ভারতের ন্যায় বৃহৎ একটি দেশের সর্বত্র কাজের জোগান সারা বছর সমান থাকবে, তা সম্ভব নয়। সেই কারণে দেশের সব জায়গাতেই শ্রমিক চাহিদায় তারতম্য দেখা দেয়। স্বভাবতই, খেটে-খাওয়া মানুষের দল দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে চলে যান। কাজের জগতে এমন অবস্থায় আমাদের দেশে যে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, তা অবশ্যম্ভাবী। অথচ, এঁরা অর্থনীতির একটা গরিষ্ঠ অংশ জুড়ে থাকলেও অদৃশ্যই রয়ে গিয়েছেন। ‘কেমন করে অদৃশ্য হয়’ (৩০-১১) নিবন্ধে স্বাতী ভট্টাচার্য ঠিকই লিখেছেন, এঁদের কথা কেউ মনে রাখেনি। অতর্কিত লকডাউনে তাঁরা ছিলেন ঊহ্য। এঁদের কেউ ট্রেনে কাটা পড়েছেন, কেউ শত শত ক্রোশ হাঁটতে গিয়ে পথশ্রমে মারা গিয়েছেন, কেউ আবার ট্রাক-লরির ধাক্কায় পিষ্ট হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্র-রাজ্য কেউই এঁদের সম্পর্কে ঠিক পরিসংখ্যান পেশ করতে পারেনি। ভোটের প্রাক্কালে নেতৃবর্গের দ্বারা এঁরা নানা আশ্বাস পান এবং ভোটের পরে প্রান্তিক শ্রেণিরূপে সকলের অগোচরেই থেকে যান।
তবুও এই বৃহৎ শ্রেণিটিকে নিয়ে সরকারি স্তরে কোনও পরিকল্পনা রচিত হয় না। লকডাউনে এই শ্রেণির অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার খবরে সরকার নড়েচড়ে বসল কি? নিবন্ধকার যথার্থই লিখেছেন যে, রিয়েল এস্টেট-এর দাম চড়া রাখতে মানবসম্পদের এই অবমূল্যায়ন। পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষায় ব্যস্ত সরকার নগর পরিকল্পনার সময় শ্রমিকদের আবাসের কথা মনেই রাখে না। রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে অংশ নিয়েও এঁরা ব্রাত্যই থেকে যান।
সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া
প্রকৃত ভারত
‘কেমন করে অদৃশ্য হয়’ পরিযায়ী শ্রমিকদের মাথার উপর ছাদ না থাকার মর্মান্তিক অবস্থা তুলে ধরেছে। এঁদের সেবা বা পরিষেবাটা আমাদের, তথাকথিত ভদ্র সমাজের, খুবই দরকার। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এঁরা কোথায় থাকবেন, এঁদের পরিবারের, শিশুদের অবস্থা কী, ন্যূনতম পরিষেবা তাঁরা পান কি না, এ সব নিয়ে কেউ মাথা ঘামান না।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, বাধ্য হয়ে পশুর অধম জীবন যাপন করেন এঁরা। মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে, যেটুকু সুবিধা তাঁরা পাচ্ছেন, তা-ই অনেক। তাই খালপাড়ে পলিথিন টাঙিয়ে তৈরি হয় এঁদের ঘর, ফুটপাত হয় ঠিকানা, পুলের তলায় চলে সংসার। যে গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকারের আমরা গর্ব করি, এই মানুষগুলোর জীবনে সেটা কতটা কার্যকর, তার কোনও হিসেব নেই। এঁরাই কিন্তু প্রকৃত ভারত। মহাকাশে উপগ্রহ উৎক্ষেপণ, বা ক্রিকেটে ভারতের জয়— এ সবের থেকেও বেশি জরুরি অসহায় মানুষগুলোর মাথার উপর ছাদ, পেটে দুটো খাবার আর লজ্জা নিবারণের বস্ত্র।
সর্বানী গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া
প্যারিস চুক্তি
সম্পাদকীয় নিবন্ধ ‘প্রত্যাবর্তন?’ (৩০-১১) বলছে, আমেরিকা আবার প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যোগদান করতে চলেছে। বর্তমানে সর্বাধিক কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণকারী প্রথম পাঁচটি দেশ হল— চিন (২৮%), আমেরিকা (১৫%), ভারত (৭%), রাশিয়া (৫%) ও জাপান (৩%)। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট জো বাইডেন আমাদের আশার বাণী শুনিয়েছেন। প্যারিসের জলবায়ু চুক্তির মূল বিষয় ছিল, সামগ্ৰিক ভাবে পৃথিবীর দূষণ হ্রাস করা। তাপমাত্রার ‘বেস ইয়ার’ ধরা হয়েছিল ১৮৮০ সাল, কারণ প্রকৃত শিল্পায়ন সে বছর থেকেই শুরু হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৮৮০ সালে যা ছিল, তার থেকে ২ ডিগ্ৰি সেলসিয়াসের বেশি যেন কোনও ভাবেই না বাড়ে। প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৫ সালে। তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তিভঙ্গের নায়ক। ট্রাম্প বলেছিলেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন হল ‘ধোঁকা’। ট্রাম্প আমেরিকার নামকরা এক দক্ষিণপন্থী অর্থনৈতিক সংস্থা, ‘ন্যাশনাল ইকনমিক রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন’-এর এক রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেছিলেন যে, এর ফলে আমেরিকা ২৭ লক্ষ চাকরি থেকে বঞ্চিত হবে। অথচ, বারাক ওবামা বলেছিলেন যে, প্যারিস চুক্তিতে যে সব দেশ থাকবে, তারা কর্মসংস্থান ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে লাভবান হবে। ওবামা যখন এ কথা বলেছিলেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই ভেবেছিলেন যে, আমেরিকা যে হেতু গ্ৰিন টেকনোলজির দ্রব্যসামগ্ৰী অনুন্নত দেশগুলোতে রফতানি করবে, তার ফলে আমেরিকায় ওই সব দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং এর ফলে সামগ্রিক ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেড়ে যাবে।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ঠিক হয়েছিল যে একটা ‘গ্ৰিন ক্লাইমেট ফান্ড’ গড়া হবে, যা দিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে নানা ভাবে সাহায্য করা হবে। এই সবুজ তহবিলের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলার ধার্য করা হয়েছিল। দুঃখের বিষয়, সে টাকা তোলা সম্ভব হয়নি। কারণ, আমেরিকা সব মিলিয়ে মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার দান করেছিল। যদি আমেরিকা চুক্তিতে পুনরায় যোগদান করে এবং সক্রিয় ভূমিকা নেয়, তবে সেটা সকলের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে।
অশোক বসু, বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
সঞ্চয়িতার পথে
‘স্বখাত সলিলে কেন বার বার ডোবে বাঙালি’ (২৯-১১) পড়ে মনে হল, পা পিছলে পড়ার সব সুযোগই জনসাধারণের জন্য মজুত এ রাজ্যে। অল্পেতে খুশি নন কেউ, তড়িঘড়ি সঞ্চয়ের কলেবর বৃদ্ধির স্বপ্ন দেখেন। ব্যাঙ্ক-পোস্ট অফিসের স্বল্প সুদে মন ভরে না। তাই দ্রুত টাকা বাড়ানোর লোভে চিটফান্ডের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হতে বাধে না।
১৯৭০-৮০’র দশকের সঞ্চয়িতা কেলেঙ্কারি, ৯০-এর দশকের সঞ্চয়িনী, ভেরোনা, বেথেল, ওভারল্যান্ড প্রভৃতি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে সাম্প্রতিক রোজভ্যালি, সারদা, প্রয়াগ, এমপিএস প্রভৃতি আর্থিক কেলেঙ্কারি ধারাবাহিক ভাবে চলে এসেছে। জনগণের নাহয় লোভ রয়েছে, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে তো এদের অনুমোদন, নিবন্ধীকরণ করে এগোতে হয়। সেখানে উদ্দেশ্য ও কার্যপ্রণালী বিষয়ে সবিস্তার তথ্য দাখিল করতে হয়। অথচ, কেউ জনস্বার্থে দীর্ঘমেয়াদি নজরদারি চালায় না।
স্মৃতিদুর্বল বাঙালি চটজলদি লাভের আশায় একটায় ঠকে আর একটাকে বিশ্বাস করে আবার ঠকেন। ব্যাঙ্ক-পোস্ট অফিস বার্ষিক যে হারে সুদ দেয় জমাকৃত রাশির উপর, এই চিটফান্ডগুলো মাসিক ওই হারে সুদের টোপ দেয়। জনগণ এই ধাঁধা না বুঝে সর্বস্ব জুয়ার দানে লাগিয়ে দেন। সরকার কাজ দেখাতে মামলা করে, কোর্টের দুয়ারে মামলা পৌঁছে দিয়ে হাত গুটিয়ে নিশ্চিন্ত। যে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা লাভের গুড়ের ভাগ পেয়েছেন, তাঁরা শাসক হোক বা বিরোধী, কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করে দায়িত্ব শেষ করছেন। সব মিলিয়ে প্রায় দু’লক্ষ কোটি টাকার তছরুপ জাতীয় অর্থনীতিতে এক ‘কালো গহ্বর’ সৃষ্টি করেছে।
সঞ্চয়িতা-কাণ্ডের পর হাই কোর্টের রায়, যা সুপ্রিম কোর্টেও বহাল রয়েছে, তা দিয়ে এক-দু’দশকে এ সব মিটিয়ে জনগণের টাকা ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না। সদিচ্ছার অভাব কোন স্তরে!
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা , কলকাতা-১৫৪
এক কোটি!
ইদানীং সংবাদপত্রের পাতায় ও বিভিন্ন চ্যানেলে নানা রকম লটারির বিজ্ঞাপনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষত, কোনও এক জন লটারিতে এক কোটি টাকা পেয়েছেন, এ রকম দাবি করে তাঁর ছবি ও সাক্ষাৎকার-সহ খবর প্রকাশিত হচ্ছে। অনেক মানুষ, যাঁরা লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন, তাঁরা লটারির টিকিট কেটে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। সরকারের রাজস্ব বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু এ বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করে প্রচার করাটাও অত্যন্ত জরুরি।
সৌগত কাঞ্জিলাল, বাঁকুড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy