রছাত্রীরা হস্টেল ফি বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে যে ভাবে রাস্তায় নামলেন, তা দৃষ্টান্ত। নিজেদের দাবি প্রকাশ করার এবং অধিকার বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা এঁদের আছে। মেরুদণ্ড সোজা রেখে তাঁরা ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে জানেন। পড়াশোনার ক্ষেত্র কখনওই শুধু নিজের আখের গোছানোর জায়গা হতে পারে না। দেশ ও দশের কল্যাণের কথা ভাবার শিক্ষাও বিশ্ববিদ্যালয়ই দেবে। কিন্তু অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রশ্ন করার সাহস পাচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য জেএনইউ-এর মতোই, প্রতিবাদে গর্জে ওঠে। আর কখনও কখনও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু দেশের বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয় অধিকাংশ সময় শীতঘুমেই ব্যস্ত। তারা আরও সচেতন ও সক্রিয় হলে, দেশের এবং গণতন্ত্রের মঙ্গল।

বিনয় লাহা

গবেষক, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়

আধার ও রেশন

গত তিন-চার বছর যাবৎ কেন্দ্র তাগাদা দিলেও রাজ্য সরকার উদাসীন ছিল। অবশেষে কেন্দ্রের শেষ ঘণ্টা বাজতেই, হঠাৎ করে তড়িঘড়ি রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযুক্তিকরণের উদ্যোগ করেছে। রাজ্যের উচিত ছিল কোনও পেশাদার প্রশিক্ষিত এজেন্সি দ্বারা এত বড় কর্মকাণ্ড সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করানো। তা না করে, দায়িত্ব দেওয়া হল অনিচ্ছুক রেশন ডিলারদের।

আমরা রেশন ডিলাররা, এমন বিভ্রান্তিতে পড়েছি যে বুঝে উঠতে পারছি না কী ভাবে কী করব। সরকারের আদেশ অমান্য করার মতো ঘাড়ে মাথা নেই আমাদের।

অধিকাংশ রেশন কার্ডে নাম ভুল, পিতার নাম ভুল, ‘কুমার’, ‘চন্দ্র’, ‘রাণী’, ‘বালা’ ইত্যাদি অনুপস্থিত বা অযথা উপস্থিত। আধার নম্বর সংযুক্তির জন্য যে পিওএস মেশিন পেয়েছি তা আরও বিভ্রান্তির উদ্রেক করছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘তমাল ঘোষ’ নামের সঙ্গে ‘পবিত্র সামন্ত’-এর আধার নম্বর দিয়ে সংযোগ করালে তা ‘সাকসেসফুল’ দেখাচ্ছে। একই নামে দশ বার আধার যোগ করালে, নম্বর ভিন্ন হলেও প্রত্যেক বার ‘সাকসেসফুল’ দেখাচ্ছে।

সবচেয়ে বড় আতঙ্ক: নামে যদি কোনও বানান ভুল থাকে এবং সেই ভাবেই সংযুক্তিকরণের কাজটা হয়ে যায়, দেরিতে হলেও কোনও এক দিন তো আধার যাচাইয়ের মাধ্যমে

রেশন বণ্টন হবে, তখন কী হবে! কোনও ছোট ভুলের কারণে আধারের সঙ্গে মিল না হলে যদি গ্রাহক রেশন থেকে বঞ্চিত হন, সরকার তো তখন সমস্ত দোষ ও দায় রেশন ডিলারের ওপর চাপাবে! গ্রাহকের অসন্তুষ্টি ও রাগ সেই মুহূর্তে এসে পড়বে আমাদের উপরে।

তিন-চার বছর আগেই এমন উদ্যোগ করলে, গ্রাহকেরা এই ভুলভ্রান্তি সংশোধনের জন্য যথেষ্ট সময় ও সুযোগ পেতেন। এখন অন্তত কেউ কোনও সুরাহা করুন, যাতে এত কম সময়ে এত বড় কর্মকাণ্ড ঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়।

অমল কুমার প্রধান

নিমতৌড়ি, পূর্ব মেদিনীপুর

এ তো খুন

সম্প্রতি সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর ফলে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির যদিও বা সুরাহা করা যাবে, কিন্তু যে ৯-১০ জন মৎস্যজীবী মারা গেলেন (‘মালিকের অতি লোভে এই হাল, ক্ষিপ্ত ধীবরেরা’, ১২-১১) তাঁদের পরিবারের যে ক্ষত, তা কি নিরাময় করা যাবে? উন্নত প্রযুক্তি এবং সরকারের তৎপরতায় এ বারের ঝড়ে প্রাণহানি আয়লার তুলনায় অনেক কম। কিন্তু ট্রলার মালিকদের অতি লোভের বলি সঞ্জয় দাস, মুজিবর রহমান, অসিত ভুঁইয়া-সহ ৯-১০ জন মৎস্যজীবী। ঝড়ের পূর্বাভাস আগাম জানা সত্ত্বেও, মৎস্যজীবীরা যাতে পালিয়ে না যান, সে জন্য মালিকদের নির্দেশেই পাড় থেকে দূরে ট্রলারগুলো নোঙর করা হয়েছিল এবং মৎস্যজীবীদের আটকে রাখা হয়েছিল। এটাকে তো বলা যেতে পারে ইচ্ছাকৃত খুন!

তপনদেব মাজি

বালি, হাওড়া

ফিল্মোৎসব

উদ্বোধনের পর কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের দ্বিতীয় দিন, ৯ নভেম্বর, নন্দনে দেখান হল ‘দ্য পেন্টেড বার্ড’। চেক রিপাবলিকের এই ছবি ইন্টারস্লেভিক ভাষায় তৈরি প্রথম সিনেমা। বিপত্তি হল এ ছবির সাবটাইটেল নিয়ে। ছবিতে সাবটাইটেল ছিল ঠিকই, কিন্তু ছবির প্রোজেকশন এমন ভাবে করা হচ্ছিল যে, স্ক্রিনে দু’লাইন সাবটাইটেলের নীচের লাইনটা কেটে বাদ চলে যাচ্ছিল পুরো! বিস্তর চেঁচামেচি করলেন দর্শকেরা, কিন্তু এ ভাবেই পুরো ছবি চালিয়ে যাওয়া হল।

প্রোজেকশনের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারিটি হল নন্দনে ১৩ নভেম্বর। ৩টের শোয়ে ছিল ভুটানের ছবি ‘লুনানা— আ ইয়াক ইন দ্য ক্লাসরুম’। কী ভাবে ৫০০০ মিটার উঁচু পাহাড়ি গ্রামে সোলার এনার্জি ব্যবহার করে ছবি শুট করেছেন, স্ক্রিনিং শুরুর আগে প্রেক্ষাগৃহে এসে সেই গল্প শোনালেন ছবির পরিচালক। এর পর ছবি শুরু হওয়া মাত্র দেখা গেল, পুরো ছবির রং ফ্যাকাশে, মরা বিকেলের আলোর মতো! হিমালয়ের আশ্চর্য সৌন্দর্য যেন ধুলো হয়ে যাচ্ছিল নন্দনের স্ক্রিনে এসে।

এ বারও চেঁচামেচি হল প্রচুর, চিৎকার করে বলা হল, ‘‘ছবি স্টপ করে কালার ব্যালান্স ঠিক করে নিন আগে’’, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখা গেল প্রোজেকশন রুম থেকে কেউ এক জন মুখ বার করে শুনছেনও কথাগুলো। কিন্তু ওই শোনাই সার, এ ছাড়া আর লাভ হল না কিছু। ওই ভাবে চলল পুরো ছবি।

আর ছবি শেষ হওয়া মাত্র ফের এক বার ডায়াসে উঠে এই মানের প্রোজেকশন নিয়ে নিজের ‘শক’-এর কথা জানালেন খোদ ছবির পরিচালক। তাঁর কথাগুলো কানে বাজছে এখনও, ‘‘কী কষ্ট করেছি ছবিটা বানাতে, এর পর আজ চোখের সামনে দেখতে হল, মাঝপথে ছবি না দেখে বেরিয়ে যাচ্ছেন মানুষ, আর যাওয়ার আগে আমার কাছে জানতে চাইছেন, কী দাদা, এটা কি মোবাইলে শুট করা ছবি!’’

এ বার তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ‘ক্ষমা’ চাইলেন উৎসবের কোনও এক কর্তাব্যক্তি, আর কথা দিলেন ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে ফের এক বার নন্দনে স্ক্রিনিং হবে এই ছবিটির। এও বললেন, ছবির ফরম্যাটে আর বারকোডে কিছু সমস্যা থাকার কারণেই নাকি এমন ঘটনা ঘটল।

কিন্তু আসল মজা জমল ঠিক এর পর, কারণ এ বার হল-ভর্তি দর্শকের সামনে নন্দনের স্ক্রিনে প্রজেক্টর মেশিনের ‘কালার ব্যালান্স’ শুরু করলেন প্রোজেকশন রুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মী। আর সেটা ঠিক করে নেওয়ার পর, পরের ছবি কিন্তু চলল দিব্যি ঠিকঠাক! বলুন তো, কী ক্ষতি হত, দর্শকের চিৎকার শুনে ভুটানের ছবিটি শুরুতে থামিয়ে দিয়ে এই ব্যালান্সটা একটু ঠিক করে নিলে?

পরে অবশ্য নন্দনে দেখানো হয়েছিল ছবিটি আবার, আর সেখানে পরিচালক জানিয়েওছিলেন সকাল ন’টায় এত লোক ছবি দেখতে এসেছেন বলে তাঁর মুগ্ধতার কথা, কিন্তু প্রাথমিক ওই ঝামেলায় মুখ তো পুড়ল আমাদের!

এ বার নন্দন চত্বরে কোনও হল-এর সামনে কোনও ছবির সারণি রাখা ছিল না। ছিল না পাল্টে যাওয়া ছবির হদিস দেওয়ার জন্য কোনও নোটিস বোর্ড। ছবি পাল্টে গেলে মানুষ সেটা জানতে পারবেন কী ভাবে? ওই চত্বরে উৎসবের এক কর্মীর কাছে জানতে চাইলাম আমি। তিনি বললেন, ‘‘একটু কান পেতে থাকুন, ছবি পাল্টে গেলে মাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’’ সত্যি শুনলাম, মাইকে কিছু ক্ষণ পর পর ঘোষণা হচ্ছে ‘অমুক হল-এ এই ছবির বদলে দেখানো হবে ওই ছবি’। মানে, কোথাও কোনও ছবি পাল্টাল কি না, বুঝতে ওই চত্বরে গিয়ে কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে!

এর আগের ২৪ বছর এই উৎসবে ছবি দেখছি, আর কোনও বার এমন আজব কাণ্ড হয়েছে বলে তো মনে পড়ছে না।

ভাস্কর রায়

কলকাতা–৭৭

অন্য বিষয়গুলি:

JNU Hostel Fee Student Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy