‘কী দিচ্ছি শিশুর মুখে’ (২৮-৯) প্রবন্ধে স্বাতী ভট্টাচার্য গুরুত্বপূর্ণ, অথচ অবহেলিত একটি বিষয়কে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন। সমস্যা এই, যাঁরা চোখ বন্ধ করে আছেন, তাঁদের দেখানো যাবে কী করে? এক দিকে নিঃশব্দে সন্তানদের খাবার বন্ধ হয়ে গেল, অন্য দিকে ‘লক্ষ্মী’দের ভান্ডার ভর্তি করার অঙ্গীকার করা হচ্ছে। কী তঞ্চকতা! গ্রামে যাঁরা কাজ করেন তাঁরাই জানেন, এই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা কতটুকু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তাঁদের কতখানি শ্রম দিয়ে আসছেন শিশু ও মায়েদের জন্য। শিশু ও মা তাঁর নিজের এলাকার বাসিন্দা বলে কর্মীদের চেষ্টা আরও ঐকান্তিক হয়ে ওঠে। যখন তাঁদের কাছে মা ও শিশুর জন্য বরাদ্দ সামান্য চাল, সয়াবিন আর একটিমাত্র ডিমের জোগান বন্ধ হয়ে যায়, তখন প্রথম কৈফিয়তটি সেই কর্মীকেই দিতে হয়। তাঁদের অপারগতা কে দেখে?
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি পাশাপাশি চলে। তাই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী আর স্বাস্থ্যকর্মী পাশাপাশি কাজ করেন। স্বাস্থ্যকর্মী গর্ভবতী মাকে পরীক্ষা করতে আসেন। গর্ভের শিশুর বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাবারের পরামর্শ দেন। শিশুর বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাবারের তালিকা বানিয়ে দেন। এমন নয় যে, তিনি আপেল, আঙুরের তালিকা দেন। তিনি নিজে শিখেছেন মা ও শিশুর যত্ন। তার সিংহভাগ জুড়ে আছে সহজে পাওয়া যায়, এমন পুষ্টিকর খাবার, যেগুলি মা ও শিশুর যত্নের জন্য অপরিহার্য। প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করতে গিয়ে তাঁর উপলব্ধি হয়, কী অসার এই সব পরামর্শ। একটিমাত্র ডিম জোগান দেওয়া যেখানে বন্ধ করে দেওয়া হয়, সেখানে ‘পুষ্টি’ একটি অর্থহীন শব্দ।
অনিতা চৌধুরী, বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর
অপচয়ও চলছে
‘কী দিচ্ছি শিশুর মুখে’ প্রবন্ধটি কিছু বাস্তব প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে আমাদের। সত্যিই তো, শিশুদের ডাল, সয়াবিন, ডিমের টাকায় কী জরুরি কাজ করছে দেশ? রাজ্যে যতগুলি জনবাদী প্রকল্প চলছে, তার গুরুত্ব আছে। কিন্তু তার থেকেও কি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া জরুরি নয়? সেই টাকা কি শিশুদের মুখে অন্তত ডিম তুলে দিতে ব্যবহার করা যেত না? না কি এটা এক ধরনের ভোটবাদী নীতি? প্রাপ্য খাবার মুখে তুলে দেওয়া হচ্ছে না। তার জায়গায় সেই টাকা বরাদ্দ হচ্ছে অন্য কাজে।
এ বার আসা যাক যাঁদের কাছে টাকা আছে, খাবার আছে, তাঁদের দিকে। খাদ্য অপচয় সূচক বলছে, আমাদের দেশে মাথাপিছু প্রতি বছর ৫০ কেজি খাবার নষ্ট হয়। অর্থাৎ, কেউ খাবার পাচ্ছে না, আবার যারা পাচ্ছে তারা সেটার অপচয় করছে। সমস্যাটা দু’মুখী। জরুরি ভিত্তিতে দরকার শিশুদের পাতে ডিম ফিরিয়ে দেওয়া। সঙ্গে চাই খাবার অপচয় রোধের চেষ্টাও।
এ ছাড়াও একটা কথা থাকে। ‘উপরতলা থেকে নোটিস এসেছে’ এই কারণ দেখিয়ে নিজে অন্যায় সহ্য করা এবং অন্যকে তার জন্য ভুক্তভোগী করার অভ্যাস বন্ধ করতে হবে। মনে রাখা উচিত, এই প্রশ্নগুলো যদি কর্মীরা তাঁদের উপরতলাকে করতে পারতেন, তা হলে শিশুদের এই দিন দেখতে হত না। যাঁরা এই কাজে জড়িত, তাঁদেরকেও শিশুদের বঞ্চনার দায়িত্ব নিতে হবে। শুধু উপরতলা বলেছে বলে, নিজে পাশ কাটিয়ে প্রশ্ন না করে মেনে নিলেও, শিশুর অপুষ্টির দায় থেকে কিন্তু সেই সরকারি কর্মী রেহাই পাবেন না। যিনি এই অর্ডারে সই করছেন, তিনিও সমান দায়ী।
সুমন চক্রবর্তী, বেঙ্গালুরু
অপরাধ
পশ্চিমবঙ্গে কোভিড অতিমারির অজুহাতে স্কুল-অঙ্গনওয়াড়িতে রান্না-করা খাবার বন্ধ হওয়ায় গর্ভবতী মা ও শিশুরা ডিম, সয়াবিন ও ডাল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর অর্থ হল, খাদ্যের মৌলিক অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা, যা মানবতার বিরুদ্ধে গর্হিত অপরাধ। নাগরিক সমাজের সরব হওয়া উচিত।
শামসুল আলম, নেওয়ার্ক, ক্যালিফর্নিয়া
অপুষ্টির পরিণতি
‘কী দিচ্ছি শিশুর মুখে’ প্রবন্ধে শিশুদের খাদ্য নিরাপত্তার অভাবের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে, যা এক জন কন্যাসন্তানের পিতা হিসাবে আমারও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। দায়সারা ভাবে স্কুলে মাসে এক দিন চাল, আলু, ডাল ও সাবান বিতরণ করে সরকার শিশুস্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, শিশুশিক্ষা কেন্দ্র এবং স্কুল, সর্বত্র সরকার-ঘোষিত খাদ্যদ্রব্যের পুষ্টিগত মানেরও ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে শিশু, গর্ভবতী নারী, সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েরা, ও দরিদ্র পরিবারের কিশোরীদের পুষ্টি আজ বড় ঝুঁকির সম্মুখীন।
আমাদের রাজ্যে এখনও অধিকাংশ দরিদ্র পরিবারে মা ও শিশুর মুখে সুষম আহার জোটে না। দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জন্য রেশনের চালের লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। রোজকার খাদ্যতালিকায় থাকা খাবার প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিন, ইত্যাদির চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। মা ও শিশুর সক্ষম ভাবে বেঁচে থাকা ও কাজ করার ক্ষমতা কেড়ে নেয় অপুষ্টি। এর পরিণতি ভয়াবহ। কারণ, জীবনের প্রথম পর্যায়ে দুর্বল ও অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুরা পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যার শিকার হয় বেশি। অথচ, এ বিষয়ে রাষ্ট্রনীতির পরিকল্পনা-মাফিক প্রয়োগে গলদ থাকছে। মানবসম্পদ তৈরির ভিত যদি এত দুর্বল হয়, তা দেশ ও জাতি গঠনে প্রধান অন্তরায় হবে না কি!
মৃণাল কান্তি ভট্টাচার্য, কেতুগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান
দেশের সম্মান
ডিম কেলেঙ্কারিতে ১১০০ কোটি টাকা নিঃশব্দে গায়েব হয়েছে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র কেবল চাল-আলুর রেশন নিয়ে বেঁচে আছে। টান পড়েছে সয়াবিন, ছোলা, ডালেও। অপুষ্ট গর্ভবতীরা কম ওজনের বাচ্চা প্রসব করছেন। এই অপুষ্টি সমাজ বয়ে চলেছে, সরকার নির্বিকার। জানি না এ দিয়ে দুয়ারে সরকার চলছে কি না! চলছে হয়তো বা দুর্গাপুজো, ক্লাব অনুদান, লক্ষ্মীর ভান্ডার! জাতির ভবিষ্যতের মেরুদণ্ড ভেঙে কিসের উপর ভর করে দেশ চলবে, কে-ই বা চালাবে দেশ? এই ভাবে শিশুর মুখের গ্রাস কেড়ে জাতির উন্নয়ন হয়? দেশের মান বাঁচে? এই সমালোচনা সরকারের চোখে আঙুল দিয়ে পুষ্টির ক্ষেত্রে ফাঁকফোকরগুলো দেখিয়ে দিল। এর থেকে সরকার দেশের ভবিষ্যৎ সুদৃঢ় করবে, এই আশা।
দেবাশীষ দত্ত, কলকাতা-৬৩
ছুটিতেও চাই
মিড-ডে মিল কার্যক্রমের নাম পাল্টে ‘পিএম পোষণ’ করা হচ্ছে। যাতে রাজ্য সরকারগুলি এটিকে নিজেদের প্রকল্প বলে চালাতে না পারে, সম্ভবত তার জন্য। এই প্রচেষ্টা ফলবতী হবে না, লিখে দেওয়া যায়। তবে প্রকৃত প্রশ্নটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বাড়ন্ত শিশুদের সুষম পুষ্টিকর খাদ্য জোগানো সরকারের দায়িত্ব। বিদ্যালয়গুলিতে ছুটির দিনেও এই খাদ্য না দিতে পারলে এই পরিকল্পনা অর্থহীন। পেটকে অপেক্ষা করানো সম্ভব নয়।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর পাঁচ বছরে ১.৩১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন, বছরে ২৬০০০ কোটি টাকা। অভিপ্রেত ফল পেতে গেলে এর চারগুণ অর্থ চাই। প্রতি দিন সুষম মিড-ডে মিল দিতে গেলে ‘অক্ষয় পাত্র’ প্রকল্পটিকে মডেল করতে হবে। ডেলিভারি-সহ যার খরচ প্রায় ২০ টাকা। ডিম যোগ করলে ২৫ টাকা হবে। ৩৬৫ দিন x ২৫ টাকা x ১১ কোটি শিশু = ১০০,৩৭৫ কোটি টাকা। এর কম টাকায় সরকারি প্রচার ছাড়া কোনও ফল হবে না। কেন্দ্র বিনামূল্যে রেশন দিতে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা বছরে খরচ করে। দু’টাকা কেজি চাল দিতেও খরচ দু’লক্ষ কোটির উপরে। এর একাংশ মিড-ডে মিলে দেওয়া হোক।
তুষারকান্তি চৌধুরী, উত্তরপাড়া, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy