কেবল বয়সের অজুহাত দেখিয়ে আচমকাই ভারতীয় টেস্ট দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে ধোনি-পরবর্তী যুগে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সফল উইকেটরক্ষক-ব্যাটার তথা বঙ্গসন্তান ঋদ্ধিমান সাহাকে। সাম্প্রতিক কালে কানপুর টেস্টে চোট নিয়ে ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস খেলার পরেও ঋদ্ধিকে দলে স্থান দেননি নির্বাচকরা। ভবিষ্যতেও যে তাঁকে ভারতীয় দলে আর বিবেচনা করা হবে না, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ঋদ্ধিকে। একপ্রকার বলপূর্বকই ঋদ্ধির আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে ইতি টানতে চাইছেন চেতন শর্মার নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি। অথচ, এত কিছুর পরও আশ্চর্যজনক ভাবে তাঁর নিজের রাজ্যের ক্রিকেট সংস্থা সিএবি ঋদ্ধি-প্রসঙ্গে একেবারে চুপচাপ! ঋদ্ধির পাশে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দেওয়া কিংবা বোর্ডের কাছে ঋদ্ধির সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করা তো দূর অস্ত্, উল্টে মিডিয়ায় মুখ খোলায় বিভিন্ন সময়ে ঋদ্ধিকেই পরোক্ষ ভাবে দোষারোপ করছেন সিএবি কর্তারা। অতীতে গ্রেগ চ্যাপেলের জমানায় যখন আর এক বঙ্গসন্তান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তখন মিডিয়া-সহ গোটা বঙ্গসমাজ গর্জে উঠেছিল। তৎকালীন সিএবি সভাপতি থেকে শুরু করে বিসিসিআই প্রধান জগমোহন ডালমিয়া, সকলেই পাশে থেকে, লড়াই করে হারানো জায়গা তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ, যখন শুধুমাত্র বয়সের অজুহাতে ঋদ্ধিকে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে, তখন সেই সৌরভই আজ বিসিসিআই সভাপতি হয়েও সম্পূর্ণ নীরব দর্শক। এমনকি নিজের অ্যাসোসিয়েশন সিএবি-তেই ঋদ্ধির পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আশ্চর্য রকম অনীহা দেখা গিয়েছে। সিএবি সভাপতি নিজেও প্রথম থেকেই ঋদ্ধি-প্রশ্নে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, নিঃস্বার্থ ভাবে এত বছর রাজ্য ও দেশের সেবা করার পর এটাই কি তবে প্রাপ্য ছিল ঋদ্ধির?
সুদীপ সোম
হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
মেয়েদের প্রেরণা
মহিলাদের এক দিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ঝুলন গোস্বামীর কৃতিত্বের কথা পড়ে এক জন ভারতীয় হিসাবে গর্বে বুক ভরে উঠল। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হয়ে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় আজ বিশ্ব দরবারে নিজের নাম উজ্জ্বল করেছেন তিনি। সচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহলিদের মতোই তিনিও ভারতকে সম্মান এনে দিয়েছেন। অদম্য জেদ ও প্রচেষ্টা এর পিছনে কাজ করেছে।
কিন্তু এত গুণের মেয়েকে নিয়ে তেমন কোনও প্রচার নেই। এখনকার মেয়েদের বলিউডের নায়িকাদের নাম, ধাম, ইতিহাস মুখস্থ। কিন্তু ক’জন জানেন ঝুলন গোস্বামীর কথা, তাঁর রেকর্ডের কথা? যদি তাঁর সংগ্রামের কথা প্রচার করা হয়, তা হলে আমাদের এই ঘরের মেয়েটি অনেক মধ্যবিত্ত মেয়ের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারেন। শুধু খেলার জগতে নয়, জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেখানে মেয়েরা স্বপ্নপূরণের জন্য লড়াই করছেন, সেখানে তাঁরা ঝুলনকে আদর্শ হিসাবে সামনে রাখলে অনুপ্রাণিত ও সফল হতে পারবেন। ঝুলনের আরও উন্নতি ও সাফল্য কামনা করি।
সর্বানী গুপ্ত
বড়জোড়া, বাঁকুড়া
বঙ্গকন্যার নজির
বাংলা তাঁকে চেনে ‘চাকদহ এক্সপ্রেস’ নামে। এখন কেউ বলছেন তিনি অদম্য যোদ্ধা, কেউ জীবন্ত কিংবদন্তি। অনেকেরই বক্তব্য, তিনি মেয়েদের ক্রিকেটের চেহারাটাই পুরো বদলে দিয়েছেন। সারা দুনিয়া তাঁকে জানাচ্ছে আন্তরিক ভালবাসা, করছে কুর্নিশ। তিনি, চাকদহের ঝুলন গোস্বামী, ভারতের সর্বকালের সেরা মহিলা পেস বোলার। ১৬ মার্চ ওয়ান ডে বিশ্বকাপের ম্যাচে ইংল্যান্ডের ট্যামি বোমন্টকে আউট করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি হয়েছেন ওয়ান ডে-তে ২৫০ উইকেট শিকারের অধিকারিণী। মেয়েদের ক্রিকেটেও যে কেউ ২৫০ উইকেট পেতে পারে, এ কথা সারা দুনিয়ায় বোধ হয় খুব বেশি জন ভাবেননি। তা ছাড়া, ১৯ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওয়ান ডে-তে দু’শোতম ম্যাচ খেলার বিশ্বরেকর্ডও গড়েন। শাবাশ ঝুলন।
দেশ-বিদেশের বহু কীর্তিমান খেলোয়াড় তাঁকে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও ভালবাসা জানিয়েছেন। মনে প্রশ্ন জাগে যে, এই অনন্য কীর্তি গড়ার পরও কি ঝুলনের সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হবে? তাঁর ও তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থার কোনও উন্নতি হবে? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই দেশে পুরুষদের সি গ্রেডের ক্রিকেটাররা বছরে না খেলেও কোটি টাকা আয় করেন, খেললে মেলে আরও পুরস্কার। বিজ্ঞাপন থেকেও আয় হয়। তা হলে ঝুলন কেন পাবেন না তাঁর যথাযথ স্বীকৃতি ও আর্থিক পুরস্কার? কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেই তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান ও আর্থিক সাহায্য দেওয়া উচিত। এটা তো মানতেই হবে যে, ২০ বছর আগে ঝুলন যখন প্রথম ব্যাট, বল নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন তখন অবস্থা ছিল বড়ই প্রতিকূল। অনেক বিদ্রুপ, কটূক্তি ও তির্যক মন্তব্য শুনতে হয়েছিল তাঁকে। তবে পরিবার পাশে ছিল আর ছিল ঝুলনের অদম্য জেদ ও ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা। নিজের বাড়ি চাকদহ থেকে ট্রেনে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে ময়দানে ক্রিকেট খেলতে আসা ও খেলে আবার বাড়ি ফিরে যাওয়া মোটেও সহজ কাজ ছিল না। আর খেলাধুলো করার জন্য যে পরিমাণ প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন, তখন তা-ও তাঁর জোটেনি।
কোনও সন্দেহ নেই ঝুলনের এই বিরল কৃতিত্বে শুধু ক্রিকেট নয়, অন্যান্য খেলার বহু খেলোয়াড়ও উৎসাহিত ও উজ্জীবিত হবেন। ঝুলন, আপনি আরও অনেক অনন্য কীর্তি ও নজির গড়ুন, দেশবাসীর এমনই শুভেচ্ছা রইল।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
বাঙালির হিরো
শতবার্ষিকী ক্রোড়পত্রে (১৮-৩) সুমন দে-র ‘বাঙালির অরণ্যদেব’ লেখাটি আমাদের ছোটবেলাকে ফিরিয়ে দিল। ওই সময়ে (সত্তরের দশকের মাঝামাঝি) সংবাদপত্র হাতে পেলেই আগে পড়ে ফেলতাম অরণ্যদেব। লেখক একদম ঠিক বলেছেন “চলমান অশরীরীর ‘বং কানেকশন’-এর শিকড় গভীরে।” কল্পনাপ্রবণ বাঙালি পাঠক ডেনকালির সঙ্গে এই বঙ্গের সন্দেশখালি, ঝড়খালির মিল খুঁজতেই পারেন! সুন্দরী ডায়ানা পামার— কিশোর কিশোরী থেকে বড়দেরও পরম প্ৰিয়। সাধারণ বাঙালি মায়ের মতো ডায়ানার মা-ও চাইতেন তাঁর সুন্দরী, প্রতিষ্ঠিত মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হোক কোনও প্রতিষ্ঠিত পাত্রের। কিন্তু মেয়ে পছন্দ করল কিনা এক চালচুলোহীন মুখোশধারীকে, যে আবার মাঝে মাঝে জানলা দিয়ে তাঁদের বাড়িতে ঢুকত! আবার ডায়ানা তাঁর বাচ্চাদের নিয়ে গাছবাড়িতে থাকবে শুনে তাঁর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল— ‘ডায়ানা গাছে থাকছে!’ ওই গল্পগুলো এখনও আমাদের হৃদয়ে গাঁথা হয়ে আছে।
লেখক ঠিকই বলেছেন, অস্থিরতার সময়ে সমস্যা জর্জরিত মানুষ এক জন অতিমানবের কল্পনা করতে ভালবাসে যে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনকর্তা হিসাবে আবির্ভূত হবে। তাই অরণ্যদেব এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল সেই সমস্যাসঙ্কুল সময়ে। তিনি ঠিক সময়ে পৌঁছে গিয়ে দুষ্টের দমন করতেন— ‘বেতালের গতিবেগের কাছে বিদ্যুৎ শ্লথ’, (প্রাচীন অরণ্য প্রবাদ)। তাঁর করোটি চিহ্ন ছিল দুষ্টু লোকেদের কাছে বিভীষিকাস্বরূপ, আবার তাঁর শুভ চিহ্ন ছিল সুরক্ষার প্রতীক।
আনন্দবাজার-এর পাতায় আমরা অরণ্যদেব ছাড়াও পেয়েছি জাদুকর ম্যানড্রেক ও তাঁর যোগ্য সহকারী বলিষ্ঠ লোথারকে। ম্যানড্রেকের সম্মোহনের মায়ায় আমরা আচ্ছন্ন হয়ে যেতাম, সঙ্গে ছিল সুন্দরী নার্দা ও কার্মা। আর পেয়েছি রিপ কার্বি ও ডেসমন্ডকে। গোয়েন্দা রিপ ছিলেন একদম সাধারণ মানুষ, কিন্তু তুখোড় বুদ্ধিসম্পন্ন। আর, ডেসমন্ড ছিল দুষ্টু- মিষ্টি। এই কমিকস পড়ার মধ্যে দিয়ে পরবর্তী কালে আমরা সামাজিক, রাজনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি।
দেবযানী চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৮৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy