সীমান্ত গুহঠাকুরতার ‘এই দূরদৃষ্টির নামই শিক্ষকতা’ (২৩-১১) পড়ে এক জন শিক্ষক হিসেবে অনুপ্রেরণা পেলাম। এ দেশে ঔপনিবেশিক আমলে যে কেরানি তৈরির জীবনবিমুখ, নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষার সূচনা হয়েছিল, স্বাধীনতার পর প্রায় সাত দশক অতিক্রম করেও তারই অনুবর্তন চলেছে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা করার মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, কী ভাবে পরীক্ষায় সর্বাধিক নম্বর পাওয়া যাবে, তার কৌশল রপ্ত করা। আর শিক্ষকদের কাজ, অতি কম সময়ে যেন তেন প্রকারেণ সিলেবাস শেষ করা। উত্তর সম্পাদকীয়তে বর্ণিত করোনা পর্বে যে শিক্ষকরা অভিনব প্রজেক্ট ওয়ার্কের কাজ করেছেন, তা ভবিষ্যতের সুনাগরিক তৈরির জন্য আদর্শ। কিন্তু এই অসাধারণ কাজগুলি— যেমন, পাখির বাসা পর্যবেক্ষণ করে তার মডেল ছাত্রদের দিয়ে তৈরি করা, বা সচেতনতামূলক নাটক লিখে ছাত্রদের দিয়েই অভিনয় করানো— নিতান্তই ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টা।
অধুনা বিদ্যালয় স্তরের সিলেবাসে প্রজেক্ট ওয়ার্ক বাধ্যতামূলক। এ জন্য ২০ শতাংশ নম্বরও বরাদ্দ। কিন্তু সেখানে ছাত্রদের মৌলিকত্ব বা সৃজনশীলতা দেখানোর পরিবর্তে আগ্রহ থাকে পূর্ণ নম্বর প্রাপ্তি। বাজারচলতি প্রজেক্ট ওয়ার্কের বই দেখে ও ইন্টারনেট সার্চ করে, ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত ছবি সেঁটে ছাত্ররা কাজ করছে। উত্তরাখণ্ডের জনৈক শিক্ষক বলেছেন, “এক জন সহৃদয়, দায়িত্ববান বন্ধুত্বপূর্ণ মানসিকতা-সম্পন্ন ভাল মানুষ হতে না পারলে লিখতে, পড়তে, গুনতে বা যোগ করতে শিখে কোনও লাভ নেই।” এই উপলব্ধি সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থায় সঞ্চারিত হওয়া প্রয়োজন। সে জন্যে বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষায় নম্বর-সর্বস্বতার পরিবর্তে গ্রেডিং পদ্ধতিতে মূল্যায়ন ব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা কেবল নম্বর প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে পড়াশোনা না-করে, সৃজনশীল শিক্ষালাভে সচেষ্ট হবে।
কৌশিক চিনা
মুন্সিরহাট, হাওড়া
শিক্ষার ফাঁক
সীমান্ত গুহঠাকুরতার লেখাটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ। খুঁটিয়ে পড়লে বোঝা যায় প্রথাগত শিক্ষার ফাঁক-ফোকর। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার একঘেয়েমি আর শিক্ষকদের অভিনবত্বহীনতা ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার প্রতি উৎসাহ কমিয়ে দিচ্ছে। প্রকৃতি এবং দৈনন্দিন জীবন থেকে শিক্ষা দান সিলেবাসের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলের শিক্ষা মূলত সিলেবাসভিত্তিক। শিক্ষক চাইলেও সৃজনশীল পদ্ধতিতে শেখানোর সুযোগ নেই বললেই চলে। অনলাইন পঠন-পাঠনে সে সুযোগ আরও কমেছে। পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষার ভিত্তি শক্ত করতে শিক্ষকতায় এই দূরদৃষ্টি জরুরি।
সুমন চক্রবর্তী
কলকাতা-৬৫
ঠিক পদ্ধতি
শিক্ষাদানের যে দু’টি নমুনা লেখক সীমান্ত গুহঠাকুরতা তুলে ধরেছেন, তা অনবদ্য। সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষাদানের যথার্থ পদ্ধতি আমরা অনেকেই জানি না, কিছু কিছু ক্ষেত্রে জেনেও তা প্রয়োগ করার প্রয়োজন মনে করি না। হাতে-কলমে প্রজেক্ট তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। যা পড়ুয়ারা নিজের চোখে দেখছে, তাই নিয়ে তাদের কৌতূহল এবং উৎসাহ জাগে। এর মাধ্যমে তারা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ করাকেও গুরুত্ব দিতে শেখে। কিংবা যে প্রধান শিক্ষক বাসা ভেঙে পড়ে-যাওয়া পাখির ছানাকে দু’হাতে আঁকড়ে বাঁচিয়ে রাখেন, তাঁর ছাত্রছাত্রীরা তো সঠিক শিক্ষাই লাভ করবে। সত্যিই যদি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেত, তা হলে আমাদের দেশের উন্নয়ন ঘটত। রবীন্দ্রনাথ এভাবেই প্রকৃতির মাঝে শিক্ষাদানকে পছন্দ করতেন।
কুহু দাস
কলকাতা-৭৬
‘কমন’
‘কমন’ কথাটি ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকমহলে বেশ জনপ্রিয়। গত বছর ফাইনালে যে প্রশ্ন এসে গিয়েছে, সেই প্রশ্ন ঠিক পরের বছরেই সাধারণত পড়ে না। তাই সেই বিষয়গুলি বাদ দিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হয় ছাত্রছাত্রীরা। ‘সাজেশন’-এর প্রশ্নগুলি পরীক্ষায় এসে গেলে তাকে ‘কমন’ বলা হয়। কে কত বেশি ‘কমন’ দিতে পারে, এই নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চলে ঠান্ডা লড়াই। কিন্তু, বৃহত্তর অর্থে শিক্ষাব্যবস্থায় ‘সাজেশন’ বা ‘কমন’ ধরে পড়াশোনা করা কতটা শিক্ষা সহায়ক, তা ভাবা দরকার।
শঙ্খ অধিকারী
সাবড়াকোন, বাঁকুড়া
টেস্ট হোক
মাধ্যমিক পরীক্ষা কবে হবে, এখনও জানা গেল না। কিন্তু জানা গেল যে, টেস্ট হবে না। ফলে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকেরাও সমান উদ্বেগে। জীবনের প্রথম সোপানে পদার্পণের কোনও মহড়া না হলে উদ্বিগ্ন হওয়ারই কথা। টেস্ট না হলে দশমে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা জানতেই পারবে না, মাধ্যমিকে কেমন ধরনের প্রশ্ন হবে, কী ভাবে তার উত্তর লিখতে হবে, কোন অংশ বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। অনলাইনে এই ধরনের সুযোগ অতি অল্প সংখ্যক ছেলেমেয়েই পেতে পারে।
এই অবস্থায় সংক্ষেপে, অর্থাৎ, ৫০ নম্বরের হলেও স্কুল, অথবা কোনও শিক্ষক সংগঠনের করে-দেওয়া প্রশ্নের মাধ্যমে টেস্ট-এর ব্যবস্থা করা হোক। এতে ছেলেমেয়েদের মনোবল বাড়বে। প্রস্তুতিতে কোথায় ঘাটতি আছে, তা তারা বুঝতে পারবে। তা না হলে ওদের মধ্যে আশা থাকবে যে, মাধ্যমিকেও ঢালাও পাশ করিয়ে দেওয়া হবে। এতে লেখাপড়ায় খামতি থেকে যাবে, অথবা হতাশা আসবে। মাধ্যমিকে পাশের হার ১০০% হলে গোটা পরীক্ষাটাই প্রহসনে পরিণত হবে। এদের জীবনে যে ঘাটতি থেকে যাবে, কোনও দিনও তা পূরণ হবে না। উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য।
শংকর কর্মকার
হালিশহর, উত্তর ২৪ পরগনা
স্কুলে সোলার
সরকারি, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এবং সরকার পোষিত বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রছাত্রীদের থেকে বছরে ইলেকট্রিক ফি নেওয়া হয় অতি সামান্য। প্রতি মাসে ইলেকট্রিকের বিল মেটাতে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অন্যান্য ফান্ড থেকে টাকা দিয়ে তবেই ইলেকট্রিক বিল মেটানো হয়। এ কথা অনস্বীকার্য যে, ইতিমধ্যেই সরকারি উদ্যোগে পঞ্চায়েত এবং পুর এলাকার বহু বিদ্যালয়ে সোলার প্যানেল বসানো হয়ে গিয়েছে। তবে এখনও বহু বিদ্যালয় এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়ে গিয়েছে। রাজ্যের সমস্ত বিদ্যালয়েই সৌর প্যানেল বসানোর ব্যবস্থা করা হোক।
তাপস দাস
সিঙ্গুর, হুগলি
প্রচারের আড়ালে
করোনার করাল গ্রাসে কত পরিবার যে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে, তার হিসেব নেই। মানবিকতার তাগিদে অনেক সংস্থা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমার পাশের পাড়ার এমনই একটি প্রচারবিমুখ সংস্থা নীরবে অনুদান জুগিয়ে যাচ্ছে ১২টি দরিদ্র পরিবারকে। সাবান, মাস্ক, স্যানিটাইজ়ারের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা করে দিচ্ছে সেই মে মাস থেকে। পুজোয় অতিরিক্ত ১০০০ টাকা দিয়েছে। আগামী মাসে নাকি কম্বলও বিতরণ করা হবে। এটি প্রবীণ মানুষদের একটি মিলিত প্রয়াস। সমাজের কাজে নিবিষ্ট এমন মানুষদের খোঁজ ক’জন রাখে?
নারায়ণ সাহা
কলকাতা-৮৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy