Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
CAA

সম্পাদক সমীপেষু: ঘোলাটে আইন

বিজেপি কর্তাদের প্রচার, ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে নাকি সিএএ-র কোনও সম্পর্ক নেই। এ দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের উল্লেখ রয়েছে ভারতীয় সংবিধানে।

CAA

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৪:৫৫
Share: Save:

‘তৈরি পোর্টাল, এখনও প্রস্তুত হয়নি সিএএ-র ধারা’ (১১-১) শীর্ষক সংবাদে জানানো হয়েছে, আসন্ন বাজেট অধিবেশনে ওই আইনের ধারায় সংসদীয় সিলমোহর পড়ে যাবে। এই আইন অনুযায়ী, ধর্মীয় কারণে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে বিতাড়িত হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীরা যদি আশ্রয় চান, তা হলে তা দেবে ভারত।

এ দিকে বিজেপি কর্তাদের প্রচার, ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে নাকি সিএএ-র কোনও সম্পর্ক নেই। এ দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের উল্লেখ রয়েছে ভারতীয় সংবিধানে। সিএএ বা এই সম্পর্কিত কোনও আইন তা খর্ব করতে পারে না। মুসলিম-সহ ভারতীয় নাগরিকদের উপর নাকি তার কোনও প্রভাব পড়বে না।

আমি এই ঘোলাটে সিএএ-র বিরুদ্ধে। দেশ বিভাগের পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রচুর মানুষ এ দেশে চলে এসেছেন। তাঁরা এ দেশের নাগরিকত্বের সমস্ত প্রমাণপত্রের অধিকারী হয়েছেন, এবং সেই সুবাদে নানা সরকারি সুবিধা ভোগ করছেন। সে দিন পর্যন্ত যাঁরা খালপাড়ে বা রেলপাড়ে এসেছেন, তাঁদেরও ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, রেশন কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হয়ে গেছে। দেশের নাগরিক হিসাবে প্রায় সমস্ত সুবিধাই তাঁরা ভোগ করেন, তাঁরা এখন সিএএ-তে আবেদন করতে যাবেন কেন?

খবরে প্রকাশ, বিজেপির মতে ওই আইন রূপায়িত হলে বাংলার মতুয়া সমাজের নাগরিকত্ব পাওয়ার দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হবে। অবাক কাণ্ড! এ দেশের লক্ষ লক্ষ মতুয়া পাঁচ-ছয় দশক আগেই এ দেশে এসেছেন। তাঁরা শুধু এ দেশের নাগরিকই নন, অনেকে বিভিন্ন সরকারি পদে চাকরি করছেন। অনেকে অবসর জীবন যাপন করছেন। তাঁদের নাগরিকত্বের ধুয়ো আবার নতুন করে তোলার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কী?

বাংলাদেশে ২০১৩ সালের পর ‘গণজাগরণ’-এর ফলস্বরূপ হাজার হাজার মুক্তমনা-নাস্তিক ব্লগার উঠে এসেছেন। তাঁদের অনেকেই ধর্মীয় মৌলবাদীদের হাতে নৃশংস ভাবে খুন হয়েছেন। তারও দুই দশক আগে লেখক তসলিমা নাসরিন ধর্মের সমালোচনা করার জন্য একই ধরনের ধর্মীয় হিংসার শিকার। বাংলাদেশের সেই মুক্তমনা মানুষগুলো ধর্মের সমালোচনা করার জন্য প্রাণঘাতী হুমকি নিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত, কিংবা প্রাণভয়ে লুকিয়ে আছেন বিভিন্ন দেশে। তাঁরা সরকারি ভাবেই পাসপোর্ট নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। অনেকেরই পাসপোর্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে, তা পুনর্নবীকরণ করতে পর্যন্ত দেশে ফিরতে পারছেন না। এ রকম মুক্তমনা মানুষ, যাঁরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে কী ভাবা হচ্ছে, এই ধারায় তা স্পষ্ট নয়।

সাধন বিশ্বাস, কলকাতা-১২২

খাঁটি গুড়

নবনীতা দত্তের ‘মাঝেমাঝে তব দেখা পাই...’ (পত্রিকা, ১৩-১) প্রসঙ্গে দু’একটি কথা। নলেন গুড়ের সঙ্গে কুয়াশার যত কলহ, মেঘের তত নয়। কুয়াশায় রস হালকা টক বা ঝাঁঝালো হয়ে যেতে পারে; মেঘ যদি বৃষ্টি ঝরায় তখনই ভয়, খেজুরগাছের মাথা বেয়ে এবং বাইরে থেকে জল রসের কলসি ভরে দিতে পারে। ভাঁড় বা ডাবরিতে বেশি জল ঢুকে গেলে সে রস জ্বাল দেওয়ার কোনও মানে হয় না। অল্প বৃষ্টিতে রসের ভাঁড়ে জল মিশলে সে রস বেশি জ্বাল দিতে হয়। তাতে জ্বালানি যা লাগে, অনেক সময়ে তার খরচ পোষায় না। লেখক গুড় সংগ্রাহকদের থেকে জেনে লিখেছেন, গাছের চাঁছা অংশ কিছুটা কেটে বাঁশের নল ও খিল লাগিয়ে সামনে হাঁড়ি বাঁধা হয়। আসলে বাঁশের নল নয়— ভুল বোঝার সম্ভাবনা থাকে তাতে— সাধারণত ফাঁপলা কঞ্চি মাঝখান থেকে দু’ফালি করে দু’টি ‘নলি’ পাওয়া যায়। প্রথম গাছ কাটার পরে এই যে নলি পোঁতা হয় দু’দিক থেকে হালকা নিম্নমুখী কেটে নীচের ‘ঘাট’-এ, তাকে বলা হয় নলানো। নলানোর পর উৎসে নলি বেয়ে রস নামে বলে নাম নলেন (রস বা গুড়)— এমনও একটি মত রয়েছে।

প্রথম কাটার দিন কোনও গাছই পরিমাণমতো রস দেয় না তো বটেই, কোনও কোনও গাছ প্রথম দু’-এক দিন আদৌ রস না-ও দিতে পারে। তাই প্রথম রাতে যে রস পাওয়া যায়, তার মান ‘সবচেয়ে ভাল’ বলা খুবই মুশকিল। সচরাচর তিন দিন কাটার পর তিন দিন ‘জিরেন’ বা বিশ্রাম দেওয়া হয় গাছকে। জিরেন কাটের রসই সবচেয়ে সুস্বাদু, কেননা পালার প্রথম দিন ভাঁড় ভাল করে ঘষে-মেজে ধুয়ে পুড়িয়ে অর্থাৎ ভাল করে ধোঁয়া খাইয়ে (ভাঁড় পোড়ানো) অনেক ক্ষণ উপুড় করে রেখে, সেই ভাঁড় গাছে তোলা হয়। তাই এই রসের সঙ্গী হয় এক রকম মৃদু সুগন্ধ। প্রবন্ধকার লিখেছেন, নলেনের পরের কাট থেকে আসে ‘পরনলিয়ান’। এর পরেও এক বার রস পাওয়া যায়, তাকে বলে ঝরা রস, যা জোলো। দ্বিতীয় দিনের কাটাকে সচরাচর বলা হয় দু’কাট বা দো-কাট, তৃতীয় দিনের কাটাকে বলা হয় তে-কাট। ঝারা রস প্রতি কাটেই হয়। প্রতি কাটের পরের দিন সকালে ‘কাটা রস’ নামানোর পর ভাঁড় পেতে দেওয়া হয়, পরে বিকেলে গাছ কাটার সময় সেই রস নামানো হয়— এটাই ঝারা রস (ঝরা থেকেই ঝারা বলা যায়)। ঝারা রস মানেই জোলো নয়, ভাল ঠান্ডা পড়লে ঝারা রস অনেক ভাল মানের হতে পারে।

নলেন গুড়ের প্রসঙ্গ উঠলেই নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘রস’ নামক বিখ্যাত গল্প, এবং তার উপরে নির্ভর করে তৈরি খানিক অন্য ধারার অনবদ্য হিন্দি সওদাগর ছায়াছবিটির উল্লেখ প্রায় অনিবার্য। অবশ্য, রস জ্বাল দেওয়ার পর্বটি গৌণ ভাবেই এসেছে গল্পে। যেটুকু দেখানো হয়েছে, তাতে ভাল গুড় হওয়া সত্যিই মুশকিল। কারণ, সেখানে রসের পরিমাণ কম নয়, জ্বালনও কাঠ নয় (মূলত নাড়া, শুকনো খেজুরপাতা, জঙ্গল-ঝাঁট দেওয়া শুকনো পাতা ইত্যাদি), সুতরাং কোনও মহিলার একার পক্ষে ওই পরিমাণ রস জ্বাল দেওয়া এবং ভাল মানের গুড় করা যে কতখানি কঠিন, যাঁরা করেন তাঁরাই বোঝেন। মাজু খাতুন, কি ফুলবানু— রস জ্বাল দেওয়ার সময় সঙ্গী হিসাবে আর কাউকে দেখা যায় না! কী ভাবে একলা মাজু খাতুনের হাতে অত ভাল গুড় হত তা বোঝা সত্যিই মুশকিলের।

পাটালি ‘ইটের মতো শক্ত’ হওয়ার সঙ্গে আসল বা নকল নলেন গুড়ের সম্পর্ক ক্ষীণ। ওটা নির্ভর করে পাটালি ফেলার আগের শেষ গরম করার সময় ঘষা-গুড়ের ধাত বুঝতে শিউলির অভিজ্ঞতা, সময়জ্ঞান ইত্যাদির উপর। আসল নলেন গুড় চেনার বিষয়ে লেখক যে লিখেছেন, “তরল ভেদ করে অভিযান চালাতে হবে নীচের জমে যাওয়া গুড়ে”, তা ঘন গুড়ের বেলা হতে পারে, নলেন ‘ঝোলা গুড়’-এর কোনও তরল অংশ, আর “তরলের নীচে ঘনসন্নিবিষ্ট” অবস্থার ব্যাপার নেই, তার উপর থেকে নীচ পর্যন্ত একই ঘনত্বের হবে। নকল নলেন গুড় এমনই আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে যে, অল্পবয়সিরা আসল গুড় খেয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে, ভাবা মুশকিল। এখন নলেন গুড়ে ইচ্ছামতো চিনি ঢালা হয়। চায়ের লিকারে চিনি ঢেলে, নলেন-সুগন্ধি ইত্যাদি মিশিয়ে নলেন গুড় বলে চালানোর চেষ্টাও চলে।

অরবিন্দ পুরকাইত, মগরাহাট, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

বাঙালির কবি

বিশ্বজিৎ রায়ের ‘বিদেশি সনেটে দেশীয় কপোতাক্ষের...’ (রবিবাসরীয়, ১৪-১) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলি, তিনি যথার্থই উপলব্ধি করেছেন, মধুসূদন ছিলেন আদ্যন্ত, আপাদমস্তক বাঙালি। তাঁর কবিতায় বার বার বাংলাই ফিরে এসেছে নানা চরিত্রে, নানা ভাবমূর্তিতে। তাঁর শিকড় বাংলাদেশের মাটিতেই প্রোথিত ছিল। তাই বঙ্গবাসী, বাংলা ভাষা ও বাংলার প্রকৃতি তাঁর কাব্য-কবিতায় আত্মপ্রকাশ করেছে। জীবনের প্রথমার্ধে ইংরেজদের ভাষার জন্য তিনি আকুল হলেও, দ্বিতীয়ার্ধে তিনি বাংলার জন্য ব্যাকুলতা প্রকাশ করেছেন। মধুসূদনের সনেটকে তিনি নতুন করে চেনাতে শেখালেন। ‘কপোতাক্ষ নদ’, ‘বঙ্গভাষা’, ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ এবং সর্বোপরি তাঁর এপিটাফ-এ মধুসূদনের বাঙালিয়ানা স্বপ্রকাশিত।

সুগত মিত্র, কলকাতা-৮৯

অন্য বিষয়গুলি:

CAA BJP India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy