হালে পানি না পেয়ে দেশের বর্তমান শাসক দল উত্তরপ্রদেশে নিজেদের একাধিপত্য কায়েমের জন্য হিন্দু ভোটারদের এক বাক্সে জড়ো করার চেষ্টা করছে, এবং সেই উদ্দেশ্যে বর্ণ হিন্দু এবং দলিত হিন্দুদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ছত্রছায়ায় অবস্থানকারী বহু ছোট ছোট সংগঠন ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের সেই সব স্তরে, যেখানে শিক্ষা এবং যুক্তির কোনও স্থান নেই। জাতপাত এবং ধর্মান্ধতাই সেখানে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করে রয়েছে। সেখানে ধর্মের নামে তাঁদের আরাধ্য দেবতাদের উদ্দেশে জয়ধ্বনি দিলেই যে ভোটারদের মন পাওয়া যাবে, এবং জয়ের রাস্তা কুসুমাস্তীর্ণ হবে, তা মনে করেন হিন্দুত্ববাদীরা।
গণতন্ত্রের একটি বিশেষ দিক হল ব্যাপক গণসংযোগ, এবং তার ফলে সৃষ্ট সামাজিক সচলতা। এরই মধ্য দিয়ে রচিত হয় সমাজের উচ্চবর্ণের সঙ্গে নিম্নবর্ণের, তথা পশ্চাৎপদ শ্রেণির সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত, মান্যতাপ্রাপ্ত শ্রেণির যোগ। গণতন্ত্রের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, যাঁরা ‘সবার পিছে সবার নীচে সবহারাদের মাঝে’, তাঁদের মান মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। ষোড়শ শতকের যুগনায়ক শ্রীচৈতন্য মানুষে মানুষে প্রেমবন্ধন রচনা করেছেন, জাতপাতের বিভেদ যথাসম্ভব দূর করেছেন এবং হিন্দু-মুসলমানকে এক সূত্রে মিলিত করার পথ দেখিয়েছেন। আবার রাজার অন্যায় নির্দেশকে কী ভাবে অহিংস গণ প্রতিবাদে প্রত্যাহার করতে হয়, তারও দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন।
উত্তরপ্রদেশ জয়ের ক্ষেত্রে বিজেপির অবস্থান এবং দলিত হিন্দুদের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর বিষয়টি ভোট জয়ের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক এক কূটনৈতিক চাল মাত্র। রাজ্য বিজয়ের পরবর্তী সময়ে কট্টর হিন্দুত্ববাদী দলটি যে বর্ণহিন্দুদের প্রভাব প্রতিপত্তিতেই সঙ্গ দেবে, এ কথা বলা বাহুল্য। বিজেপির এই রণকৌশল দেশের সর্ববৃহৎ রাজ্যটির ভোটারদের অবশ্যই বুঝতে হবে।
সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া
টিকিটের আশা
৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত বাড়তেই রাজ্য জুড়ে দেখা গেল একের পর এক প্রতিবাদ, মিছিল, স্লোগান, রাস্তা অবরোধ। আবার কোথাও চলল টায়ার জ্বালিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ। না, এ কোনও মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ নয়, কিংবা কোনও কেন্দ্রীয় আইন প্রত্যাহারের দাবিতেও প্রতিবাদ নয়, এ হল সাম্প্রতিক পুর নির্বাচনে প্রার্থী না হতে পারার ক্ষোভ! অবশেষে ঝোলা থেকে বেড়াল যেন বেরিয়েই পড়ল! রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা সর্বদা মুখে ‘মানুষের জন্য কাজ’ করা বা ‘মানুষের সেবা’ করার কথা বলে থাকেন। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের এই দৃশ্যই প্রমাণ করে যে, কয়েক জন ব্যতিক্রমীকে বাদ দিলে বাকি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে ‘মানব সেবা’র আড়ালে রাজনীতির লাভ-ক্ষতি, পাওনা-গন্ডাই প্রাধান্য পায়। এটাই পর্দার আড়ালে থাকা নিখাদ সত্য। মানুষের সেবা করাই যদি মূল উদ্দেশ্য হয়, সেখানে ভোটের টিকিট না পেলে কী-ই বা আসে যায়। কেউ কেউ তো আবার প্রার্থী হতে না পেরে মিডিয়ার সামনে রীতিমতো কেঁদে ভাসিয়েছেন।
কিন্তু এদের মধ্যে কোনও জনপ্রতিনিধি মানুষের চাওয়া-পাওয়া, অধিকারের জন্য এক ফোঁটা অশ্রুজলও কি কখনও ফেলেছেন? মানুষের সেবা করতে গেলে যে মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ হতে লাগে না, বা কোনও রাজনৈতিক মঞ্চেরও প্রয়োজন হয় না, তা গত বছরের লকডাউনেই আমরা প্রমাণ পেয়েছি। একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিঃস্বার্থ ভাবে বহু দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়াও অভিনেতা সোনু সুদের কথা ধরা যাক। তিনি রাজনৈতিক পদপ্রার্থী না হয়েও, একক প্রচেষ্টায় জনসেবামূলক কাজের দৃষ্টান্ত রেখেছেন। অতএব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নেতাদের বোঝা উচিত, ভোটের টিকিটই জনসেবার একমাত্র মাপকাঠি নয়।
সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
সেবার অছিলা
কিছু দিন আগে পুরভোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরেই প্রায় প্রতিটি দলের মধ্যে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল। সত্যিই কি এঁরা মানুষের সেবার জন্য বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন? না কি ক্ষমতা-টাকা’সহ অন্যান্য বিষয়ের আশা ভঙ্গ হয়েছে বলে? সত্যিই কি জনপ্রতিনিধি না হলে জনগণের কাজ করা যায় না? যে ভাবেই হোক কাউন্সিলর অথবা চেয়ারম্যান হতেই হবে, তাই টিকিট না পেলে পুরনো দলকে ছেড়ে অন্য দলে টিকিট পেতে চলে যাচ্ছেন নেতারা। এত দিন যাঁকে ‘জিন্দাবাদ’ বলতেন, নতুন দলে গিয়ে এখন তাঁকে ‘মুর্দাবাদ’ বলতেও দ্বিধা নেই।
রামমোহন, বিদ্যাসাগর কেউই কাউন্সিলর-এমএলএ-এম পি, বা মন্ত্রী ছিলেন না। তাঁদের পিছনে কোনও সরকারি সাহায্যও ছিল না। বরং সমাজ তাঁদের বিরুদ্ধে পাহাড়প্রমাণ বাধা তৈরি করেছিল। তাঁরা কি সমাজের জন্য কাজ করেননি? কেবলমাত্র সত্যকে আঁকড়ে ধরে সতীদাহ উচ্ছেদ, নারী শিক্ষা প্রচলন, বিধবা বিবাহ প্রচলন ইত্যাদি কঠিন কাজগুলো তাঁদের হাত ধরেই হয়েছে। ফলে মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে জনপ্রতিনিধি হতেই হবে এবং দরকার হলে সাম্প্রদায়িক, অগণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে হাত মেলাতে হবে, এই ধারণা সুবিধাবাদী।
নিখিল কবিরাজ, শ্যামপুর, হাওড়া
ওষুধের দাম
অতিমারির সুযোগ নিয়ে ওষুধের দাম ভয়ঙ্কর হারে বাড়িয়ে দিয়েছে প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলি। অন্য দিকে, সরকারি হাসপাতালে কমানো হয়েছে ২৮৩ রকমের ওষুধ। জীবনদায়ী ওষুধের দামও ২০-৩০ শতাংশ, কোনও ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ হারে বাড়ানো হয়েছে। করোনায় বন্ধ হয়েছে লক্ষ লক্ষ ছোট-মাঝারি সংস্থা, কাজ চলে গিয়েছে বহু মানুষের। তার উপর ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ আরও বিপাকে পড়েছেন। ক্যানসার, শুগার, প্রেশার, হার্ট, লিভার, নিউমোনিয়া, কোলেস্টেরল, ইউরিন, প্রস্টেট, হাঁপানি, থাইরয়েড, অ্যালার্জি-সহ নানা অসুখেই ওষুধ খেতে হয় নিয়মিত। এ ছাড়াও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, এমনকি গ্যাস-অ্যাসিডিটির জন্য যে ওষুধ, সেগুলির দামও বেড়ে চলেছে চড়া হারে। সরকার ও বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির দুষ্টচক্রের হাতে পড়ে সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।
ফার্মা কোম্পানিগুলি বলছে, তাদের নাকি লাভ হচ্ছে না। বাস্তবটা হল, কোনও কোনও ওষুধে সরকার চড়া জিএসটি চাপালেও ওষুধ কোম্পানিগুলির অতিরিক্ত মুনাফাই এই বিরাট মূল্যবৃদ্ধির কারণ। ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি অতি চলতি কিছু ওষুধের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছে। ওষুধের মতো জীবনদায়ী জিনিসে এমন চড়া হারে কর চাপাতে পারে কী করে বিজেপি সরকার? পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলিকে বঞ্চিত করে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সরকার ওষুধ তৈরির বরাত দিচ্ছে। করোনা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও একই ভূমিকা দেখা যাচ্ছে।
দেশের সর্ববৃহৎ সরকারি ওষুধ সংস্থা আইডিপিএল রয়েছে, রয়েছে হিন্দুস্থান অ্যান্টিবায়োটিকস লিমিটেড (হ্যাল), বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড (বিসিপিএল)। এ ছাড়াও বহু বেসরকারি ওষুধ কোম্পানি রুগ্ণ হয়ে পড়ায় সরকার অধিগ্রহণ করেছে। সেগুলিতে ওষুধ উৎপাদন হলে খরচ কম পড়ত, মূল্যও কম হত। সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে থাকত দাম। কিন্তু কর্পোরেটপ্রেমী সরকার বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির লাভের সুযোগ করে দিচ্ছে। ঠিক একই রকম ভাবে সরকারি টিকা প্রস্তুতকারী ১৪টি সংস্থাকে বঞ্চিত করে মাত্র দু’টি বেসরকারি সংস্থাকে কোটি কোটি ডোজ় ভ্যাকসিনের বরাত দিয়ে তাদের বিপুল লাভের সুযোগ করে দিচ্ছে। এদের সাহায্য করতে কংগ্রেস, বিজেপি-সহ সব সরকারই ওষুধ-নীতি নির্ধারণ করছে।
সোমা নন্দী, শিয়ালদহ, কলকাতা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy