‘পথ দেখাবে গণ-আলোচনা’ (১৪-৮) সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাধীন ভারতের ৭৫ বছরের গতিশীল গণতন্ত্রের উপর নিজস্ব পর্যবেক্ষণকে সুচারু ভাবে তুলে ধরেছেন। তাঁর আলোচনার এক দিকে গুরুত্ব পেয়েছে সংরক্ষণের দিকটি, আর অন্য দিকে নিচুতলার মানুষের মান্যতা পাওয়ার বিষয়টি। ভারতীয় গণতন্ত্রে সংরক্ষণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সাম্য ও নাগরিক সত্তার বিকাশের ক্ষেত্রে এর কোনও বিকল্প নেই। তবে সংবিধান সংরক্ষণের যে পরিসর প্রস্তুত করেছিল, ক্রমে তার কলেবর বৃদ্ধি হয়েছে। ৩০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সর্বভারতীয় মেডিক্যাল পরীক্ষায় ২৭% ওবিসি-র সঙ্গে আরও ১০% আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সংরক্ষণের নিদান দিয়েছেন। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে নিশ্চয়ই খুঁটিনাটি তথ্য আছে। তবে এই ৭৫ বছরে কোনও একটি পিছিয়ে-পড়া শ্রেণির উন্নতি ঘটেছে, এমন কোনও তথ্য নেই। তা হলে কি অনন্তকাল ধরে দেশ সংরক্ষণের ঠেকা দিয়ে সমাজবিপ্লব আনবে? সংরক্ষণের সুযোগপ্রাপ্ত পড়ুয়াকে ছাত্রাবাসে নিখরচায় রাখা হয়, চাকরিতে আসন সংরক্ষণ ছাড়াও পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর, বয়সের ছাড় এবং পরীক্ষার ‘ফি’-এ ছাড় দেওয়া হয়। সংরক্ষিত প্রার্থী চাকরিতে ঢোকে, পদবি কিন্তু তাঁকে পিছিয়ে পড়া শ্রেণিতেই রেখে দেয়। আরও অবাক লাগে, চাকরি পাওয়ার পর আর্থিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত মানুষটি যখন আবার কোনও চাকরির জন্য আবেদন করেন, তখন আবার ছাড় পান। তা হলে কি প্রথম চাকরিটি তাঁর কোনও সামাজিক ও আর্থিক উন্নতি করতে পারেনি? সংরক্ষণের পরিসর বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই সব খুঁটিনাটি বিষয় এড়ানো হচ্ছে কেন? সামাজিক ক্ষেত্রেও সংরক্ষণের প্রভাব যে ক্ষেত্রগুলিতে চিরস্থায়ী উন্নতি করেছে, তার পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে।
অভিজিৎবাবু গণতন্ত্রের উন্নতিকরণে গণপরিসরে আলোচনার কথা ব্যক্ত করেছেন। দিন কয়েক আগেই আমাদের সংসদে বাদল অধিবেশন গেল। নির্বাচন ও বহুবিধ অনুশীলনের পর আমরা যাঁদের আমাদের কথা ব্যক্ত করার জন্য সংসদে পাঠিয়েছি, তাঁরা কেমন আলোচনা করেছেন, তা দেখা গেল। তুমুল বিশৃঙ্খলায় নির্ধারিত সময়ের দু’দিন আগেই সংসদের দরজা বন্ধ হয়ে গেল। অভিজিৎবাবু সমাজমাধ্যমে আলোচনার উপর আলোকপাত করেছেন। কিন্তু সমাজমাধ্যম যেন সমাজের উচ্চস্তরের মানুষের জন্য সংরক্ষিত হয়ে আছে। তার সঙ্গে দিন-আনা-দিন-খাওয়া মানুষের বিশেষ যোগ নেই।
সব্যসাচী ধর
সিউড়ি, বীরভূম
উদারনীতির ফল
অমর্ত্য সেন দারিদ্র-দুর্ভিক্ষের উৎস, তার থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে সর্বজনীন তত্ত্ব নির্মাণ করেছেন, কিন্তু পিয়েরো স্রাফার পরামর্শ শিরোধার্য করে সেই তত্ত্বকে স্লোগানে পরিণত করা থেকে সদা বিরত থেকেছেন। সহনীয়তার এর চেয়ে বড় উদাহরণ খুব একটা নেই। তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় (‘পথ দেখাবে গণ-আলোচনা’) এখন সেই পথের পরবর্তী সংস্কারে প্রয়াসী। ভারতীয় হিসেবে এটা আমাদের পরম প্রাপ্তি।
গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে উদারনীতির পালে প্রবল হওয়া। জগদীশ ভগবতী সেই ১৯৬৬ থেকে দিল্লির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার পর তখন আর্থার ডাঙ্কেলের আর্থিক নীতির উপদেষ্টা এবং ‘গ্যাট’ চুক্তিপত্রের অন্যতম রূপকার। রোজ তিনি অমর্ত্যকে তুলোধোনা করে চলেছেন, কারণ উদ্বাহু হয়ে উদারীকরণের আহ্বান অমর্ত্যের না-পসন্দ। স্বয়ং মনমোহন সিংহ মুক্ত বাণিজ্যনীতির পক্ষে। সারা দেশ দু’ভাগে বিভক্ত।
এত বিপুল জনসংখ্যার দেশ শেষমেশ চুক্তিবদ্ধ হল। সে দিনের ধার-করা উদারনীতির ফল পাচ্ছি আজ হাতেনাতে। জিডিপি বাড়ল, কিন্তু অতি ধনীরা আরও ধনী হলেন, আর সাধারণ মানুষ পেলেন লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি। দেশের যেটুকু প্রাপ্তি— রেশন, একশো দিনের কাজ আর কৃষিঋণ প্রদান— তা কেবল ‘ওয়েলফেয়ার ইকনমি’-র জোরে। আর এক বাঙালি মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে বিশ্ব-স্বীকৃত কাজ করলেন। মনে রাখতে হবে, সারে ভর্তুকি তুলে নেওয়া নিয়ে কৃষকদের কম বিক্ষোভ হয়নি। ঠিক এখানেই অভিজিৎ বলেন, সম্পদ করের সংস্কার করতে হবে। তবেই অর্থের বণ্টনে ভারসাম্য বজায় থাকবে। স্বাধীনতার পর দশ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ রাখার কথা। যাঁরা ক্ষমতায় এলেন, তাঁরা সবাই ক্ষুদ্র স্বার্থে সংরক্ষণ নীতির সংস্কার না ঘটিয়ে একই রকম রেখে দিলেন। এখন সংরক্ষিতরা কেউ কেউ বিত্তবান। এঁদের যে সংরক্ষণ আর দরকার নেই, এ কথা কে বলবে। এ দিকে অগ্রসর শ্রেণির এখনও যাঁরা পিছিয়ে পড়া, তাঁদের মধ্যেও শ্রেণিবিন্যাস দরকার। আর এক শ্রেণি আছে পিছনের দিকে, যাদের সাংস্কৃতিক পুঁজি প্রায় শূন্য— এদেরও ভিন্ন আকারের সংরক্ষণ চাই। সবার জন্য চাই স্কোর কার্ড এবং তাতে পয়েন্ট দেওয়া হবে। এটাই হবে সংস্কার, তবেই আসবে উন্নয়ন।
বুদ্ধিজীবী আর শাসককুলের জন্যও পরামর্শ দিয়েছেন অভিজিৎ— গণ-আলোচনার পথ খুলে দিতে হবে। যাঁরা ক্ষুদ্র, তাঁদের পরামর্শ মোটেই তুচ্ছ নয়। সকলের কথায় কান দিতে হবে, গড়ে তুলতে হবে সুনাগরিক। গণতন্ত্রে মতের বিনিময় যেন বাধাপ্রাপ্ত না হয়। ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’, ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’ তো আমরা দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে। কত কম খরচে কত গিগাবাইট ডেটা মানুষের হাতে তুলে দিলাম, কেবল তা দিয়ে দেশহিত হয় না। অতি ধনীদের সম্পদে লাগাম টানতে করের সংস্কার করা প্রয়োজন।
বিমল জানা
বেলদা, পশ্চিম মেদিনীপুর
অভিজ্ঞতার মূল্য
দেশের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার-ভিত্তিক রচনাটির জন্য ধন্যবাদ। উপর থেকে জ্ঞান চাপিয়ে দেওয়ার একটা নির্লজ্জ চেষ্টা প্রায় সর্বত্র চলেছে। উপযুক্ত তথ্য, পরিসংখ্যান ও যুক্তি ছাড়া তার কোনও বাস্তব মূল্য বা সামাজিক উপযোগিতা নেই। অভিজিৎবাবু দাবি করেছেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৮১ দেশে আর্থিক অসাম্য কমেছিল, কিন্তু পরের ৪০ বছরে তা আবার বেড়েছে। রাষ্ট্রকে এই কঠিন সত্য স্বীকার করে নিয়েই, সঠিক লক্ষ্যে এগোতে হবে। ‘উপর থেকে জ্ঞান আসবে নীচে’, এমন গণতন্ত্র সত্যিই কাম্য হতে পারে না। দেশের বৃহত্তর যে জনসমাজ, যারা আছে মাটির কাছাকাছি, তাদের অভিজ্ঞতার মূল্য নেহাত কম নয়। তাদের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনতে হবে।
রামকৃষ্ণ দে
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
ইলিশের কাঁটা
ইলিশ মাছ নিয়ে কিছু বাঙালি নেহাতই আদিখ্যেতা করেন। অনেকের কাছে মাছটি বিরক্তিকর। এর গন্ধ অনেকের কাছেই অসহ্য। সরু সরু চুলের মতো কাঁটায় ভর্তি। ইলিশের মাথা দিয়ে কচুশাক বহুজন-প্রিয় খাদ্য। ফলস্বরূপ, সমগ্র রান্নাটিতেই কাঁটার উৎপাত। গলায় একটা যদি বেয়াড়া রকম আটকে যায়, ভয়ঙ্কর অবস্থা হয়। যেমনটা বিধানচন্দ্র রায়ের হয়েছিল। বরফের স্তূপের নীচে দিনের পর দিন রাখা মাছের লাশ হাজার হাজার টাকা দিয়ে কিনে সগর্বে ব্যাগে ঢোকানোর মধ্যে কতখানি গৌরব আছে, কে জানে!
সুগত ত্রিপাঠী
মুগবেড়িয়া, পূর্ব মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy