সোমক রায়চৌধুরীর গ্রহণ সংক্রান্ত (‘‘এক অন্য করোনা রহস্যের সন্ধান’’, ২১-৬) লেখাটি পড়ে অনেক কিছু জানা গেল। কিন্তু ১০০ বছর আগের যে সূর্যগ্রহণের কথা সোমকবাবু বলেছেন, সেটা স্টিফেন হকিং সাহেবের লেখা ‘ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ অনুযায়ী, ১৯১৯ সালে হয়েছিল পশ্চিম আফ্রিকায়। সেই গ্রহণের সময় পর্যবেক্ষণ যাঁরা করেছিলেন, তাঁরা ছিলেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী। কিন্তু তাঁদের ওই গ্রহণকালীন নেওয়া ছবি পরবর্তী কালে বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে যে, তাঁরা যে ফল পেয়েছিলেন এবং তা থেকে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন, সেটা হয় পুরোপুরি ‘চান্স ফ্যাক্টর’ বা তাঁরা আগেই প্রাপ্ত ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন বলে ভুল করে ফেলেছিলেন। কারণ বুধগ্রহের কক্ষপথের দীর্ঘ অক্ষটির প্রতি ১০,০০০ বছরে এক ডিগ্রি করে সরে যাওয়াকে ব্যাখ্যা করতে পারাই ‘সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব’-র সত্যতা সম্পর্কে তাঁদের নিশ্চিত করে দিয়েছিল এবং তাঁদের পর্যবেক্ষণলব্ধ সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছিল।
কাজেই হকিং সাহেবের মতানুযায়ী, ওই পরীক্ষা আইনস্টাইনের তত্ত্ব বাস্তবিক প্রমাণ করতে পারেনি বা নিজেদের বিশ্বাস তাঁদের ভুল করিয়েছিল। পরবর্তী কালে অন্য সূর্যগ্রহণের সময় তত্ত্বটি নিশ্চিত ভাবেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।
রাকেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, ময়নাডাঙা, চঁুচুড়া
নারায়ণচন্দ্র রাণা
জ্যোতির্বিজ্ঞানী নারায়ণচন্দ্র রাণা ১৯৯৫-এর ২৪ অক্টোবর এক পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের দিনে সারা ভারত থেকে দুশো ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে সূর্যের ব্যাস নির্ণয়ে অংশ নিয়েছিলেন। রাজস্থানের দিল্লি-জয়পুর হাইওয়েতে আট কিলোমিটার জুড়ে প্রায় ৬৬,০০০ বৈদ্যুতিন যন্ত্রাংশের সাহায্যে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সূর্যের ব্যাস নির্ণয় করে সাড়া ফেলে দেন।
জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকারের তত্ত্বাবধানে গবেষণা নারায়ণচন্দ্রকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দেয়। ইংল্যান্ডের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পর মুম্বইয়ের টিআইএফআর-এ কিছু দিন থাকার পর আমৃত্যু অধ্যাপক ছিলেন পুণের ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স-এ। অসাধারণ মেধা ও আজীবন ভগ্নস্বাস্থ্যের অধিকারী নারায়ণচন্দ্র তাঁর ৪২ বছরের জীবনে (১৯৫৪-৯৬) ভোলেননি মেদিনীপুরের (বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর) সাউরী ভোলানাথ বিদ্যামন্দিরের মণীন্দ্রনারায়ণ লাহিড়ি স্যরকে। প্রিয় স্যরের জন্য বিদেশ থেকে আনিয়েছিলেন দশ ইঞ্চি ব্যাসের টেলিস্কোপ। ১৯৯১ সালে স্যরের প্রয়াণের পর গড়ে তুলেছিলেন এম এন লাহিড়ি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল (মেমোরিয়াল) ট্রাস্ট। স্কুলও ভোলেনি তার সেরা ছাত্রটিকে। অখণ্ড মেদিনীপুরের প্রথম ডিগ্রি কলেজ (১৮৭৩) মেদিনীপুর কলেজে রয়েছে এন সি রাণা স্কাই অবজ়ারভেশন সেন্টার। আক্ষেপের বিষয়, অধ্যাপক রাণার এ পর্যন্ত কোনও জীবনী গ্রন্থ নেই। যা শুধু বাঙালি কেন, বিজ্ঞানসেবীদের কাছে হয়ে থাকবে এক অমূল্য সম্পদ।
নন্দগোপাল পাত্র, সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
যশ পাল
সূর্যগ্রহণের সঙ্গে ভারতের যশস্বী বিজ্ঞানী অধ্যাপক যশ পালের স্মৃতিবিজড়িত একটি ঘটনার কথা মনে পড়ল। ভারতে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ, ২৪ অক্টোবর ১৯৯৫ সালে হয়। সেই মহাজাগতিক ঘটনাকে ছোট পর্দায় প্রতিফলিত করার দায়িত্ব নিয়েছে দিল্লি দূরদর্শন। ভাষ্য দিচ্ছেন যশ পাল, বৈজ্ঞানিক যুক্তি ও ব্যাখ্যা-সহ সহজ, সরল ও মনোজ্ঞ ভাবে। মাঝে মাঝে দূরদর্শনের ব্যবসায়িক বিজ্ঞাপন ব্যাহত করছিল সেই ধারাবাহিকতা। অধ্যাপক পাল খুব বিরক্ত হয়ে প্রচণ্ড ধমক দিলেন, “স্টপ অল অ্যাডস, নো মোর ইন্টারাপশন।’’ ভোজবাজির মতো কাজ হল। সমস্ত বিজ্ঞাপন বন্ধ!
প্রমথরঞ্জন ভট্টাচার্য, কলকাতা-৮৪
অমলেন্দুবাবু
২০০১ সাল। ইউজিসি ভারতে সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশ দিল নতুন এক বিভাগ খুলতে— বৈদিক জ্যোতিষ। এই বিভাগে জ্যোতিষশাস্ত্র শেখানো হবে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় রাজি হয়নি। অনেকে প্রতিবাদ করলেন। অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মতো করে প্রতিবাদে লিখলেন গ্রন্থ ‘জ্যোতিষ কি আদৌ বিজ্ঞান?’। প্রাঞ্জল ভাষায় জ্যোতির্বিজ্ঞান বোঝানোয় তাঁর ছিল অসাধারণ দক্ষতা। তার পরিচয় পেয়েছিলাম আরও আগে থেকে।
১৯৮০-র দশক। পশ্চিমবঙ্গে গণবিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী চর্চার জোয়ার এল। অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় শেখালেন জ্যোতিষবিদ্যা আর জ্যোতির্বিদ্যার পার্থক্য। এত বড় বিজ্ঞানী, অথচ যেখানেই আমন্ত্রণ জানানো হত, তিনি ঠিক সময়ে হাজির। গ্রহণের আগে প্রায় সব জায়গায় তাঁর ডাক পড়ত। তাঁর আলোচনা শুনে বুঝেছি, জ্যোতিষচর্চা বিষয়ে কুসংস্কার দূর করতে সে বিদ্যাও দখলে আনতে হয়। পজ়িশনাল অ্যাস্ট্রোনমি বিষয়ে ধারণা হল তাঁর আলোচনা থেকে। তিনি বোঝাতেন, ভারতের প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় এই ধারার পরম্পরায় মহাকাশে রাশিচক্র, জ্যোতিষ্কদের অবস্থান, আকার, গতি, ঘূর্ণন, আবর্তন ইত্যাদি নিরন্তর বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ করা, তারিখ, সময়, পৃথিবীর অবস্থান সাপেক্ষে একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মাপা যায়, যার আর এক নাম অবজ়ারভেশনাল অ্যাস্ট্রোনমি। কলকাতায় আমাদের গর্ব পজ়িশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার, প্ল্যানেটারিয়াম বলতেই মনে পড়ছে সেই নাম— অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৯১ সালে কলকাতার এক পত্রিকায় জ্যোতিষের বিরুদ্ধে তাঁর এক লেখা প্রকাশিত হয়েছিল— ‘ডু প্ল্যানেটস্ রুল আওয়ার লাইভস্’। সেই সকালেই টেলিফোন— অমলেন্দুবাবু বাড়ি আছেন? তাঁর স্ত্রী উত্তর দিলেন— উনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন। ফোনে শোনা গেল কঠিন স্বর— উনি আজকে একটা লেখা লিখেছেন জ্যোতিষের বিরুদ্ধে। দশ দিনের মধ্যে আপনার স্বামীর লাশ পড়ে যাবে। লালবাজারে জানানো হল। জানা গেল, গয়নার দোকান আর জ্যোতিষী মিলে এই কাণ্ড করেছিল।
সাম্প্রতিক সূর্যগ্রহণের ব্যাখ্যায় তাঁর কথা মনে পড়ছিল। আক্ষেপ— তাঁর শিক্ষা নিতে পারিনি আমরা। পদে পদে কুসংস্কার, কুযুক্তিতে হোঁচট খাচ্ছি। গণমাধ্যমে জ্যোতিষচর্চার অজস্র বিজ্ঞাপন। সরকারি শিক্ষায় বিজ্ঞানের নামে অপবিজ্ঞান হুমকি দেখায়। বিজ্ঞানেও গেরুয়াকরণ এক জাতীয় অভিশাপ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলতেন বিবেকানন্দের কথা, যিনি বলে গিয়েছেন, জ্যোতিষীর কাছে না গিয়ে অসুস্থ মানুষের উচিত সুচিকিৎসকের কাছে যাওয়া, ভাল চিকিৎসা করা।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
জন্মদিন
১ জুলাই ডা. বিধান চন্দ্র রায়ের জন্মদিন। ডা. রায় এমনই এক ব্যক্তিত্ব, যিনি আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের কথা ভেবেছিলেন। বিধাননগর তাঁরই তৈরি। প্রথম যখন সল্টলেকে আসি, চারিদিকে বালিভর্তি মাঠ। আমরা গুটিকয়েক পরিবার বাড়ি বানিয়ে বসবাস আরম্ভ করলাম। সল্টলেকের বাসস্থানই আমার উচ্চাশাকে বাস্তব রূপ দিল। আজ শেষ বয়সে, সল্টলেকেরই একটি হাসপাতালে আমার চিকিৎসা হল। ডাক্তারদের নিরলস পরিষেবায় আমার মতো কত মুমূর্ষু রুগী সুস্থ হয়ে বাড়ি গেল। ডা. রায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে, ‘তোমার উত্তরসূরিদের অর্থাৎ চিকিৎসকদের মধ্যে তুমি চিরদিন বেঁচে থাকবে।’
উষা গঙ্গোপাধ্যায়, সল্টলেক
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy