কবি আল্লামা মহম্মদ ইকবাল। —ফাইল চিত্র।
সুবোধ সরকারের ‘অখণ্ড ভারতী মানসের ফুল’ (১৭-৬) শীর্ষক প্রবন্ধে তাঁর বক্তব্য খুবই যুক্তিযুক্ত। সাহিত্য সর্বত্রগামী। সাহিত্য জাতি-ধর্ম বিচার করে না। সাহিত্যিকরা দেশ-কাল ও সমাজের গণ্ডি পার হয়ে চিরস্মরণীয় এবং বরণীয় হয়ে থাকেন বিশ্বমানবের অন্তরে। কবি আল্লামা মহম্মদ ইকবাল এই রকমই এক জনপ্রিয় সাহিত্যিক। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি থেকে তাঁর লেখা বাদ দেওয়া হল শুধুই কি তিনি পাকিস্তানের জাতীয় কবি হওয়ার কারণে? পাকিস্তানি বলে কবি ইকবালের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করব কী করে! বিশেষত তাঁরই লেখনীতে ফুটে উঠেছে ‘সারে জহাঁ সে অচ্ছা’— এই গানই তো উচ্চারিত হয় ভারতের সামরিক কুচকাওয়াজে এবং স্কুল, কলেজ ও ক্লাবের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। তা হলে এ বার কি এই গানটিও বাদ দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ আসবে?
খুবই দুঃখজনক এই পরিস্থিতি! একই সঙ্গে এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়ও বটে! আমরা কী ভাবে বাদ দেব কবি ইকবালকে! পারব কি, কবি নজরুল ইসলামকে বাদ দিতে? তিনি তো মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশের জাতীয় কবি। আর হিন্দু কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গানই তো ওই মুসলিম রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত। জাতি ও ধর্ম কখনও কবির মানদণ্ড হতে পারে না। কবির সৃষ্টি যদি মানুষের অন্তরকে স্পর্শ করে, সেই কবি যুগোত্তীর্ণ এবং বিশ্ববন্দিত।
কবি ইকবাল আল্লার অনুসরণকারী হলেও, জানা যায় যে, তাঁর নিজের জীবনে এবং লেখায় হিন্দু ধর্মের উপনিষদ ও ভগবদ্গীতার প্রভাব রয়েছে অপরিসীম। তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্য জাভিদনামা-য় তিনি হিন্দু ঋষি বিশ্বামিত্র এবং কবি ভর্তৃহরির স্তব করেছেন। এক অর্থে, লিখনে ও মনে-প্রাণে তিনি ভারতীয় কবি। তিনি মানুষের কবি। বিদেশি শক্তির কাছে মাথা নত না করে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে মানুষের মুক্তির পথ দেখাতে চেয়েছেন তিনি। ক্ষমতায়-হিংস্রতায় কেউ সুন্দর ফুলের পাপড়ি উৎপাটিত করলেও, ফুলের স্রষ্টা কবি মহম্মদ ইকবালকে মুছে ফেলা যাবে না মানুষের হৃদয় থেকে।
হীরালাল মণ্ডল, কলকাতা-১৪৪
ক্ষতির বহর
সুবোধ সরকারের কথা অনুসরণ করে বলতে হয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি থেকে শুধু কি ইকবাল বাদ পড়াটা ঠিক হয়নি? নতুন শিক্ষানীতিতে ‘আইডিয়া অব ভারত’, ‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম’, ‘ব্লেন্ডেড মোড’ নামক নতুন নতুন শব্দবন্ধ এসেছে। এই শব্দবন্ধ অনুযায়ী, ইকবালের রচনা বাদ পড়েছে, বাদ পড়েছে মোগল যুগ, ডারউইন তত্ত্ব ইত্যাদি। এই শিক্ষানীতিতে সাহিত্যের গৌরব বলতে বেদ, বেদাঙ্গ, উপনিষদ, পুরাণ, মহাকাব্যের উল্লেখ করা হয়েছে। আবার এর সঙ্গে নিরপেক্ষতার প্রশ্নে বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্যের উল্লেখ করা হয়েছে। এক কথায়, এই শিক্ষানীতিকে ইতিহাস, পুরাণ, মহাকাব্যের এক মিশ্রণ তৈরি করে শেষ পর্যন্ত সব কিছু গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। তাই মহাকাব্যের রাম, অর্জুন প্রমুখ চরিত্রকে এখন ঐতিহাসিক চরিত্র বলা হচ্ছে। প্রাচীন ভারতের সাহিত্য যেখানে কেবল গৌরবের, সেখানে শুধু ইকবাল কি ব্রাত্য? তা নয়। সংস্কৃত শাস্ত্রের মধ্যে কাল্পনিক বিষয়গুলোকে জোর দেওয়া হচ্ছে ‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম’ বলে।
শুধু ইকবালকে বাদ দেওয়ার ফলে অভিঘাতের কথা তুলে নতুন শিক্ষানীতিকে অভিঘাতের বাইরে রেখে দিলে ক্ষতি শুধু ছাত্রদের নয়, ক্ষতি ভবিষ্যৎ সমাজ ও দেশেরও।
নরেন্দ্রনাথ কুলে, কলকাতা-৩৪
ইকবাল মানস
সুবোধ সরকারের লেখা প্রসঙ্গে এই চিঠি। লেখাটির শিরোনাম বিভ্রান্তিকর, কারণ মহম্মদ ইকবাল কখনওই অখণ্ড ভারত চাননি। নজরুল প্রসঙ্গে সুবোধবাবু যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তা কেবল ভিত্তিহীন নয়, নজরুলের রচনার গভীরতা ও বিস্তার সম্পর্কে এক জন বাঙালি হিসাবে তাঁর অসংবেদী মানসিকতার পরিচায়কও বটে। শান্তিনিকেতনের প্রসঙ্গ অপ্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ইকবালের কিছু চিঠিপত্র আদানপ্রদান ছাড়া আর কোনও সম্পর্ক হয়নি। তাঁদের মধ্যে দেখা হয়েছিল বলে আমার জানা নেই।
সুবোধবাবু লিখেছেন, “ইকবালের শিরায় রয়েছে কাশ্মীরি ব্রাহ্মণের রক্ত” এবং উপনিষদ ও ভগবদ্গীতা-র ছত্রছায়ায় জীবনের গোড়ার দিকে লেখা তাঁর কিছু কবিতার পরিচয়ও তিনি দিয়েছেন। কিন্তু তিনি যখন লেখেন, “অখণ্ড ভারতী মানসের সন্তান কবি ইকবাল”, তখন তাঁর সঙ্গে ভিন্নমত হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। ইকবালের কবিতা ‘আর্ট ফর আর্ট’স সেক’ ছিল না। ইসলামিক সার্বিক শ্রেষ্ঠত্ব বা কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধারের কাজে নিজেকে তিনি সহস্রাব্দের এক জন অগ্রদূত মনে করতেন। ভারতের অন্যতম জাতীয় গান রচনা থেকে ভবিষ্যৎ পাকিস্তানের রেখান্যাস পরিকল্পনায় ইকবালের মনের মধ্যে ঘটেছে উল্লেখযোগ্য ক্রমবিকাশ। এর সূচনা তাঁর জাতীয়তাবাদী পর্যায়ের নানান ওঠাপড়ায়, যখন তিনি জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে ধর্মীয় বিভাজনকে অতিক্রম করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্রিটেনে থাকার সময় ইকবাল সক্রিয় রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন। ১৯০৬ সালে সেখানে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার সদস্য হন। আল্লামা ইকবালের লেখনীতে ইসলামি পুনর্জাগরণের যে আহ্বান ওঠে, তা সমসাময়িক অনেক মানুষ ও আন্দোলনকে প্রভাবিত করে।
মূল ধারার ভারতীয় কংগ্রেসের সমালোচক মহম্মদ আলি জিন্নাও তাঁর লেখায় সম্মোহিত হন। মুসলমানদের উন্নয়নের জন্যে পৃথক রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তার কথা লিখতে গিয়ে তিনি অবিভক্ত ভারতে তাদের অস্তিত্ব ও সংস্কৃতির সঙ্কটের কথা উল্লেখ করেন। ১৯২৭ সালে ব্রিটিশ সরকার ভবিষ্যৎ ভারতীয় শাসনতন্ত্রের পটভূমি তৈরি করার প্রত্যাশায় ‘সাইমন কমিশন’ প্রেরণ করলে কংগ্রেস যখন দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করে, তখন ইকবাল নবাব জ়ুলফিকার আলি খান ও মৌলানা মহম্মদ আলির সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে কমিশনকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। কবি ইকবাল ক্রমশ দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রবল প্রবক্তা হয়ে ওঠেন, ভারত ভাগ করে পৃথক পাকিস্তান তৈরির পক্ষেও জোরালো দাবি জানাতে থাকেন। স্বাধীনতা লাভের বছর দশেক আগে লাহোরে তাঁর মৃত্যু হয়, এবং স্বাধীন পাকিস্তানের জাতীয় কবি ও আধ্যাত্মিক জনক রূপে তাঁকে সম্মানিত করা হয়।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১৪তম শিক্ষাপরিষদের বৈঠকে উপাচার্য অধ্যাপক যোগেশ সিংহ বলেন— যাঁরা ভারতকে ভাঙার ভিত্তিপ্রস্তর রচনায় নেতৃত্ব দান করেছিলেন, রাষ্ট্রনীতির পাঠ্যসূচিতে তাঁদের থাকা উচিত নয়।
মনোজ ঘোষ, কলকাতা-৬১
কাদের বিকাশ
‘ভারতীয়দের মাথা পিছু ধার ১.২০ লক্ষ, নিশানায় মোদী’ (১১-৬) খবরটি বলে দেয়, ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ কেমন। ঋণ হলেও সাধারণ মানুষের কপালে ঘি জোটেনি। বরং, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান ক্রমশ তলিয়ে গিয়েছে। তাই দেশে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা তেত্রিশ লক্ষের বেশি (এক বছর আগের এক পরিসংখ্যান) হলে আশ্চর্যের কিছু নেই। অথচ, দেশে ধনীর তালিকা ক্রমশ বেড়েছে। অতিমারির আগে দেশে একশো কোটির মালিক ৫৮ থেকে বেড়ে ১১৩, মানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিজেপি সরকার এই ন’বছরে একশো লক্ষ কোটি টাকা ঋণ করেছে। তা হলে এই ঋণে কাদের বিকাশ হল?
পাঠক মিত্র, কলকাতা-৩৪
ওষুধের দাম
‘২৩টি প্রয়োজনীয় ওষুধের সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দিল এনপিপিএ’ (১১-৬) সংবাদ প্রসঙ্গে বলি, ওষুধের দোকানগুলি বিভিন্ন হারে ছাড় দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে চায়। আবার কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জন ঔষধি’-তে কিছু ওষুধের দাম বাজারচলতি দামের তুলনায় প্রায় নগণ্য। বিভিন্ন দোকানে মূল্যের ফারাক ওষুধের গুণমান সম্পর্কে সংশয় জাগায়। ছাড়ের প্রতিযোগিতা ভেজাল ওষুধের অনুপ্রবেশের কারণও হতে পারে। সব ওষুধেরই দাম বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy