জয়ন্ত বসুর “‘আয়লা বাঁধ’ই রক্ষাকবচ” (৬-৮) প্রবন্ধটি সময়োপযোগী। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ও সরকারের প্রতিশ্রুতি যা-ই থাক, ২০০৯ সালের আয়লা-পরবর্তী যে সমস্ত ঝড় সুন্দরবনের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে, তার থেকে রক্ষা পেতে সেখানকার অধিবাসীদের জন্য কোনও পাকাপোক্ত সমাধান এখনও গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। যার ফলে ফণী, বুলবুল, আমপান, ইয়াসের মতো ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডব অধিবাসীদের দুর্দশা ও হতাশার কারণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। তৎকালীন কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার, এ রাজ্যে বিরোধী দলের সরকার থাকা সত্ত্বেও সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের স্বার্থে ৭৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘আয়লা বাঁধ’ নির্মাণের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজ্য সরকারকে দিয়েছিল। বাঁধ নির্মাণের জন্য কিছু কিছু জায়গায় জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সমস্যার কারণেই তার নির্মাণ সম্ভব হয়নি। ২০০৬ সালে টাটা গোষ্ঠীর ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানা গড়ার জন্য সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ ও ২০০৭ সালে সালেম গোষ্ঠীর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলন এবং আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে রাজ্য সরকার ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্য সরকারও জোর করে জমি অধিগ্রহণ করতে চাইছিল না। তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি দিতে অনিচ্ছুক চাষি ও জমির মালিকদের নিয়ে জমি আন্দোলন শুরু করলেন। ক্ষমতায় এসে তিনি ঘোষণা করলেন, জোর করে কোথাও কোনও জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। ফলে, কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেওয়া সত্ত্বেও বামফ্রন্ট বা তৃণমূল, কোনও সরকার ‘আয়লা বাঁধ’ তৈরি করতে সক্ষম হল না। কেন্দ্রের দেওয়া টাকার তিন-চতুর্থাংশের বেশি কেন্দ্রের ঘরে ফিরে গেল।
এর ফলে ঘোড়ামারা, মৌসুনি, জি প্লট, কুমিরমারীর মতো জায়গাগুলো অন্ধকারেই থেকে গেল। ইয়াস ঝড়ের তাণ্ডব ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে অন্য বাঁধগুলি নষ্ট হয়ে গেলেও বিশেষ ধরনের ‘আয়লা বাঁধ’ অক্ষত থেকে গিয়েছে। সুন্দরবনবাসীদের এই রকম ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের থেকে রক্ষা করার জন্য বর্তমানে বাঁধ নির্মাণের খরচ পড়বে পঁচিশ হাজার কোটি টাকা। এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্য সরকারের অহি-নকুল সম্পর্ক। সব সম্পর্কই পরিবর্তনশীল। পূর্বের সম্পর্কের বেড়া ভেঙে দুই সরকার যদি হাতে হাত ধরে চলতে সমর্থ হয়, তবেই এত ব্যয়সাপেক্ষ বাঁধ নির্মাণ করে ওই অঞ্চলের অধিবাসীদের হতাশা ও দুর্দশার অবসান ঘটানো সম্ভব।
পার্থ সারথী মণ্ডল
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
যেমন বাঁধ চাই
জয়ন্ত বসু সুন্দরবনের মানুষের সুরক্ষা সম্পর্কে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেছেন। আমরা যাঁরা মানুষ ও পরিবেশের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করি, সকলেই হয়তো সহমত। কারণ, ভূমিরূপের গঠন, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে ব্যবহারিক দিক। অন্য উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে সুন্দরবনের ভূমিরূপের বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা। ভূমিভাগ ৩ থেকে ৫ ফুট নিচু সমুদ্রতলের থেকে। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় নদী জলতল ভূমিভাগের উপরেই থাকে। নদীবাঁধগুলি পলি ও কাদামাটি দিয়ে গঠিত, যা সহজে ধুয়ে যায়। ঠিকই, শুধু ম্যানগ্রোভ লাগিয়ে সুন্দরবনকে বাঁচানো যাবে না, যে হেতু অঞ্চলটি সমুদ্রতল থেকে নিচু। আবার একস্তরীয় নদীবাঁধ ও ম্যানগ্রোভ লাগিয়ে ভবিষ্যতের আয়লা কিংবা ইয়াসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আটকানো সম্ভব নয়, যদি ভূমিরূপের সঠিক পরিবর্তন ও ব্যবহারিক চরিত্র বদল না হয়। যেখানে অল্প জোয়ারের ধাক্কায়ও জলোচ্ছ্বাস বাঁধ টপকে ঢুকে যায় ভূমিভাগে, সেখানে শুধুমাত্র এক স্তরীয় নদীবাঁধ সম্ভব নয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আটকাতে। তাই ত্রিস্তরীয় নদীবাঁধ ও ম্যানগ্রোভ বন তৈরি করতে হবে। ধাপে ধাপে ত্রিস্তরীয় ৩০০-৫০০ মিটার অন্তর নদীবাঁধ ও ম্যানগ্রোভ বন তৈরি থাকলে তবেই ঝড়ের গতি ও জলোচ্ছ্বাস হ্রাস পেতে পারে।
তা ছাড়াও দিনে দিনে বাড়ছে মানুষের চাহিদা। নদীর বুকে গড়ে উঠেছে বসতি, মাছের ভেড়ি, হোটেল, প্রভৃতি। তাই সুন্দরবনের সুরক্ষা ও ভাল থাকা অনেকটা নির্ভর করছে ওই অঞ্চলের অধিবাসীদের উপরেও।
প্রভাত কুমার শীট
মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
সুরক্ষিত
জয়ন্ত বসুর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত। বহু বছর ধরে আমি সুন্দরবন যাই। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁদের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হই। সুন্দরবনের মানুষ যথেষ্ট পরিশ্রমী। কৃষিকাজ, মাছ ধরা, কাঁকড়া, মীন, মধুসংগ্রহ ইত্যাদির সাহায্যে জীবনধারণ করেন। বছর বছর আয়লা, বুলবুল, ইয়াস ঝড়ে তাঁদের ঘরবাড়ি, জীবনযাত্রা ছারখার হয়ে যায়। দেশের অন্য নাগরিকের মতো তাঁদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। শুধু ম্যানগ্রোভ রোপণ নয়, সুন্দরবনব্যাপী পাকা কংক্রিটের বাঁধ একান্তই প্রয়োজন।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে যে পাখিরালয় দ্বীপে গিয়েছিলাম, সেটি নদী থেকে বেশ উঁচু, পাকা বাঁধ নেই। ইয়াস ঝড়ে সে দ্বীপ সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। জলের তলায় গিয়েছে বলা যায়। অথচ, ২০২০ সালের মার্চের গোড়ায় গিয়েছিলাম সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা জি প্লট গোবর্ধনপুরে। দেখেছিলাম, কী প্রকাণ্ড উঁচু কংক্রিটের সমুদ্রবাঁধ দেওয়া হয়েছে। পাশে ম্যানগ্রোভ ও ঝাউ প্ল্যানটেশন। তিন পাশে নদী ও এক দিকে সমুদ্র যে দ্বীপের, ইয়াস ঝড় তার কোনও ক্ষতি করতে পারেনি। কৈখালি রামকৃষ্ণ মিশনের করা ১৪ কিলোমিটার পাকা বাঁধের জন্য উত্তাল মাতলা নদীর দাপট সত্ত্বেও গ্রামবাসীরা সেখানে নিরাপদে থাকেন।
শিখা সেনগুপ্ত
কলকাতা-৫১
পুজোর আনন্দ
‘চলছে পুজোর প্রস্তুতি, ভয় সেই জনজোয়ার’ (৬-৮) পড়ে আশ্চর্য হলাম। করোনা অতিমারি কাটেনি, দ্বিতীয় ঢেউয়ে আছি, তৃতীয় ঢেউ ‘আসব আসব’ করছে। এখনও দৈনিক আক্রান্ত যথেষ্ট বেশি, মৃতের সংখ্যাও কমবেশি ওঠানামা করছে। ভ্যাকসিন অপ্রতুল, সবাইকে এখনও ভ্যাকসিন দেওয়া গেল না। তার উপর হাওড়া, হুগলি, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর বানভাসি নতুন করে। ইয়াসের ক্ষত সারেনি, পর পর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্তের প্রকোপে টইটম্বুর খাল-বিল, নদী-নালা। শস্যখেত, ঘর-বাড়ি জলের তলায়। মানুষ বাঁচবে কী করে, তার পরিকল্পনা, ব্যবস্থা করুক সরকার। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ক্লাবগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ুক সেই কাজে, পুজোয় না ঝাঁপিয়ে। ক্লাবগুলো এই অবস্থায় অসহায়দের পাশে দাঁড়ালে বেশি আনন্দ হবে। পুজো একান্তই করতে হলে, তা নিজের নিজের পাড়ার মধ্যে সীমিত রাখলে জনজোয়ারের ভয়টাও থাকবে না।
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা
কলকাতা-১৫৪
কোভিডের পরে
কোভিডে আমরা বহু মানুষকে অকালে হারিয়েছি। যাঁরা ভাইরাসকে হারিয়ে বেঁচে আছেন, তাঁদের অনেকেই সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেননি। কারও ব্লাড শুগার বেশি, কেউ বা মানসিক চাপ কমাতে পারছেন না, আবার অনেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। কোভিড-পরবর্তী অসুস্থতায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের চিকিৎসা প্রোটোকল অবিলম্বে আইসিএমআর ঘোষণা করুক। না হলে কোভিডের পরবর্তী আক্রমণে নতুন রোগীর পাশাপাশি পুরনো রোগীদের সামাল দেওয়া খুব কঠিন কাজ হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে যে হাসপাতালগুলি ‘কোভিড হাসপাতাল’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, সেগুলিতে একটি করে কোভিড ফলো-আপ আউটডোর চালু করা উচিত। এতে কোভিড-পরবর্তী অসুস্থতায় আক্রান্ত মানুষদের দ্রুত সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে।
সৌগত মাইতি
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy