‘বন্ধুত্বের দায়’ শীর্ষক সম্পাদকীয় (১৭-৬)-তে দেশ ও কৃষকদের পক্ষে যথার্থ দাবিটি তুলে ধরা হয়েছে। কৃষি আজও গ্রামীণ অর্থনীতির শুধুমাত্র প্রধান অবলম্বন নয়, বলা যেতে পারে একমাত্র অবলম্বন। অথচ, কৃষিতে সরকারের মনোযোগ ও বিনিয়োগ কমছে বলেই কৃষি ক্রমশ অলাভজনক হয়ে উঠেছে। চাষির ছেলে নিতান্ত দায়ে না পড়লে আজকের দিনে আর চাষি হতে চায় না। চাষির রোজগার যদি দ্বিগুণ-তিনগুণ বৃদ্ধিও পায়, ফসল উৎপাদন থেকে বিক্রি করা পর্যন্ত পরিশ্রমের উপযুক্ত মূল্য কি তাঁরা পাবেন? ওই পরিমাণ পরিশ্রম অন্য কোনও পেশায় নিয়োজিত হলে অনেক বেশি অর্থের আমদানি হত। গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ও চাষির দারিদ্র দূর করতে হলে অনুদান বৃদ্ধি না করে সরকার পরিকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধি করুক।
সরকারের উচিত কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখা— চাষি যেন তাঁর উৎপন্ন ফসল নিকটবর্তী বাজারে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারেন, বাজারের প্রয়োজন অপেক্ষা অতিরিক্ত উৎপন্ন ফসল যাতে সংরক্ষণ করতে পারেন, এবং প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়া ফসলের জন্য বিমার টাকা যাতে যথাসময়ে পেয়ে যেতে পারেন। এ ছাড়াও চাষের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতির জোগান প্রয়োজন। রাস্তাঘাট ও পরিকাঠামোগত উন্নতিরও প্রয়োজন, যাতে ফসল পরিবহণে সমস্যা না হয়, যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় কমে, এবং বিকল হলে দ্রুত সারিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা যায়। অত্যধিক রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারে মাটি ক্রমশ অনুর্বর হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক সমাধান। তাই কৃষি বিষয়ক গবেষণায় সরকারি বিনিয়োগ জরুরি।
সরকার ক্ষতিপূরণ বা অনুদান দিয়ে কৃষকের বন্ধু হতে চাইছে, ভাল কথা। কিন্তু কৃষি পরিকাঠামোর উন্নয়ন ও বিস্তারে পরিপন্থী মনোভাব দেখালে আখেরে লাভ হবে না। বছর বছর চাষিদের কাঁধে ঋণের বোঝা বাড়ছে এবং তাঁরা আর্থিক ভাবে দুর্বল হচ্ছেন। কৃষিকে রাষ্ট্রের একান্তই প্রয়োজন। তাই চাষ ও চাষির উন্নতিতে সরকারকে আরও বেশি আগ্রহী হতে হবে।
অভিজিৎ কাপাস
রাজনগর, পশ্চিম মেদিনীপুর
কৃষি ও শিল্প
কৃষকের জন্য সরকারি অনুদান, সহায়তা, ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু কৃষির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো উন্নয়নের বরাদ্দ কম। আবার শ্রমিকের জীবন ও জীবিকা উন্নত করার পরিকাঠামো নির্মাণের বরাদ্দ পড়ে থাকে অবহেলায়। টাকা ফেরত চলে যায় (‘টাকা আছে, শ্রমিকরা পান না’, ১৭-৬)। কৃষি ও শিল্প, ভারতীয় অর্থনীতির দুই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের পরিকাঠামো উন্নত হতে পারে একমাত্র সরকারি উদ্যোগে। কিন্তু নব্বইয়ের দশক থেকেই বেসরকারি উদ্যোগকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলোকে একের পর এক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদের রুগ্ণ করেছে কিছু ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত উদ্যোগ। মুনাফা লুটে এরা ক্রমশ ধনী হয়েছে। ক্রমাগত বেসরকারিকরণের ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আয় কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে কৃষি ও শিল্পে পরিকাঠামোর জন্য বরাদ্দ বাজেট। ক্রমশ গরিব হয়েছেন কৃষক ও শ্রমিক। সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অভাবে এঁরা আজ অসহায়।
শুভ্রাংশু কুমার রায়
চন্দননগর, হুগলি
প্রতিশ্রুতি রক্ষা
নির্বাচনী ইস্তাহারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, বাংলার চাষিদের আর্থিক সুবিধা বাড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন থেকে, যে চাষিরা বছরে পাঁচ হাজার টাকা পেতেন (এক একর বা তার বেশি জমি চাষ করেন যাঁরা), তাঁরা পাবেন দশ হাজার টাকা। যাঁরা দু’হাজার টাকা করে পেতেন (এক একরের কম জমি), তাঁরা পাবেন চার হাজার টাকা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের ৯.৭৮ লক্ষ কৃষকের অ্যাকাউন্টে প্রায় ২৯০ কোটি টাকা জমা পড়েছে। এ ছাড়াও চাষি ও ভাগচাষি মিলিয়ে মোট ৬২ লক্ষ মানুষকে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে, এবং প্রায় ৪,৫০০ কোটি টাকার সাহায্য দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গই প্রথম ও একমাত্র রাজ্য, যেখানে চাষিরা এই বাড়তি সুবিধা পাবেন। অন্যান্য রাজ্যে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি প্রকল্প চালু আছে, সেখানে আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ অনেক কম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি রেখেছেন।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
গভীর সমস্যা
‘খরচ করার মতো টাকা চাই’ (১৬-৬) শীর্ষক রচনায় সুরজিৎ দাস কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে অনেকটাই বললেন। যেটা খুলে বললেন না, সেই সমস্যা অনেক গভীরে— পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অত্যন্ত কম। কেন কম? শুধু কেন্দ্র টাকা দেয় না বলে? কোন খাতে অর্থ ব্যয় হবে, সেই বিষয়ে পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণের অপরিসীম অভাব বলে? রাজ্য সরকার বেহিসাবি খরচের পরাকাষ্ঠা বলে? না কি কেন্দ্রের সঙ্গে আদা-কাঁচকলার সম্পর্ক বলে? কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সম্পর্ক ভাল না হলে টাকা পাওয়া কঠিন। তাই রাজনৈতিক পারদর্শিতা দেখিয়ে শিল্প আনার দিকে এবং মানবসম্পদ গড়ার দিকে মন দেওয়া দরকার ছিল। সিন্ডিকেট গড়ে করবিহীন যে অর্থনীতি গড়ে তোলা হয়েছে, তার ফলাফল দেখাই যাচ্ছে। তা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে কেনই বা ভাল মানের কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি, সেটা নিয়ে কি ভাবার সময় আসেনি?
সৌগত বাগচি
কলকাতা-১৫৭
ফড়েরাজ
কেন্দ্র-রাজ্যের দুই প্রকল্প মিলিয়ে বাংলার কৃষকরা এখন থেকে বছরে ১৬ হাজার টাকা অনুদান পাবেন। এতে কৃষকদের মনোবল বাড়বে ঠিকই, কিন্তু দুর্দশা ঘুচবে কি? কৃষকদের দরকার তাঁদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম। অনেক সময়ই তাঁরা তা থেকে বঞ্চিত। কৃষক ও ক্রেতার মাঝে এই মুনাফা লুটছে ফড়েরা। কৃষকের দুর্দশা ঘোচাতে ফড়েরাজ চিরতরে বন্ধ করতে হবে। সরকারকে উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করে ন্যায্য দামে কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনে বাজারজাত করতে হবে। দরকার উন্নত মানের বীজ এবং কম দামে সার ও কীটনাশকের যথাযথ জোগান। কোন মাটি কোন ফসলের উপযোগী, কোথায় কী সার দিতে হবে, সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে চাষিকে বিনামূল্যে পরামর্শ দিতে হবে।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল
কোন্নগর, হুগলি
তিল নষ্ট
হুগলি জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইয়াসের জন্য ভরা মাঠের তিল নষ্ট হয়েছে। আগের বছর আমপানেও সমস্ত তিল নষ্ট হয়েছিল। জেলায় আগে অর্থকরী ফসল হিসেবে পাট চাষ হত। পাট চাষে খরচ বৃদ্ধি এবং তা অলাভজনক হওয়ায় চাষিরা অপেক্ষাকৃত কম খরচের তিল চাষের দিকে ঝোঁকেন। তিল নষ্ট হওয়ার জন্য চাষিদের আয়ের পথ বিলম্বিত হচ্ছে।
দীপু বাগ
সিঙ্গুর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy