Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Higher Secondary

সম্পাদক সমীপেষু : সঙ্কটের মূল কারণ

ভাল ছাত্রছাত্রীরা বেশি নম্বর পাওয়া থেকে বঞ্চিত হল?

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২১ ০৪:৩২
Share: Save:

উচ্চ মাধ্যমিক সংসদ দশম শ্রেণির নম্বর, একাদশ শ্রেণির নম্বর এবং প্রজেক্টের কুড়ি নম্বর মিলিয়ে, একটি গাণিতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ বারের ফলাফল তৈরি হবে বলে ঘোষণা করেছিল। সমস্যা হয় একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার নম্বর নিয়ে। যে নম্বর সংসদের হাতে চলে আসার কথা ছিল এক বছর আগে, রাজ্যের প্রায় অর্ধেক স্কুল সেই একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার নম্বর কাউন্সিলের কাছে জমা করেনি।

মে মাসের মাঝামাঝি সংসদ নির্দেশ জারি করে, সাত দিনের মধ্যে ২০২০ সালের একাদশ শ্রেণির নম্বর জমা দিতে হবে। ওই সময় যে সব বিদ্যালয় তড়িঘড়ি করে নম্বর জমা দিয়েছে, গরমিল দেখা গিয়েছে সেগুলির ক্ষেত্রেই। কোনও স্কুল ছাত্রছাত্রীদের নম্বর বৃদ্ধি করেছে, কোনও বিদ্যালয় নম্বরের একটা গড় করে দিয়েছে, কোনও বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পাওয়া নম্বরের সঙ্গে সংসদে পাঠানোর নম্বরের কোনও মিলই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দেখা গিয়েছে, যে বিদ্যালয়গুলিতে এত দিন সাধারণ মানের ফল হত, তাদের ছাত্রছাত্রীরাই এ বছর ভাল নম্বর পেয়ে প্রথম দিকে স্থান পেয়েছে। অথচ, যে বিদ্যালয়গুলি এত বছর ধরে ভাল ফলাফল করেছে, তাদের ভাল ছাত্রছাত্রীরা প্রথম দিকে স্থান করে নিতে পারেনি। এমনকি ৯০ শতাংশ নম্বরও তারা পায়নি, কারণ এই বিদ্যালয়গুলি নিয়ম মেনে ছাত্রছাত্রীদের একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা এবং তার ফলাফল ঘোষণা করে, তা যথাসময়ে সংসদে পাঠিয়ে দেয়। এই বিদ্যালয়গুলি একাদশ শ্রেণিতে নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রেও একটু কৃপণতা করে, যাতে ছাত্রছাত্রীরা দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে আরও ভাল করে পড়াশোনা করে।

তা ছাড়া ছাত্রছাত্রীরা একাদশ শ্রেণিকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে দ্বাদশ শ্রেণির পঠনপাঠনে বেশি মনোযোগী হয়। ফলে, একাদশ শ্রেণিতে তাদের নম্বর একটু কম থাকে। তা হলে কি এই বিদ্যালয়গুলি সঠিক সময়ে ছাত্রছাত্রীদের সঠিক নম্বর জমা দিয়ে খুব অন্যায় কাজ করল? এবং এই কাজের ফলে ভাল ছাত্রছাত্রীরা বেশি নম্বর পাওয়া থেকে বঞ্চিত হল? শিক্ষা দফতরের উচিত যথাযথ তদন্ত করে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভকে প্রশমিত করা এবং রাজ্যের হাজার হাজার ভাল ছাত্রছাত্রীর উপযুক্ত মূল্যায়ন করে তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করা।

অরুণ কুমার মণ্ডল

সহকারী প্রধান শিক্ষক, সেকেন্দারপুর রাই কে পি পাল বাহাদুর হাই স্কুল, হুগলি

নম্বরে বৈষম্য

সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষা অবশ্য হয়নি। এমনকি অনলাইন ক্লাস বা অনলাইন পরীক্ষার কোনও সুযোগও এই বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা পায়নি। উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের তৈরি করা নিয়মে নম্বরের শতাংশ হার বেশ কম। অন্য দিকে, একটি সর্বভারতীয় বোর্ডের ফল বেরিয়েছে, আর একটি বেরোবে। ওই বোর্ডে শতাংশের হার আকাশছোঁয়া। একই মেধার উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের শিক্ষার্থীরা ভাল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও সুযোগই পাবে না। বিশেষত কলা বিভাগে। এ কথা স্ট্যান্ড করা পড়ুয়াদের ক্ষেত্রেও সত্য। অন্য দিকে নম্বর প্রাপ্তির এই বৈষম্যে সরকারি বোর্ডের ছাত্রছাত্রীদের পার্সেন্টাইল যতই ভাল হোক না কেন, তারা স্রেফ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। কোনও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা হচ্ছে না। মড়ার উপর এই খাঁড়ার ঘায়ে আমাদের সন্তানরা উদ্বিগ্ন, বিব্রত। নিজেদের মেধা প্রমাণের কোনও সুযোগ তাদের নেই। উচ্চ মাধ্যমিক সংসদ কেন এই পরিণতির দিকে আমাদের সন্তানদের ঠেলে দিল?

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমাদের সমবেত বিনীত প্রশ্ন, তা হলে কি সরকারি বোর্ডে সন্তানদের পড়ানোর সিদ্ধান্তই ভুল ছিল? অপরাধ ছিল? ওরা তো আমাদেরই দায়ী করছে।

নবীনা ঘোষ, কলকাতা-৭৪

সৌমি পাল, কলকাতা-৯৪

অসম লড়াই

আমি রাজ্য-বোর্ডের একটি বিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্রী। ২৩ তারিখ উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। নম্বর দেখে খানিক অখুশি হলেও তা দেখানোর ঔদ্ধত্য নেই। অনুরোধ করি, যেন বোর্ড অনুযায়ী পৃথক ‘কাট অব মার্কস’ স্থির করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। নইলে বড়ই অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে ।

সৃজিতা দাস

খাঁটুরা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়,
উত্তর ২৪ পরগনা

ভয়ঙ্কর বার্তা

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ কিছু ছাত্রছাত্রীকে অকৃতকার্য বলে ঘোষণা করতেই জেলায় জেলায় শুরু হয়ে গেল বিক্ষোভ। এক দল উন্মত্ত ছাত্রছাত্রী তাদের অভিভাবকদের সম্মতিতে ও উপস্থিতিতে যে ভাবে রাস্তা অবরোধ করে, টায়ার জ্বালিয়ে, এবং বিদ্যালয়ের চেয়ার-টেবিল ভেঙে তাণ্ডব চালাল, তা ক্ষমার অযোগ্য।

অনুত্তীর্ণরা তাদের যাবতীয় বক্তব্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই উচ্চশিক্ষা সংসদকে জানাতে পারত। তেমনটা না করে জনজীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নিজেদের দাবি আদায়ের যে দৃষ্টান্ত তারা রাখল, তা ধিক্কারযোগ্য। ‘বিদ্যা দদাতি বিনয়ম্’ কথাটা বোধ হয় এই প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। শোনা গেল, সরকারি নির্দেশে শিক্ষা সংসদের সভাপতি ছাত্রছাত্রীদের দাবি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করার, তাদের যাতে কোনও রকম ক্ষতি না হয়, তা দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

অনুমান করা যায়, এর পর উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষার্থীকেই পাশ বলে ঘোষণা করা হবে। এতে কিছু ছাত্রছাত্রী সরকার ও শিক্ষা সংসদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে ঠিকই, কিন্তু দাবি আদায়ের এই সহজ দৃষ্টান্ত আগামী প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের কাছে এক ভয়ঙ্কর বার্তা বহন করে আনবে, সন্দেহ নেই।

সমীর কুমার ঘোষ

কলকাতা-৬৫

সময়সীমা

মাধ্যমিকে নম্বরের উল্লম্ফন হলেও উচ্চ মাধ্যমিকে তা হয়নি, বরং অনেক ছাত্রছাত্রী খুবই হতাশ। উপরের গ্রেডগুলির ফলাফলের দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট হবে। আগের বছরগুলির ফলাফলের তুলনায় তা অনেকটাই কম। ভুক্তভোগী সেই ছাত্রছাত্রীরাই। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ত্রুটিপূর্ণ ফর্মুলাই এ জন্য দায়ী। শুধু তা-ই নয়, সেই ফর্মুলা যথাযথ ভাবে অনুসরণ না করে ইচ্ছামতো নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক স্কুলের পড়ুয়ার। অথচ, গত বছরেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার নম্বর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল সংসদে। এখন আবার সেই সব নম্বর সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই প্রক্রিয়া শেষ হতে হতে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে না তো? তা হলে নম্বর বাড়লেও আখেরে ছাত্রদের কোনও লাভই হবে না। তাই নম্বর সংশোধনের প্রক্রিয়া যত দিন শেষ না হয়, তত দিন কলেজে ভর্তির আবেদন করার সুযোগ যাতে বজায় থাকে, সেটা সরকারের দেখা উচিত।

গৌতম পাত্র

চন্দননগর, হুগলি

পরীক্ষা হোক

মাধ্যমিকে সকলকে পাশ করিয়ে দেওয়া হল। অথচ, উচ্চ মাধ্যমিকে প্রায় দশ শতাংশ পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা ছাড়াই ফেল বলে ঘোষণা করে দেওয়া হল। কী করে সংসদ এমন একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারল? দিকে দিকে রাজ্যের স্কুলগুলিতে উচ্চ মাধ্যমিকে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। বিক্ষোভ দেখানোটাই স্বাভাবিক। সংসদ এবং রাজ্য সরকারের উচিত ‘ফেল’ বলে ঘোষিত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসিয়ে,
তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করার সুযোগ করে দেওয়া।

মেহের সেখ

লাভপুর, বীরভূম

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Secondary Letters to the editor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy