‘সত্য সে কঠিন’ (১৯-১০) সম্পাদকীয়তে বর্তমান সাংবাদিকতা পেশার সমস্যা যথাযথ ভাবেই উপস্থাপিত হয়েছে। এই বছরের শান্তি নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই সাংবাদিক রাশিয়ার দ্মিত্রি মুরাতভ (ছবিতে বাঁ দিকে) এবং ফিলিপিন্সের মারিয়া রেসার (ছবিতে ডান দিকে) স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে অভিনন্দনযোগ্য। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রশ্ন চিরকালের। সাংবাদিকের ভূমিকা এবং সংবাদপত্রের ভূমিকা পরস্পর নির্ভরশীল হলেও, অনেকটাই আলাদা। ২০১৯-এ সাংবাদিক ‘বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়ের স্মরণে’ এক আলোচনা সভায় ‘সাংবাদিকতার সেকাল-একাল’ প্রসঙ্গে বাংলা আকাদেমি সভাগৃহে এক মনোজ্ঞ আলোচনা শোনার ও অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য হয়েছিল। বক্তা উল্লেখ করেছিলেন যে, সাংবাদিকতা পেশায় নিষ্ঠাবান, নিরপেক্ষ, নীতিজ্ঞান সচেতন ব্যক্তির অভাব হয়েছে, এমন ভাবনার তত্ত্বগত বা তথ্যগত ভিত্তি নেই। যে কোনও পেশাই নির্ভর করে ব্যক্তির উপর। সত্য সামনে আনার ঝুঁকি বনাম নিরাপদে থাকার জন্য নীরবতা— প্রতিনিয়ত এই দ্বন্দ্ব দীর্ণ করে সাংবাদিকের জীবন। যে সব সংবাদপত্র এত দিন মোটামুটি নির্ভয়ে সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন করতে পারত, তারাও এখন অস্তিত্ব রক্ষায় ব্যস্ত। বেশির ভাগ সম্পাদকমণ্ডলীর হাত বাঁধা। যথেষ্ট বিজ্ঞাপন না পেলে সংবাদপত্রের চলে না। আবার এই বিজ্ঞাপনের একটা বড় অংশই আসে সরকারি দফতর থেকে। সুতরাং, নির্ভীক ও তথ্যসমৃদ্ধ সংবাদ পরিবেশনের ইচ্ছে কানাগলিতে পথ খুঁজে মরে। রাজনীতির ক্ষমতাবানরা গণতন্ত্রের বিশেষ স্তম্ভটিকে কোণঠাসা করে ফেলেছেন। সমাজমাধ্যমের অপব্যবহারে সমাজের হাঁসফাঁস অবস্থা। মিথ্যা খবরের ফরওয়ার্ডিং-এর ঝড়ে জনসাধারণ বিভ্রান্ত। মুক্তির পথ সহজ নয়।
সুকুমার বারিক, কলকাতা-২৯
সাংবাদিকের ঝুঁকি
‘সত্য সে কঠিন’ (১৯-১০) সম্পাদকীয়টি সাংবাদিকদের প্রতি এক সতর্কবার্তা। সম্প্রতি রাশিয়ার দ্মিত্রি মুরাতভ ও ফিলিপিন্সের মারিয়া রেসা, এই দুই সাংবাদিকের শান্তি নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পর এই বিষয়গুলো নতুন করে আবার চর্চিত হচ্ছে। সাংবাদিকতা এক ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। আদর্শ সাংবাদিকের প্রধান কাজ হল সত্য সংবাদ পরিবেশন করা। প্রশ্ন হল, সত্যকথন যদি সাংবাদিকতার প্রথম শর্ত হয়, তবে বিরোধটা কোথায়? একটা ঘটনা ঘটলে সেটাকে যথাযথ বর্ণনা করার মধ্যে অসুবিধাটা কোথায়? ঘটনা এই যে, অনেক সাংবাদিকই সততার ও নির্ভীকতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন না। যাঁরা পারেন, তাঁরা আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠেন, যেমন দ্মিত্রি মুরাতভ ও মারিয়া রেসা। এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে শত শত সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিক জেল খাটছেন, কারণ তাঁরা ক্ষমতাবানদের অন্যায়কে মেনে না নিয়ে প্রকৃত তথ্য ও সত্য প্রকাশ করেছেন। অনেক সাংবাদিক সত্যকে আঁকড়ে থাকার অপরাধে প্রাণ দিয়েছেন।
এই ব্যাপারে প্রশ্ন উঠতে পারে। প্রত্যেক পেশার যেমন ‘অকুপেশনাল হ্যাজ়ার্ড’ থাকে, সাংবাদিকতার কি তেমনই? কথাটা ঠিক হলেও, সত্য প্রকাশের দায়টা সাংবাদিকদের উপর চাপিয়ে দিলেই হয় না। সততার পুরস্কার হিসাবে সাংবাদিক কী পান? আমার মতে, সততা, সত্যকথন ও সংবাদ পরিবেশনের উৎকর্ষের নিরিখে সাংবাদিকদের নানা ধরনের পুরস্কার নিয়মিত দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হোক। সাহিত্যের ক্ষেত্রে যেমন প্রতি বছর বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়া হয়, তেমনই সাংবাদিকতাতেও ওই ধরনের পুরস্কারের প্রচলন করা হোক।
আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সাংবাদিকের স্বাধীনতা। অনেক সময় দেখা যায়, সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিককে প্রতিষ্ঠানের চাপে পড়ে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে। এটার কারণ খুঁজতে গেলে শাসকগোষ্ঠীর অস্ত্রের কথার উল্লেখ করতে হয়। সেটি হল সরকারি বিজ্ঞাপন, যা দিয়ে শাসকশ্রেণি সুকৌশলে সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। মারিয়া রেসা নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ফেসবুককে গণতন্ত্রের পক্ষে ‘বিপজ্জনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। এই প্রসঙ্গে বলতে চাই, সমাজমাধ্যম থেকে আমাদের দূরত্ব মেনে চলার সময় এসে গিয়েছে, কারণ সেখানে শাসকশ্রেণি গোয়েবলসীয় কায়দায় পেটোয়া ক্ষমতাবান লোক দ্বারা নানা ভাবে সাংবাদিকদের হেনস্থা করে চলেছে।
অশোক বসু, বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
বিরল সম্মান
এ বার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন দুই সাংবাদিক। অভিনন্দন জানাই দু’জনকে। এর আগে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বা গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস সাংবাদিকতা দিয়ে লেখালিখি শুরু করলেও নোবেল পেয়েছিলেন সাহিত্যের জন্য। এ বারের নোবেল প্রাপক ফিলিপিন্সের মারিয়া রেসা ও রাশিয়ার দ্মিত্রি আন্দ্রেইভিচ মুরাতভ কিন্তু পুরোপুরি সাংবাদিক। মারিয়া তাঁর দেশে ড্রাগ মাফিয়া, নির্বাচনে দুর্নীতি, পুলিশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লিখে চলেছেন নির্ভয়ে। দ্মিত্রিও মনে করেন, পূর্ণ বাক্স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র সম্ভব নয়। এঁদের দু’জনকে বিশ্বকে শান্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়ে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালনের জন্য এই পুরস্কার।
সুদীপা রায় (ঘোষ), ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
দোষ কার?
‘গণতন্ত্রের জন্য অতি বিপজ্জনক ফেসবুক: রেসা’ (১০-১০) প্রসঙ্গে জানতে চাই, কেন এ ভাবে কুৎসা ছড়ানো? সংবাদমাধ্যমে প্রতি দিন গণতন্ত্রের বিসর্জন আমাদের দেখতে হচ্ছে। ফেসবুকে ছবি, খবর, রান্নাবান্না, গৃহশোভা, এমনকি চূড়ান্ত ব্যক্তিগত কথাও প্রকাশ হয়। তা হতে পারে মিথ্যে, উস্কানিমূলক, সমাজের জন্য ক্ষতিকারক। যে এ কাজ করছে, তার জন্য প্রশাসন আছে, আইন আছে। সে দিকে না গিয়ে কেন এ ভাবে ফেসবুককে অহেতুক দোষারোপ করা? দীর্ঘ দিন গণতন্ত্রের ধারক-বাহক হিসাবে প্রচলিত সংবাদমাধ্যম প্রিন্ট অথবা ইলেকট্রনিক মিডিয়া তাদের অনৈতিকতার, অনিরপেক্ষতার নানা নিদর্শন দেখিয়েছে, নানা সুবিধাবাদী নীতির সুযোগের ব্যবহার করার ফলে তাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। ঠিক তখনই গণতন্ত্রের প্রকৃত ধারক-বাহক হিসাবে জনগণের মনে ফেসবুক জায়গা করে নিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের এই করুণ পরিণতি দেখে বড্ড করুণা হচ্ছে।
দেবাশীষ দত্ত, কলকাতা-৬৩
পথ দেখাবে ডেটা
‘যন্ত্র যদি বুদ্ধিমান হয়’ (১৭-১০) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে দু’-একটি কথা। আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা ডেটার উপর নির্ভরশীল। তা দিয়েই ঠিক হয় কোন পথে চিকিৎসা এগোবে। এই ডেটা-নির্ভর চিকিৎসা ভবিষ্যৎ মানুষকে এখনকার তুলনায় দ্বিগুণ, চর্তুগুণ আয়ু দেবে। জিন কাটার কাঁচি আবিষ্কারের জন্য নোবেল দেওয়া হয়েছে। অবশ্যই বাবা-মা চাইবেন সন্তানের কঠিন অসুখের জিনগুলি জন্মের আগেই বাদ দিয়ে দিতে। তাই সন্তান জন্মানোর আগেই অসুখের মোকাবিলা করার আইন বৈধতা পাবে। ভবিষ্যতে প্রতি মুহূর্তে শরীরের রক্তচাপ, হরমোনের তারতম্য, হার্টের গতির মতো সুস্থ থাকার বিষয়গুলি মাপবে বড় বড় সার্ভার। মানসিক অবস্থা কেমন, তাও মেশিন ধরে রাখবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডেটা ব্যবহার করে বলে দিতে পারে, কে কী ধরনের। ফেসবুকের দশটা ‘লাইক’ থেকে কাউকে অ্যালগরিদম চিনে নিতে পারে তার সহকর্মীর মতো। দেড়শো ‘লাইক’ থেকে চিনতে পারে বাবা-মায়ের মতো। আর তিনশো ‘লাইক’ থেকে জীবনসঙ্গীর থেকেও ভাল চিনতে পারে। আরও ডেটা দিয়ে মনের তল পাওয়া কঠিন নয়। তাই আগামী দিনে গোপন কথাটি রবে না গোপনে। ভবিষ্যতে অতি বিশাল ডেটা ঠিক করবে পথ। কারা ডেটার কব্জা নেবে, তা ভবিষ্যৎই বলবে।
চম্পা খাতুন, কলকাতা-৯৯
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy