এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে শূন্য হাতেই ফিরতে হল ভারতকে। এমন তো নয় যে ভারত এর আগে কোনও দিন খালি হাতে ফিরে আসেনি। অতীতেও বহু বার হয়েছে। খেলায় সাফল্যের সঙ্গে ব্যর্থতাও থাকে, আর সেখান থেকেই উত্তরণের পথ খোঁজা হয়। কিন্তু ‘ফেভারিট’ তকমা নিয়েও এই ব্যর্থতা কিছুটা নিজেদেরই তৈরি করা। নির্বাচক প্রধান চেতন শর্মার দল ঘোষণার দিনেই ছিল অশনিসঙ্কেত। ফর্মে থাকা শিখর ধবন, যুজবেন্দ্র চহালের বাদ যাওয়া, গোটা আইপিএল-এ বল না করা আধা ফিট হার্দিক পাণ্ড্যকে দলে অন্তর্ভুক্ত করার সময় থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় এই দলের ভবিষ্যৎ। হাই ভোল্টেজ পাক ম্যাচ হারার পর টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে কী করা উচিত, সে বিষয়ে কোনও পরিষ্কার ধারণা ছিল না। তা না হলে নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে মরণ-বাঁচন ম্যাচে রোহিতকে সরিয়ে কী ভাবে আনকোরা ঈশান কিষাণ ওপেনার বনে যান? ২০ ওভার ব্যাট করবেন বলে বিরাট আইপিএলে ওপেন করলেন, আর আসল সময়ে নেমে গেলেন চারে।
ভারতীয় বোর্ডও দায় এড়াতে পারে না। বিশ্বকাপের আগে জৈব বলয়ের মধ্যে ঠাসা সূচি ক্রিকেটারদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে, এটা বোঝা উচিত ছিল। বিশ্বকাপের আগে কিছুটা বিশ্রাম হয়তো উপকারী হতে পারত। ভারতের মানুষের কাছে ক্রিকেট হল ধর্ম। এখন মানুষ তো প্রশ্ন তুলবেই— কোনও ক্রিকেটারের ব্র্যান্ড ভ্যালু বেশি বলেই কি দলে? বোর্ডের কোষাগার ভর্তি করাই কি শেষ কথা? বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করা হোক। যে ভয়ডরহীন ক্রিকেটের কথা বলা হয়, তার প্রকৃত বাস্তবায়ন হোক। তখন খালি হাতে ফিরে এলেও দুঃখ, হতাশা অন্তত থাকবে না।
রমাপ্রসাদ মণ্ডল
গুসকরা, পূর্ব বর্ধমান
ব্যর্থতার দায়
আরও একটা আইসিসি টুর্নামেন্ট কেটে গেল, কিন্তু এ বারও ভারতীয় ক্রিকেট দলের ট্রফি জয়ের খরা কাটল না। শেষ বার ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে কোনও আইসিসি খেতাব জিতেছিল ভারত। তার পর কেটে গিয়েছে প্রায় আট বছর। কোচ পরিবর্তন হয়েছে, অধিনায়কত্বের ব্যাটন ধোনির থেকে কোহালির হাতে গিয়েছে। অথচ, এখনও স্বাদ পাওয়া যায়নি কোনও আইসিসি ট্রফি জয়ের। মাঝে কোহালির নেতৃত্বে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ২০২১ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে উঠলেও খেতাব জয় থেকে এক ধাপ দূরেই থামতে হয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা দলকে। এ বারেও গ্রুপ স্টেজ থেকে বিদায় নেওয়াটা সেই ব্যর্থতার লিস্টেই নবতম সংযোজন। অন্যতম ফেভারিট হিসাবে টুর্নামেন্ট শুরু করেও কোহালির নেতৃত্বাধীন দলের এই ধরনের হতাশাজনক প্রদর্শন ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় হয়েই থেকে যাবে। সকলেই এই ব্যর্থতার দায় চাপাচ্ছেন ছ’মাস একটানা ক্রিকেট এবং বায়ো বাব্লে থাকার চাপের উপর। কিন্তু বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল এবং লম্বা ইংল্যান্ড সিরিজ় খেলার পর কেন সিনিয়র ক্রিকেটারদের বিশ্রাম না দিয়ে একটানা আইপিএল খেলানো হল, সে প্রশ্ন কেউ তুলছেন না। অন্য দেশের তাবড় ক্রিকেটাররা আইপিএল থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছিলেন শুধুমাত্র বিশ্বকাপে সেরাটা দেওয়ার জন্য। অন্য দিকে ভারতীয় ক্রিকেটাররা বিশ্বকাপ শুরুর দিন পাঁচেক আগেও চুটিয়ে আইপিএল ম্যাচ খেলে গিয়েছেন।
সুদীপ সোম
হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
স্বপ্নভঙ্গ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথম রাউন্ডেই ভারতের বিদায়। সমস্ত ক্রিকেট ভক্তের কাছে এটা স্বপ্ন ভঙ্গেরই শামিল। যেখানে ধরেই নেওয়া হয় আমাদের ব্যাটিং লাইনআপ বিশ্বসেরা এবং বোলিং আক্রমণ অন্যতম সেরা, সেখানে এই ফলাফল হতাশাজনক। কিন্তু গত আট-ন’বছর ভারতীয় ক্রিকেট পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে ২০১১ বিশ্বকাপের পর কোনও বড় মাপের আইসিসি ট্রফি ভারত জিততে পারেনি। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে, যে কোনও নকআউট ম্যাচে ভারত মানসিক ভাবে আগেই হার নিশ্চিত করে ফেলছে। বড় মঞ্চে চোকার্স তকমা এখন মনে হয় আমাদের ক্রিকেট টিমেরই প্রাপ্য। দীর্ঘ দিনের এই রোগ সারিয়ে তোলার ব্যবস্থা ভারতীয় বোর্ডকে খুব দ্রুত নিতে হবে। তা না হলে অচিরেই ভারতীয় ক্রিকেটের গৌরবময় ইতিহাস ধীরে ধীরে শেষ হতে থাকবে।
সৌগত কাঞ্জিলাল
রামপুর হাজরা লেন, বাঁকুড়া
ফিরুক শৃঙ্খলা
‘রাহুলে আস্থা, ক্লান্তির দিকে আঙুল শাস্ত্রীর’ (৯-১১) শীর্ষক প্রতিবেদনে পড়লাম, রবি শাস্ত্রী নতুন কোচ রাহুল দ্রাবিড়ে আস্থা প্রদর্শন করেছেন এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্যর্থতার জন্য ক্লান্তির দিকে আঙুল তুলেছেন। ক্লান্তির দিকে আঙুল তোলা আসলে অজুহাত। এই মুহূর্তে সবচেয়ে স্বস্তির খবর রাহুলের কোচ হয়ে আসা, তার চাইতেও স্বস্তির খবর কোচ হিসাবে রবি শাস্ত্রীর বিদায়। অনিল কুম্বলের মতো এক জন অত্যন্ত ভদ্র, দেশ অন্তপ্রাণ খেলোয়াড়কে কোচের পদ থেকে সরিয়ে ২০১৭ সাল থেকে ভারতীয় দলের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে শাস্ত্রী-কোহালি জুটি। চুলোয় যায় দলের শৃঙ্খলা। ব্যাটার হিসাবে কোহালি অসাধারণ, সন্দেহ নেই। একাধিক দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন, যা দেখে চোখ জুড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু অধিনায়ক হিসাবে অজস্র ভুল করা সত্ত্বেও বিদেশের মাঠে পর পর জয় এসেছে। সেই সঙ্গে মিডিয়া আর অপদার্থ কোচ বিরাটকে করে তুলেছে অতিমানব। অশ্বিনের মতো স্পিনারকে দিনের পর দিন বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত কি ক্রিকেটীয়, না কি কোচ অধিনায়কের মিলিত ঔদ্ধত্য— প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার দিলীপ বেঙ্গসরকর। হেরে গিয়েই আইপিএল আর জৈব বলয়ের ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলা যায় না। ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে শীর্ষ ক্যাটেগরিতে চুক্তিবদ্ধ তাঁরা বছরে কোটি কোটি টাকা পান। ম্যাচপিছু টাকা আলাদা। আর এই দেড় মাস আইপিএল খেলার জন্য আরও কয়েক কোটি। তার উপর বিজ্ঞাপনের আয়। জানতে ইচ্ছে করে, কারা এই মূল্যায়ন করেন? বোর্ডেরও উচিত কোচিং স্টাফ বাছার ব্যাপারে অকারণ নিয়োগে রাশ টানা। রাহুল দ্রাবিড় ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটার। সেখানে বিক্রম রাঠৌরের মতো ব্যাটিং কোচের কোনও প্রয়োজন আছে কি? ভরত অরুণের জায়গায় জাভাগল শ্রীনাথ বা জাহির খানের মতো কাউকে কি আনা যায় না? ফিরে আসুক দলের শৃঙ্খলা, যা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। দল হিসাবে সাফল্য আসা নিশ্চয়ই কাম্য, সঙ্গে ফিরে আসুক খেলোয়াড়সুলভ আচরণ ও ভদ্রতা।
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-৫৭
ঐতিহ্য
সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের ব্যর্থতার অংশটা বাদ দিলে এ বারের টুর্নামেন্টে একটি অনন্যসাধারণ দৃশ্যের অবতারণা হতে আমরা দেখেছি। ভারতের ক্যাপ্টেন বিরাট কোহালি হাই ভোল্টেজ পাকিস্তান ম্যাচে নাস্তানাবুদ হয়ে হারলেও ম্যাচ শেষে যে ভাবে পাকিস্তান খেলোয়াড়দের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন, তাতে ক্রিকেটীয় ঐতিহ্যই তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক অনেকটা তলানিতে ঠেকেছে। ক্রিকেট যে ভদ্রলোকের খেলা, তা আর এক বার প্রমাণিত। খেলাটাকে শুধু খেলা হিসাবে দেখাই উচিত আমাদের। গত কয়েক বছর ধরে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের যা সম্পর্ক দাঁড়িয়েছে, তাতে সকলেরই ক্ষতি। সেই পরিবেশ থেকে মুক্তি দিতে একমাত্র ক্রিকেটই পারে। বিরাট কোহালি সেই দায়িত্বই পালন করেছেন।
দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy