‘বক্তব্য না-পসন্দ, নাটক বন্ধ করে দিল বিজেপি’ (২৯-৩) সংবাদটি পশ্চিমবঙ্গের নাট্যকর্মী ও নাট্যপ্রেমী প্রতিটি মানুষের কাছে উদ্বেগের বার্তা নিয়ে আসছে। সন্দেহ হয়, ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্যে দেশের বৃহত্তম যে রাজনৈতিক দলটি রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে বদ্ধপরিকর, তাতে বাম কর্মী-সমর্থকদের একটা বৃহত্তর অংশ ভিতরে ভিতরে উদ্বুদ্ধ এখন। তাঁরা পুরনো স্লোগানটাই আবার ঝালিয়ে নিতে শুরু করেছেন— ‘একুশে রাম, ছাব্বিশে বাম’!
প্রসঙ্গত, অনেকেই মনে করেন যে, মূলত বাম কর্মী-সমর্থকরা নাট্য-আন্দোলনের প্রথম সারিতে অবস্থান করছেন। যে কোনও সুস্থ-সুন্দর সাংস্কৃতিক আবহে তাঁদের ভাবনার বিস্তার চলে বছরভর। কিন্তু সবিনয়ে জানতে ইচ্ছে করে, দেশ ও রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির নীতি-আদর্শ ও লক্ষ্য ভিন্নতর হলেও,কোনও নাটকের গল্প যদি সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের ভাবনার বিপ্রতীপে কিছু বক্তব্য পরিবেশন করে, তবে সে নাটক চলাকালীন মাঝপথে তা বন্ধ করে দিতে হবে— এ কেমন যুক্তি? এ ছাড়া নাটকের কলাকুশলীরা অডিটোরিয়াম থেকে কোনও রকমে পালিয়ে বাঁচলেন, থানায় ডায়েরি পর্যন্ত করতে সাহস পেলেন না— ক্ষমতা দখলের আগেই রাজ্যে এই যদি পরিবেশ রচিত হয়, তবে বাম কর্মী-সমর্থকরা নিশ্চয়ই নতুন করে ভাববেন, ছাব্বিশে কেমন করে মসনদে বামেদের ফেরা সম্ভব?
সবুজ সান্যাল
হাওড়া
সব কিছুর ঊর্ধ্বে?
ভারতের সকল রাজ্য সরকার সেই রাজ্যসমূহের নির্বাচন চলাকালীন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সেই সময়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী-সহ সকল মন্ত্রী কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেন না আদর্শ নির্বাচনবিধি বলবৎ থাকায়। কারণ তাঁরা ওই নির্বাচনের মুখ্য প্রচারক এবং অংশগ্রহণকারী। এবং ভারতের যে স্থানেই নির্বাচন সংঘটিত হোক না কেন, প্রধানমন্ত্রী সেখানে মুখ্য প্রচারক। আর এ বারের পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে তিনি তো বটেই, অন্য রথী-মহারথীরাও প্রায় নিত্যযাত্রীর মতো দিল্লি এবং অন্যত্র থেকে এই বঙ্গে ভোটের প্রচারে ছোটাছুটি করছেন। এ ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন খুব স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসে— এই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কি নির্বাচন কমিশনের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকে না? দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী এই প্রচার সংগঠনের ফাঁকেই সরকারি ভাবে বিদেশ ভ্রমণ করছেন এবং পশ্চিমবঙ্গের ভোটকে প্রভাবিত করতে পারে, এমন কর্মসূচিতে সচেতন ভাবেই অংশগ্রহণ করছেন। একই রকম ঘটনা অতীতে অন্যান্য রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের সময় এবং বিগত লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা গিয়েছে। তা হলে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর পদ সব তর্ক-বিতর্কের ঊর্ধ্বে এবং ভারতের নির্বাচন কমিশন নিধিরাম সর্দারের মতোই আচরণ করে যাবে?
তাপস রঞ্জন কর
কলকাতা-১৩৬
বোঝাপড়া
ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার সরকারি চাকরির বদলে পাঁচটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে আউটসোর্সিং করে কর্মী নিয়োগ করার পদ্ধতি চালু করছে। এ কাজে বেতন হতে পারে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এর মধ্য দিয়েই পরিষ্কার ব্যাঙ্কব্যবস্থা বেসরকারিকরণের সার্থকতা। অগ্নিমূল্য বাজারে এক জন এই বেতন দিয়ে শুধুমাত্র খাওয়া-দাওয়া ছাড়া অন্য কোনও প্রয়োজন মেটাতে পারবেন না। পরিবারের চিকিৎসা, সন্তানদের পড়াশোনা, বাসস্থান তৈরি ইত্যাদি প্রয়োজনে তাঁকে ঋণের বাজারে যেতেই হবে। ব্যাঙ্ক বেসরকারি হলে সেই সব ব্যাঙ্কই তাঁদের ঋণ দিতে এগিয়ে আসবে।
অন্য দিকে, ঋণের জালে জড়িয়ে টাকা শোধ করার জন্য মরিয়া হয়েই মানুষ আরও বেশি সময় কাজ করতে বাধ্য হবেন। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের এ বারের শ্রম আইনে যে বারো ঘণ্টা কাজের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, সেটা মালিকের অনায়াসে কাজে লাগবে। আসলে যে কোনও অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করার পিছনে থাকে পুঁজি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা, মালিকের ব্যবসার ব্যবস্থা করে দিয়ে মুনাফা সুনিশ্চিত করা। এই করোনা অধ্যায়ে শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষিক্ষেত্রে যে আইনগুলো আনা হয়েছে, এগুলো সবই এই উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জনগণের স্বার্থ খোঁজা কাঁঠালের আমসত্ত্ব ছাড়া কিছু নয়।
আসল কথা, একচেটিয়া কারবারের মালিকদের পুঁজি বেড়েছে এবং সেই পুঁজি বিনিয়োগের নানা রকম জায়গা করে দেওয়ার জন্য সরকারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সরকার মানে একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় বসে। আর এই রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসার আগে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, সেই অর্থ সরবরাহ করে এই একচেটিয়া কারবারের মালিকরা।
তাই ক্ষমতায় বসে এই ভাবেই তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে হয়। এই বোঝাপড়ার মধ্য দিয়েই ভোট আসে, ভোট যায়। নেতা জেতে, মালিক জেতে, এবং জনগণ হারে।
গৌতম দাস
মালদহ
অবৈধ নিয়োগ
রাজ্যের অধিকাংশ থানাতেই প্রয়োজনের তুলনায় পুলিশকর্মী কম থাকায় রাজ্য সরকার কম বেতনে কিছু সিভিক ভলান্টিয়ার্স নিয়েছিল, যাঁদের কাজ থানার ভিতরে ও বাইরে পুলিশকে সব রকম সাহায্য করা। যোগ্যতা পরীক্ষা ও বৈধ নিয়োগপত্র ছাড়াই এঁদের নেওয়া হয়। কোনও প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি। কলকাতা হাই কোর্ট এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা, বেতন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ সংক্রান্ত ত্রুটির কারণে সরকারের প্রতি এঁদের দায়বদ্ধতা নেই। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে থানার আইসি থেকে শুরু করে অন্য পুলিশকর্মীরা এঁদের মাধ্যমে নানা অনৈতিক কাজ করছেন।
বিভূতি ভূষণ রায়
হাটথুবা, উত্তর ২৪ পরগনা
ছুটকো সুযোগ
‘মেয়ে বলিয়াই’ সম্পাদকীয়তে (২৭-৩) সঠিক ভাবেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, “মহিলাদের জন্য ভাবা বা কিছু করিবার অর্থ কি শুধুমাত্র বিনা পয়সায় যাতায়াতের সুযোগ দিবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ?” মহিলাদের জন্য সত্যিই ভাবা মানে মহিলাদের পুরুষের সমকক্ষ হয়ে ওঠার সুযোগ করে দেওয়া। সুযোগ ‘করে দেওয়ার’ প্রশ্নটি এই জন্যই যে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সব সুযোগ পুরুষেরই নিয়ন্ত্রণে। সেই রাশ যদি আলগা করা না হয়, তবে দু’-একটা ছুটকো সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে যে সামাজিক বৈষম্যের শিকার মেয়েরা যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে, তার তারতম্য ঘটবে না।
নব্বইয়ের দশকে ভারতের কর্মক্ষম মেয়েদের ৩০ শতাংশের বেশি রোজগারের সঙ্গে যুক্ত ছিল। লকডাউনের আগে তা ১৩ শতাংশে নেমেছে। লকডাউনের পর তা কোন তলানিতে, তার হিসেব এখনও হয়নি। লকডাউনে গার্হস্থ হিংসা বিশ্ব জুড়ে যে পরিমাণে বেড়েছে, তাকে রাষ্ট্রপুঞ্জ ‘ছায়া অতিমারি’ বলে অভিহিত করেছে। ভারতও ব্যতিক্রম নয়। লিঙ্গবৈষম্য আজও সমাজে শিকড় গেড়ে রয়েছে। যাঁরা আজ মহিলাদের বিনা পয়সায় যাতায়াতের কথা ঘোষণা করছেন, এই হিংসা, বৈষম্য থেকে বাঁচানোর কোনও সার্বিক প্রচেষ্টা তাঁদের সরকারের পক্ষ থেকে কেন লক্ষ করা গেল না!
ভাল হত, যদি বিজেপি নেতারা নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলতেন। কিন্তু তা হলে নেতাদের মানসিকতা বদলাতে হয়। তাতে তাঁদের মনুবাদী মানসিকতার ভিত্তি ধসে পড়বে। বিনা পয়সায় যাতায়াতের সুবিধা দানের প্রতিশ্রুতি নির্বাচনের আগে মেয়েদের প্রলুব্ধ করার গাজর মাত্র।
সমুদ্র গুপ্ত
কলকাতা-৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy