Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Society

সম্পাদক সমীপেষু: ভোট পেতে জুলুম?

আমরা জানি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাতারে কাতারে দরিদ্র মানুষ জীবিকার খোঁজে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:১০
Share: Save:

সম্প্রতি ভোট বিতর্কে একটি কথা উঠে এসেছে— পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর চালু করা ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ডের সুবিধা নিয়েও কেন কেউ রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধ দলের হয়ে ভোটে দাঁড়াবে? এ কথা বলছে খোদ রাজ্যের শাসক দল। এর উত্তরে কেন্দ্রের শাসক দলও প্রশ্ন তুলেছে, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বিনা পয়সার করোনা টিকা নেওয়ার সুযোগ কেন বিরোধী দলের লোকেরা নিয়েছে?

সকলেই জানে এ সব সামাজিক প্রকল্পের জন্য অর্থ আসে করদাতাদের থেকে, মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর পকেট থেকে নয়। যা-ই হোক, এই নির্বাচনী তর্কাতর্কির মধ্যে দিয়ে একটা প্রতিযোগিতার বিষয় উঠে এসেছে— স্বাস্থ্যসাথী বনাম আয়ুষ্মান কার্ড। দু’টি কার্ডেরই উদ্দেশ্য— এক বিশেষ দরিদ্র জনগোষ্ঠী, যাঁদের বাৎসরিক আয় একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের কম, বিনা পয়সায় যেন চিকিৎসা পায়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রাজ্যবাসীর জন্য আর আয়ুষ্মান কার্ড সারা ভারতের জন্য।

আমরা জানি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাতারে কাতারে দরিদ্র মানুষ জীবিকার খোঁজে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন। এ ছাড়াও এক বৃহৎ সংখ্যক মানুষ এই বঙ্গ থেকে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা করাতে যান। কেন তাঁরা এগিয়ে থাকা এই বঙ্গ ছেড়ে অন্য পিছিয়ে পড়া রাজ্যে পাড়ি দেন, তা নিয়ে তর্কে যাচ্ছি না।

ঘটনা এই যে, রাজ্য সরকারের চালু করা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড অন্য রাজ্যে কাজ করে না। এই রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক বা দরিদ্ররা জীবিকার জন্য বা প্রকৃত চিকিৎসার খোঁজে যখন অন্য রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন তখন সেখানে তাঁরা স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের প্রতিশ্রুতিমতো নিখরচায় চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন না। নিজের পকেটের পয়সা খরচ করতে হচ্ছে। অথচ, এঁরা যদি কেন্দ্রের দেওয়া আয়ুষ্মান কার্ড পেতেন, তা হলে ভারতের যে কোনও রাজ্যেই বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ পেতেন। এ রাজ্যের দরিদ্ররা আয়ুষ্মান কার্ড পাবেন না, কারণ রাজ্য সরকার তার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। এই অবস্থায়, রাজ্যের শাসক দলের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বিরোধিতার জেরে পশ্চিমবঙ্গের এক বৃহৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠী পড়েছেন বিপাকে।

এ রাজ্যের এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী কেন কেন্দ্রীয় সরকারের এই সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প থেকে বঞ্চিত থাকবেন? তাঁরা কি ভারতের নাগরিক নন? কেন গরিব মানুষের উপর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড চাপিয়ে দিয়ে রাজ্যের শাসক দলকে ভোট দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হবে? দরিদ্র মানুষকে দুই কার্ডের মধ্যে নিজের পছন্দমতো কার্ড বেছে নিতে সুযোগ দেওয়া হোক। দেখা যাক তখন কত শতাংশ দরিদ্র মানুষ স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ভরসা রাখেন আর ক’জনই বা আয়ুষ্মান কার্ড নেন।

ভাস্কর ঘোষ, কলকাতা-১০৭

বাড়তি ছুটি

আজ থেকে দেশ জুড়ে শুরু লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটপর্ব। গত কয়েক বছরের মতো এ বারও চৈত্র শেষ থেকেই দাবদাহের তীব্রতা ঊর্ধ্বমুখী। এই আবহে বাংলার স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি অনেকটাই এগিয়ে আনার কথা ঘোষিত হয়েছে। আগে ৯ মে থেকে এই ছুটি পড়ার কথা ছিল। পরিবর্তিত সূচিতে তা ৬ মে হয়েছিল, এ বার তা ২২ এপ্রিল এগিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। কথা উঠছে, ভোটের জন্যই এই মেয়াদ বৃদ্ধি কি না।

৬ মে আসতে এখনও বেশ কিছু দিন বাকি। কিন্তু তারও অনেক আগে এ ভাবে স্কুলগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া কি বাস্তবসম্মত? এত তাড়াতাড়ি স্কুল ছুটির কথা না বলে পরিস্থিতির উপর নজর রেখে আর কয়েক দিন পরে তা ঘোষণা করাই বাস্তবোচিত ছিল। পশ্চিমবঙ্গ মধ‍্যশিক্ষা পর্ষদের নির্দেশিকা অনুসারে, স্কুলে বছরে মোট ছুটি ৬৫। তার মধ্যে বিভিন্ন উৎসব বা উল্লেখযোগ্য দিন হিসাবে ছুটি ৫৭টি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন অনুযায়ী ৮টি ছুটি বরাদ্দ। এই তালিকা অনুযায়ী সরস্বতী পুজো ও ইদ উপলক্ষে একটি দিন করে অতিরিক্ত ছুটি যোগ হয়।

পর্ষদের তালিকায় স্কুলে গরমের ছুটি থাকে সাধারণত ১১ থেকে ১২ দিন। কিন্তু তাদের সাম্প্রতিক ঘোষণা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হলে এ বার ছুটি অনেক বেশি দিন ধরে চলবে। শিক্ষাবর্ষ সবেমাত্র শুরু হয়েছে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি করে ক্লাস করা প্রয়োজন। পর্ষদের নির্দেশিকাকে যদি মান‍্যতা দিতে হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদি ছুটি চলাকালীন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পড়াশোনার অভ্যাস চালু রাখতে স্কুল কর্তৃপক্ষের অনলাইন ক্লাস করা সমীচীন হবে। অথবা, ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে ছুটির মেয়াদ নিজেদের সুবিধামতো বিবেচনা করুন স্কুল কর্তৃপক্ষরা। যেমন, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে প্রথম দফা ভোটের জন‍্য ১৬ থেকে ২০ এপ্রিল কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং দ্বিতীয় দফায় দার্জিলিং, কার্শিয়াং ও দুই দিনাজপুরে ২৪ থেকে ২৭ এপ্রিল স্কুল বন্ধ থাকবে। সে ক্ষেত্রে ওই অঞ্চলের স্কুলগুলোর ছুটির মেয়াদ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, ওই সব স্কুলের পঠনপাঠন আরও শিকেয় উঠবে। এই ক্ষেত্রে তাই গরমের ছুটির মেয়াদ ঠিক করতে দেওয়া হোক জেলার স্কুলগুলিকে। যাতে দীর্ঘমেয়াদি ছুটির জেরে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে।

মঙ্গলকুমার দাস, রায়দিঘি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

দুর্নীতির কবলে

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি ও সরকার-পোষিত স্কুলে ২০০১-২০০২ সাল থেকে ‘সর্ব শিক্ষা অভিযান’-এর লোগো আঁকা দেখতে পাওয়া যায়। এ রাজ্যে তখন বাম সরকার। কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ ব্যবস্থাপনায় প্রকল্প রূপায়ণ চলছে। যার মধ্যে ছিল অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, প্রাথমিক স্কুলে বিদ্যালয় উন্নয়ন সমিতির তাৎপর্য বৃদ্ধি, মাতা শিক্ষক সমিতি, সর্বোপরি স্কুল শিক্ষার সঙ্গে জনগণের সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা ইত্যাদি। কিন্তু এই প্রচেষ্টা শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নয়, প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একটি শিশুর বিদ্যালয় শিক্ষার গুণগত মানের দিক থেকে কতটা কার্যকর ভূমিকা নিল, তার মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে। প্রকল্পের সূত্রে শিক্ষক নিয়োগ হল ঘটা করে। কিন্তু সেই শিক্ষকরা শিশুর মনোজগতের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে তাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে তৎপর হলেন কি না, তার মূল্যায়ন স্থানীয় জনসমাজের কাছ থেকে আসা প্রয়োজন। জনসমাজ একটি জনপদে অবস্থিত বিদ্যালয়গুলি সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা পোষণ করে। এই বিদ্যালয়ে খুব ভাল লেখাপড়া হয়, অমুক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভীষণ কড়া, এই অঞ্চলের সেরা বিদ্যালয় এটি— এই স্বতঃস্ফূর্ত অনুধাবন কিন্তু জনসমাজে অবিরত চলছে। উঠছে লেখাপড়া নিয়ে প্রশ্ন। এখনকার পড়াশোনার অন্যতম অঙ্গ গৃহশিক্ষক নির্ভরতা, বাজারে সহায়িকা বইগুলোর রমরমা। ফলে, দেওয়ালে লেখা ‘সর্ব শিক্ষা অভিযান’ পরিকাঠামো তৈরিতে সহায়ক হলেও, এ রাজ্যে ছাত্রছাত্রীদের নির্ধারিত মানের শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে একেবারেই ব্যর্থ।

শিখিয়ে-পড়িয়ে বা সহায়তাকারী হিসাবে এক জন শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের কাছে কতটা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পেরেছেন— জনগণের কাছে কাঙ্ক্ষিত সেটাই। আনুষঙ্গিক সুবিধা প্রদান করা ছাড়া কেন ক্লাসে শিক্ষক আসেন না? কেন সিলেবাসভুক্ত বিষয়গুলিকে ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না? কেন লেখার সময় নিজের কথা নিজে লিখতে পারে না পড়ুয়ারা? প্রশ্নগুলো আমাদের ভাবাতে বাধ্য।

তার পর বাংলায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। দেওয়ালে লেখা ‘সর্ব শিক্ষা’-র লোগোও আবছা হয়েছে। এই প্রকল্পের দফতর যেন তহবিল বিলি বণ্টনের কাজেই সীমাবদ্ধ। পঠনপাঠনের সঙ্গে যেন তার কোনও যোগসূত্রই নেই। সেই কারণেই হয়তো শিক্ষা-প্রসার, গুণগত মান— স্বল্প বেতন পেয়েও ভাল কাজের দৃষ্টান্ত রাখা পার্শ্বশিক্ষকদের প্রতি অবহেলা চলে। শিক্ষকদের পরিশ্রম করা উচিত ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে, কোনও এক প্রকল্পকে সফল করা নয়। লেখাপড়ার মান তলানিতে পৌঁছে যাওয়া আটকানোর দায় কে নেবে?

অভিজিৎ ভৌমিক, কলকাতা-১৮

অন্য বিষয়গুলি:

Society Politics Swasthya Sathi Ayushman Bharat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy