—ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনায় ভারতীয় রেলের চালকদের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার তথা রেল কর্তৃপক্ষের বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগের আঙুল উঠেছে। বিশেষ করে, তাঁদের দিয়ে বিরামহীন ভাবে কাজ করিয়ে নেওয়ার ভয়ঙ্কর অভিযোগ সামনে এসেছে। প্রকাশিত সেই অভিযোগ চাপা দিতে সরকার ও রেল কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞাপিত হাস্যকর প্রয়াস, ‘অ-বিরাম’ (১০-৭) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে যথাযথ ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
ভারতে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহণে ‘লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি’র ক্ষেত্রে সুলভ, পরিবেশবান্ধব, সুরক্ষিত ও সর্বোত্তম উপায় হল রেলপথের ব্যবহার। দেশ জুড়ে দিনরাত যে বিপুল সংখ্যক যাত্রিবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করে, রেলের ওয়েবসাইটে সে তথ্য সহজলভ্য। সেই সঙ্গে, ভারতীয় রেলের বিশাল ‘নেটওয়ার্ক সিস্টেম’কে প্রতিনিয়ত সক্রিয় রাখার জন্য রেলের প্রতিটি বিভাগে প্রয়োজনীয় কর্মী-সংখ্যার অপ্রতুলতার বিষয়টিও আজ সর্বজনবিদিত। রেলের ‘লাইফ লাইন’কে সুরক্ষিত ভাবে সচল রাখার জন্য সর্বস্তরের রেলকর্মীদের মধ্যে ট্রেন চালকেরা অগ্রণী এবং অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকেন, এ কথা অনস্বীকার্য। প্রয়োজনীয় চালক-সংখ্যার অপ্রতুলতার কারণে, বহু ক্ষেত্রে কর্মরত ট্রেন-চালকদের বিরামহীন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই নির্মম সত্যটি আজ জনসমক্ষে প্রকাশিত। বিভিন্ন ঘটনায় প্রকাশ যে, সেই ট্রেন-চালকেরা সাময়িক মানসিক আরাম লাভ তো দূরের কথা, অনেক ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিশ্রামটুকু পর্যন্ত পান না। পরিণতি স্বরূপ, কিছু ক্ষেত্রে তা রেল-দুর্ঘটনার মতো বিপর্যয় ডেকে আনে। প্রশ্ন ওঠে, এর দায় কার?
রেলের প্রয়োজনীয় শূন্য পদে আশু কর্মী নিয়োগ করা রাষ্ট্রের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য হওয়া উচিত। যাত্রিবাহী ট্রেনের হাজার হাজার মানুষ এবং ট্রেন-চালকদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেওয়ার দায় রাষ্ট্রের পরিচালকেরা কখনও অস্বীকার করতে পারবেন না।
অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
বিপর্যয়ের মূলে
বিগত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের একটি আসনেও জয়লাভ না করতে পারা একই সঙ্গে বিস্ময়কর এবং বামপন্থার সমর্থকদের কাছে উদ্বেগজনক। ইনসাফ যাত্রা, ৭ জানুয়ারি ব্রিগেডে জনজোয়ার ও মিটিং-মিছিলে বহু তরুণ-তরুণীদের মুখ দেখা গেলেও কেন এ বার লোকসভা নির্বাচনে বামপন্থীরা একটি আসনেও জয়ী হতে পারলেন না এবং অধিকাংশ আসনেই জামানত বাজেয়াপ্ত হল, এ নিয়ে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ভাবে পর্যালোচনা হচ্ছে। জন সমর্থন আরও বাড়াতে না পারা, সংগঠন মজবুত না থাকা, আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে নিজেদের কথাগুলো পৌঁছে দিতে না পারা, বিভিন্ন সরকারি ভাতার বরাদ্দ বৃদ্ধি, ভোটের মেরুকরণ ইত্যাদি কারণগুলো উঠে আসছে। এত কিছু সত্ত্বেও বলব, বামপন্থী বিশেষত সিপিএম কর্মী ও সমর্থকদের দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে যে নিষ্ঠা ও একাগ্রতা দেখি, তা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছে যথেষ্ট ঈর্ষণীয়। তবে শহরে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সূত্রে এ প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা বলতে পারি।
শহরে আমাদের একটি ছোট সংগঠন আছে। এই সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা নেতৃ-স্থানীয় ও কর্মীদের আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু বার বারই দেখি তাঁরা ওই দিন ‘পার্টির প্রোগাম’ আছে বলে এড়িয়ে যান। এই শহরের কিছু নির্দিষ্ট চায়ের দোকানে নেতারা আসেন এবং তাঁদের বৃত্তের মধ্যে থাকা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেই চলে যান। এর বাইরেও যে বহু মানুষ আছেন, তাঁদের মতামত ও কথা শোনার জন্য যে সহিষ্ণুতা থাকা দরকার, এই নবীন নেতৃত্বের মধ্যে কিছুটা হলেও তার অভাব পরিলক্ষিত হয়। এই নবীন নেতারা পার্টির কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকেন বটে, তবে এলাকার দাবি-দাওয়ার আন্দোলনে চোখে পড়ে না। টক শো-তে তাঁদের কথা বলার ভঙ্গিতে আমরা মুগ্ধ হই বটে, তবে পাড়ার লোকেদের সমস্যা শোনার জন্য তাঁরা দরবারি-হাট বসান না।
চন্দননগর শহরে গড় বুজে যাওয়া, সরস্বতী নদীর সংস্কার না হওয়া, পুরনিগম পরিচালিত ‘দিশারী’ হাসপাতালের দুরবস্থা (যেখানে ছোটখাটো অস্ত্রোপচার হলে বহু গরিব-প্রান্তিক মানুষের উপকার হত)— এমন বহু স্থানীয় বিষয় নিয়ে ক্রমাগত আন্দোলন চালালে ভোটারদের ভরসা বাড়ত। চন্দননগর শহরে যে সমস্ত এলাকা বামপন্থীদের ঘাঁটি বলে পরিচিত, সেখানে ভারতীয় জনতা পার্টির ভোট বেশ বেড়েছে এবং বামপন্থীদের ভোট লক্ষণীয় ভাবে কমেছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে একটি শক্তি হয়ে উঠতে হলে, মাঠটাকে আরও বড় করতে হবে।
প্রশান্ত দাস, খলিসানি, হুগলি
আত্মরক্ষা
তৃষ্ণা বসাকের ‘মুখহীন শরীরে ভয় থাকে কি’ (১২-৭) শীর্ষক প্রবন্ধ আমাদের আরও যেন ভয়তাড়িত করে, কিন্তু সেই ভয় থেকে বেরোনোর কোনও কথা বললেন না প্রবন্ধকার। অরণ্যদেবের মুখোশ পরে নগ্ন শরীরে নিশ্চিন্তে স্নান, সেটা নেহাতই গল্প, বাস্তবোপযোগী নয়। আবার যে মহিলা তাঁর ছোট্ট মেয়েকে স্কুলবাসে করে স্কুলে পাঠিয়েও চিন্তায় থাকেন, তাঁর ভয়টা বাস্তব। কারণ নামী স্কুলেও শিশুর যৌন লাঞ্ছনার ঘটনা খবর হয়েছে। পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ছোট্ট মেয়েকেও সব কথা খুলে বলতে, কোনটা ‘ব্যাড টাচ’ ইত্যাদি ভাল করে বোঝাতে হবে। ছোট ছেলে বা মেয়ে অনেক সময়ই ভয়ে বা লজ্জায় মা-বাবার কাছে সব কথা বলে না। বন্ধুর মতো মিশে গল্পচ্ছলে তার কথা জেনে নিতে হয়।
কলেজে যখন সিনিয়র এনসিসি করতাম, খালি হাতে লড়াই করা (আনআর্মড কমব্যাট) আমাদের শেখানো হয়েছিল। তবুও অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়েছিল। তখন সরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি করি। ছুটির পরে হেঁটে শিয়ালদহ স্টেশনে গিয়ে লোকাল ট্রেন ধরব। মনে হল, এক সঙ্গে পা মিলিয়ে পাশাপাশি কেউ হেঁটে আসছে। দাঁড়িয়ে সোজা তাকালে সরে পড়ছে। পরের দিন কানের কাছে ফিসফিসিয়ে সঙ্গে যেতে বলছে। ‘তবে রে’ বলে চিৎকার করে উঠলে দ্রুত পায়ে ভিড়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। এক দিন মিন্টো পার্কের পাশের রাস্তা ধরে অফিসে আসব বলে হেঁটে আসছি। দেখি, একটি মেয়ের চড় খেয়ে নীল উর্দি-পরা এক বয়স্ক লোক ফুটপাতে পড়ে গেলেন, তাঁর চশমা ছিটকে গেল। আমার খারাপই লাগছিল। এগিয়ে গিয়ে শুনলাম মেয়েটি ফুঁসে ফুঁসে হিন্দিতে বলছে, “এত বড় সাহস, আমার গায়ে হাত দেয়।”
দেখলাম চশমা কুড়িয়ে লোকটি দৌড় দিলেন।
শিখা সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
কোপাই দখল
সংবাদে প্রকাশ শান্তিনিকেতনে কবির সাধের কোপাইয়ের নদীবক্ষে কংক্রিটের পিলার উঠছে। বহু স্মৃতিবিজড়িত কোপাই নদী শান্তিনিকেতনে আসা পর্যটকদের অন্যতম দর্শনীয় জায়গা। শান্তিনিকেতনের কল্যাণে কোপাই নদীর নাম ও খ্যাতি সারা ভারত জুড়ে। তার উপর এই নির্মাণ কার্য চলতে দিলে কোপাই নদী মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, নদী-তীরের ৫০০ মিটার পর্যন্ত কোনও নির্মাণ কার্য করা যায় না। অথচ, কোপাই নদীতে শুধু তীর নয়, নদীবক্ষ দখল করে নির্মাণ কার্য শুরু হয়েছে। গোয়ালপাড়ার কাছে প্রায় ৩৮টি কংক্রিটের পিলার গাঁথা হয়েছে। ইটের বড় পাঁচিল তোলা হয়ে গেছে।
এই সব কাজ চলছে প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই। আর প্রশাসনও এ বিষয়ে নির্বিকার রয়েছে। এই অবৈধ নির্মাণ কার্যে প্রশাসন হস্তক্ষেপ না করলে নদীটা শেষ হয়ে যাবে, তার গতিপথও নষ্ট হয়ে যাবে। প্রশাসন শুনছে কি?
অপূর্বলাল নস্কর, ভান্ডারদহ, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy