Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Housing

সম্পাদক সমীপেষু: আবাসন অপচয়

প্রয়োজনের অতিরিক্ত নির্মাণের ফলে পরিবেশ দূষণ আর ভূমি সঙ্কোচনের সঙ্গে লাগামহীন আপস করা কি ঠিক?

আবাসন অপচয়।

আবাসন অপচয়। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৪:৫১
Share: Save:

‘রোজ চাই নতুন পোশাক’ (২৫-১২) শীর্ষক রূপালী গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ সময়োপযোগী এবং মূল্যবান। আমরা খাদ্য, বিদ্যুৎ, জল অপচয় নিয়ে নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করি, ছোটদের সতর্কও করি। কিন্তু পোশাক অপচয় নিয়ে কত জন ভাবি? বা আদৌ ভাবার প্রয়োজন বোধ করি? এই ‘ফাস্ট ফ্যাশন’-এর যুগে নিত্যনতুন পোশাক কিনে এক শ্রেণির বাতিকগ্ৰস্ত মানুষ শুধুমাত্র যে অপচয় করে চলেছেন তা নয়, পরিবেশেরও ক্ষতি করছেন মারাত্মক ভাবে। প্রবন্ধতেও এই বিষয়টিই মূল প্রতিপাদ্য।

আমরা পোশাক পরি মূলত তিনটি কারণে— ১) লজ্জা নিবারণের জন্য, ২) রোদ, শীত, জল প্রভৃতি বিভিন্ন প্রাকৃতিক অবস্থার হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করার জন্য, আর ৩) অবশ্যই সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য। কিন্তু এই তিন মৌলিক কারণ ছাড়াও মানুষ অনেক সময়ই প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি পোশাক ক্রমাগত কিনে চলেন তাঁদের সংগ্রহ বাড়িয়ে চলতে। যার মধ্যে অনেক পোশাক কোনও দিন ব্যবহারই হয় না। কিংবা নামমাত্র ব্যবহৃত হয়।

কারও ক্ষেত্রে এই পোশাকপ্রীতি এতটাই বেশি যে, নষ্ট হওয়ার আগে কাউকে দেওয়ার মানসিকতাও তৈরি হয় না। আবার অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও পুরনো পোশাক তুতো ভাইবোন বা অন্য কাউকে দেওয়া যায় না। ব্যবহৃত পুরনো পোশাক অন্যের হাতে তুলে দিতে নানা দ্বিধা, দ্বন্দ্ব কাজ করে। আগে কিন্তু একটা পরিবারের মধ্যে এক জনের ব্যবহৃত পোশাক পরিবারের ছোটদের দিয়ে দেওয়ারই প্রচলন ছিল। ভাইবোনেরা তা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করত এবং গর্বভরে বন্ধুদের দেখাত— দেখ, এই সোয়েটারটা আমার বড়দি পরেছে, মেজদি পরেছে, এখন আমি পরছি। অর্থাৎ, পোশাকটির পূর্ণ ব্যবহার হয়েছে। আর এখন বিজ্ঞাপন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শুধু পোশাক কেনাই হয়, সে ভাবে ব্যবহার করা হয় না।

কিন্তু আমার আছে বলেই অপচয় করব, তা হতে পারে না। পরিবেশ দূষণের ফলভোগ সবাইকেই করতে হবে। এখানে আর একটি অপচয়ের কথা বলছি— আবাসন অপচয়। প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি আবাসন তৈরি হচ্ছে, অনেক বিত্তবান মানুষ এই প্রপার্টি-তে শুধুমাত্র বিনিয়োগ করছেন, ব্যবহার করছেন না। আমি এক দিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত নিউ টাউন অ্যাকশন এরিয়া ওয়ান-এর বিভিন্ন ব্লকে ঘুরে ঘুরে দেখেছিলাম প্রায় ষাট শতাংশ ফ্ল্যাটে কোনও আলো জ্বলে না। অর্থাৎ, ব্যবহার হয় না। নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়িত। কিন্তু তাই বলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নির্মাণের ফলে পরিবেশ দূষণ আর ভূমি সঙ্কোচনের সঙ্গে লাগামহীন আপস করা কি ঠিক?

প্রণব কুমার সরকার, বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর

মনের যত্ন

সম্পাদকীয় ‘উচিত শিক্ষা?’ (২০-১২) শিক্ষার্থীদের মনোজগতের উপর অভিভাবকদের প্রত্যাশার গুরুভার এবং ‘কোচিং গুরু’দের অগণিত পরীক্ষাপূর্ণ অনুশীলন পর্ব নিঃসৃত নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে এক তাৎপর্যপূর্ণ বিশ্লেষণ। রাজস্থানের কোটায় কিছু দিন আগে এক দিনে তিন জন ছাত্রের আত্মহত্যা থ্রি ইডিয়টস সিনেমার কাহিনি ও বাস্তব জীবনের রূঢ় ও করুণ ঘটনাকে যেন এক সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছে। পরিবার-পরিজন ছেড়ে বিহারের দুই জন এবং মধ্যপ্রদেশের এক জন ছাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারির সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁরা কোচিং সেন্টারগুলির ‘কুখ্যাত’ বিশ্রামহীন রুটিনের চাপে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলেন। সম্প্রতি মন খারাপের কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের এক ছাত্রের ছুটির আবেদন সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ছুটি চাওয়ার কারণ হিসাবে যেটাকে অভিনব ভাবা হচ্ছে, তা অভিনব তো নয়ই, বরং দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত এবং শাশ্বত। এই তিন জন পড়ুয়ার জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার নেপথ্যেও আছে সেই অতীব সাধারণ, অথচ শাশ্বত কারণ— মন খারাপ। তাঁরাও জীবনে সাফল্য চেয়েছিলেন। কিন্তু দৈনিক পনেরো-ষোলো ঘণ্টা ধরে পড়াশোনার চাপ নিতে পারেননি। হয়তো অন্য কোনও ভাবে সাফল্য ও ভাল থাকার ভাবনা তাঁদের মনের মধ্যে উঁকি দিত। কিন্তু অভিভাবক বা প্রতিষ্ঠানের তরফে তাঁদের মনের খবর নেওয়ার কোনও তাগিদ ছিল না। আগের রাতে অঙ্কুশের ঘর থেকে কান্নার শব্দ শোনা গিয়েছিল, কেউ জিজ্ঞাসা করেনি ছেলেটির কী হয়েছে।

কর্মব্যস্ততাপূর্ণ এই সময়ে সবচেয়ে বড় অসুখ অবসাদ। মনের এই অসুখ থেকেই শরীরে সবচেয়ে কঠিন রোগগুলো বাসা বাঁধে। প্রকৃত ‘ভাল থাকা’ কাকে বলে তা ভুলে অর্থ ও সম্পদের পিছনে ছুটতে ছুটতে অজানতেই আমরা মনের ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেছি। এই ভারসাম্যহীনতা এক জটিল আবর্তে নিক্ষেপ করেছে আজকের দিনের শিক্ষার্থীদের। কাজেই শিক্ষার্থীদের শারীরিক সমস্যার চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের মনের খবর নেওয়ার ব্যাপারে বাড়ি বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ যত্ন নেওয়ার সময় এসেছে। শুধুমাত্র হস্টেলের ঘরে সিলিং ফ্যানের বদলে অন্য পাখা লাগানো বা সিলেবাসের আকার-আয়তন কমালেই হবে না। বর্তমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের বাস্তবতাকে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করানো দরকার। মনস্তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে পঠনপাঠন পরিচালনা করার ব্যাপারে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ সরকারি পরিকল্পনা করা উচিত। অভিভাবকদেরও উচিত যৌথ পরিবারে শিশুমন দেখাশোনার ব্যাপারে যে কাজটি বাড়ির বয়স্করা এক সময় করতে সক্ষম হতেন, এখনকার অণু পরিবারে সেই কাজটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোবিদদের দিয়ে করানো। এই ক্ষেত্রে পরীক্ষার প্রস্তুতি, ফলাফল, পেশাগত জীবনে রংবাহারি সাফল্যের গিমিক-এ বিশ্বাসী হলে চলবে না। পারিবারিক ও সরকারি উদ্যোগে মনচিকিৎসকদের সহায়তায় শরীর ও মনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে ‘মেঘলা মন’কে ছুটি দেওয়া সবচেয়ে জরুরি। নয়তো ভবিষ্যতে থ্রি ইডিয়টস সিনেমার জয় লোবো এবং বাস্তবের অঙ্কুশরা বার বার আত্মহত্যা করে আমাদের সেই ‘উচিত শিক্ষা’ দিতেই থাকবে।

তন্ময় মণ্ডল, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা

তফাত

গত ৪ ডিসেম্বর বেলা বারোটায় বেঙ্গালুরুতে পৌঁছেছি কলকাতা থেকে বিমানযাত্রায়। লাগেজ বেল্ট থেকে ব্যাগপত্র বার করে এলাম বিমান বন্দরের কাছেই অ্যাপ ক্যাব-এর জন্য নির্দিষ্ট বে-তে। সারি সারি অপেক্ষারত ক্যাব। আমরা তিন জন, সঙ্গে তিনটি কেবিন সাইজ়ের লাগেজ। ফোনে অ্যাপ ক্যাব-এর ছোট গাড়ি বুক করার সঙ্গে সঙ্গেই ওই বে-তে কর্মরত এক জন সিভিক পুলিশ আমাদের জন্য নির্দিষ্ট গাড়িটি দেখিয়ে দিলেন। আমরা লাগেজ নিয়ে গাড়িতে উঠতে যাব, চালক আপত্তি জানালেন। তিনটি ব্যাগ নিয়ে ছোট গাড়িতে যাওয়া যাবে না। সত্যিই পিছনের বুটে তিনটি ব্যাগের জায়গা হবে না। কী করব ভাবছি। কর্মরত সেই পুলিশটি চোখ রেখেছিলেন। মুহূর্তেই কাছে এসে চালককে বললেন, একটি ব্যাগ সামনের আসনে রাখতে। অন্য দু’টি ব্যাগ লাগেজ-বুটে রাখা হল। আমরা তিন জনে পিছনের আসনে বসলাম। চালক কিছুটা নিমরাজি হয়েই আমাদের গন্তব্যে নিয়ে গেলেন। বিমানবন্দরে ট্যাক্সি পেতে আমাদের পাঁচ মিনিটও অপেক্ষা করতে হয়নি। অনর্থক বেশি খরচেরও প্রশ্ন ওঠেনি।

১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কলকাতায় ফিরে বিমানবন্দরের বাইরে এসে দেখি প্রি-পেড ট্যাক্সির লম্বা লাইন। গাড়ি নেই, তাই বুকিং হচ্ছে না। ট্যাক্সি বুথে কর্মরত এক জন মহিলা পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞাসা করলাম এখানে অ্যাপ ক্যাব বে আছে কি না। তিনি জানালেন, ফোনে বুক করলেই গাড়ি আসবে। বুক করা হল এবং যথারীতি চালক ক্যানসেল করে দিলেন। অনেক চেষ্টা এবং অপেক্ষার পর এক জন দালালের সাহায্য নিতে হল। একটি প্রাইভেট কমার্শিয়াল গাড়ি আমাদের বাগবাজারের বাড়িতে নিয়ে এল সাতশো টাকার বিনিময়ে, অর্থাৎ উচিত মূল্যের প্রায় দু’গুণ টাকায়।

প্রশান্ত সমাজদার, কলকাতা-

অন্য বিষয়গুলি:

Housing Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy