‘শহুরে পড়ুয়ারাও কিছু পাবে: মমতা’ (১২-৭) শীর্ষক প্রতিবেদনে পড়লাম, মুখ্যমন্ত্রী বেলতলা গার্লস হাইস্কুলের অনুষ্ঠানে বলেছেন: ‘‘কলকাতায় সবুজসাথী প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া যায় না। কারণ কলকাতার রাস্তায় সাইকেল চলে না।’’ এই তথ্য মুখ্যমন্ত্রী কোথায় পেলেন জানা নেই। সবিনয়ে জানাই, কলকাতার অলিগলি জুড়ে সর্বত্র বহু সংখ্যক মানুষ প্রতি দিন নানা কাজে সাইকেল চালান। শহরের প্রান্তবর্তী এলাকায় অনেক মানুষ এই যানটির উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। যেমন দমদম, বরানগর, বেহালা, গড়িয়া, মেটিয়াবুরুজ, বাইপাস সংলগ্ন এলাকা। এঁদের অনেকেই স্বল্প আয়ের বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। ছাত্রছাত্রীরাও অনেকেই স্কুলে যাওয়ার জন্য সাইকেল ব্যবহার করে। অভিভাবকরা বাচ্চাদের পৌঁছে দেন সাইকেলে। এটা দেখার জন্য যে চোখ থাকা দরকার, কলকাতার উচ্চ শ্রেণির আমলারা বোধ হয় সেই বোধ ইদানীং হারিয়ে ফেলেছেন। বিজ্ঞাপন নির্ভর অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রির দাপটে সাইকেল কলকাতায় এমনিই কোণঠাসা। কলকাতার বেশ কয়েকটি রাজপথে সাইকেলের উপর নিষেধাজ্ঞাটি অনৈতিক ও প্রশ্নযোগ্য। পৃথিবীর আর কোনও শহরেই বোধ হয় এ ভাবে ‘নো সাইক্লিং বোর্ড’ দেখতে পাওয়া যায় না। বস্তুত সারা পৃথিবী জুড়ে সাইকেলকে নতুন ভাবে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ প্রায় আন্দোলনের আকার নিয়েছে। উষ্ণায়নের মোকাবিলায় ও বাসযোগ্য ভবিষ্যৎ-শহরের ভাবনায় জ্বালানি-নিরপেক্ষ সাইকেল একটা আইকনের মতো। রাষ্ট্রপুঞ্জ ২০১৮ সালে, ৩ জুন তারিখকে ‘ওয়ার্ল্ড বাইসাইকেল ডে’ ঘোষণা করে জানিয়েছে, সাইকেল হল আজকের পৃথিবীতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সাশ্রয়কারী যান
এবং বিশেষ করে জনবহুল শহরগুলোতে ছোট ছোট দূরত্বে এর ব্যবহার বাড়ানো দরকার।
‘সবুজসাথী’ প্রকল্পটি সে দিক দিয়ে দেখলে অতুলনীয়। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। প্রান্তিক মেয়েদের শিক্ষা ও স্বনির্ভরতা শুধু নয়, এই প্রকল্প প্রকৃত অর্থেই সবুজ পৃথিবীর বার্তা দেয়। আমার নিজের ধারণা ‘সবুজসাথী’ প্রকল্প রাষ্ট্রপুঞ্জের পুরস্কার পাওয়ার পিছনে হয়তো এর সাইকেল সংযোগের কারণটাও খানিকটা ছিল। কিন্তু ‘কলকাতার রাস্তায় সাইকেল চলে না’ বললে, শহরে সাইকেলের পথকে সুগম করার বদলে তাকে আটকে দেওয়া বা অনুৎসাহিত করার ভাবনা ফুটে ওঠে,
যা আজকের দুনিয়ায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর।
শতঞ্জীব গুপ্ত
কলকাতা-৮
কেকের গল্প
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতির বহর এখনকার ২.৭ লক্ষ কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ কোটি ডলারে নিয়ে যাবেন তিনি। কিন্তু কী ভাবে এই মহান লক্ষ্য চরিতার্থ হবে? এমনিতেই বিশ্বজোড়া আর্থিক মন্দার প্রভাবে এ দেশের অর্থনীতিও আচ্ছন্ন। জিডিপি বৃদ্ধির হার, হিসাবের অনেক কারসাজিতেও তলানিতে নেমেছে। গত আর্থিক বছরের শেষ ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার নামতে নামতে পাঁচ বছরে সর্বনিম্নে পৌঁছেছিল। তা হলে কোন জাদুকাঠির স্পর্শে অসাধ্য–সাধন ঘটবে? এর জন্য প্রয়োজন অর্থনীতিতে প্রতি বছর ২০ লক্ষ কোটি টাকার জোগান দেওয়া। কোথা থেকে আসবে এই অর্থ? এর উত্তর প্রধানমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রী, কেউই দেননি। ইঙ্গিত থেকে বোঝা যায়, বিদেশি বিনিয়োগই সেই জাদুকাঠি।
এই বিদেশি বিনিয়োগের গল্প সেই গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকেই শুনে আসছে দেশের মানুষ। যদি তর্কের খাতিরে অর্থনীতির এই বিরাট লাফ মেনেও নেওয়া যায়, তাতে দেশের ৯৯% সাধারণ মানুষের কী যায় আসে? এই সংশয় ওড়াতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দ্য সাইজ় অব দ্য কেক ম্যাটারস। অর্থাৎ কেকটা কত বড়, তার উপর নির্ভর করছে তার কতটা ভাগ আপনি পাবেন। অর্থনীতির আকার যত বড় হবে, মাথাপিছু আয় হবে তত বেশি। বলেছেন, মাথাপিছু বেশি আয় মানে তত বেশি ক্রয়ক্ষমতা, তত চাহিদা, তত উৎপাদন, তত কর্মসংস্থান এবং তত সঞ্চয়। এই সব গল্প বলে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে অর্থনীতিতে ক্রমাগত অসাম্য তৈরির বাস্তবটি ভুলিয়ে দিতে চাইছেন।
দেশের মোট সম্পদের ৭৩% কুক্ষিগত ১% ধনকুবেরের হাতে। মাত্র ৪.৮% সম্পদ রয়েছে ৬০% মানুষের হাতে। মুকেশ অম্বানীর এক বছরে আয় বৃদ্ধি হয় ৬৭%। তা হলে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে এ কথা কী করে বোঝাবেন যে অম্বানী আদানি টাটা বিড়লাদের আয়বৃদ্ধি মানে তা রাম রহিমের আয়বৃদ্ধি? পঁুজিবাদী বর্তমান ব্যবস্থায় মাথাপিছু আয় তো শিল্পপতি আর শ্রমিক— দু’জনের আয়ের গড় হিসাব করেই ঠিক করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তো সেই হিসাবের কথাই বলছেন। তাতে দেশের সাধারণ মানুষের উল্লসিত হওয়ার কী আছে?
আর যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর এই গাজর ছোঁয়া যায় না বলছেন, তাঁদের তিনি ‘পেশাদার নৈরাশ্যবাদী’ বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ দেশের সাধারণ মানুষকে কী দিয়েছে? গত জমানায় দেশের মানুষকে তিনি যে অচ্ছে দিনের গল্প শুনিয়েছিলেন, কালো টাকা উদ্ধার, কর্মসংস্থান, মূল্যবৃদ্ধি রোধের গল্প শুনিয়েছিলেন, সেগুলি সম্পর্কে টুঁ শব্দ উচ্চারণ না করে আবার নতুন গল্প শুরু করেছেন। অবশ্য তাঁরই দলের সভাপতি, যিনি এ বার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন, সে দিন প্রধানমন্ত্রীর এই সব প্রতিশ্রুতিকে ‘জুমলা’ বলেছিলেন। অর্থাৎ নিছকই কথার কথা। এ বারও হয়তো কিছু দিন পর শোনা যাবে, কেকের গল্পটিও নিছকই গল্প!
সমরেন্দ্র প্রতিহার
কলকাতা–৪
নিরপেক্ষতা?
‘নাম-মাহাত্ম্য’ সম্পাদকীয়টি বিস্ময় এবং কৌতুকের সঙ্গে পড়লাম। বিস্ময়, কারণ কী অনায়াসেই আপনারা আপনাদের যুক্তি এবং ভাবনা থেকে সরে এসেছেন, এমনকি সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটেছেন বললেও অত্যুক্তি হবে না। কৌতুক, কারণ যে পরিবর্তিত যুক্তি পেশ করেছেন তা খুবই দুর্বল ঠেকেছে।
কেন্দ্রের দ্বারা পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব খারিজের পিছনে রাজনীতি নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু শুধুমাত্র এই কারণেই কি এই সিদ্ধান্তটি নিন্দনীয়? যখন বিধানসভায় এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পাশ হয়, তখন কি আপনাদের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়নি, এই প্রস্তাব আসলে ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায় এবং তার দুরপনেয় ক্ষতকে অস্বীকার করার প্রচেষ্টা? কিংবা বম্বে, মাদ্রাজ বা ক্যালকাটার নাম পরিবর্তনের সময়ে কি আপনারা (যথার্থ) প্রশ্ন তোলেননি যে এটি শুধুমাত্র ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য মুছে ফেলার প্রয়াস? অথবা নাম পরিবর্তন বাস্তবায়িত হলে প্রশাসনিক স্তরে কত সহস্র জায়গায় পরিবর্তন করতে হবে এবং তার ফলে কত কর্মদিবস নষ্ট হবে তা নিয়েও সে দিন আপনাদের আপত্তির অন্ত ছিল না।
তা হলে আজ সব যুক্তিকে পাশ কাটিয়ে, নাম পরিবর্তনের সমর্থনে, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বা (অ)সাংবিধানিকতার অবতারণা কেন? বম্বে, মাদ্রাজ ভুল করেছে বলেই পশ্চিমবঙ্গকেও তা করতে হবে? অন্তত এই বিষয়ে আপনাদের কাছে একটু নিরপেক্ষতা এবং ধারাবাহিকতা আশা করেছিলাম।
শুভব্রত দাস
মুম্বই-৬৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy