প্রতীকী ছবি।
‘ডিজ়াস্টার টুরিজ়ম’ নিয়ে ঘোরতর চর্চা শুরু হয়েছে। সেলেব্রিটি এবং নানা পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা নাকি গৃহবন্দি-দশা ঘোচাতে ইয়াস-বিধ্বস্ত এলাকায় একটু ত্রাণ বিলিতে গিয়েছেন। যে হেতু সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলগুলিই বেশি মাত্রায় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, তাই নির্ভেজাল প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং প্রকৃতির বিধ্বংসী তাণ্ডবলীলা চাক্ষুষ করার সুযোগ তাঁরা হারাতে চাননি। ওখানকার দুর্গত মানুষদের সঙ্গে কথা বলাটাও নাকি শহুরে বাবু-মেমদের কাছে একটা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। তাঁরা সেই সব কথোপকথনের ভিডিয়ো ফলাও করে সমাজমাধ্যমে আপলোড করে আত্মপ্রসাদ লাভ করছেন শুধু নয়, একটা জনসেবামূলক কাজের সুনামও অর্জন করছেন। ব্যঙ্গ করে তাঁদের বলা হচ্ছে ‘অতিমারি পর্যটক’।
কিন্তু যাঁরা শুধুমাত্র ঘরে বসে সমাজমাধ্যমে এই সব সমালোচনা করছেন, তাঁরা একটু ভেবে দেখেছেন কি, ওই সামান্য সাহায্য এই মুহূর্তে ওই সকল মানুষের কাছে কতটা মূল্যবান? সর্বস্ব হারিয়ে বেঁচে থাকার জন্য যাঁরা এই অসম লড়াইটা প্রকৃতির সঙ্গে করছেন, সামান্য পানীয় জলের বোতল দেখলে যাঁরা দৌড়ে আসছেন, তাঁদের কাছে কয়েক দিনের খাদ্যসামগ্রীর মূল্য কতটা, সেটা শুধুমাত্র তাঁরাই উপলব্ধি করেছেন, যাঁরা তথাকথিত ‘ডিজ়াস্টার টুরিজ়ম’-এ গিয়েছেন। অসহায়দের সাহায্য করার মধ্য দিয়ে যদি কারও ভ্রমণের অনুভূতি হয়েই থাকে, অপরাধ কোথায়? সেই অনুভূতি তো অন্যরাও নিতে পারতেন। মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর অনুভূতির অতিরিক্ত প্রাপ্তিটুকু স্বাভাবিক ভ্রমণের মধ্যে পেতেন কি? যদি সকল ভ্রমণের সঙ্গেই অসহায়কে সাহায্য করার সুযোগ থাকত, সেটা কি কম গৌরবের? জানি এটা বাস্তবে সম্ভব নয়। কিন্তু যাঁরা এ রকম একটা সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কোথাও যান, তাঁদের অকারণ সমালোচনা করা কুরুচিপূর্ণ। যাঁরা লকডাউনে ঘরবন্দি হয়ে বসে আছেন, তাঁদের প্রতি আবেদন, সুযোগ হলে এক বার ঘুরে আসুন। দুর্গতদের সাহায্য করতে বলছি না, শুধু দেখে আসুন। মতের পরিবর্তন হতেই পারে। সেটা পরমপ্রাপ্তিও মনে হতে পারে।
সূর্যকান্ত চক্রবর্তী
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
ভূতুড়ে বাদুড়
প্রজিতবিহারী মুখোপাধ্যায়ের ‘মহামারির ভূত’ (রবিবাসরীয়, ১৩-৬) একই সঙ্গে মস্তিষ্কের যুক্তি আর আবেগের বিন্দুকে ছুঁতে পেরেছে। তিনি লিখেছেন, “বহু দেশের গবেষকরা দেখেছেন কেমন করে ভূতের গল্পের মধ্যে দিয়ে সমাজ গণস্মৃতি গঠন ও চর্চা করে।” এই প্রসঙ্গে বলা যায়, রক্তচোষা বাদুড়ের গল্পের উৎপত্তিও হয়তো এ ভাবে গোষ্ঠীগত স্মৃতি থেকে তৈরি হয়েছে। বাদুড়ের দেহে বহু মারণ ভাইরাস থাকে। প্রাচীন কালের মানুষ হয়তো খেয়াল করেছিল, কিছু কিছু বিশেষ বাদুড়ের সংস্পর্শে এলে মানুষ কিছু দিনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে। তারা হয়তো এর কারণ বুঝতে পারেনি। আর, যুগে যুগে দেখা গিয়েছে, যে ঘটনাই মানুষ যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারেনি, সেটাতে আধিভৌতিকের প্রলেপ দিয়েছে। বাদুড়ের পোড়ো বাড়িতে থাকা, উল্টো হয়ে ঝুলে থাকা, রাতে উড়তে বেরোনো— এ সব মানুষের ভয়কে আরও উস্কে দিয়েছে। এ ভাবেই হয়তো কিছু বাদুড় মানুষের রক্ত চুষে খায়— এই কথা প্রচার হয়েছিল। আবার, ড্রাকুলার গল্প পড়েও মনে হয়, লালাবাহিত কোনও ছোঁয়াচে রোগের গণস্মৃতির ফসল হয়তো এই সব গল্প। এগুলো নিয়ে অবশ্যই আরও গবেষণা প্রয়োজন।
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা-৪০
মড়কের পরে
প্রজিতবিহারী মুখোপাধ্যায়ের নিবন্ধটি তথ্যনিষ্ঠ ও সুখপাঠ্য। আমাদের ছোটবেলায় মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্ত ভগবানগোলা এলাকা ও তার আশেপাশে ভূত নিয়ে অনেক লোককথা ও গল্পগাথা শুনে এসেছি। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে শিশুমনে তখন বিষয়গুলি বেশ নাড়া দিত। আমাদের গ্রামের পাশে পুখুরিয়া মৌজার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শুধু গাছপালা ও বনজঙ্গল। আর ছিল অসংখ্য উঁচুনিচু ডিহি। বহু কাল আগে এই সব এলাকায় ঘন জনবসতি ছিল। এক সময় কলেরা, কালাজ্বর, প্লেগ, গুটিবসন্ত, ডায়রিয়া, বন্যা ও বিভিন্ন মহামারির কারণে মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানগোলা এলাকা-সহ বিস্তীর্ণ জনপদ পুরো উজাড় হয়ে যায়। জনশূন্য এলাকায় বিভিন্ন অলৌকিক গল্পগাথা সৃষ্টি হয়, এবং তা লোকমুখে বংশানুক্রমিক ভাবে প্রচারিত হতে থাকে। এলাকার প্রবীণ মানুষদের মুখে শুনেছি বিশুর ডিহি, ভুলার আঁচট, লহেদির ডিহি, লায়েবের দাড়া, সাবের কোম্পানির বাথান, পাকা দরগার থান, চুলকাটির দাড়া, কালী-মন্দির তলার শ্যাওড়া গাছ, গঙ্গাপুজোর ঘাট, রানিতলার রানিদিঘি, বেনিপুরে রানিভবানীর ঠাকুরবাড়ি-সহ বহু জনপদ নিয়ে নানা ধরনের অলৌকিক ও আধিভৌতিক গল্পকথা আজও শোনা যায়। বিশুর ডিহিতে এক ঘন জঙ্গলের মাঝখানে এক খণ্ড বড় ও বেশ ভারী ধরনের পাথর আছে। জিন ও পরিরা নাকি সেখানে রাতারাতি একটা মসজিদ নির্মাণ করতে করতে সকাল হয়ে গেলে সেই মসজিদ অসমাপ্ত থেকে যায়। ভুলার আঁচটে কেউ পা দিলে নানা রকমের প্রলোভন দেখিয়ে ‘ভুলা’ নামের অপদেবতা নাকি পথচারীদের ভুলিয়ে, নিজের এলাকায় আঁচটের মধ্যে নিয়ে গিয়ে জীবন্ত অবস্থায় রক্ত শুষে মেরে দেয়। এই ভয়ে ভুলার আঁচটের দিকে কেউ ভুলেও যেত না। তেমনই, পুখুরিয়া এলাকায় এক পরিত্যক্ত ডিহি বা ভিটে হল ‘লহেদির ডিহি’, বেনিপুর গ্রামের জনৈক লহেদি নামক ব্যক্তি যার মালিক ছিলেন। আজও নাকি সেই ডিহি আগলে পাহারা দেন লহেদির বংশধরেরা। এলাকার পদ্মা ও ভৈরব নদীর প্রবাহিত চুলকাটির দাড়ার উপরে ছিল লায়েব আলির ডুগরি। সেখানে বর্ষাকালে প্রচুর মাছ ধরা হত। সেই মাছের ভাগ নিতে গভীর রাতে নাকি অশরীরীর আগমন হত। হাবাসপুরের পাকা দরগায় সন্ধ্যার পরে কোনও বাস বা গাড়ি দাঁড়ানো নিষেধ ছিল। আখেরিগঞ্জের কালী-মন্দির, রতনিতলার গঙ্গাপুজোর ঘাট, রানিতলার রানিভবানীর স্মৃতি-বিজড়িত রানিদিঘি, দেবাইপুরের মাধাইখালির ঘাটে আজও সাধারণ মানুষ সন্ধ্যার পরে যেতে ভয় পায়। বেনিপুর গ্রামে রানিভবানীর ঠাকুরবাড়ির কাছে দিনের বেলাতেও কেউ খুব একটা যেত না। শিবনগরের বন্দের মাঠের কাছে যেতেও লোকে ভয় পেত। আখেরিগঞ্জ বাবুপাড়ার রক্ষিতবাবুদের এক বিশাল আকারের পুকুর ছিল, তার চার দিকে পাকা ঘাট। লোকে তাকে বলত পাকাপুকুর। বিকেলের পরে সেই পাকাপুকুরের ধারেকাছেও কেউ যাওয়ার সাহস করত না।
মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানগোলা এলাকার মহামারির খবর সেই সময়ের সমাচার দর্পণ ইত্যাদি সাময়িক পত্রেও প্রকাশিত হয়েছিল। এলাকার মহামারিজনিত মড়কের ফলে মানুষের মধ্যে এক ভয় কাজ করত। এই সব মহামারির ভূত আজও এলাকায় বিচরণ করে। হুক্কি, গোদানা, হাড়বকস, এই সব বিচিত্র নামে।
আমির উল হক
আখেরিগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ
সংবাদের সীমা
শোভন চট্টোপাধ্যায়-বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক সংবাদমাধ্যমে এত গুরুত্ব পাচ্ছে কেন? রাজ্যে কি আর কোনও সমস্যা নেই! করোনার আবহে যেখানে কোটি কোটি মানুষের রুজি-রোজগার বন্ধ, দু’বেলা খাবার জোটানো যেখানে দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, দেনার দায়ে মানুষ সপরিবারে আত্মঘাতী হচ্ছে, সেখানে এহেন পরকীয়ার আঠায় পাঠকদের আটকানোর প্রয়োজন কী? সেটা যখন একটা নেতিবাচক ছবি তুলে ধরছে, তখন ওঁদের বর্জন করাটাই শ্রেয়। সমাজ গড়ে তোলার দায় যদি জনপ্রতিনিধি বিস্মৃত হন, আমরা তাঁদের কুকর্মের পাঁক ঘাঁটব কেন? বৈশাখী কী বললেন, রত্না তাঁর বিরুদ্ধে কী বললেন, এই চাপানউতোরে সাংবাদিকতা তার নির্দিষ্ট পথ থেকে সরে যাচ্ছে। এখনই রাশ টানা দরকার।
অনিমা বসু
কলকাতা-১০৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy