—প্রতীকী ছবি।
পরীক্ষায় নকল আগেও ছিল, সেটা সংখ্যায় নগণ্য ছিল, ধরা পড়লে কঠিন শাস্তিও ছিল। কিছু দিন পূর্বে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৫০টিরও বেশি কলেজের অধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন যে, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নকল করার প্রবণতা বাড়ছে। সেই প্রসঙ্গে ‘নকল বৃদ্ধি’ (১৮-৪) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, সমাজতাত্ত্বিকদের একাংশ নকল বৃদ্ধির জন্য সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের দিকে আঙুল তুলেছেন। সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি বাড়ছে, অসাধুতা ‘স্বাভাবিকতা’য় পরিণত হচ্ছে। এমতাবস্থায় পরীক্ষার্থীদেরও এর দ্বারা প্রভাবিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সহমত হয়েও বলি, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে নকল বৃদ্ধি সহজেই রোখা যায়। সত্তরের দশকের প্রথম পাঁচ বছর পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিক থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় বই দেখে দেদার নকল চলেছিল, কোনও কোনও পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা শেষের পরও ১-২ ঘণ্টা পরীক্ষা চলেছিল। ২৫ জুন, ১৯৭৫ জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর এই গণহারে নকল বন্ধ হয়। বাম সরকার ক্ষমতায় আসার পরও এই অবস্থা বজায় থাকে, পরীক্ষাব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়। সুতরাং, সরকার চাইলে রাশ টানা কঠিন নয়।
সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতির দ্বারা পরীক্ষার্থীদের প্রভাবিত হওয়া সম্ভব। তবে এই সম্ভাবনার কথা বলারও দরকার যে, নানা ভাবে নকল করার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এর কারণ, পরীক্ষার সার্বিক ফল ভাল হচ্ছে, এতে শিক্ষাব্যবস্থার খামতি ঢাকা দেওয়া যাচ্ছে। এটা করা হয়েছে পরীক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে। ছোট ছোট প্রশ্নের সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়েছে, সঠিক উত্তরে টিক দিয়েই পাশ নম্বর উঠে যাচ্ছে। উত্তর দিতে অনেক কম সময় লাগছে, অথচ প্রশ্ন পড়া, খাতায় নাম লেখার জন্য আরও ১৫ মিনিট সময় বেশি দেওয়া হচ্ছে। নজরদারির শিথিলতাও থাকছে। ফলে পাশাপাশি দেখে উত্তর দেওয়া সহজ হচ্ছে।
মনে রাখা প্রয়োজন, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি আর পরীক্ষায় ‘নকল বৃদ্ধি’ হাত ধরাধরি করে চলে। ফলে, সম্পাদকীয়ের বক্তব্য ধার করে বলতে হয়, ‘অসাধুতা স্বাভাবিকতায় পরিণত’ হওয়ার কাজটি সহজ হয়। এই ভাবে তারা শাসক দলের, প্রশাসনের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার নৈতিক অধিকারটাও হারিয়ে ফেলে।
অসিত কুমার রায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি
বাণিজ্যের পথ
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ৬৯ দিনের মাথায়। এ বারের পরীক্ষায় পাশের হার সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ শতাংশে, যা ২০২২ সালে হোম সেন্টারে হওয়া মাধ্যমিকের পাশের হিসাবকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। ষাট শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পাওয়া ছাত্রছাত্রীর হারও গত বছরের তুলনায় বেশি।
বেশি নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান শাখাকে অনেকটাই ছাপিয়ে গিয়েছে কলা বিভাগ। ৯০-১০০ শতাংশ নম্বর অর্থাৎ ‘ও’ গ্ৰেড প্রাপকদের অধিকাংশই আর্টস বা কলা বিভাগের ছাত্রছাত্রী। মোট ৮৩৩১ জন ‘ও’ গ্ৰেড প্রাপকের মধ্যে কলা বিভাগ থেকেই রয়েছে ৪৪৬২ জন। সেখানে বিজ্ঞান থেকে রয়েছে ৩০২২ জন। আর কমার্স বা বাণিজ্য বিভাগে সংখ্যাটা মাত্র ৭১৮ জন। এই পরিসংখ্যান আগামী দিনে কমার্স পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে খানিকটা উদ্বেগ সৃষ্টি করছে, সন্দেহ নেই। একেই বাণিজ্য শাখায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে কম থাকছে। আবার বেশি নম্বর পাওয়া পড়ুয়ার সংখ্যাও আশাব্যঞ্জক নয়। এমনকি মেধা তালিকায় ৫৮ জনের মধ্যে বাণিজ্য শাখা থেকে এক জনও নেই। বিজ্ঞান শাখা থেকে ৪০ জন, আর কলা বিভাগ থেকে ১৮ জন রয়েছে। কার্যত মেধা তালিকায় বা প্রথম দশে বাণিজ্য বিভাগে কোনও ছাত্রছাত্রীই নেই।
কমার্স বা বাণিজ্য শাখার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এমন অনীহা কেন? সারা ভারতেও ছবিটি আশাপ্রদ নয়। শিক্ষা মন্ত্রকের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে গত ১০ বছরে মাত্র ১৪ শতাংশ ভারতীয় পড়ুয়া কমার্স স্ট্রিম বেছে নিয়েছে। কমার্স নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পড়ে ভবিষ্যৎ কী হবে, সেই বিষয়ে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। কমার্সের ছাত্রছাত্রীরা চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি পড়তে পারে। পড়া যায় বি কম, বি এসসি ফাইনান্স, বিবিএ, ব্যাচেলর অব অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ফাইনান্স ইত্যাদি।
এ ছাড়া কমার্সের কয়েকটি প্রফেশনাল কোর্স হল কোম্পানি সেক্রেটারি, কস্ট অ্যান্ড ওয়ার্ক অ্যাকাউন্টিং, চার্টার্ড ফাইন্যানশিয়াল অ্যানালিস্ট, সার্টিফায়েড ফাইন্যানশিয়াল প্ল্যানার, সার্টিফায়েড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার, সার্টিফায়েড স্টক ব্রোকার, সার্টিফায়েড ইনভেস্টমেন্ট অ্যানালিস্ট। বি কম পাশ করার পর ফাইন্যান্স, অর্থনীতি, ম্যানেজমেন্ট নিয়ে উচ্চশিক্ষা করা যায়। ফাইন্যান্স আর অ্যাকাউন্টিং নিয়ে পড়াশোনা করে যে কোনও বেসরকারি সংস্থাতে কাজ করা যেতে পারে— যেমন ব্যাঙ্ক, ইনশিয়োরেন্স, স্টক ব্রোকিং কোম্পানি ইত্যাদি। এমনকি পরবর্তী কালে সিভিল সার্ভিস-এর জন্য প্রস্তুতিও নেওয়া যেতে পারে।
অ্যাকাউন্টিং নিয়ে স্নাতক হয়ে এসিসিএ, সিএ ইত্যাদি কোর্সের যে কোনও একটি করলে বিশ্বের উন্নত দেশে উচ্চ বেতনের চাকরির সুযোগ আছে। বাণিজ্য বিভাগের এই সব ধারণা শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে হবে, যাতে তারা এই বিষয়ে মনোনিবেশ করতে পারে। তা না হলে আগামী দিনে বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমশ আরও হ্রাস পেতে থাকবে।
মঙ্গলকুমার দাস, রায়দিঘি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
মেধায় আপস
এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হারে ছাত্ররা ৮৯.২১ শতাংশ ও ছাত্রীরা ৮৩.৯ শতাংশ। উল্লেখ্য যে, পাশের শতাংশের হার অধিক হলেও ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে মাত্র ১২.৯৭ শতাংশ ছাত্রছাত্রী, ‘এ’ বা ‘এ প্লাস’ পাওয়া ছাত্রীর সংখ্যা খুবই কম। মাধ্যমিক পরীক্ষায় অধিকাংশ প্রশ্নেই নম্বর তোলা সহজ। যেখানে এত নম্বর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেখানে এত কম সংখ্যক ছেলেমেয়ে কেন ভাল নম্বর পাচ্ছে? বিগত দিনে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অতিমারিকালে অনলাইন ক্লাসের কুফলকে দায়ী করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও মেধার উন্নতি হয়নি। শিক্ষকের অভাব, বেহাল ক্লাসরুম, দীর্ঘ ছুটির সময়ে সিলেবাস শেষ না হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, সিমেস্টারভিত্তিক ব্যবস্থা চালু হলে অবস্থার উন্নতি হবে। পাশাপাশি, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ৯০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়ে পাশ করা ছাত্র ৩৫৫২, ছাত্রী ৪৭৭৯। তবে কি প্রথাগত শিক্ষার উপর আস্থা হারাচ্ছে ছাত্ররা? বেশির ভাগই মাধ্যমিক পাশের পর পলিটেকনিক, প্যারামেডিক্যাল কোর্সের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। অনেক স্কুলেই বিজ্ঞান পড়ানোর মতো পরিকাঠামো নেই। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে পাল্লা দেওয়ার জন্য মেধার প্রশ্নে আপস করে বাড়ানো হচ্ছে নম্বর। তাতে সামাজিক ক্ষেত্রে কী প্রভাব পড়ছে, ভেবে দেখার সময় এসেছে।
তন্ময় কবিরাজ, রসুলপুর, পূর্ব বর্ধমান
লোকালে দেরি
লোকাল ট্রেন তথা স্বল্প দূরত্বের ট্রেনগুলিও সময় মেনে চলে না। ফলে যাত্রীদের নিত্য ভোগান্তি ও সমস্যা লেগেই থাকে। রোজই অফিসে পৌঁছতে দেরি। সামান্য শেওড়াফুলি থেকে কোন্নগর, যার দূরত্ব মাত্র ৯ কিমি, সময় লাগার কথা ১৩ মিনিট, সেখানেও প্রতি দিন লেট হয় ৪-৫ মিনিট আর কোন্নগর থেকে হাওড়া বা হাওড়া থেকে কোন্নগর, যার দূরত্ব ১৪ কিমির মতো, সময় লাগার কথা ২২ মিনিট, সেখানেও লেট হয় নিত্য প্রায় ৫ থেকে ৬ মিনিট, কখনও ১০ মিনিট! যাত্রীদের নিত্য ভোগান্তি দূর করতে তথা রেলের সম্মান রাখতে রেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ, অন্তত লোকাল ট্রেনগুলিকে সময়সীমা মেনে চালানো হোক।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy