জয়া মিত্রের ‘পাহাড়-জঙ্গলের গাঁধী’ (২৯-৫) এবং চঞ্চলকুমার ঘোষের ‘যা করেছি, সবই পরিবেশ আর প্রকৃতিকে ভালবেসে’ (রবিবাসরীয়, ৩০-৫) দু’টি নিবন্ধই সময়োপযোগী। মানুষের লোভ আর নিষ্ঠুরতার জন্যে প্রকৃতি আজ বিপন্ন। গোটা বিশ্বে অতিমারির যে প্রকোপ আমরা দেখছি, তা-ও অরণ্য-ধ্বংস ও বৃক্ষনিধনের অন্যতম ফল। আজ মানুষ তার প্রয়োজন আর বিলাসিতার মাপকাঠিতে সব সম্পদের হিসেব করে। প্রকৃতির জগতে মানুষের মতো হিংস্র প্রাণী হয়তো আর নেই। প্রায় একশো বছর আগে ‘সভ্যতার সঙ্কট’ প্রবন্ধে দূরদর্শী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যা বলে গিয়েছেন, তা আজ অক্ষরে অক্ষরে ফলতে শুরু করেছে।
ভারতের বনভূমি, নদনদী ও সমগ্র পরিবেশ বাঁচানোর পুরোধা সুন্দরলাল বহুগুণাকে আমরা যথার্থ শ্রদ্ধা জানাতে ব্যর্থ, কারণ তাঁর কর্মধারা অনুসরণ করে প্রকৃতি রক্ষায় ব্রতী হতে পারিনি। তবু আগামী দিনে তাঁকে নতুন ভাবে স্মরণ করতে বাধ্য হবে মানুষ। ঐতিহাসিক চিপকো আন্দোলনের প্রচার এবং তেহরি বাঁধ তৈরির বিরোধিতা করেছিলেন সুন্দরলাল, যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি কোনও সময়েই অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। জীবনের অন্তিম প্রান্তে এসে এই মানুষটিকেই আক্ষেপ করে বলতে হয়— “মানুষের সর্বগ্রাসী লোভ প্রকৃতিকে বাঁচতে দেবে না, নিজেরাও এ ভাবেই শেষ হবে।”
শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া
নতুন মন্ত্র
‘পাহাড়-জঙ্গলের গাঁধী’ নিবন্ধটি পড়ে অভিভূত হলাম। গত ২১ মে মহাপ্রাণ পরিবেশবিদ সুন্দরলাল বহুগুণাকে আমরা হারিয়েছি। তাঁর গঢ়বালের চিপকো আন্দোলন বা প্রকৃতি বাঁচানোর অদম্য চেষ্টা সত্যিই মনকে অভিভূত করে। এই নিবন্ধে তাঁর কথা পড়ে কিছু মানুষও যদি অনুপ্রাণিত হন, আমাদের পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলার অরণ্য বাঁচিয়ে রাখার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেন, উপকৃত হবে প্রকৃতি। বনসৃজন হোক আমাদের মন্ত্র। নির্বিচারে গাছ কেটে ধ্বংস করার মনোবৃত্তিকে রোখা শুধুমাত্র সরকারি চেষ্টায় হবে না, এর জন্য আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। সঙ্গে জঙ্গলের আদিবাসী সমাজের রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা করতে হবে, এবং অরণ্য রক্ষার কাজ তাঁদের হাতেই তুলে দিতে হবে।
সুব্রত সরকার , আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান
ক্ষতির হিসেব
রাষ্ট্র আজও পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতিকে উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে যুক্ত করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিমাপ করে উঠতে পারল না। পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করার একটা সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি তৈরি করতে হবে, এবং সেই অনুসারে ক্ষতিপূরণ নির্দিষ্ট করতে হবে। যিনি ক্ষতি করছেন, তাঁর উপরে ক্ষতিপূরণের দায় যদি কঠোর ভাবে আরোপ করা না হয়, তা হলে তা মানবসভ্যতা ধ্বংসের কারণ হবে। বহুগুণা তাঁর শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সর্বদা এই বার্তা দিয়ে গিয়েছেন। সুস্থ পরিবেশ দিয়ে স্থিতিশীল অর্থনীতি তৈরির ধারণা আগামী দিনে জাতীয় অর্থনীতির একমাত্র নীতি হোক— এই আবেদন রইল আজকের নীতিপ্রণেতাদের কাছে।
অনুপ কুমার সাহা, কল্যাণী, নদিয়া
হিমালয়
জয়া মিত্রের লেখা প্রসঙ্গে বলতে চাই, সুন্দরলাল শুধুমাত্র পরিবেশ-সংরক্ষক বা পরিবেশ-আন্দোলনকারী ছিলেন না, তিনি ছিলেন প্রকৃতির প্রতি ভালবাসার এক মূর্তরূপ। মানুষ এবং প্রকৃতির সম্পর্ক সন্তান ও মাতার, এই সত্যটি আজ মানুষ মনে রাখে না। পরিবেশ ধ্বংস করে, পল্লিজীবনকে নষ্ট করে নির্বিচারে নগর, রাস্তা, বাজার, ইমারতের জঙ্গল নির্মাণ করে চলেছি আমরা। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদ সীমাহীন নয়। আমরা প্রকৃতি সংরক্ষণ নিয়ে অনেক ভাষণ শুনে থাকি; কিন্তু গাছপালা নিশ্চিহ্ন হচ্ছে, প্রান্তর অদৃশ্য, দিঘি বিলুপ্ত। যাঁরা বলার চেষ্টা করছেন যে, গোড়াতেই গলদ, উন্নতির অন্য মডেল নিয়ে এগোতে হবে, তাঁদের কথাকে বাতুলতা বলে ভাবা হচ্ছে। সুন্দরলাল বহুগুণা হিমালয় ও সন্নিহিত অঞ্চলের অরণ্য, পাহাড়, নদী, গ্রামকে যান্ত্রিক ও ভোগবাদী উন্নয়নের নির্মম জাঁতাকল থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। হিমালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিনাশের জন্য দায়ী জনবৃদ্ধি, নগরায়ণ, বিচারহীন এক কৃত্রিম আধুনিকতার প্রয়োগ, আর পাহাড় কেটে ও নদীস্রোত রুদ্ধ করে ‘উন্নয়ন’-এর প্রতিযোগিতা। নীতিপ্রণেতাদের, প্রশাসকদের কি এক বারও মনে হয় না যে, হিমালয়ের পার্বত্য পরিবেশের জন্য একটু অন্য ধরনের চিন্তা-ভাবনা দরকার ছিল? উন্নয়নের নামে প্রকৃতিকে ধারাবাহিক ভাবে বিধ্বস্ত করার মধ্যে একটা ঔদ্ধত্য আছে, কারণ বিধাতার সৃষ্টিকে বিনষ্ট করার অধিকার মানুষের নেই। ভারতে হিমালয় নিয়ে কত ভাব ও আবেগের চর্চা হয়; ধর্ম, কাব্য, সাহিত্য, চিত্রকলা— সবেতেই হিমালয়ের মাহাত্ম্য। কিন্তু হিমালয়কে বাঁচাতে কত জন উদ্যমী? সুন্দরলাল যে সহজাত মমতা নিয়ে হিমালয়কে দেখতেন, তা সবার মধ্যে নেই। প্রকৃতির জন্য মমত্ববোধ যাঁদের নেই, তাঁরা পরিবেশ বিজ্ঞানের পাঠ নিয়েও পরিবেশ বাঁচাতে আগ্রহ বোধ করবেন না। সুন্দরলালের জীবনের ব্রত তাই ভারতে অপূর্ণ থেকে যাবে। তাঁর ভাবতরঙ্গ আমাদের চেতনায় অনুভব না করতে পারলে তাঁর কাজ অনুসরণ করাও সম্ভব হবে না। সুন্দরলাল যখন আন্দোলনে নেমেছিলেন, সেই সময়ে আধুনিক পরিবেশ আন্দোলনের তত প্রচলন হয়নি। কিন্তু তিনি বুঝেছিলেন যে, উন্নতির নামে প্রকৃতির ধ্বংস মেনে নিলে আত্মবিনাশকে ডেকে আনা হবে। পরিতাপের বিষয়, আজ এত দশকেও সুন্দরলালের সেই দৃষ্টি, দর্শন আমরা রাষ্ট্রজীবনে গ্রহণ করতে পারলাম না। তিনি গাঁধীধর্মী সংস্কৃতির ধারক ছিলেন; অহিংসা-তত্ত্বকে প্রকৃতির ক্ষেত্রে প্রসারিত করেছিলেন। চেয়েছিলেন, প্রকৃতির প্রতি মানুষ যেন হিংস্র আচরণ না করে, প্রয়োজনে নিজের জীবনযাত্রাকে সরলতর করে যেন প্রকৃতিকে বেঁচে থাকার অবকাশ দেয়, কারণ তাতেই মানবজীবনের সার্থকতা।
শতদল ভট্টাচার্য, কলকাতা-৯১
পানিহাটিতে কবি
‘দেড়শোয় পা’ (কলকাতার কড়চা, ২৯-৫) পানিহাটির ছাতুবাবুর বাগানবাড়ি তথা আজকের গোবিন্দহোমে রবীন্দ্রনাথের পদার্পণের দেড়শো বছরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে শ্রদ্ধায়। রবীন্দ্রনাথের জীবনে পেনেটির পল্লিপ্রকৃতি, গঙ্গা, আকাশ-বাতাস এক অতুল ঐশ্বর্যসম্ভার নিয়ে প্রকাশিত। বারে বারে এই সাময়িক বাস তাঁর চিন্তনে ঠাঁই নিয়েছে, জারিত করেছে কল্পনাকে। আমৃত্যু এই স্মৃতি তাঁর বিভিন্ন প্রবন্ধ, চিঠি ও কবিতায় ফিরে এসেছে। প্রসঙ্গত, কলকাতার কড়চায় এই প্রতিবেদন প্রকাশের দিনেই, ২৯ মে (১৯১৯) রবীন্দ্রনাথ দ্বিতীয় বার এই বাগানবাড়িতে আসেন। এর প্রেক্ষাপট জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ড, ওই বছরের ১৩ এপ্রিল ইংরেজ সেনানায়ক ডায়ারের নির্দেশে যা সংঘটিত হয়। জালিয়ানওয়ালা বাগের বদ্ধ উদ্যানে সমবেত নিরস্ত্র জনগণের উপর গুলিবর্ষণ করে হত্যার ঘটনায় কবি উদ্বিগ্ন, যন্ত্রণাবিদ্ধ হন। শান্তির খোঁজে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশকে নিয়ে তিনি এসেছিলেন পেনেটির বাগানবাড়িতে। কিছু সময় ছিলেন, গঙ্গার ধারে ও পুকুরের কাছে পায়চারি করেন, দোতলার যে ঘরে বালক বয়সে ১৮৭২ সালে এসেছিলেন, সেই ঘরে যান। কিছু ক্ষণ থেকে ফিরে যান জোড়াসাঁকোতে। পর দিন, ১৯১৯ সালের ৩০ মে বড়লাট চেমসফোর্ডকে লেখেন অবিস্মরণীয় সেই চিঠি, ইংরেজদের দেওয়া নাইটহুড ত্যাগের সিদ্ধান্ত।
১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ২৪ পরগনা জেলার ডিস্ট্রিক্ট গেজ়েটিয়ারেও এই ঐতিহাসিক ২৯ মে দিনটির কথা বলা আছে।
শেখর শেঠ, কলকাতা-১১৫
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy