Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Pension Scheme

সম্পাদক সমীপেষু: বঞ্চনায় স্বস্তি

২০০৪ সাল থেকে যাঁরা চাকরিতে ঢুকছেন, তাঁরা প্রায় কেউই স্বেচ্ছাবসরের পথে যাবেন না। প্রত্যেকে অন্তত ৩৫-৩৬ বছর চাকরি করার পর ২০৪০ সাল নাগাদ অবসর নেওয়া শুরু করবেন।

A Photograph of DA Protest

রাজ্যে এখন নতুন কর্মীদের জন্য প্রতি মাসে পেনশন ফান্ডে অনুদান ও সর্বোপরি কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে। ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:৩৮
Share: Save:

প্রেমাংশু চৌধুরী তাঁর ‘যেখানে যেমন সুবিধা’ (১৬-৩) শীর্ষক প্রবন্ধে নতুন পেনশন প্রকল্প ২০০৪ সম্বন্ধে কিছু তথ্য দিয়েছেন। তবে চিত্রটি পরিষ্কার করতে আরও কিছু তথ্যের উপস্থাপনা করা প্রয়োজন বলে মনে করি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি বলেছেন যে, একমাত্র এই রাজ্যেই পেনশন দেওয়া হয় এবং পেনশন না দিলে ২০ হাজার কোটি টাকা বেঁচে যায়। এই প্রসঙ্গে জানাই যে, আমাদের দেশে সব রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার এই মুহূর্তে পুরনো পেনশন প্রকল্পে পেনশন দিচ্ছে, কারণ নতুন পেনশন প্রকল্প ২০০৪ সালের জানুয়ারি থেকে চালু হয়েছে, এবং ২০২৪-এর জানুয়ারি মাসে ২০ বছর পূর্ণ হলে তবেই কোনও কর্মীর স্বেচ্ছা অবসর নেওয়ার অধিকার জন্মাবে। কিন্তু নতুন পেনশন প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী, ভিআরএস-এর ক্ষেত্রে পেনশন ফান্ডে জমা টাকার ৮০% কেটে রেখে মাত্র ২০% টাকা কর্মচারীর হাতে দেওয়া হবে। অর্থাৎ, ২০ লক্ষ টাকা ফান্ডে জমা হলে (কর্মীর ১০ লক্ষ + সরকারের অনুদান ১০ লক্ষ) ১৬ লক্ষ টাকা কেটে রেখে মাত্র ৪ লক্ষ টাকা কর্মীর হাতে দেওয়া হবে। অন্য দিকে, কর্মী ৬০ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করলে ৮ লক্ষ টাকা কেটে ১২ লক্ষ টাকাই তাঁর হাতে দেওয়া হবে।

ফলে, ২০০৪ সাল থেকে যাঁরা চাকরিতে ঢুকছেন, তাঁরা প্রায় কেউই স্বেচ্ছাবসরের পথে যাবেন না। প্রত্যেকে অন্তত ৩৫-৩৬ বছর চাকরি করার পর ২০৪০ সাল নাগাদ অবসর নেওয়া শুরু করবেন। অর্থাৎ, যে সব রাজ্য নতুন পেনশন প্রকল্প গ্রহণ করেছে, সেই সময়ে তাদের আর পেনশনের বোঝা বইতে হবে না। তারা কর্মীদের কাছ থেকে যে টাকা কেটে রাখছে, সেই টাকা শেয়ার বাজার ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করে যে মুনাফা হবে, তার থেকেই পেনশন দেবে। আর এখানেই সব রাজ্যে সরকারি কর্মীদের ক্ষোভ। কারণ, সেটা অনিশ্চয়তায় ভরা। আর সেই সময়ে যে সরকার আমাদের রাজ্যে ক্ষমতায় থাকবে, তাদের তখনও একই ভাবে পেনশনের বোঝাবইতে হবে।

তবে এটা আমাদের রাজ্যে সরকারি কর্মীদের একটা বড় প্রাপ্তি। বর্তমানে অন্য রাজ্যগুলি যেমন পুরনো কর্মীদের পেনশন, নতুন কর্মীদের জন্য প্রতি মাসে পেনশন ফান্ডে অনুদান ও সর্বোপরি কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের রাজ্য সরকার যে অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছে, সেটা অস্বীকার করার জায়গা নেই।

সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস, শান্তিনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

সরকারের সামর্থ্য

প্রেমাংশু চৌধুরীর ‘যেখানে যেমন সুবিধা’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, সব রাজ্য সরকারই সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দিতে নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে। ডিএ দিতে গেলে নাকি আর পেনশন দেওয়া যাচ্ছে না। সব রাজ্যের রাজকোষের অবস্থা যদি এতটাই বেহাল হয়, তা হলে বুঝতে হবে যে, রাজ্য সরকারগুলোর আয় তাদের ব্যয়ের থেকে অনেক কম। অর্থাৎ, প্রয়োজনীয় পরিমাণ কর আদায় হচ্ছে না।

কর আদায় না হওয়ার দুটো কারণ থাকতে পারে। হয় করদাতারা কর ফাঁকি দিচ্ছে, রাজ্য প্রশাসন সে ফাঁকি রুখে কর আদায় করতে ব্যর্থ, নয়তো রাজ্যে শিল্প, ব্যবসা, বাণিজ্যের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ এবং সেই কারণে প্রয়োজনীয় কর আদায় করা সম্ভব নয়। কারণ যেটাই হোক, পশ্চিমবঙ্গের কথাই যদি শুধু ধরা যায়, রাজ্যের শিল্প এবং ব্যবসা বাণিজ্যের হাল যদি এতটাই খারাপ হয়, তা হলে কথায় কথায় ‘আমরা উন্নয়ন করছি’ জাতীয় ঘোষণা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী-সহ অন্যান্য মন্ত্রী এবং শাসক নেতারা মুদ্রাদোষের মতো আওড়ান কোন মুখে? শুধুমাত্র নিউ টাউনে যত্রতত্র কংক্রিটের বিশালাকৃতি ‘ব’ তৈরি করে আর ল্যাম্পপোস্টগুলোতে আলো পেঁচিয়ে দেওয়াটাই কি উন্নয়ন? কোষাগারের অবস্থা যদি এতটাই খারাপ হয়, তা হলে এই অপব্যয়গুলোই বা বন্ধ করা হচ্ছে না কেন?

একটা দেশ বা অঙ্গরাজ্যের কোষাগারের অবস্থা যদি সত্যিই বেহাল হয়ে যায়, তা হলে সেই দেশ বা রাজ্যের উন্নয়ন হওয়া কি বাস্তবে সম্ভব? কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির দায় কে নেবে, সে বিষয়েও প্রবন্ধকার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়েছেন। কেন্দ্রের সম্পর্কেও একই কথা কি প্রযোজ্য নয়? দরিদ্র ও ক্ষুধাপীড়িত দেশের তালিকা করতে গেলে ভারতের নাম প্রথম সারিতে থাকে। অথচ, সেই লজ্জা দূর করার কোনও মাথাব্যথাই সেই দেশের সরকারের নেই, অর্থবরাদ্দ তো দূরের কথা।

প্রবন্ধকার তাঁর লেখায় বলেছেন— কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য বাজেটের ১০০ টাকার মধ্যে ১৬ টাকাই বেতন এবং পেনশন দিতে খরচ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন হল, এই খরচের মধ্যে কি মন্ত্রীদের লক্ষাধিক টাকা বেতন-সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধে, সাংসদ-বিধায়কদের বিপুল পরিমাণ ভাতা, বিভিন্ন উচ্চপদস্থ আমলাদের বেতনের উপরে বিশেষ ভাতা— এই খরচগুলো ধরা আছে, না কি এই ১৬ টাকা শুধুমাত্র সাধারণ স্তরের কর্মচারীদের বেতন-পেনশন দিতেই খরচ হয়? যদি এটুকু খরচও সরকার বহন করতে না পারে, তবে সেন্ট্রাল ভিস্তা, দেশের ভিতরে শুধু নয়, বিদেশেও মন্দির তৈরি, বুলেট ট্রেন, বন্দে ভারত প্রভৃতি নানা ধরনের অপব্যয়গুলো তো সবার আগে বন্ধ করা দরকার। সরকারের যদি নিজ কর্মচারীদের বেতন আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধির সাপেক্ষে বৃদ্ধি করার ক্ষমতা না থাকে, তা হলে অবিলম্বে অপ্রয়োজনীয়, জনহিতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্কহীন প্রকল্পগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন।

পার্থ ভট্টাচার্য, ভাটপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

অবৈজ্ঞানিক

‘তামাশা নয় উদ্বেগ’ (১৩-৩) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। এ এক অলীক কুনাট্য পরিবেশিত হচ্ছে দেশে। আরএসএসের মহিলা শাখার সংশ্লিষ্ট সংগঠন ‘সংবর্ধিনী ন্যাস’ আয়োজিত গর্ভস্থ শিশুর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার কথা জেনে অবাক হতেও ভুলে গেলাম। গর্ভাধান থেকে শুরু করে জন্মের পর দু’বছর অবধি যে গর্ভ সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন এঁরা, তা রীতিমতো শঙ্কাজনক। দেশপ্রেমী ও সংস্কারী শিশু জন্মানোর এই নিম্ন কুসংস্কারই আজ দেশে জাঁকিয়ে বসছে। ভারতে বিজ্ঞান কোণঠাসা হতে হতে ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে যাবে— এই ধারণা জোরদার হচ্ছে।

যে কোনও অসম্ভব কাল্পনিক ধারণা প্রতি দিন আওড়ে গেলে ধীরে ধীরে তা সম্ভব বলে মনে হয়। বর্তমানে ভারতে একেবারে তা-ই ঘটছে। বার বার শুনতে শুনতে অনেক তথাকথিত বিজ্ঞান-শিক্ষিত মানুষও গোমূত্রকে করোনার প্রতিষেধক কিংবা ক্যানসারের ওষুধ ভেবে সেবন করেছেন। গণেশের মাথায় হাতির মাথা বসানোকে বিশ্বাস করেছেন প্রাচীন ভারতের শল্য চিকিৎসার নমুনা হিসেবে। ঠিক এই কারণেই এত বড় একটা কুসংস্কারের ঘটনায় দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ উঠছে না।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, যে প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়া দেশের সমস্ত মেধাবী ছাত্রছাত্রীর স্বপ্ন থাকে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে গর্ভ সংস্কারের কুসংস্কারে আবদ্ধ করে ফেললে অচিরেই তা শিক্ষার মানকে তলানিতে টেনে নামাবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এমনিতেই কেন্দ্রের শাসক দলের বিষনজরে রয়েছে, কারণ এখানকার ছাত্রছাত্রীরা (ক্ষুদ্রসংখ্যক এবিভিপি সমর্থক বাদে) কুসংস্কারে ডুবে না থেকে, নিজেদের উদার মনোভাবে কখনও লাগাম পরায়নি এবং শাসকের রক্তচক্ষুকে পরোয়া করেনি।

শাসক দলের যে দুটো কর্মসূচি, প্রথমত হিন্দুত্ব ও দ্বিতীয়ত ভারতীয় নারীর কাল্পনিক রূপ অনুসারে আধুনিক নারীকে অন্তঃপুরে আবদ্ধ করে রাখা, দুটোই সুচারু রূপে করার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে নাগপুরের নীতিপুলিশ। এর বিরুদ্ধে শিক্ষিত, সচেতন, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষকে একজোট হয়ে প্রতিরোধ গড়তে হবে। না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।

সুরজিত কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy