নোট বাতিলের ওই দিনের পর থেকে ব্যাঙ্কে টাকা জমা এবং তোলার বিধিনিষেধে বার বার পরিবর্তন আনার ফলে ওই মহাজনদের পুঁজি নষ্ট হয়ে যায়। ফাইল ছবি।
“‘আমরা যা হারিয়েছি, কে ফেরাবে’, প্রশ্ন ওঁদের” (৩-১) শীর্ষক প্রতিবেদনটি পড়ে চোখে জল এসে যায়। ৮ নভেম্বর, ২০১৬ সালে নোট বাতিলের ফলে ভারতের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে, তার হিসাব কে কষবে? সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত আইনসম্মত, বা পদ্ধতিগত ভাবে সঠিক ছিল। কিন্তু নোট বাতিলের নীতি নির্ধারণের ফলে দেশের বা সাধারণ মানুষের লাভ না ক্ষতি হয়েছে, সে ব্যাপারে মহামান্য শীর্ষ আদালতের রায়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। সাধারণ মানুষ এই বিষয়ে আইনের কচকচানিতে না গিয়ে তাঁদের বিষময় দুর্ভোগের যন্ত্রণাকেই ক্রমান্বয়ে বাড়তে দেখেছেন।
ভারতের কোটি কোটি ছোট ব্যবসায়ী তাঁদের আত্মীয়সম মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। তাঁরা নোটবন্দির পর থেকে ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, বহু বছর ধরে ওই মহাজনরা ব্যাঙ্কে টাকা না রেখে, হাতে কোটি কোটি টাকা রাখতেন। উৎসব বা প্রয়োজনের সময় ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের টাকার জোগান দিতেন তা থেকে। ওই ছোট ব্যবসায়ীদের লাভ-ক্ষতির উপর মহাজনদেরও লাভ-ক্ষতি নির্ভর করত। এই লেনদেন সততা এবং বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল ছিল। সামগ্রিক ভাবে এই প্রক্রিয়ার ফলে ব্যাঙ্ক সরাসরি লাভবান না হলেও, সমাজ লাভবান হত। ওই মহাজনরাই ব্যাঙ্কের দায়িত্ব পালন করতেন। ঋণ দেওয়ার প্রধান শর্ত ছিল পরস্পরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস এবং ভরসা। ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যাঙ্কে আটক না হয়ে বাজারে ঘুরত, আর এর সুফল পেত সমগ্র দেশ। নোট বাতিলের ওই দিনের পর থেকে ব্যাঙ্কে টাকা জমা এবং তোলার বিধিনিষেধে বার বার পরিবর্তন আনার ফলে ওই মহাজনদের পুঁজি নষ্ট হয়ে যায়। অনুমান হয়, ছোট ব্যবসা বন্ধের এটাও একটা কারণ।
এত বছর পর আজও কিন্তু নোট পরিবর্তন সম্পূর্ণ হল না। বরং নতুন নোটের কাগজ এবং ছাপার মান দেখে কষ্ট হয়। আর একটি বিষয় হল, পুরনো নোট নষ্ট এবং নতুন নোট ছাপার যে বিপুল অর্থ খরচ হল, তা জনগণেরই টাকা। অথচ, তাঁরাই ক্ষতিগ্রস্ত হলেন বেশি, এবং অন্ধকারে রইলেন।
রামমোহন চক্রবর্তী, নবদ্বীপ, নদিয়া
দুর্নীতিতে আঘাত
আটান্নটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। নোটবন্দি ছিল দুর্নীতির দ্বারা সঞ্চিত অর্থের পাহাড়ে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’। ফলে শত কষ্ট সহ্য করেও সাধারণ মানুষ বিজেপি-পরিচালিত সরকারকে দু’হাতে সমর্থন করেছিল। বড় আশ্চর্যের বিষয়, কংগ্রেসের অন্যতম নেতা তথা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী হয়েও ‘নোটবন্দি’র বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার আইনজীবী হয়ে দাঁড়ান পি চিদম্বরম।
গত ৭ ডিসেম্বর মামলার শুনানিতে বিচারপতি এস এ নাজ়ির, বি আর গাভাই, এ এস বোপান্না, ভি রামসুব্রহ্মণ্যম নোটবন্দির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে সঠিক বলেছেন। কিন্তু সাংবিধানিক বেঞ্চের পঞ্চম বিচারপতি বি ভি নাগরত্ন কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে দাবি করেছেন, যে লক্ষ্যে নোটবন্দি করা হয়েছিল, তা আদৌ পূরণ হয়নি। পঞ্চম বিচারপতিকে অবলম্বন করেই চিদম্বরম তাঁর নৈতিক জয় খুঁজে পেয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, “নিঃসন্দেহে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত সৎ উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল।”
নোটবন্দির সমালোচকদের সমালোচনার সারাংশ হল, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য সঠিক ছিল, কিন্তু তাতে সম্পূর্ণ সাফল্য আসেনি। কোনও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত তখনই সফল হয়ে ওঠে, যখন সার্বিক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বিগত কংগ্রেসি শাসনে রাষ্ট্রবাদ রাষ্ট্রীয় জনচেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, যা ইদানীং যথেষ্ট চোখে পড়ছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গোরা উপন্যাস গ্রন্থে বলেছেন, “দেশকে ভালো না বাসলে তাকে ভালো করে জানবার ধৈর্য থাকে না, তাকে না জানলে তার ভালো করতে চাইলেও তার ভালো করা যায় না।” সুতরাং রাষ্ট্রবাদকে যতই নাগরিকের মৌলিক অধিকার-বিরোধী বলে বর্ণনা করা হোক না কেন, এটি ছাড়া রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণ সম্ভব নয়।
রাষ্ট্রবাদ তথা জাতীয়তাবোধ ছাড়া কোনও রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব নয়। যে দেশ যতটা উন্নতি ঘটিয়েছে, সে দেশ ততটাই রাষ্ট্রবাদে উন্নত। রাষ্ট্রবাদ হল প্রতিরক্ষার বর্মের মতো। জাতীয়তাবোধহীন নাগরিকের জন্য রাষ্ট্রের তৈরি সমস্ত যোজনাই হয়ে ওঠে ‘ছায়ার সঙ্গে লড়াই করে গাত্রে হল ব্যথা’-র মতো ‘আবোলতাবোল’!
সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে তাই আমি স্বাগত জানাই। কারণ, অর্থনৈতিক জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে এই ধরনের ‘অর্থনৈতিক সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর প্রয়োজন ভবিষ্যতেও আছে। দুর্নীতিবাজরা ভাল মানুষের মুখোশের আড়ালে ভারতীয় সমাজের সর্বস্তরে লুকিয়ে আছে। তাই এই শ্রেণির হাত থেকে দেশের সাধারণ জনতাকে বাঁচাতে, দুর্নীতিগ্রস্ত গোষ্ঠীকে দমন করতে আর্থিক লেনদেনে ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল এবং নোটবন্দি হল তার অন্যতম প্রধান অস্ত্র। বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেনের বাধ্যবাধকতা জারি থাকলেও, নোটবন্দির প্রয়োগ মাঝেমধ্যেই ঘটানো দরকার। তবে শুধুমাত্র এইটুকুতেই থেমে থাকলে চলবে না। জাল নোটের কারবারিদের বিরুদ্ধে লড়তে আরও তীক্ষ্ণ মত ও পথের অবলম্বন জরুরি।
বরুণ মণ্ডল, রানাঘাট, নদিয়া
বৃথা রক্তক্ষয়
নতুন বছর আমরা যুদ্ধের কটু-ঘ্রাণ নিয়েই শুরু করলাম। যে কোনও যুদ্ধই এড়ানো যায় পারস্পরিক আলোচনার টেবিলে বসে, কূটনৈতিক ভাবে মগজাস্ত্রে শাণ দিয়ে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় অস্ত্র ব্যবসায়ীর লোভ, এবং রাষ্ট্রনেতাদের সাম্রাজ্যবাদী, বিদেশ-আগ্রাসী এবং প্রভুত্বকামী মনোভাব। অস্ত্রব্যবসার লাভের জন্যই বিশ্বব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন, দীর্ঘমেয়াদি অশান্তি চাই এবং রাষ্ট্রীয় মদতেই যুদ্ধ চাই। বিজ্ঞান ও যুদ্ধের এক ভয়ঙ্কর মেলবন্ধন হল বিজ্ঞানের সামরিকীকরণ। হিরোশিমায় প্রায় ৬০ হাজার এবং নাগাসাকিতে প্রায় ৩৯ হাজার সাধারণ মানুষ এক লহমায় মুছে গেলেন। অথচ, বিভিন্ন রিপোর্টেই বলা হয়েছে যে, পরমাণু বোমা যদি না-ও ফেলা হত, তা হলেও জাপান ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৪৫-এর মধ্যে অবশ্যই আত্মসমর্পণ করত। তা হলে হিরোশিমা-নাগাসাকির এক লক্ষ প্রাণকে কেন যুদ্ধের যূপকাষ্ঠে বলি হতে হল?
গোটা ইরাক জুড়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর কিংবা সন্দেহজনক জীবাণু যুদ্ধের কোনও সমরাস্ত্র পাওয়া যায়নি। অথচ, গোটা দেশটাকে প্রায় সকলের চোখের সামনে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। আবার, শুধুমাত্র ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বামিয়ান সভ্যতার আফগানিস্তান প্রথমে টুকরো টুকরো হয়ে গেল, পরে একেবারে ধূলিসাৎ। কারণ, এক ফালি ওই দেশটার উপর কোনও ভাবে দখলদারি কায়েম করতে পারলে চিন, ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া— সবার উপর নজরদারি করা যাবে।
সংবাদমাধ্যমে পরিবেশিত বিভিন্ন খবরে যত দূর দেখা গিয়েছে, রাশিয়ার সাধারণ মানুষও ইউক্রেনের উপর এই আক্রমণ চাননি। তা সত্ত্বেও দীর্ঘ সাঁজোয়া বাহিনী কিভ আক্রমণ করার জন্য তৈরি ছিল। কেন? দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলার সময়েও রাশিয়া গোলাবর্ষণ করেছে। কেন? একটা সভ্য দেশের কাছ থেকে এ ধরনের অমানবিক আচরণ কী আদৌ কাম্য? মাইনাস পাঁচ-ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় হাজার হাজার সাধারণ ইউক্রেনীয় নাগরিক, ও সেখানে বসবাস করা অন্যান্য দেশের শিশু-নরনারী পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়ার পথে হেঁটে চলেছেন প্রাণে বাঁচবার আশায়। কিসের তাড়নায় এই যুদ্ধ? যে কোনও যুদ্ধ একটা দেশকে অর্থনৈতিক দিক থেকে এক শতাব্দী পিছিয়ে দেয়। ইউক্রেনকে দু’শো বছর পিছিয়ে দেওয়ার দায় কাদের?
বিশ্বদীপ ভট্টাচার্য, কল্যাণগড়, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy