কল্যামপুড়ি রাধাকৃষ্ণ রাও সত্যিই স্ট্যাটিসটিক্সের দুনিয়ায় ‘জীবন্ত কিংবদন্তি’ (কলকাতার কড়চা, ১৪-৯)। অথচ তিনি অঙ্কে স্নাতক, অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতা আসেন মিলিটারিতে চাকরির আশায়, বয়স কম বলে চাকরি পাননি। ঘটনাচক্রে কলকাতায় ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই)-এ আসা, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের কথায় ভর্তি হলেন স্ট্যাটিসটিক্সের ডিপ্লোমা কোর্সে। সেই সময়েই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ট্যাটিসটিক্সের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি কোর্স চালু হল এবং সেখানে ভর্তি হলেন। আবার প্রথম শ্রেণিতে প্রথম! প্রশান্তচন্দ্রের আহ্বানে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ট্যাটিসটিক্সের আংশিক সময়ের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এখানেই তাঁর ছাত্র বিনায়ক মহাদেব ডান্ডেকরের (পরে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ) প্রশ্নের উত্তরে তাঁর ‘রাও-ক্রেমার ইনইকুয়ালিটি’, ‘রাও-ব্ল্যাকওয়েল থিয়োরেম’ প্রভৃতি যুগান্তকারী সূত্র আবিষ্কার, ১৯৪৫ সালে যেগুলি প্রকাশিত হয়েছিল বুলেটিন অব ক্যালকাটা ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটি-তে।
১৯৪৬-এ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশান্তচন্দ্রের কাছে এক জন গবেষক চেয়ে পাঠায়, যিনি ‘মহলানবিশ ডিসট্যান্স’ সূত্র ব্যবহার করে তাদের কিছু তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারবেন। প্রশান্তচন্দ্র পাঠালেন রাওকে। তিনি পিএইচ ডি-র জন্য ভর্তি হন কিংস কলেজে। জেনেটিক্সের বিখ্যাত অধ্যাপক রোনাল্ড ফিশারের কাছে গবেষণা করলেন। কলকাতা ফিরে আইএসআই-তে অধ্যাপকের পদে যোগ দেন। প্রশান্তচন্দ্র এই সময় নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বহু মেধাবী ছাত্রের গবেষণা তদারকির ভারও নেন ডক্টর রাও। আইএসআই-এর ইতিহাসে ‘ফ্যাবুলাস ফোর’ নামে বিখ্যাত চার জন— কে আর পার্থসারথি, বীরবল্লি এস বরদারাজন, এস আর শ্রীনিবাস বর্ধন ও রামস্বামী রঙ্গরাও— সকলেই তাঁর ছাত্র, তাঁরই তত্ত্বাবধানে এঁদের গবেষণা।
সুদেষ্ণা বসু
মেরিল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ব্যতিক্রমী
তাঁর বিখ্যাত বই স্ট্যাটিসটিক্স অ্যান্ড ট্রুথ: পুটিং চান্স টু ওয়র্ক অধ্যাপক সি আর রাও উৎসর্গ করেছেন তাঁর মাকে। লিখেছেন, প্রতি দিন ভোর চারটেয় মা তাঁকে জাগিয়ে দিতেন। জ্বালিয়ে দিতেন কুপি, সেই আলোয় ছেলে পড়াশোনা করবে, কারণ শান্ত ভোরে মন তরতাজা থাকে। লিখেছেন, ‘‘আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি আমার বাবার বিশ্লেষণী দক্ষতা আর মায়ের পরিশ্রম ও লেগে থাকার ক্ষমতা।’’ গবেষক-শিক্ষকদের কাছে অধ্যাপক রাওয়ের জীবন দৃষ্টান্তস্বরূপ। আবার অনেকেই জানেন না, তিনি অত্যন্ত শিল্পপ্রেমী। ১৯৭০-এ দিল্লি গিয়ে যখন দেখেন সেখানে কুচিপুড়ি নৃত্যের কোনও প্রতিষ্ঠান নেই, তখন নিজেই একটি অ্যাকাডেমি খোলেন। তাঁর কন্যা এই নৃত্যে বিশেষ পারদর্শী।
সৌম্যর্ষি রায়
কলকাতা-৮৪
গর্ব হয়
2 সত্তরের দশকের আইএসআই, কলকাতায় আমার পড়াশোনা। আমার স্বামীও এখানকার প্রাক্তনী। আজও ভেবে গর্ব হয়, আমরা এমন এক প্রতিষ্ঠানে পড়েছি, ডক্টর সি আর রাও যার ডিরেক্টর ছিলেন। মনে পড়ে, আইএসআই-এ পুকুরের ধারে তাঁর হেঁটে বেড়ানো, কখনও আমাদের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলা। ১৯৯৫-এ আমি কানাডায় আসি। এক বার ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটিতে এক কনফারেন্সে এসেছেন শুনে তাঁকে দেখতে যাই। আশ্চর্য, দেখামাত্র উনি চিনতে পারলেন। শুধু তা-ই নয়, আমার বিয়ের আগের পদবিও ওঁর মনে আছে! পরে আবারও দেখা হয় পেন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে, ডক্টর রাওয়ের বাড়িতে। আইএসআই-এর দিনগুলো নিয়ে কত গল্প! ২০০০ সালে আমার ছোট ছেলে (তখন টরন্টো ইউনিভার্সিটির ছাত্র) এক দিন বাড়ি ফিরে উত্তেজিত ভাবে জানাল, আজ ওদের ক্লাসে ‘রাও-ব্ল্যাকওয়েল থিয়োরেম’ পড়ানো হয়েছে। যে মানুষটা পৃথিবীকে এই থিয়োরেম উপহার দিয়েছেন, তাঁকে ও সামনে থেকে দেখেছে, উত্তেজনা এ কারণেই।
কান্তি আখতার
অন্টারিয়ো, কানাডা
রাশিয়ায় কবি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রুশ ভ্রমণের নব্বই বছর’ শিরোনামের প্রতিবেদনে (কলকাতার কড়চা, ১৪-৯) উল্লিখিত একটি সংবাদের প্রতি বহু জনের আগ্রহ এবং ঔৎসুক্য জাগতে পারে। তাঁদের উদ্দেশে জানাতে চাই যে, ১৯৩০-এর সেপ্টেম্বরে রুশ দেশ ভ্রমণকালে রবীন্দ্রনাথ সে দেশের নানা স্তরের নানা পেশার মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁর অবস্থান কালেই মস্কোয় আয়োজিত হয়েছিল তাঁরই অঙ্কিত চিত্রশিল্পের প্রদর্শনীও। প্রতি দিন পাঁচশোর বেশি আগ্রহী দর্শক হাজির হয়েছিলেন সেই প্রদর্শনীতে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সোভিয়েট জনগণের পক্ষ থেকে শিল্পী, সাহিত্যিক, কলাকুশলী এবং কলা-বিশেষজ্ঞেরা রবীন্দ্রনাথের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তাঁদের প্রিয় লেখক, বিশ্ববন্দিত লেভ তলস্তয়ের মুখাবয়ব। যশস্বী ভাস্কর সের্গেই দমিত্রিয়েভিচ মেরকুরভ ১৯১০ সালে শেষ শয্যায় শায়িত তলস্তয়ের মরদেহ থেকে তাঁর মুখমণ্ডলের যে ছাঁচ গ্রহণ করেছিলেন, সেটিই অর্পণ করা হয়েছিল তাঁকে। নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে রাশিয়ায় এসেছিলেন তিনি, ১৯৩০ সালে। যদিও, ১৯২৮-এ তলস্তয়ের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন তিনি, কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় তাঁর যাওয়া হয়নি। এ বার তিনি রাশিয়া থেকে দেশে ফিরলেন তলস্তয়কে সঙ্গী করে। সেই মুখাবয়বটি আজও শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনে সযত্নে রক্ষিত, এবং সর্বসাধারণের জন্য প্রদর্শিত।
প্রসঙ্গত, সের্গেই মেরকুরভ ছিলেন আলেকজ়ান্ডার পুশকিনের নামাঙ্কিত মস্কোর দৃশ্যকলা সংরক্ষণাগারের প্রধান পরিচালক (১৯৪৪-১৯৪৯)। ত্রিশের বেশি বিশিষ্টজনের ভাস্কর্যের নির্মাতা ছিলেন তিনি, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য তলস্তয়, ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি, ভ্লাদিমির লেনিনের প্রতিকৃতি। এ ব্যতীত তিনশো জনেরও বেশি কৃতী মানুষের মরণোত্তর মুখাবয়ব গ্রহণ ও নির্মাণ করেছিলেন তিনি এক অনুপম অননুকরণীয় শৈল্পিক পদ্ধতিতে। আজও রবীন্দ্রনাথ শ্রদ্ধার সঙ্গে সম্মানিত রাশিয়ায়।
গৌতম ঘোষ
অনুষ্ঠান আধিকারিক, গোর্কি সদন
হিন্দি শিক্ষা
বিশ্বজিৎ রায়ের ‘জুলুম, না কি ভাব বিনিময়’ (১৯-৯) প্রসঙ্গে কিছু বিষয় সংযোজন করতে চাই। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হিন্দি শিখেছিলেন পেশাগত তাগিদে। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে উনি যখন যোগ দেন, তখন ক্যাপ্টেন মার্শাল সাহেব তাঁকে বলেন, যে সমস্ত সিভিল সার্ভিস অফিসার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে অধ্যয়ন করছেন, তাঁদের খাতা পরীক্ষা করার জন্য হিন্দি ভাষায় দখল থাকা প্রয়োজন। তৎক্ষণাৎ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এক জন পণ্ডিতের কাছে হিন্দি শিখতে আরম্ভ করেন। তাঁকে মাসে ১০ টাকা বেতনে নিয়োগ করেন। প্রতি দিন কলেজে যাওয়ার আগে উনি ওই পণ্ডিতের কাছে হিন্দি শিক্ষা নিতেন।
রবীন্দ্রনাথের জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ১৯১৭ সালের শেষ দিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতিকল্পে এক কমিশন বসেছিল। ইংল্যান্ডের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যর মাইকেল স্যাডলার ছিলেন এর সভাপতি। তিনি শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন শিক্ষা সংস্কারে কবির মতামত জানতে। রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছিলেন, ইংরেজি ভাষাকে দ্বিতীয় ভাষারূপে যত্ন করে শেখাতে হবে। কিন্তু স্কুল-কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত মাতৃভাষায় সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান শেখানোর প্রয়োজন। এর আগে ১০ ডিসেম্বর, ১৯১৬ সালে রামমোহন লাইব্রেরি হলে স্বরচিত প্রবন্ধ ‘শিক্ষার বাহন’ রবীন্দ্রনাথ পাঠ করেন। সেই নিবন্ধে কবি বলেন, বাংলা ও ইংরেজি দু’টি ধারা গঙ্গা-যমুনার মতো পাশাপাশি বয়ে চলবে।
১৯২৭ সালে হিন্দি সাহিত্য সম্মেলনে রবীন্দ্রনাথকে সভাপতি পদে আমন্ত্রণ জানান ভরতপুরের মহারাজ কিষান সিংহ। রবীন্দ্রনাথ ভরতপুরের সেই বিশাল সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে বলেন, ভাষা কেবল রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনের তাগিদে রাষ্ট্রীয় হয় না। সাহিত্যের দিক থেকেও তাকে যোগ্যতা দেখাতে হয়।
সুদীপ বসু
মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy