“বারো ঘণ্টার ‘স্বেচ্ছাশ্রম’” (২-১) প্রবন্ধে স্বাতী ভট্টাচার্য আশাকর্মী, পুর স্বাস্থ্যকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি এবং মিড-ডে মিল কর্মীদের উপর বর্তানো অপরিমিত কাজ, এবং বিনিময়ে ন্যূনতম মজুরি এবং স্বাস্থ্য ও রোজগারের সুরক্ষার অভাবের দিকটি তুলে ধরেছেন। আশাকর্মীদের দীর্ঘ আন্দোলন, এবং অতিমারি পরিস্থিতিতে তাঁদের উপর ন্যস্ত হওয়া গুরুদায়িত্বের ফলস্বরূপ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত সেপ্টেম্বরে তাঁদের মাসিক বেতন ১০০০ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছেন। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদেরও গত বছর ডিসেম্বরে মাসিক ভাতা ১০০০ টাকা করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অবসরের পর তাঁরা এককালীন তিন লক্ষ টাকা পাবেন।
কিন্তু বছরের পর বছর বঞ্চিত হয়ে চলেছেন মিড-ডে মিল কর্মীরা। মাসে ১৫০০ টাকা করে, বছরে ১০ মাস তাঁরা বেতন পান, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ টাকা দেয় কেন্দ্র এবং ৪০ শতাংশ টাকা দেয় রাজ্য সরকার। রাজ্যের কোনও কোনও বিদ্যালয়ে আবার মিড-ডে মিল কর্মীদের দুই অথবা তিন মাসের বেতন এক সঙ্গে দেওয়া হয়। অতিমারি পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল আসা থেকে তা অভিভাবকদের মধ্যে বিতরণ করা, এই সমগ্র প্রক্রিয়াটি তৃণমূল স্তরে সুসম্পন্ন করেন এক জন মিড-ডে মিল কর্মী। অতিমারির আগের দিনগুলিতে বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিশুর মুখে প্রতি দিন এক বেলা পুষ্টিকর খাবার তুলে দিতেন এক জন মিড-ডে মিল কর্মী। অথচ, মাত্র ১৫০০ টাকা মাসিক বেতনে তাঁর পরিবারের মুখে চার বেলা খাবার উঠছে কি না, সেই খবর কোনও সরকার রাখেনি, এখনও রাখছে না। এঁদের মধ্যে কেউ বিধবা, কেউ অতি দরিদ্র, কারও স্বামী বা সন্তান অসুস্থ, কেউ অভাবে বাধ্য হয়ে পরিচারিকা, সেলাইয়ের কাজ করে দিন গুজরান করছেন। আজ এঁদের পাশে দাঁড়ানো কেন্দ্র এবং রাজ্য, দুই সরকারেরই কর্তব্য।
সৌপ্তিক পাল
দাশনগর, হাওড়া
এক কোটি কর্মী
স্বাতী ভট্টাচার্য যথার্থই বলেছেন, আশাকর্মীদের প্রতি রাষ্ট্র উদাসীন। ‘আইসিডিএস’ বা অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের কর্মী, আশাকর্মী, মিড-ডে মিল রন্ধনকর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ইত্যাদি প্রকল্প বা ‘স্কিম’-এ নিযুক্ত কর্মীদের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। এঁরা মুখ্যত মহিলা। এই স্কিম কর্মচারীদের অবদান স্বয়ং সরকারও অস্বীকার করেনি। মা ও শিশুদের অপুষ্টি কমানো আর শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস করার ক্ষেত্রে এঁদের অবদান অনস্বীকার্য। এঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই দেশ পোলিয়োমুক্ত হয়েছে, স্কুলছুট শিশুর সংখ্যা কমেছে। অথচ, এঁরা বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা থেকে চিরবঞ্চিত। সব ক’টি প্রকল্পের কর্মীরাই অত্যন্ত কম ভাতা পান। আশাকর্মীরা মাসে ৪৫০০ টাকা ভাতা-সহ বাড়ি বাড়ি ঘুরে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করার জন্য সামান্য কিছু উৎসাহভাতা পেয়ে থাকেন। কিন্তু সব মিলিয়ে যে টাকা এঁদের হাতে আসে, তা ১০০ দিনের কাজের মজুরির থেকেও কম। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা পেয়ে থাকেন ৮২৫০ টাকা, সহায়িকারা পান মাসে ৫২০০ টাকা।
গত ১৬ বছরে কেন্দ্রে ইউপিএ এবং এনডিএ সরকার এসেছে, কিন্তু স্কিম কর্মীদের ন্যূনতম সুবিধে বা কর্মীর মর্যাদা দেয়নি। এই শ্রমজীবী মহিলারা ন্যায্য সম্মান পাবেন কি? আমরা দেখছি, দেশের সরকার এখন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি থেকে হাত গুটিয়ে নিতে চাইছে। আইসিডিএস প্রকল্পটি সরকার ‘মিশন মোড’-এ রূপান্তরিত করছে। প্রকল্প চালানোর জন্য সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী একটি স্বতন্ত্র নথিভুক্ত সংগঠন তৈরি করা হচ্ছে। এই ‘মিশন’ এখন বিভিন্ন রাজ্যে এনজিও-দের দায়িত্ব দিচ্ছে প্রকল্প চালানোর। কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৫-১৬ সালে এই প্রকল্পের বরাদ্দ ২০ হাজার কোটি টাকা হ্রাস করেছিল। তার পর থেকে বাজেটে প্রতি বছর প্রকল্পগুলিকে ছোট করে আনা হয়েছে। সহায়িকার পদ তুলে দেওয়া, কর্মীদের ভাতা কমানো ইত্যাদি ঘটেছে। সরকার এত দিন স্কিম কর্মীদের কর্মচারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, এঁরা কোনও সামাজিক সুরক্ষার (প্রভিডেন্ট ফান্ড, ইএসআই ইত্যাদি) অন্তর্ভুক্ত হননি, ন্যূনতম বেতন নেই, অবসরের পর নেই গ্র্যাচুইটি, পেনশন।
২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত ৪৫তম ভারতীয় শ্রম সম্মেলনে বিস্তারিত আলোচনার শেষে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় স্কিম কর্মীদের সরকারি কর্মচারীর স্বীকৃতি দিতে হবে। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ৪৬তম শ্রম সম্মেলনে পুনরায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়, সামাজিক সুরক্ষার বিধিব্যবস্থা-সহ সরকারি কর্মচারীর স্বীকৃতি দিতে হবে স্কিম কর্মীদের। সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়, সমগ্র বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। তা আজও করা হয়নি।
অশোক ঘোষ
সাধারণ সম্পাদক, ইউটিইউসি
গুরুত্বহীন
“বারো ঘণ্টার ‘স্বেচ্ছাশ্রম’” আশাকর্মীদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যা জরুরি। এঁরা কাজ করেন একেবারে নীচের স্তরে, প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছে যান। গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবা দাঁড়িয়ে এঁদের উপর। তা সত্ত্বেও এঁদের মানুষের মতো বাঁচিয়ে রাখার দায় সরকার নেয় না। এই ব্যবস্থায় নীচের কোনও গুরুত্ব নেই। একই কারণে পঞ্চায়েতি রাজ গ্রামবাসীর সরকার হয় না। কোথায় কী কাজ হবে, সব ঠিক হয়েই আসে উপর থেকে। নীচের স্তরে পঞ্চায়েত শুধু হুকুম খাটে।
শিবপ্রসাদ দাশ
আন্দুল, হাওড়া
জল মিশিয়ে
“বারো ঘণ্টার ‘স্বেচ্ছাশ্রম’” নিবন্ধে যোগ করতে চাই, নদিয়া জেলার এক পঞ্চায়েত সচিব জানালেন, তাঁরা আশাকর্মীদের স্যানিটাইজ়ার দিয়েছিলেন পঞ্চায়েতের টাকায়। স্যানিটাইজ়ারের ১০ লিটারের বোতল ১৩০০-১৫৭০ টাকায় কিনে, তাতে জল মিশিয়েছিলেন। তার পর সেটাকে ছোট ছোট বোতলবন্দি করে পৌঁছে দিয়েছিলেন আশাকর্মীদের কাছে। তিনি জানালেন, মেশানো হয়েছিল ‘ডিস্টিলড ওয়াটার’। যদিও কোথা থেকে কিনেছিলেন, প্রশ্ন করতে পঞ্চায়েত দফতরের পাশের দোকানের মিনারেল ওয়াটারের বোতল দেখিয়ে দিলেন। ভাবছি, আশাকর্মীদের কাছে শেষ অবধি যে তরল পৌঁছেছিল, তাতে ভাইরাস নষ্টের ক্ষমতা আদৌ ছিল কি না।
জাহ্নবী মিত্র
জাগুলি, নদিয়া
প্রতিফলন
‘ভোটবাজারে পরিবেশে নম্বর কই’ (৮-১) নিবন্ধে জয়ন্ত বসু রাজ্যে বর্ষবরণের উৎসবে রাশ টানার ক্ষেত্রে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্য মুখ্যসচিবের শৈথিল্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু যা অনুচ্চারিত থেকে গেল তা হল, মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে মুখ্যসচিবের প্রতিক্রিয়ায়। অ্যালেন পার্কে বড়দিন পালন উৎসবের উদ্বোধন করে, বর্ষবরণের সূচনা করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি উদ্যোগে পার্ক স্ট্রিট আলোকমালায় সাজিয়ে উৎসবে শামিল হতে মানুষকে পরোক্ষে আহ্বান জানানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেদার বাজি ফেটেছে বর্ষবরণের রাতে। অথচ, প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যান বায়ুদূষণের কারণে। হাসপাতাল সাইলেন্স জ়োন-এ পড়লেও শব্দদূষণের তাণ্ডবে পিজি-র চিকিৎসকরা কতটা অসহায়, তা ওই দিনের সংবাদেই প্রকাশ পেয়েছে। বাজারে আবার পলিপ্যাকের বাড়বাড়ন্ত। অথচ, এক সময় শাসক দলের কর্মীরাও বাজারে ঘুরে পলিপ্যাকের বিরুদ্ধে অভিযানে শামিল হয়েছিলেন। দুয়ারে রাজনীতিকরা এলে, দৈনন্দিন সমস্যায় জেরবার মানুষ সে সব ভুলে পরিবেশ সুরক্ষার দাবি তুলবেন, তা প্রত্যাশিত নয়। রাজনৈতিক দল, বিশেষত শাসক দলের সদিচ্ছার অভাবে পরিবেশপ্রেমীদের লাগাতার লড়াই-ই ভরসা।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা
কলকাতা-১০৭
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy