নির্বাচনের ফলাফল জানা গেল। এক দল জিতল, আর এক দল হারল। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। অবাক করছে ভোট-পরবর্তী হিংসা। আপনার আর আমার মত এক না-ই হতে পারে, আমরা আলাদা দলের সমর্থক হতে পারি। এটা কি খুব স্বাভাবিক নয়? না, বর্তমান বাংলাতে নয়। কেন আপনি অন্য দলের সমর্থক, কোন সাহসে আপনি অন্য দলকে ভোট দেন, আর যখন আপনার দল জেতেনি, তখন শুরু হোক অত্যাচার— এমন ভাবে চিন্তা করা হয় যে রাজ্যে, তা কেমন বাংলা? কেন অন্য দলের লোক বলে তাঁর বাড়ি, দোকান জ্বলবে, ভাঙচুর হবে? উত্তরে কিছু ব্যক্তি বা দলীয় সমর্থক পুরনো ঘটনা দেখান— এরা করেছিল, ওরা করেছিল, আমরা করলে কী এমন দোষ? কারও দোষ দেখিয়ে নিজের কাজকে ঠিক বলে প্রমাণ করা যায় না। ভুল কাজ সর্বদা ভুলই। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে বিজয়ী দলকে বলতে হয়, আপনাদের থেকে মানুষ অন্য কিছু আশা করেছে বলেই আপনারা বিজয়ী। আপনারা বিদ্বেষের রাজনীতি করার ভুল করতে পারেন না। আপনারা আলাদা হবেন, সেই প্রত্যাশাতেই বাংলার জনগণ এই দলকে ক্ষমতায় এনেছে।
সংবিধানে বহুদলীয় প্রথা গৃহীত, স্বীকৃত। তা হলে বাংলায় এই হিংসা কেন? বাংলা ও বাঙালি কোনও দিন নিজের উপর ধর্মের রং লাগতে দেয়নি, তা হলে আজ রাজনীতির রং নিয়ে এত মাতামাতি কেন? বাঙালি এমন বাংলাকে চায় না।
মৌমিতা পণ্ডিত, রামরাজাতলা, হাওড়া
দায়িত্ব
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। সমস্ত বিরোধী দল সেটাকে মেনেও নিয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে এটাই নিয়ম। কিন্তু জেলায় জেলায় বিরোধীদের পার্টি অফিস দখল করা হচ্ছে, বিরোধী কর্মী, সমর্থকদের বাড়ি ভাঙা হচ্ছে, দোকানপাট লুট করা হচ্ছে, বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সম্মান বাঁচাতে একটা গ্রামের সমস্ত মানুষ ঘরছাড়া, এমন খবরও মিলেছে। এটা গণতন্ত্রের কোন রীতি? এর পরেও কি রাজ্যের শাসক দলের নেতারা গণতন্ত্রের বড়াই করে বড় বড় ভাষণ দেবেন? মানুষ ভোট দিয়েছেন যাতে ভোটের সময়ে তৃণমূল যে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলি পালন করতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু তৃণমূলের নন, সারা বাংলার প্রতিটি মানুষের মুখ্যমন্ত্রী। সমস্ত নাগরিকের সুরক্ষার দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে। মানুষ যদি রুষ্ট হয়ে আগামী বিধানসভাতেই পাশা উল্টে দেন, তখন এই নেতারা বিরোধী হবেন। এই প্রতিশোধের পালা যদি তখনও চলে, কী হবে তাঁদের?
সনাতন পাল, বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর
আরও মন্ত্রী
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় বারের জন্য শপথ নিলেন ৫ মে। সংখ্যালঘুরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃতীয় পর্বেও দু’হাতে আশীর্বাদ করে ভোট দিয়েছেন। এ বার সংখ্যালঘুদের মধ্যে থেকে বিধায়ক হয়েছেন ৪৪ জন। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম এবং কংগ্রেসের প্রার্থীদের মধ্যে মুসলিম বিধায়ক জিতেছিলেন ৫৭ জন। ২০২১ সালে সংখ্যাটা অনেকটাই কমে গেল। আশা রাখি, এ বারের মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকে যথেষ্ট সংখ্যায় গুরুত্বপূর্ণ পদে মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ করে দেবেন তৃণমূল সরকার। পাশাপাশি তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং ওবিসি বিধায়কদেরও গুরুত্বপূর্ণ দফতর দিয়ে নয়া নজির সৃষ্টি করতে হবে। এ বারের নির্বাচন প্রমাণ করেছে, সমাজের মূল স্রোতেই থাকতে চেয়েছেন সংখ্যালঘু মুসলিম, আদিবাসী ও দলিতরা। সংযুক্ত মোর্চাকে সমর্থন না দিয়ে তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের জয় সুনিশ্চিত করেছেন। মহিলারাও দিদির প্রতি আস্থা রেখেছেন।
এ বার ৭২টা আসনে খুব অল্প ভোটের তফাতে বিজেপি হেরেছে। আগামী দিনে বিভেদকামী শক্তির পতন সুনিশ্চিত করতে হিন্দু ও মুসলমানদের যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে হবে। বাংলা জুড়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে এগিয়ে আসুক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তাঁর তৃতীয় পর্ব পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মনে দাগ কেটে যাক।
ফারুক আহমেদ, ভাঙড়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
সেই তিমিরে
উত্তরপ্রদেশের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পর্যুদস্ত হল শাসক দল বিজেপি। বারাণসী, মথুরা, প্রয়াগরাজ, অযোধ্যা, এমনকি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের খাসতালুক গোরক্ষপুরেও শাসক দলের সমর্থনে থাবা বসিয়েছে এসপি, বিএসপি-সহ বহু নির্দল প্রার্থী। পঞ্চায়েতের ৩০৫০টি আসনে মাত্র ৭৬৯টি আসন গিয়েছে শাসক দলের পক্ষে। বাকি সবই বিরোধী দল ও নির্দল প্রার্থীর পক্ষে। শাসক দলের কাজে অসন্তুষ্ট হলে মানুষ বিকল্পকে বেছে নেবেন, এটাই প্রত্যাশিত। আগামী বছর উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটি শাসক দলের কাছে একটি বার্তা। তবে লক্ষণীয়, এই নির্বাচনে একটিও হিংসার ঘটনা সামনে আসেনি।
মানুষ চায় সংবেদনশীল ও সৎ প্রশাসন, সুষ্ঠু পরিষেবা ও কর্মের অধিকার। রাজনীতির কাছে মানুষের চাহিদা খুবই সামান্য। রাজনীতির পরিসরও সমাজের কাছে খুব অল্প। ধর্ম, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সামাজিক জীবন, ব্যক্তিস্বাধীনতা— এ সবই রাজনীতির পরিসরের বাইরে। তবু রাজনৈতিক দলগুলো এ সবের মধ্যে ঢুকে তালগোল পাকিয়ে ফেলে। পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হানাহানির রেওয়াজ পাঁচ দশকেরও অধিক। রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার জন্য খুন হতে হচ্ছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এমনকি মাসের পর মাস ঘরছাড়া হয়ে থাকতে হচ্ছে, এমন উদাহরণ অন্য কোনও রাজ্যে নেই। এটা যেমন পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে লজ্জার, তেমনই দুর্ভাবনারও। সমস্ত রাজনৈতিক দলের বোঝা উচিত, সাধারণ মানুষ কারও কাছে দাসখত লিখে দেননি। মানুষের সমর্থন পেতে গেলে প্রয়োজন সততা আর সংবেদনশীলতা। পশ্চিমবঙ্গের নেতা-নেত্রীরা কবে এটা বুঝবেন!
কৌশিক সরকার, রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া
কুশল প্রশ্ন
যে দল নির্বাচিত হবে এবং যে দল পরাজিত হবে, উভয়ে উভয়ের সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন, এটাই কাম্য। অতিমারির আবহে মানুষের মন এমনিতেই অস্থির। এর পর রাজনৈতিক হিংসার বাতাবরণ আরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি থেকে বিরত থাকুক সব দল।
উৎপল মুখোপাধ্যায়, চন্দননগর, হুগলি
মন্তব্য
মানিকতলা থানায় মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে এফআইআর করল উত্তর কলকাতার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা (‘সংলাপে ছড়াচ্ছে হিংসা, অভিযুক্ত মিঠুন’, ৭-৫)। ভোট-পরবর্তী যে হিংসা চলছে, তা নাকি ভোট চলাকালীন ওঁর উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য। মিঠুন চক্রবর্তী ৭ মার্চ বিজেপির ব্রিগেড সভায় তাঁরই অভিনীত চলচ্চিত্রের সংলাপ বলে হিংসার উস্কানি দিয়েছেন, যা সর্বত্র নিন্দার ঝড় তুলেছিল। কিন্তু তৎক্ষণাৎ এফআইআর করল না কেন তৃণমূল? ভোটের আগে, ও ভোট চলাকালীন বিজেপি নেতাদের উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্যেই কি আজ শাসক দলের ভোট-পরবর্তী হিংসাকে নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হচ্ছে? একটা দল নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরেও, নেতাদের প্রচারকালীন উস্কানিমূলক মন্তব্যে ভোট-পরবর্তী হিংসায় মত্ত হবে, এ যুক্তি ধোপে টিকতে পারে কি? হিংসা বন্ধের জন্য চাই সব দলের মানবিক উদ্যোগ। তার প্রতিফলন যেন জনগণের চোখে ধরা পড়ে।
নরেন্দ্রনাথ কুলে, কলকাতা-৩৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy