তেলের মাসুল বাড়ায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনব পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করেছেন (‘ই-বাহনে প্রতিবাদ মুখ্যমন্ত্রীর’, ২৬-২)। প্রতিবাদটি বেশ প্রতীকী। ই-বাহনের প্রচলন বেড়েছে। সম্প্রতি অন্য একটি প্রবন্ধেও (‘বাঁচতে হলে বিদ্যুৎই ভরসা’, ২৫-২) একই কথা বলা হয়েছে।
নরওয়ে এমন এক দেশ, যেখানে আধুনিক ই-বাহনের সংখ্যা শতকরা ৫০ ভাগের উপর। ইউরোপ জুড়ে এখন ই-বাহনের ছড়াছড়ি। তবে শতকরা না ধরে শুধু সংখ্যা ধরলে এগিয়ে আছে সেই চিনই— ২০২০-তে প্রায় ১৩ লক্ষ ই-বাহন বিক্রি হয়েছে চিনে। ভারতে ই-বাহনে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ করেছে ভারতীয় রেল, তাদের ডিজ়েল ট্রেন তৈরি বন্ধ করে। বারাণসীর বিখ্যাত ডিজ়েল লোকোমোটিভ কারখানাতেও সম্প্রতি তৈরি হচ্ছে ইলেকট্রিক ট্রেন। দূষণ প্রতিরোধে এবং তেলের ব্যবহার কমাতে এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখের বিষয়, রাস্তায় ই-বাহনের প্রচলন কিন্তু সেই মাত্রায় বাড়েনি। কারণ সম্ভবত চার্জ দেওয়ার পরিকাঠামোর অভাব। এই চার্জিং কেন্দ্রগুলি যদি সৌরবিদ্যুৎ চালিত হয়, তা হলে সহজে কার্যকারিতা বাড়ানো যাবে। কলকাতার রাস্তায় ট্রাম ছিল এক দূষণহীন যান। এখন নবপ্রযুক্তির হাত ধরে ট্রামকে কি পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব? তা হলে ই-বাসের সমান্তরাল আরও একটি পরিবেশ-বান্ধব গণপরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে। এমনকি ট্রামের ডিপোগুলিতেও বড়মাত্রায় চার্জিং কেন্দ্র শুরু করার কথা ভাবা যেতে পারে। এই সব আলোচনা এলেই কেন জানি না, সিঙ্গুরের কথা মনে পড়ে। সেখানে কি ই-বাহন তৈরি করা যেতে পারে?
ভাস্কর বসু
বেঙ্গালুরু
উঠুক নিষেধ
ই-স্কুটারে চেপে সম্মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে যাতায়াতের খবর পড়ে এই চিঠি লিখছি। ই-স্কুটার কিনতে পরিবহণ দফতরের ছাড়ের দরকার হয় না, চালাতে লাইসেন্সেরও দরকার হয় না। তবে সমস্যা হল, রাজ্যের ট্র্যাফিক আইন অনুযায়ী, জাতীয় সড়ক, বিদ্যাসাগর সেতু প্রভৃতি পথে এই রকম গাড়ি চলতে পারে না। আশা করি, এ বার রাজ্য জুড়ে ই-স্কুটার চলাচলের উপর থেকে এমন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে।
শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়
আন্দুল-মৌড়ি, হাওড়া
ভয়ানক ‘ভ্যানো’
তুষার যশের ‘বাঁচতে হলে বিদ্যুৎই ভরসা’ (২৫-২) প্রবন্ধটি সময়োপযোগী। বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে ব্যবহৃত তেল পরিবেশ দূষিত করে, স্বাস্থ্যহানিও করে। বিদ্যুৎ বা ব্যাটারিচালিত মোটরযান চালু করতে সরকার যত তাড়াতাড়ি পরিকাঠামো তৈরি করবে, তত তাড়াতাড়ি মারণ দূষণের হাত থেকে আমরা রক্ষা পাব। লেখক তিন চাকার ‘ভ্যানো’-র উল্লেখ করেননি। এই মোটরচালিত গাড়িগুলি আনাজ বিক্রি আর নির্মাণ সামগ্রী বহনের কাজে ব্যবহার করা হয়। ভ্যানো প্রধানত মোটরসাইকেলের পুরনো ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি, ভেজাল ডিজ়েল বা কেরোসিন দিয়ে চালানো হয়। তাই এরা অন্য মোটরচালিত বাহনের তুলনায় অনেক বেশি দূষণ ছড়ায়। হয় এদের নিষিদ্ধ করা উচিত, নয়তো সরকারের তরফে বিদ্যুৎচালিত করার ব্যবস্থা করা উচিত।
উজ্জ্বল গুপ্ত
কলকাতা-১৫৭
বিদ্যুতেও দূষণ
বায়ুদূষণ কমাতে পরিবহণে বিদ্যুৎশক্তি প্রয়োগের উপযোগিতা বিবেচনা করেছেন তুষার যশ। কিন্তু, বিদ্যুতের উৎসে যদি দূষণ থাকে, তা হলে গোড়ায় গলদ থেকে যাবে। ভারতে তাপশক্তি থেকে ৬১.৫% বিদ্যুৎ আসে। এর মধ্যে কয়লা জ্বালিয়ে ৫৩.১% তৈরি হয়। বাকি শক্তি আসে লিগনাইট (১.৭%), গ্যাস (৬.৬%), ডিজ়েল (০.১%) থেকে। জীবাশ্ম জ্বালানির দূষণ শহরে কমে গেলেও গ্রামে, শিল্প তথা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এটি প্রচুর ব্যবহৃত হচ্ছে। ১.৮% বিদ্যুৎ আসে পারমাণবিক শক্তি থেকে, যার দূষণ ও ঝুঁকি নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। অপরিকল্পিত নদীবাঁধ, পাহাড়ি অঞ্চলে রাস্তা ইত্যাদির মাধ্যমে নদীর স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হওয়ায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাড়ছে। তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তা ছাড়া, জলবিদ্যুৎ বা পারমাণবিক প্রকল্প প্রতিষ্ঠায় প্রাথমিক খরচ অনেক বেশি, রক্ষণাবেক্ষণও ব্যয়সাপেক্ষ। সৌরশক্তি, জৈব উৎস থেকে শক্তি, বায়ুশক্তি, সমুদ্রতাপ শক্তি, ভূ-উত্তাপ শক্তি ইত্যাদি বিকল্প, অচিরাচরিত নানা উৎস দীর্ঘমেয়াদি হলেও তার জোগান কম। গাড়িতে উন্নত সোলার সেল ব্যবহার করা যায়, কিন্তু তা-ও ব্যয়সাপেক্ষ। লেখক প্রবন্ধে যে সব গাড়ির কথা লিখেছেন, তা নিশ্চয়ই এই সব চিরাচরিত ও দূষণ সৃষ্টিকারী শক্তির মাধ্যমে চলবে। পশ্চিমবঙ্গে মোট উৎপন্ন বিদ্যুতের ৯০ শতাংশ আসে কয়লা থেকে। এ ক্ষেত্রে যত বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে, তত দূষণ বাড়বে। ফলে, উষ্ণায়নও বাড়বে।
শুধু গাড়ি নয়, আমাদের দৈনন্দিন ঘরোয়া ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বহু অত্যাধুনিক যন্ত্রের সঙ্গে বৈদ্যুতিন প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত দ্রুত হারে বাড়ছে, যেখানে বিদ্যুৎশক্তির প্রয়োজনও পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। সুতরাং, যানবাহনের ক্ষেত্রে এই বিদ্যুৎশক্তির উৎসে দূষণ কমানো দরকার। গাড়িতে ব্যবহারের জন্য সেই কারণেই উন্নত মানের পেট্রল-ডিজ়েল ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছে।
গাড়ির ইঞ্জিনে প্রযুক্তির ব্যাপারে ভারতে স্টেজ-৬ নিয়মানুযায়ী, সালফার, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ও অন্যান্য হাইড্রোকার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণে আরও কড়াকড়ি করা হয়েছে। অর্থাৎ, এমন দূষণকারী ইঞ্জিন-সহ গাড়িগুলি বাতিল হয়ে যাবে শীঘ্রই। বাড়বে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির চাহিদা।
শুভ্রাংশু কুমার রায়
ফটকগোড়া, চন্দননগর
চাই পরিকাঠামো
তুষার যশের প্রবন্ধটিতে কিছু সংযোজন করতে চাই। নীতি আয়োগ চায় যে, ২০২৫ সালের পর দু’চাকা ও তিনচাকার গাড়ি শুধুমাত্র বিদ্যুৎচালিত হলেই বিক্রি করা যাবে, এই বিধি হোক। ভাল প্রস্তাব। কিন্তু এখনও পর্যাপ্ত চার্জিং পয়েন্ট-এর অভাব রয়েছে। পেট্রল পাম্পগুলিতে বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জিং পয়েন্ট তৈরি করার বিধান ভারত সরকার দিলেও, তা বাধ্যতামূলক নয়। তাই উপযুক্ত ছাড়পত্র নিয়ে গাড়ির চার্জিং পয়েন্ট করার উদ্যোগ দেখা যায় না। যাঁরা বড় দূরত্বের যাত্রার কথা মাথায় রেখে গাড়ি কেনেন, তাঁদের পেট্রল-ডিজ়েলের উপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় থাকে না। ই-বাইক নিয়ে বড় দূরত্বে যাওয়া যায় না, পথে গাড়িকে চার্জ করার উপায় প্রায় না থাকার জন্য। লেখক কলকাতার মধ্যে বিদ্যুৎচালিত বাসের কথা বলেছেন। কিন্তু, শহরের ভিতরেও চার্জিং পয়েন্ট-এর সংখ্যা খুব কম। সরকারি বাস স্ট্যান্ডের চার্জিং পয়েন্টে অসরকারি গাড়ি চার্জ দেওয়ার সুযোগ প্রায় নেই। এর সুরাহা হলে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়বে।
মাল্যবান চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৪১
ফিরুক ভাঁড়
চায়ের দোকান কিনছে প্লাস্টিকের কাপ, ভাঁড়ের ব্যবহার কমছে। ফলে, এক দিকে মৃৎপাত্র নির্মাণশিল্পীরা অভাবের মুখে পড়ছেন, অন্য দিকে দূষণ বাড়ছে। প্লাস্টিক ব্যবহারে নানা বিধিনিষেধ আছে। ৫০ মাইক্রনের কম প্লাস্টিক বিশেষ ভাবে নিষিদ্ধ। চায়ের প্লাস্টিক কাপ সবই তার কম। তবু তা চলে, কারণ সস্তা দর— ১০০ কাপ ১০ টাকা। যেখানে ১০০ ছোট ভাঁড় ৬০ টাকা। সরকার যদি প্লাস্টিক কাপ নিষিদ্ধ না করে, পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে, কুমোরটুলির শিল্পীরাও জীবিকা হারাবেন।
মোহনলাল প্রজাপতি
প্রেসিডেন্ট, পশ্চিমবঙ্গ মৃৎপাত্র নির্মাতা কল্যাণ সংঘ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy