গত কয়েক বছর ধরে অনলাইন রেসিং গেমগুলোয় মেতে উঠেছে আবালবৃদ্ধবনিতা। প্রতীকী ছবি।
সম্পাদকীয় ‘মৃত্যু-পথ’ (৪-১)-এ পথ-দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসাবে বেহাল সড়ক, যানবাহনের অনিয়ম, পথনির্দেশের অব্যবস্থাকেই দায়ী করা হয়েছে। এই মতামতকে সমর্থন জানানোর পরও বলতে হয় গতির উচ্চাকাঙ্ক্ষা নবীন প্রজন্মকে আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থান্বেষী করে তুলছে। এই সব বেপরোয়া জীবন-যাপনকে বহু দিন থেকে ত্বরান্বিত করে আসছে ‘গো-কার্ট’ কিংবা ‘ফর্মুলা-ওয়ান’-এর মতো খেলাগুলো। বিভিন্ন স্পোর্টস চ্যানেলে বিরামহীন ভাবে এই সব খেলা দেখে কিশোর বয়স থেকে মাইকেল শুমাখার-এর মতো গাড়ি চালানোর স্বপ্ন দেখা প্রজন্ম অপরিণত বয়সে গাড়ি হাতে পেয়ে আবেগে ভুলে যায় যে, ‘ওপেন হুইল রেসিং’ আর বাস্তবের রাস্তাঘাট এক নয়। ‘সব পেয়েছি’-র জীবনযাপনে বড় হওয়া ছেলেমেয়েরা ব্যক্তিজীবনেও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
গত কয়েক বছর ধরে অনলাইন রেসিং গেমগুলোয় মেতে উঠেছে আবালবৃদ্ধবনিতা। বড়রা আসক্ত হলেও, সাধারণত ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে বাস্তবকে গুলিয়ে ফেলে না সহজে। সমস্যা হয় নতুন প্রজন্মকে নিয়ে। লাগামহীন রেসিং গেমে মাতোয়ারা ছেলেমেয়েরা মানসিক ভাবে প্রভাবিত হয় খুব। অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা লোপ পাওয়ায় অ্যাক্সিলারেটর-এ পা দিয়েই বেপরোয়া গাড়ি চালানোর আনন্দে মেতে ওঠে তারা। পাশাপাশি আবার রয়েছে প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলন ছাড়াই লাইসেন্স পাওয়ার সহজ উপায়। সঙ্গে, লাইসেন্স না থাকলেও জরিমানার বদলে পুলিশের পকেটে অল্প কিছু গুঁজে দেওয়ার প্রবণতা তো রয়েছেই। যে ছেলেটি কোটি টাকার গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বার হয়, পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা তার কাছে এমন কী? ফল, নিয়মিত পথ-দুর্ঘটনা।
এ সব রুখতে প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে। জরিমানা বাড়িয়ে বেপরোয়া আরোহীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে অন্যরাও সচেতন হবে। সেই সঙ্গে অনলাইন গেমিং সংস্থাগুলো থেকে একচেটিয়া শুল্ক নেওয়ার বিনিময়ে প্রচ্ছন্ন মদত জোগানো বন্ধ করে বিশ্বের অন্য বেশ কিছু দেশের মতো গেমের সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। একই সঙ্গে শুরু করতে হবে প্রশাসনিক নজরদারিও। গতিতে আসক্ত নবীন প্রজন্মের উপরে রাশ টানতে কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া গত্যন্তর নেই।
মাধবী দাস, কোচবিহার
জীবনের শিক্ষা
ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্তের লেখা ঋষভ পন্থ-এর দুর্ঘটনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি (‘নতুন জীবনকে ধন্যবাদ জানাও, বার্তা বাহুতুলের’, ৩-১) মন ছুঁয়ে গেল। খেলাধুলোর সঙ্গে সুস্থ থাকার বিষয়টি সম্পর্কে আমরা সবাই পরিচিত। ছোটবেলায় বাবা-কাকা কিংবা বড় দাদাদের কাছ থেকে এ রকম বহু উদাহরণ পেয়েছি।
প্রবাদে আছে, সুস্থ শরীরে সুস্থ মন। মন সুস্থ রাখার জন্য বেশ কিছু উপাদান দরকার। যেমন, গ্রহণশীলতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ইত্যাদি। সুস্থ খেলা, সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিযোগিতা সহমত ও সহযোগিতা ধরে এগোয়। স্কুলের খেলার মাঠে এক বার এক বন্ধু ফুটবল খেলতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে আমার একটু দেরি হয়েছিল বলে বকুনি খেয়েছিলাম ওর কাছে। ওই ঘটনা থেকে সহযোগিতার গুরুত্ব বুঝতে শিখেছিলাম।
খেলোয়াড় এবং দর্শক— এই দুই মানুষই একটা খেলার সংস্কৃতিতে বাস করেন। সব সময় যে সেই সংস্কৃতিতে মনুষ্যত্বের উদাহরণ মেলে, এমনটা নয়। সেটা দুঃখের বিষয় হলেও আমাদের চেষ্টা করতে হবে যাতে গোটা পৃথিবী জুড়ে যে মারণ প্রতিযোগিতা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, তার থেকে সুস্থ খেলার স্বপ্নকে যেন বাঁচিয়ে রাখতে পারা যায়। অন্য দিকে, সুস্থ খেলার পাশাপাশি মানসিক অবসাদের সঙ্গেও আমাদের পরিচিত হতে হবে। যে কোনও মানুষের জীবনে যেমন সুস্থ থাকা একটা স্বাভাবিক প্রত্যাশা, তেমনই যে কোনও মুহূর্তে, যে কোনও পরিস্থিতির কারণে অসুস্থতা, পীড়াও অস্বাভাবিক নয়। তার জন্য অগ্রিম প্রস্তুতি নেওয়া শুধু বুদ্ধিমত্তার পরিচয় না, প্রয়োজনও বটে। ভাল-খারাপের সামঞ্জস্য রেখে এগিয়ে চলাই তো জীবনের আসল পাঠ।
সাত্যকি মজুমদার, কলকাতা-৭৫
নতুন বিভাগ
‘পিজিতে তৈরি স্পোর্টস মেডিসিনের আস্ত বিভাগ’ (৫-১) রাজ্যের ক্রীড়া চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য ভাল খবর। আশ্চর্যের বিষয়, এত বড় একটি উদ্যোগের তেমন প্রচার নেই সরকারি তরফে। শুধু কয়েক জন ফুটবল কোচ ঘুরে দেখলেন ব্যাপারটি। এর সুবিধা সব স্তরের খেলার প্রশিক্ষকদের দিলেই সার্থক হবে প্রকল্পটি। ফুটবল খেলিয়ে ক্লাবগুলোর সমর্থন বা সুযোগ নিজেদের ক্লাবের সংস্থান অনুযায়ী যদিও বা কিছুটা খেলোয়াড়রা পান, তা থেকে সাধারণত বঞ্চিত থেকে যান এর বাইরের হতদরিদ্র পরিবারের খেলোয়াড়রা। সারা বছর এবড়োখেবড়ো মাঠ বরাবর দৌড় অনুশীলন করা ওই খেলোয়াড়দের জন্য সিনিয়র স্তরের রাজ্য প্রতিযোগিতা পর্যন্ত কোনও বিজ্ঞানের সাহায্য নেওয়া হয় না। চোট-আঘাতের সমূহ সম্ভাবনা নিয়ে বিনা চিকিৎসায় বা হাতুড়ে টোটকার সাহায্যে অর্ধেক-সুস্থ হয়ে জেলা বা রাজ্যকে পয়েন্ট এনে দেওয়ার লড়াই অচিরেই তাঁদের খেলোয়াড় জীবনে ইতি টানে। একটি চাকরি পাওয়ার আশায় আলপথ দিয়ে শুরু হওয়া খেলোয়াড় জীবনের পরিণতি শেষপর্যন্ত আটকে যায় চাষবাসের কাজে। এই খেলোয়াড়দের সামনে বেশি করে এ সুযোগটি উন্মোচিত হওয়া প্রয়োজন রাজ্যের খেলাধুলার স্বার্থে। তাই, জেলা বা শহরতলির অ্যাথলেটিক্স প্রশিক্ষকদের ডেকে তাঁদের শিক্ষার্থীদের নামে প্রকল্পটি উৎসর্গ করা খুব দরকার, যাতে ডাক্তারি ফি বা চিকিৎসা খরচের বোঝা বওয়ার ভয়ে চিকিৎসা না-নিতে চাওয়া গ্রামগঞ্জের ছেলেমেয়েরা একটি দিশার সন্ধান পায়। অ্যাথলেটিক্সের সার্বিক ও বৈজ্ঞানিক প্রশিক্ষণ পেলে ফুটবল, টেনিস, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, কুস্তি, বক্সিং ইত্যাদি খেলার প্রাথমিক পাঠ ‘শারীরিক সক্ষমতা’ রপ্ত হবে ছেলেমেয়েদের। তার পর বিশেষ খেলার যোগ্য হতে পারবে তারা।
ঘটনা হল, স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া-য় সে রকম সুযোগ থাকলেও, অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রয়োজন মতো তা গ্রাম বা শহরতলির খেলোয়াড়দের কাছে কতটা সুলভ, সরকারি প্রচেষ্টায় সেই চিন্তা দূর করা সম্ভব। তাই পূর্ব ভারতের প্রথম সরকারি স্তরের পূর্ণাঙ্গ স্পোর্টস মেডিসিন বিভাগটির কাজ হওয়া উচিত— সব ক্রীড়া সংস্থার প্রশিক্ষক, প্রাক্তন খেলোয়াড় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির পরিচালন বোর্ডের সদস্য ডাক্তার ও বিজ্ঞানীদের সামনাসামনি বসিয়ে আলোচনা করা, কী ভাবে এর একশো ভাগ উপযোগিতা পেতে পারেন খেলোয়াড়রা। ঢাকঢোল পিটিয়ে আস্ত একটি বিভাগ খুলেও তা শেষপর্যন্ত যাতে নষ্ট না হয়ে যায়, তার যথাযথ নজরদারি দরকার।
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪
প্রাণের ঝুঁকি
ইদানীং যে ভাবে শহর কলকাতা ও শহরতলিতে আকছার পথ-দুর্ঘটনা ঘটেছে তা সত্যিই উদ্বেগের ও দুঃখজনক। এমতাবস্থায়, প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি-সহ ‘নেই সুরক্ষা-কবচ, দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়েই ডিভাইডারে রঙের কাজ’ (১১-১) প্রতিবেদনে ভূপেন বোস অ্যাভিনিউ-সহ উত্তর কলকাতার দু’-একটি রাস্তায় যে ভাবে ডিভাইডারে নীল-সাদা রং দেওয়ার খবর পাওয়া গেল জীবনকে বাজি রেখে, তা সত্যিই বিস্ময়ের। কেন উপযুক্ত নিরাপত্তা ছাড়া এই শ্রমিকদের কাজ করতে হচ্ছে? কেন প্রশাসনও এই বিষয়ে উদাসীন? অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ এ ব্যপারে দৃষ্টি নিক্ষেপ করুক।
গৌতম মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১০১
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy