—ফাইল চিত্র।
কিছু দিন আগে সমাপ্ত ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের পরাজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ‘পরাজিত’ (২৩-১১) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে যৌক্তিক আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু মন যে মানে না। ফুটবলে যেমন পরাজয়কে সহজ মনে মেনে নিতে ব্রাজ়িলবাসীরা পারেন না, তেমনই ক্রিকেটে ভারতীয়রাও পারেন না পরাজয় মানতে। তার উপর এ বারের বিশ্বকাপে আয়োজক ভারত প্রথম ম্যাচ থেকে প্রতিটি দলকে কেবল হারিয়ে নয়, আক্ষরিক অর্থে দুরমুশ করে ফাইনালে উঠেছিল। দলের প্রতিটি খেলোয়াড় ছিলেন দুরন্ত ফর্মে। দর্শকদের প্রত্যাশার পারদ তাই চড়েছিল অনেক উপরে। আর প্রত্যাশা বেশি ছিল বলেই পরাজয়ের হতাশাও বড্ড বেশি ছিল। ফাইনাল ম্যাচ শুরুর প্রাক্কালে সাধারণ দর্শক থেকে ক্রিকেটবোদ্ধারা পর্যন্ত ভুলে গিয়েছিলেন সেই আপ্তবাক্য— ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেই প্রচ্ছন্ন আছে ক্রিকেটের প্রকৃত সৌন্দর্য। অথচ, সেই মুহূর্তে সকলের মনে হয়েছিল ভারতের বিশ্বকাপ জয় সময়ের অপেক্ষামাত্র। আসলে কাপ ও ঠোঁটের মধ্যে যে দূরত্ব থাকে, তা মানুষ ভুলে গিয়েছিলেন গ্রুপ লিগে ও সেমিফাইনালে ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাফল্যের জৌলুসে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকে অধিকাংশ ভারতবাসী নিজেদের আবেগকে দেশের ক্রিকেট দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নিয়েছে। টেনিস, কুস্তি, ভারোত্তোলন, শুটিং বা দাবার মতো ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের খেলায় দেশের ক্রীড়াবিদের বিশ্বমানের সাফল্যের নজির থাকলেও, তা জনমনে তেমন উত্তেজনা তৈরি করতে পারেনি। আর হকি ও ফুটবলের মতো দলগত খেলায় ক্রমাবনতি একক ভাবে ক্রিকেটকে এ দেশে তুমুল জনপ্রিয় করেছে। অসংখ্য ভারতীয় নাগরিক নিজেদের দেশের ক্রিকেট দলের সাফল্য দেখে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার অবিরাম প্রেরণা পেয়েছে। বেকারত্বে, দারিদ্রে হতাশ দেশবাসী জীবনধারণের নিত্য পরাজয়ের গ্লানিবোধ থেকে মুক্তি পায় ক্রিকেট খেলায় দেশের জয়লাভ দেখে। তাই ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে দেশের মাটিতেই নিদারুণ পরাজয়ে সারা দেশে এমন শোকের ছায়া নেমেছিল। এ দেশে ক্রিকেট এখন আর নিছক একটা খেলায় সীমাবদ্ধ না থেকে দেশবাসীর আত্মমর্যাদার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ক্রিকেট দলকে সমর্থনের মধ্যে প্রকাশিত হয় নাগরিকদের জাতীয়তাবোধ ও দেশপ্রেম।
পরবর্তী বিশ্বকাপ জয়ের জন্য ভারতীয়রা অপেক্ষায় থাকবেন আগামী চার বছর। ফুটবলে ঠিক যেমন অপেক্ষায় থাকেন ব্রাজ়িলবাসী। দেশবাসীর এই আবেগ কোনও যুক্তি মানতে পারে কি?
কৌশিক চিনা, মুন্সিরহাট, হাওড়া
বিস্মৃত নায়ক
বিশ্বকাপ ফাইনাল দেশের সেরা ক্রিকেটাররা-সহ বিনোদন জগতের তারকাদের উপস্থিতিতে ঝলমল করছিল। কিন্তু চোখে লাগল দেশের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক কপিল দেবের অনুপস্থিতি। তিনি নাকি নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে আসার আমন্ত্রণ পাননি। ভাবাই যায় না। কপিল নিজে এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক হিসাবে সেই দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে তাঁর খেলা দেখার ইচ্ছে ছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, তাঁর সেই স্বপ্নপূরণ হল না। ভারতের ক্রিকেটের দুনিয়া যাঁরা সামলাচ্ছেন, দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁরা কী করে বেমালুম ভুলে গেলেন যে, কী ভাবে কপিল দেব নিজেকে উজাড় করে দিয়ে ভারতকে প্রথম বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন? এই প্রজন্মের খেলোয়াড় বা কর্মকর্তাদের তা মনে না থাকলেও প্রায় চল্লিশ বছর আগের সেই কৃতিত্ব আজও আমরা ভুলতে পারি না। ক্রিকেট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে কিছু মনে না হলেও, খেলাপ্রেমীদের অনেকেই তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
স্বপন আদিত্য কুমার বিশ্বাস, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
অযথা মাতামাতি
সুমিত ঘোষের ‘জাতীয় আবেগ-স্রোতেই কি ডুবল রোহিত-তরী’ (২০-১১) প্রতিবেদনে যে প্রশ্ন উঠে এসেছে, তার উত্তর প্রতিবেদকের অজানা নয়। গত দেড়-দু’মাস ধরে বাংলা দৈনিকগুলো প্রচুর নিউজ়প্রিন্ট ধ্বংস করল। বিশ্বকাপ জয়ীদের শহর মেলবোর্নে ক্রিকেট নিয়ে কাগজগুলো এ-রকম মাতামাতি করে না। বিজয়ী দলের সদস্য হলেও ধারাবাহিক ভাবে পাতা জুড়ে ‘নায়ক-বন্দনা’ ওখানকার ঐতিহ্য নয়। অথচ, ওঁরাই আট বার ফাইনালে উঠে ছ’বার আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন। ওঁদের থেকে আমরা কিছু কি শিখলাম?
ফাইনালের ঠিক আগের দিন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের এক মহাকাব্যিক উক্তি ছিল— ‘বিশাল গ্যালারিকে নিস্তব্ধ করে দেওয়ার মধ্যেই তো আনন্দ।’ প্যাট কিন্তু নিজের কথা রেখেছেন। বড় ম্যাচে পেশাদারিত্ব কাকে বলে, তিনি এবং তাঁর দল আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। একরাশ বেদনা মনে নিয়েও তাই ওঁদের কুর্নিশ জানাতেই হয়। আন্তর্জাতিক স্তরে ক্রিকেটে লিগ-নকআউট ফর্ম্যাটে আসল মজাটাই হল যে— একটা খারাপ দিন মানে সব শেষ। আমরা ১০টা ম্যাচ জয়ী হয়েছি, ওঁরা তো ৯টা। তবুও চ্যাম্পিয়ন? এ-হেন বালখিল্য প্রশ্নও সমাজমাধ্যমে তাই নিঃশব্দ হাসির খোরাক জুগিয়েছে।
‘চোকার্স’-এর তকমাটা কেমন করে জানি ঠিক ফিরে আসে ভারতীয় ক্রিকেটে। কেন ফাইনালে উঠে হারল আমাদের দেশ? এই নিয়ে অনেক গবেষণা, অনেক বিশ্লেষণ চলেছে। ভবিষ্যতে এর জন্য কমিটিও গড়ে দেওয়া হতে পারে। বিসিসিআই এমনিতেই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড। জাতীয় ক্রিকেটারদেরও অর্থের অভাব নেই। দেশপ্রেমের ভাবনা তো থাকে সাধারণ জনতার মনে। ক্রিকেটারদের কাছে বরং অধিক গুরুত্ব পায় আইপিএল। ম্যাচ শেষে মুখে টুপি ঢাকা দেওয়া, ছলছল চোখ, মাথা নিচু করে মাঠে বসে পড়া— এ সবে নতুনত্ব কিছুই নেই। কারণ ওঁরা জানেন, আর কয়েকটা সেঞ্চুরি হলে, কিছু রেকর্ড ভাঙলে এবং সেই চেনা বুলি— ‘নিজের রেকর্ডের কথা ভেবে খেলি না, দলই সবার আগে’— আওড়ে দিলেই সাত খুন মাফ। কিন্তু কথায় ও কাজে ফারাকটা স্পষ্ট বোঝা যায়। ফলাফলেও। এক বিশ্বত্রাস ব্যাটার, যিনি ক’দিন আগেই টপকেছেন এক ‘ভারতরত্ন’কে— সেই ব্যাটারের অন্তিম পর্যায়ের স্কোর যথাক্রমে ১ (২০১৫, ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল), ৫ (২০১৭, আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনাল), ১ (২০১৯, বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল) ও ৫৪ (২০২৩, ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল)। তবুও ‘জাতীয় আবেগ-স্রোতে’ গা-ভাসানোর জন্য সংবাদমাধ্যম তৈরি। অন্য দিকে, ‘ক্যাপ্টেন কুল’-এর কিছুটা ছাপ দেখা গেল যে ট্র্যাজিক ক্যাপ্টেনের মধ্যে, তিনি যথাযথ গুরুত্ব পেলেন?
শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া
খেলার অযোগ্য
ভদ্রেশ্বরে অবস্থিত কেজিআরএস পথ সংলগ্ন চাঁপদানি পুরসভার খেলার মাঠটি বর্তমানে খেলার উপযোগী অবস্থায় নেই। এই মাঠেই এক সময় অনুষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে জাতীয় সিনিয়র মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতা, জাতীয় মিনি ভলিবল প্রতিযোগিতা। এ ছাড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে সারা বাংলা কাবাডি, খোখো প্রতিযোগিতা। কিন্তু বর্তমানে মাঠের অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় স্থানীয় ফুটবল ক্লাবগুলি এখানে আর ফুটবল অনুশীলন করতে পারে না। দলগুলির নিজস্ব ফুটবল খেলার মাঠ হিসাবে এই মাঠটিকেই দীর্ঘ দিন ব্যবহার করে এসেছে। অন্য দিকে, মহকুমা লিগ চলাকালীন হোমগ্রাউন্ড না দেখাতে পারায় লিগের সব খেলাই বাইরের মাঠে খেলতে যেতে হচ্ছে এই দলগুলোকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, মাঠটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খেলার উপযোগী করা হোক এবং এর দেখভালের ব্যবস্থা হোক।
কালী শঙ্কর মিত্র, ভদ্রেশ্বর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy