— ফাইল চিত্র।
সদ্যপ্রয়াত শিল্পী রণেন আয়ন দত্ত স্মরণে শিবনাথ সেনের লেখা ‘শিল্প আর বিজ্ঞাপনের মোহনা’ (২৩-৩) প্রবন্ধটি স্মৃতিবিধুর করে তুলল। ২০০৭ সালের এক বসন্তসন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল। একটি সাহিত্য পত্রিকার রবীন্দ্রসংখ্যা প্রকাশ উপলক্ষে গিয়েছিলাম, কাবুলিওয়ালা ছবির পোস্টার করার বিষয়ে তাঁর অনুভূতি জানতে। সেটি ছিল তাঁর করা প্রথম সিনেমার পোস্টার। রণেন আয়ন বলছিলেন, তাঁর মামা অসিত চৌধুরী যোগাযোগ করিয়েছিলেন পরিচালক তপন সিংহের সঙ্গে। কাগজ কেটে পোস্টারটি দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি। ছোট্ট মিনি আর তার তুলনায় বিরাট আকৃতির কাবুলিওয়ালা। কাঁধে ঝুলছে সেই বিখ্যাত ঝোলা। সিনেমাটি সমাদৃত হল। রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেল। বার্লিনেও জুটল বিশেষ সম্মান আর পোস্টারটিও গুণীদের নজরে এল। এর কিছু দিন পরে আবার ডাক এল মামার কাছ থেকে, গ্ৰেট ইস্টার্ন হোটেলে খাওয়ার নিমন্ত্রণ নিয়ে। সেখানে গিয়ে স্বয়ং উত্তমকুমারের সঙ্গে দেখা। এ বার উত্তম-প্রযোজিত ছবি হারানো সুর-এর পোস্টার করার দায়িত্ব পেলেন। মহানায়ক ছবির গল্প বলেন আর তরুণ রণেন আয়ন দত্ত মন দিয়ে শোনেন। তার পর তৈরি হয় আর একটি চোখ জুড়োনো পোস্টার। এই ভাবে একের পর এক অজয় করের সপ্তপদী, সাতপাকে বাঁধা, অন্য ছবিগুলির মধ্যে ছুটি, নাগিনী কন্যা প্রভৃতি ছবির পোস্টার করে খ্যাতির শীর্ষে ওঠেন তিনি। তখন সিনেমাপাড়ায় একটা কথা বাতাসে ঘুরত, রণেন আয়নকে ধরা মানে ছবি ভাল চলা। তবে সত্যজিৎ রায়ের কাজ ছিল তাঁর অত্যন্ত পছন্দের। অভিযান, অপুর সংসার খুব ভাল লেগেছিল। সর্বোত্তম ছিল সত্যজিতের তুলোট কাগজে করা পথের পাঁচালী-র পোস্টার। এমন অনেক খবর সে দিনের আড্ডায় মিলেছিল।
ধ্রুবজ্যোতি মণ্ডল, কলকাতা-৩৪
শ্রমিকের খবর
মৈত্রীশ ঘটকের ‘কাজের বাজারে অন্ধকার’ (১-৩) প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই লেখা। বর্তমানে সংবাদমাধ্যমগুলোতে শ্রম ও শ্রমিক সংক্রান্ত বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন বা আলোচনা স্থান পায় না বললেই হয়। কালেভদ্রে পত্রিকার ভিতরের পাতায় কয়েক লাইনেই খবর সীমাবদ্ধ থাকে। বিভিন্ন বই ও রিপোর্ট যাঁরা পড়েন, তাঁদের কথা আলাদা, মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যমে এই দুই বিষয়ে তেমন কিছু জানার উপায় নেই।
প্রবন্ধটির সারমর্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বর্তমান ভারতের অবস্থার সঠিক বিবরণ। সহজ ভাষায় ও অল্প পরিসরে পরিসংখ্যান-সহ শ্রম, অর্থনীতি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিষয়ে তথ্য ও ঘটনার বিবরণ বিবৃত করেছেন প্রবন্ধকার। ভারতে বেকারত্ব কমেছে, কিন্তু কাজের বাজার অন্ধকার— কথাটির মধ্যেই বহু প্রশ্ন প্রোথিত আছে। ভারতে ৩০০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে সম্পদের মালিকের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে কোভিড-পরবর্তী সময়ে। কেবলমাত্র দু’জন শিল্পপতির প্রতি সেকেন্ডের আয় কমবেশি ৫ লক্ষ টাকা। এক জন শিল্পপতির ছেলের বিয়ের আগেই নাকি হাজার কোটি টাকা খরচ হল সম্প্রতি।
ভারত বৃহৎ অর্থনীতির দেশ, অথচ দারিদ্রসীমার নীচে দেশের ১০ শতাংশ মানুষ এখনও রয়ে গিয়েছেন। এটা নীতি আয়োগের তথ্য। রাজ্যভেদে আবার এই মান ভিন্ন ভিন্ন। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়, তা সাধারণত তুলনা করা হয় ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষের সঙ্গে গত অর্থবর্ষের, যা অবশ্যই দলীয় রাজনৈতিক কারণে। দলনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মতামত নয়।
জাতীয় পরিসংখ্যান তথ্য (এনএসও) বলছে ভারতের মাথাপিছু জাতীয় গড় বার্ষিক আয় ১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা, যা ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষের দ্বিগুণের একটু বেশি। আবার ন্যূনতম মজুরির হার বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন, এমনকি চার-পাঁচটি রাজ্যের অনথিভুক্ত কাজে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির হার মনরেগা প্রকল্পের কাজে প্রাপ্ত মজুরিরও কম।
সংগঠিত সংস্থার নিয়মিত শ্রমিকদের একটি বড় অংশের বার্ষিক আয় বৃদ্ধির কোনও ব্যবস্থা নেই। বার্ষিক আয় বৃদ্ধি না হলে আয়ের মূল্য ও ক্রয়ক্ষমতা প্রতি বছর কমতে থাকে। মুদ্রাস্ফীতির হার ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর কেবলমাত্র এক বছর ঋণাত্মক হয়েছিল, গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিকে। আবার দেশের কোনও বিশেষ অথবা সাধারণ আইন নেই যে, বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিকদের মুদ্রাস্ফীতির হারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি করতেই হবে, বা কোনও পূর্ব নির্ধারিত ভাবে বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ নির্দিষ্ট রাখতে হবে।
অসংগঠিত ক্ষেত্রের পেশা ন্যূনতম বেতন আইনের সংজ্ঞায়িত তালিকাভুক্ত পেশা নয়, এমন কাজের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের অবস্থা ভেবে দেখার সময় কার আছে? ৩৫-৩৬ বছর যাবৎ সংগঠিত সংস্থায় নিয়মিত ভাবে চাকরি করে অবসরের পরেও অনেকে পরবর্তী ৮-১০ বছর কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন জীবনধারণের জন্য। এমন বহু পেশায় নিযুক্ত শ্রমিকদের দেখা যায়, যত দিন শরীর দেয় তত দিনই তাঁদের কাজ করতে হয়। অথচ, একই বাজারে গিয়ে বাজার করেন এমন এক জন সরকারি কর্মচারীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাঁদের অবসরের অনেক বছর পরেও আয়ের পরিমাণের ক্ষেত্রে খুব বেশি অধঃপতন হয় না।
৯২ শতাংশ অসংগঠিত শিল্প-শ্রমিকদের কথা নাহয় বাদই দেওয়া গেল— যদিও দেশের জিডিপি-র প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ অবদান অসংগঠিত শিল্প থেকেই আসে! প্রবন্ধকারের যে-হেতু বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাই অনুরোধ রইল যে, ভারতে ‘আন্ডারপেড’ ও ‘আন্ডার এমপ্লয়মেন্ট’-এর বিষয়ে লিখুন, যার থেকে অন্ধকার মিশমিশে জমাট কালো অংশের ভিতরটার অনেকটাই দেখা যাবে। অবশ্য তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে চিন্তা করার মানুষের সংখ্যা খুব নগণ্যই হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৯
শিক্ষার প্রাধান্য
‘অকর্তব্য’ (৪-৩) সম্পাদকীয়টি বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে দেশের অধিকাংশ রাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক। শিক্ষা সংবিধানপ্রদত্ত মৌলিক অধিকার, এ কথাটি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলো বিস্মৃতপ্রায়। সম্পাদকীয় পড়ে জানা গেল, সম্প্রতি ওড়িশার কটক শহরে কয়েকশো শিক্ষকের কাছে নির্দেশ এসেছে, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের আওতায় কার্ডধারীদের মধ্যে ১০০০ টাকা করে সরকারি অনুদান বণ্টনের। এটা এক জন শিক্ষকের কাজ নিশ্চয়ই হতে পারে না। আসলে সারা দেশ জুড়েই আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থাকে ভঙ্গুর করে তোলার বিচিত্র প্রয়াস চলছে! পশ্চিমবঙ্গেও একই ছবি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ভিত নড়বড়ে হলে কেন্দ্র অথবা রাজ্য, কোনও সরকারেরই কিছু যায় আসে না। প্রবন্ধের শেষ অনুচ্ছেদে শিক্ষকদের ‘শাঁখের করাত’-এর মতো অবস্থার দিকটি যথাযথ ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে।
শিক্ষকের দায়িত্ব শিক্ষার্থীর পঠনপাঠনে সহায়তা করা, শিক্ষাদান করা। এই কাজেই তাঁরা যেন পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে অন্য কাজগুলির জন্য নতুন পদ সৃষ্টি করতে হবে।
প্রবীর কুমার সরখেল, পশ্চিম মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy