জয় গোস্বামীর নিবন্ধ (‘মুখ আর মুখোশের ফারাক’, ৯-৩) প্রসঙ্গে বলতে চাই, গ্ৰামবাংলায় হিন্দু-মুসলমানের পাশাপাশি বসতি। তাদের পারস্পরিক ভালবাসা, একের বিপদে অন্যের ঝাঁপিয়ে পড়া, একের উৎসব-অনুষ্ঠানে অন্যের অংশগ্রহণ, এ সব দূরের মানুষ কতটুকু জানে?
জাতপাতের বিচার পশ্চিমবঙ্গে যথেষ্ট কমেছে। সর্বজনীন পূজামণ্ডপে বিভিন্ন জাতের মানুষ এক সঙ্গে পুষ্পাঞ্জলি দিচ্ছেন। স্কুল-কলেজের সরস্বতী পুজোয় একই দৃশ্য। যাঁরা মনে-প্রাণে জাতপাত মানেন, তাঁদের দরকার পড়ে ঢাকঢোল বাজিয়ে আদিবাসীর বাড়িতে অন্নগ্ৰহণ করার। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে। তাদের নিজস্ব কথার ভাঁড়ার শূন্য। তাই দলের অনৈতিক মতবাদকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে মহাপুরুষদের আশ্রয় নিতে চাইছে। ভুলভাল উদ্ধৃতি দিয়ে, জন্মদিন-মৃত্যুদিন ঘটা করে পালন করে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে উঠেপড়ে লেগেছে। যে কোনও বিরোধী কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করতে এরা পারদর্শী। তাই ভারাভারা রাওয়ের মতো কবিও দীর্ঘ দিন কারারুদ্ধ রইলেন। এ দেশে প্রত্যেক মানুষই নিজের ধর্ম এবং সংস্কৃতি পালনের অধিকারী।
বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য ভারতাত্মার মূল সুর, মূল কথা। মাটি আর মানুষকে নিয়েই দেশ। মাটির স্বীকৃতি থাকে মানচিত্রে। আর একই ভূখণ্ডের মানুষ হিসেবে যখন এক জন অন্য জনকে জাত, ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতির ঊর্ধ্বে উঠে আপন করে নেয়, তখনই তৈরি হয় জাতীয় সংহতি। একে রক্ষার দায়িত্ব সমস্ত নাগরিকের।
গৌতম পতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
অপচয়
আশ্চর্য হলাম, রাজ্য সরকারের কোনও ব্যর্থতাই জয় গোস্বামীর চোখে পড়ল না। এতে তাঁর লেখার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিগত দশ বছরে রাজ্যে উন্নয়ন যা হয়েছে, তার অধিকাংশই পুরোপুরি ভোটকেন্দ্রিক। তা না হলে কেন সব মেয়েকে কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী, নবম শ্রেণি থেকে রাজ্যের সব ছাত্রছাত্রীকে সবুজসাথীর সাইকেল (নিম্নমানের), বিধবাদের বিধবাভাতা, ষাটোর্ধ্ব সবাইকে বার্ধক্যভাতা, যুবক-যুবতীদের যুবশ্রী, ইমামদের ইমামভাতা, পুরোহিতদের পুরোহিতভাতা, সব ক্লাবকে অনুদান, দুর্গাপুজো কমিটিগুলোকে অনুদান, দ্বাদশ শ্রেণির সবাইকে ট্যাবের জন্য দশ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে? এঁদের মধ্যে যাঁরা আর্থিক ভাবে সচ্ছল, তাঁদেরও এই সব সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অর্থ কী? যোগ্য-অযোগ্য বাছবিচার না করে কেন এ ভাবে সবাইকে অনুদান দেওয়া? এ সব করতে গিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে মানুষের করের হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে।
এ ভাবে সুকৌশলে উন্নয়নের নামে সকলকে ঢালাও সুবিধা পাইয়ে দিয়ে পর পর ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসাই যে মুখ্যমন্ত্রীর একমাত্র লক্ষ্য, এত দিনে তা বোধ হয় বুঝতে কারও আর বাকি নেই। এ সব উন্নয়নে মানুষ যদি সত্যিই উপকৃত হয়ে থাকেন, তা হলে তৃতীয় বারের জন্য ভোটে জিতে ক্ষমতায় ফিরে আসা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এত সংশয় কেন?
বিভূতি ভূষণ রায়, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
আজান
জয় গোস্বামী এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমানের ‘পারস্পরিক সম্মানদানের প্রথা’ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আমরা যে পাঠশালায় ‘অআকখ’ শিখেছিলাম, তার শিক্ষক ছিলেন গ্রামের শ্রদ্ধেয় মুসলমান। সেই পাঠশালার পাশেই মসজিদ। স্যর কোনও দিন আমাদের ইসলামের কথা বলতেন না। দুর্গাপুজোর সময় শোভাযাত্রা বেরোত, কিন্তু মসজিদের সামনে ঢাকঢোল বাজত না। ইদের সময় আমাদের নেমন্তন্ন হত, বাড়িতে খাসির মাংস পাঠিয়ে দেওয়া হত। কোথায় গরু জবাই হত, আমরা কেউ জানতাম না, আজও জানি না। বাবার বন্ধু রহমত চাচা বলতেন, “এলেগেলে মানুষ কুটুম, চাটলেচুটলে গরু কুটুম।” আমরা তাঁর বাড়ি যেতাম, আসার সময় তিনি ডিম আর কিছু তরিতরকারি বেঁধে দিতেন। আজও ভাবতে পারি না যে, গ্রামের ছোট্ট মন্দিরে ঘণ্টা বাজবে, আর সেই পাঠশালার পাশের মসজিদে আজানের সুর ভাসবে না।
তরুণকুমার ঘটক, কলকাতা-৭৫
হাস্যকর
‘মুখ আর মুখোশের ফারাক’ পড়ে হতাশ হলাম। নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্লেষণের অভাবে লেখাটি একঘেয়েমিতে ভরা। কন্যাশ্রী, সাইকেল বা দু’টাকা কেজির চাল, ইত্যাদি সুবিধের কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের সদস্য-সমর্থকদের মুখে লক্ষ বার উচ্চারিত হতে হতে এখন বড়ই একঘেয়ে হয়ে গিয়েছে। দশ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকলে কিছু কাজ নিশ্চয়ই হয়। কিন্তু তাই দিয়ে রাজ্যের শাসকদের অসংখ্য দুষ্কর্ম, যেমন আইনশৃঙ্খলার অবনতি, দুর্নীতি, বেকারত্ব প্রভৃতি ব্যর্থতা ঢাকতে পারা যায় না।
আদিবাসী পরিবারের সঙ্গে এক দিন খেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ক্যামেরার সামনে ‘আদিবাসী দরদি’ সাজা হাস্যকর। কিন্তু ডজনখানেক মিডিয়া-পরিবৃত হয়ে কোনও আদিবাসীর হেঁশেলে হঠাৎ ঢুকে পড়ে হাতাখুন্তি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রান্না করছেন, এ দৃশ্যটিও একই রকম হাস্যকর নয় কি? আসলে দেখা যাচ্ছে, “আমি তোমাদেরই লোক/ আর কিছু নয়/ এই হোক শেষ পরিচয়”— এই পরিচয় প্রমাণ করার জন্যে দু’পক্ষের মধ্যে এক হাস্যকর এবং প্রাণান্তকর প্রতিযোগিতা চলছে।
অনিলেশ গোস্বামী, শ্রীরামপুর, হুগলি
বিপর্যয়ের পথ
‘পরিবেশচিন্তা যখন রাজনীতি’ (২-৩) নিবন্ধে মোহিত রায়ের বক্তব্য পড়ে মনে হচ্ছিল, রাষ্ট্রনায়ক একমাত্র শক্তিধর। তিনি যে পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, সেটাই দেশের পথ, সে স্ববিরোধী হলেও। গণতান্ত্রিক কাঠামোতে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করার লক্ষ্য নিয়ে চলছেন বর্তমান রাষ্ট্রনায়কেরা। প্রতিবেদক সেই কথাকেই মান্যতা দিতে চেয়েছেন। তথ্য সাজিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, রাষ্ট্রনায়কই শেষ কথা বলেন। বুঝতে হবে, নাম বদলে যাওয়ার মধ্যেও যুক্তি থাকে। জঙ্গলের নাম ‘সাইলেন্ট ভ্যালি’ কেন? ‘সৈরিন্ধ্রীবনম’ এমন এক বন, যেখানে কোনও ঝিঁঝি পোকা নেই। ওই বনে গেলে অন্য বনের মতো একটানা শব্দ শোনা যায় না। তাই ‘সাইলেন্ট ভ্যালি’ নাম হয়েছিল। জীববৈচিত্রের দিক থেকে এই অরণ্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই জীববৈচিত্র রক্ষার জন্যই ওই অরণ্য রক্ষার আন্দোলন হয়। আন্দোলনের প্রভাবে ওই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করেন ইন্দিরা গাঁধী। তাঁর একার ইচ্ছায় ওই প্রকল্প বন্ধ হয়নি।
প্রতিবেদক চিপকো আন্দোলনে চণ্ডীপ্রসাদ ভাটের গুরুত্ব স্মরণ করেছেন। কিন্তু চিপকো আন্দোলনের পীঠস্থান রেনি গ্রামের গৌড়া দেবীর নাম উল্লেখ করেননি, যিনি প্রথম গাছকে জড়িয়ে আন্দোলনের সূচনা করেন। এই প্রতিবাদ ওই গ্রামকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর স্বীকৃতি পাইয়ে দিয়েছিল। প্রসঙ্গত, সেই গ্রামেই স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ঋষিগঙ্গা প্রকল্প শুরু হয়, আর সেখানেই গত ৭ ফেব্রুয়ারি হিমবাহ ভেঙে বিপর্যয় নামে। ওখানে উন্নয়নের নামে প্রকল্প আমলা-নেতা-কর্পোরেটের লোভের ফল। উত্তরাখণ্ড জুড়ে প্রচার করা হচ্ছে, রাজ্যকে ‘উর্জা প্রদেশ’ বানানো হবে। সেই ‘উর্জা’, অর্থাৎ বিদ্যুৎ বেচে রাজ্যে উন্নয়ন আসবে। এর আদৌ প্রয়োজন আছে কি? তথ্য বলছে, ভারতে বিদ্যুৎ এখন উদ্বৃত্ত। নতুন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা না বাড়ালেও চলবে। আধুনিক প্রযুক্তিতে জলবিদ্যুৎ এখন আর ‘সস্তা’ নয়, নদীর জলপ্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় জীববৈচিত্র-সহ সমতলে নদী-নির্ভর জীবন-জীবিকার অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। সঙ্গে বিপর্যয়ের ঝুঁকি। একে প্রতিবেদক ‘সব কিছু ভোটের জন্য’ বলে নৈতিক দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না।
তাপস দাস, কলকাতা ৮২
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy