—ফাইল চিত্র।
সুগত বসু তাঁর সুচিন্তিত দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারতের স্বাধীনতার প্রহেলিকাকে বিবৃত করেছেন ‘স্বাধীনতার স্বপ্নভঙ্গ’ (১৫-৮) শীর্ষক প্রবন্ধে। বিদেশি শাসক ভারতভূমিকে শুধুমাত্র শোষণের ক্ষেত্র হিসাবে ব্যবহার করেছে, নিজের স্বদেশবাসীকে আর্থিক ভাবে উন্নত জীবনদানের অঙ্গীকারে। সেই লক্ষ্যে ভারতীয়দের প্রতি যে কোনও অন্যায় করার লিখিত বা অলিখিত লাইসেন্স থাকত তাদের। ব্রিটিশরাজের দৃষ্টিতে সেটা ইংরেজদের দেশপ্রেম বটে।
প্রশ্ন হল, তৎকালীন ভারতীয় মুষ্টিমেয় নেতা এই দীর্ঘকালীন অমানবিক শোষণকে কী চোখে দেখতেন? আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতি সম্পর্কে তাঁদের জ্ঞানবুদ্ধি কি ছিল না, না কি সব বুঝেও শাসকের ধামাধরা হয়ে গোপন অভিসার চালিয়ে যেতেন তাঁরা? ব্রিটিশের রাতারাতি সিদ্ধান্তে দেশভাগ হল, ক্ষমতা হস্তান্তর হল পরিকল্পিত তারিখের প্রায় এক বছর আগে। এত দিনের অধিকৃত স্বর্ণপ্রসূ দেশকে চরম অনিশ্চিত, অসুরক্ষিত অবস্থায় ছেড়ে দিয়ে সৈন্যসামন্ত ব্রিটেনে ফেরত পাঠানো হল তড়িঘড়ি। ভারতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার উস্কানি বহু যুগ ধরেই দিয়েছিল ব্রিটিশরা, ব্রিটিশ সেনার অনুপস্থিতিতে সেই আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ল।
এত বছর পরে, আজকের দিনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বৈঠকঘরে বসে সেই দিনের পৈশাচিক উন্মাদনাকে অনুভব করতে পারা যাবে না; কন্যা বা ভগিনীদের সম্ভাব্য উৎপীড়নের ভয়ে তাদের হত্যা করার সময় পঞ্জাবি সর্দারের বেদনা ছুঁয়ে যাবে না আমাদের। কিন্তু কোটি কোটি দেশবাসীর সেই করুণ অবস্থা তো নেতৃবর্গ জানতেন, তবু ভিক্ষাপ্রার্থনা আর অনুনয়-বিনয়ের পথে চলে লর্ড আরউইন বা মাউন্টব্যাটেন-এর অন্যায্য আদেশ মানতে বাধ্য করতেন নিরীহ, অসহায় দেশবাসীকে। আজকের খাদি পরিহিত সুসভ্য পরিবেশনায় গান্ধী ও নেতাজি সুভাষকে একই ফুলদানির এক রকমের ফুলে সুবাসিত দেখা যায়। গান্ধী-সহ অন্য প্রাক্তন রাজনীতিকদের প্রতি কোনও প্রকাশ্য বিরোধ সম্ভবত দেখাননি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বরং ওঁদের নামে বাহিনীর নামকরণ করেছিলেন আইএনএ-তে। তবে গান্ধীর থেকে তাঁর অবস্থান ছিল বিপরীত— ব্রিটিশের সঙ্গে দরদস্তুর না করে, সুভাষ কট্টর বিরোধিতা করেছেন।
জাপান, জার্মানি বিশ্বযুদ্ধের চরম দুর্বিপাক থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেশকে উন্নত করে তুলেছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৬ বছর পরও ‘উন্নয়নশীল’ হয়ে থাকতে চাওয়া আমাদের দেশের অনুন্নত বঞ্চিত দেশবাসীর অবস্থা সাক্ষ্য দেয়, নেতাজি সুভাষ, সর্দার ভগৎ প্রমুখ কতটা দূরদর্শী, উন্নতশির, বাস্তববাদী, প্রজ্ঞাবান, প্রকৃত দেশপ্রেমী মহামানব ছিলেন।
কৌশিক দাস, বেঙ্গালুরু
গানের সন্ধান
সমস্যাদীর্ণ আমাদের রাজ্যে কি কাজ কম পড়েছে যে, ‘বাংলা দিবস’ এবং ‘রাজ্য সঙ্গীত’ বাছাই পর্বের জন্য শিল্পী-সাহিত্যিক-ইতিহাসবিদ-বিভিন্ন ধর্ম সংগঠন, কমিশন, বণিকমহল-সহ সাংবাদিকদের নিয়ে, মুখ্যমন্ত্রীর পৌরোহিত্যে আলোচনার গুরুগম্ভীর আসর বসাতে হবে? ‘রাজ্য সঙ্গীত: আরও মত চান মমতা’ (৩০-৮) শীর্ষক সংবাদ অনুযায়ী, স্থির হয়েছে, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল...’ গানটিই হবে রাজ্যের নিজস্ব সঙ্গীত এবং ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসাবে মান্যতা পাবে না।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, বাংলায় বিভিন্ন ধর্ম-জাতি, সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন, “তাই বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন-এর জায়গায় বাংলার মন, বাংলার ঘরে যত ভাইবোন...” করা যায় কি না। প্রশ্ন জাগে, তিনি কি রবীন্দ্রনাথের গানের লাইন বদল করতে চাইছেন? মহাজাতি সদনে প্রদত্ত ভাষণে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য স্মর্তব্য, “আত্মগৌরবে সমস্ত ভারতের সঙ্গে বাংলার সম্বন্ধ অচ্ছেদ্য থাকুক, আত্মাভিমানের সর্বনাশা ভেদবুদ্ধি তাকে পৃথক না করুক-এই কল্যাণ-ইচ্ছা এখানে সংকীর্ণচিত্ত তার উর্ধ্বে আপন জয়ধ্বজা যেন উড্ডীন রাখে। এখান থেকে এই প্রার্থনামন্ত্র যুগে যুগে উচ্ছ্বসিত হতে থাক- বাঙালির পণ, বাঙালির আশা,/ বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা,/ সত্য হউক-সত্য হউক-সত্য হউক হে ভগবান!/... সেইসঙ্গে এ কথা যোগ করা হোক-বাঙালির বাহু ভারতের বাহুকে বল দিক, বাঙালির বাণী ভারতের বাণীকে সত্য করুক, ভারতের মুক্তি সাধনায় বাঙালি স্বৈরবুদ্ধিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনো কারণেই নিজেকে অকৃতার্থ যেন না করে।”
আর ‘গীতালি’তে প্রদত্ত ভাষণে তাঁর ক্ষোভও স্মরণ করা যেতে পারে এই বাদানুবাদ পর্যায়ে, “আমার গান যাতে আমার গান বলে মনে হয় এইটি তোমরা কোর। আরো হাজারো গান হয়তো আছে-তাদের মাটি করে দাও না, আমার দুঃখ নেই। কিন্তু তোমাদের কাছে আমার মিনতি- তোমাদের গান যেন আমার গানের কাছাকাছি হয়, যেন শুনে আমিও আমার গান বলে চিনতে পারি।... নিজে রচনা করলুম, পরের মুখে নষ্ট হচ্ছে, এ যেন অসহ্য” (৩০ জুন ১৯৪০, ১৬ আষাঢ় ১৩৪৭, তারিখে কবির বক্তৃতার অনুলেখন, সংগীতচিন্তা)।
পরিশেষে যে সংশয় মনে জাগ্রত হয়, ‘বাংলা দিবস’ পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র মান্যতা পাবে? সর্বাগ্রে বিরোধিতা করবে পাহাড়ের সব ক’টি রাজনৈতিক দল। এই খেলা যেন বঙ্গ-ভঙ্গের নতুন অধ্যায় সূচিত না করে!
ধ্রুবজ্যোতি বাগচি, কলকাতা-১২৫
অর্থবর্ষ
অডিটের ক্ষেত্রে এপ্রিল থেকে পরের বছর মার্চকে অর্থবর্ষ বা ‘ফিসক্যাল ইয়ার’ হিসাবে ধরা হয়। কেন? জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর হলে ক্ষতি কী? অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ, সর্বত্রই এখন ইংরেজি মাস জানুয়ারিতে শুরু এবং ডিসেম্বরে শেষ— এই হিসাবেই গণনা করা হয়ে আসছে। তাই ‘ফিসক্যাল ইয়ার’ হিসাবে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর করতে কোনও বাধা নেই। আসলে ব্রিটিশরা এ দেশের শাসনভার গ্ৰহণ করার পর দেখল যে, দেশের ব্যবসায়ী ও অধিকাংশ সাধারণ মানুষ জমি-জমার খাজনা এবং অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের বাৎসরিক হিসাব চৈত্র মাসের শেষে, অর্থাৎ এপ্রিলের মাঝামাঝি করে থাকেন। তাই চৈত্র মাসের অর্ধেকের কাছাকাছি ৩১ মার্চ তারিখটিকেই তারা এই দেশের অর্থবর্ষের অন্তিম তারিখ হিসাবে ধার্য করেছিল। সেই থেকেই এর প্রচলন। স্বাধীনতার এতগুলো বছর পেরিয়ে এলেও বর্তমান সমস্ত অফিস-কাছারি থেকে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান— সকলেই পাশ্চাত্যের অনুকরণ করতেই বেশি পছন্দ করে। আজ পর্যন্ত কোনও সরকারই এ বিষয়ে মাথা ঘামাল না! অনেক কিছু তারা পরিবর্তন করলেও, ‘ফিসক্যাল ইয়ার’ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর কিছুতেই করতে রাজি নয়। দুটো পৃথক বছরকে একটি বছর ধরে হিসাবনিকাশ করার যুক্তি যে কী, তা আমার মতো অনেকের কাছে বোধগম্য নয়।
সংগ্ৰাম অগস্তি, কলকাতা-৮২
রেফারি
হালফিলে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতিকল্পে এআইএফএফ বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে। আমাদের ফুটবল দল ফিফা ক্রমতালিকাতেও একশোর মধ্যে উঠে এসেছে। পাশাপাশি আইএফএ-ও কলকাতা লিগে বিদেশি খেলোয়াড় না খেলানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার ফলে বাংলা তথা অন্যান্য রাজ্যের ছেলেদের অনেকেই নিজেদের প্রমাণ করতে পেরেছে। ময়দানে তিন প্রধানের খেলার দিনগুলিতে টিকিট কাউন্টারের সামনে সমর্থকদের সুদীর্ঘ সারি যেন জাদুমন্ত্রে সত্তর-আশির দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে এনেছে।
এফএসডিএল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, উঁচু মানের প্রতিযোগিতায় বিদেশি রেফারি নিযুক্ত করার পাশাপাশি অবিলম্বে ‘ভিএআর’ প্রযুক্তি চালু করা হোক। রেফারিদের প্রশিক্ষণ চালু করা হোক। তা না হলে অযোগ্য রেফারিদের একপেশে ম্যাচ পরিচালনার কারণে যাবতীয় সদিচ্ছা ও উদ্যোগের অকালমৃত্যু ঘটবে।
কালিদাস আচার্য, কলকাতা-৮৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy