— ফাইল চিত্র।
‘সরকারের সীমা’ (১-৩) সম্পাদকীয় ভাবতে শেখাচ্ছে যে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকার অতীতে, বর্তমানে বা ভবিষ্যতেও সংবাদমাধ্যমের প্রতি কেমন আচরণ করতে পারে। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হল সংবাদমাধ্যম। ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৬ সালে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যদি কোনও খবরের কাগজ না থাকে, তা হলে কোনও আন্দোলনও থাকে না, আন্দোলন শুধুমাত্র খবরের কাগজের পাতায়। তাই তিনি খবরের কাগজের বিরুদ্ধে সেন্সরশিপ ব্যবহার করেছেন। এক জন নেতা সংবাদমাধ্যমের ক্ষমতাকে যথেষ্ট ভয় না পেলে এই কথা বলতে পারতেন না। মাঝে মাঝেই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী সংবিধানের ১৯ ধারার অন্তর্গত বাক্স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা তুলে ধরেন, এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য মুখে লড়াইয়ের ডাক দেন। প্রচ্ছন্ন ভাবে কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর সেই বক্তব্যের সমর্থক তাঁরাই। না হলে ২০১০ সাল থেকে শুধুমাত্র ইউএপিএ আইনে ১৬ জন সাংবাদিককে আটক করে রাখা হত না। গত বছর যখন প্রবীর পুরকায়স্থের মতো সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়, তখন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা সমাজমাধ্যম এবং সংবাদমাধ্যমে ঝড় তোলেন এবং সংবাদমাধ্যমের পাশে এসে দাঁড়ানোর কথা বলেন। আবার এই তৃণমূল আমলেই ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩-এ সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচীকে গ্রেফতার করা হয়, বা সন্দেশখালি কাণ্ডে কর্মরত টিভি সাংবাদিককে গ্রেফতার করে থানায় এফআইআর করা হয়।
কলকাতা পুলিশ ২ জানুয়ারি, ২০২০ সাংবাদিক ভূপেন্দ্র প্রতাপ সিংহ, অভিষেক সিংহ, হেমন্ত চৌরাশিয়া ও আয়ুষ কুমার সিংহের বিরুদ্ধে যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে, তাকে আদালত ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ হিসাবে চিহ্নিত করে। কোভিড অতিমারি পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি সংবাদমাধ্যমের উপরে, বা সাংবাদিকদের উপরে সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, মহামারি আইন, ফৌজদারি ধারা ১৪৪-এর অধীনে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। ২০১৪-২০১৯ সময়কালে সাংবাদিকদের উপর প্রায় ১৯৮টি গুরুতর আক্রমণ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সাংবাদিকদের গ্রেফতার করে জেলবন্দি করা হয়েছে ইরান, চিন, মায়ানমার, তুর্কিয়ে ও বেলারুসের মতো দেশে। কিন্তু ভারতেও সাংবাদিকরা স্বচ্ছন্দে নেই।
টেলিভিশন ও ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে যখন সংবাদ তড়িৎ গতিতে মানুষের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে, সে সময়ে সাংবাদিকদের উপর মারধর, অত্যাচার সহ্যের সমস্ত গণ্ডি পার করে দিচ্ছে।
দুঃখ হয় তখনই, যখন দেখি কিছু সাংবাদিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিধায়ক বা সাংসদ হয়ে যাচ্ছেন, এবং সাংবাদিকদের উপর অত্যাচারের ঘটনাকে উপেক্ষা করে সমাজমাধ্যমে নিজেদের ভিডিয়ো দিয়ে যাচ্ছেন।
অভিজিৎ চক্রবর্তী, বালি, হাওড়া
জনস্বার্থের রক্ষা
‘সরকারের সীমা’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে পশ্চিমবঙ্গে সাংবাদিক হেনস্থার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। স্বচ্ছতায় অনাগ্রহী কোনও সরকার যখন বিভ্রান্তিকর পরিসংখ্যান প্রচার করে, স্বাভাবিক ভাবেই তখন সাংবাদিকদের কলম এবং কণ্ঠ প্রকৃত তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়। স্বাধীন ভাবে সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশনের পূর্ণ অধিকার প্রত্যেক সাংবাদিকের রয়েছে। রাষ্ট্র শুধুমাত্র নজর রাখতে পারে, কোনও সাংবাদিক রাষ্ট্রবিরোধী কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত হলেন কি না। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই ফাঁকটুকুকেই কাজে লাগাতে তৎপরতা দেখা যায় শাসক দলের নেতাদের। তাঁরা পেশিশক্তি ও প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। একেবারে সাধারণ কর্মীরাও সুযোগ পেলে নেতাদের সহযোগী হয়ে সাংবাদিকদের উপর দাঁত-নখ বার করে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
প্রত্যেক সাংবাদিককে তৃণমূল স্তর থেকে খবর খুঁজে আনতে হয়। রণভূমি থেকে কৃষকের ঘর, গণ আন্দোলনের ময়দান থেকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাস্তব অবস্থা, প্রশাসনিক দুর্নীতি থেকে প্রাত্যহিক জীবনের ঘটনা-দুর্ঘটনা, সব কিছুর দিকেই সাংবাদিকদের নজর রাখতে হয়। তাঁদের এই দায়বদ্ধতা অবশ্যই জনগণের কাছে। এখানেই কোনও কোনও সময় সৎ এবং নির্ভীক সাংবাদিককে বিপদের মুখোমুখি হয়ে নিগ্রহের শিকারও হতে হয়। ফলে ‘সাংবাদিকরা চিরকালই ব্যক্তিগত ঝুঁকি নিয়ে পেশাগত কাজ করতে যান’— কথাটি সত্য। অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত কোনও ব্যক্তি যেমন চান না তাঁর কুকর্মের বিবরণ জনসমক্ষে প্রকাশিত হোক, সরকারের কর্মকর্তারাও চান না সরকারি কাজের ত্রুটি ও গলদগুলি জনগণের সামনে উঠে আসুক। স্বভাবতই সংশ্লিষ্ট মহল থেকে সাংবাদিকদের স্বাধীন ভাবে কাজ করতে না দিয়ে, তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়, যাতে তাঁদের সেই কুকর্ম ও অনৈতিক কাজগুলির খবর জনসমক্ষে না আসে।
ভারতবাসীকে যখন ‘বিশ্বগুরু’ হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে, তখন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ক্রমাগত পিছিয়ে যাওয়াটা কি ভারতের জনগণ মেনে নেবে? ইন্দিরা গান্ধীর আমলে জরুরি অবস্থার সময়ে সংবাদমাধ্যমের বিপদ চরমসীমায় পৌঁছেছিল। কিন্তু তার পরিণাম সুখকর হয়নি। ইন্দিরা গান্ধীর মতো দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রধানমন্ত্রীকেও নির্বাচনে হার স্বীকার করতে হয়েছিল। সাংবাদিকতা একটি সম্মানজনক পেশা। অসংখ্য সৎ এবং নির্ভীক সাংবাদিক এই পেশায় কর্মরত আছেন। বহু তরুণ-তরুণী এই পেশায় যোগ দিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তাঁদের প্রত্যেককে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে কাজ করতে দেওয়ার দায়িত্ব এই দেশের কেন্দ্র এবং রাজ্য— উভয় সরকারের। জনগণের স্বার্থরক্ষায় সঠিক খবর পরিবেশন করার দায়িত্ব ভারতীয় সংবিধান সাংবাদিকদের দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের জন্যই সন্দেশখালির মেয়েদের আন্দোলনের প্রতিটি খবর প্রতি মুহূর্তে সমগ্র বিশ্বের জনগণের সামনে তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে। ওই অঞ্চলের নির্যাতিতা মেয়েরা সংবাদমাধ্যমের প্রত্যক্ষ সহযোগিতার কারণে যে মানসিক শক্তি পেয়েছেন, তাতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস পেয়েছেন তাঁরা। সামাজিক শৃঙ্খলা ও মূল্যবোধ রক্ষায় সংবাদমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই সরকার সীমা লঙ্ঘন করলে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়।
রতন রায়চৌধুরী, পানিহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
নিরবচ্ছিন্ন
‘নারীর নিয়ন্ত্রণ’ (২৭-২) সম্পাদকীয়তে যথার্থই বলা হয়েছে যে, সন্দেশখালির মহিলাদের উপর নির্যাতন কামদুনি, হাঁসখালি থেকে আলাদা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সর্বত্রই শাসকের মদতে পুষ্ট দুর্বৃত্তদের অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। সন্দেশখালি পশ্চিমবঙ্গের বাইরের কোনও এলাকা নয়। এক দশক ধরে শাসক দলের পদাধিকারীরা সেই অঞ্চলের মহিলাদের উপর যে মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতন চালিয়েছেন, তাঁদের সম্ভ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি সে সবের কিছুই জানতেন না? এর পরেও কি বলা যায় যে, তাঁর রাজ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?
এত দিন ধরে সন্দেশখালিতে জঙ্গলের রাজত্ব চলছিল। আজ যখন সমস্তটাই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, সেখানকার মেয়েদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে, তাঁরা প্রতিবাদে প্রতিরোধে উত্তাল হয়েছেন, তখন শাসক দলের পক্ষ থেকে সেই মেয়েদেরই ‘বহিরাগত’, প্রতিবাদকে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে দমিয়ে রাখা হচ্ছে। ফলে তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত। শুধুমাত্র কয়েক জনের গ্রেফতারেই প্রশাসনিক দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। অবিলম্বে প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে সন্দেশখালির এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী সকল দুর্বৃত্তকে কঠোর শাস্তি দিয়ে রাজধর্ম পালন করা হোক।
শিখা সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy