ফাইল চিত্র
সম্রাট বাবর মন্দির ভেঙে মসজিদ গড়েছিলেন কি না, তা আমরা দেখিনি। কিন্তু দেখলাম, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে একটা ৪৫০ বছরের পুরনো মসজিদকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। সুপ্রিম কোর্ট সেই কাজকে ঘোর অন্যায় বলে রায়ও দিল। কিন্তু সিবিআই-এর বিশেষ আদালত নির্দোষ বলে অব্যাহতি দিল সকল অভিযুক্তকে। তা হলে মসজিদ কি নিজে থেকেই ভেঙে পড়েছিল? সে দিন গাঁইতি, শাবল, কুঠার নিয়ে যারা গম্বুজের উপর চড়ে সেটিকে মাটিতে মিশিয়ে দিল, তারা কি ভিন্গ্রহের প্রাণী ছিল? না কি আমাদের চোখের ভ্রম? আদালত বলল, ওটা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষ। পূর্ব পরিকল্পিত নয়। তা হলে কি এবার থেকে জনরোষের ফলে কোনও অন্যায় সংগঠিত হলে তার বিচার হবে না? বাবরি মসজিদ ধ্বংসের আগে আডবাণীর নেতৃত্বে যে হিংসাত্মক রথযাত্রা হল, যেখান থেকে আওয়াজ উঠল ‘মন্দির ওহি বনায়েঙ্গে’ বা মসজিদ ধ্বংসের দিন যখন ওখানে উপস্থিত নেতাদের মঞ্চ থেকে স্লোগান উঠল, ‘এক ধাক্কা অউর দো, বাবরি মসজিদ তোড় দো’ সেটা কি পূর্ব পরিকল্পনার অংশ ছিল না?
বাকি রইল সিবিআই-এর ভূমিকা। আদালত বলল, সিবিআই উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে পারেনি। যে তথ্য বা ভিডিয়ো ফুটেজ দেওয়া হয়েছে, তা নাকি অসঙ্গতিপূর্ণ ও ভুলে ভরা। তা হলে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে তদন্তের পর সিবিআই কি কোনও পোক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ পেল না? তা-ও এমন কাজের, যেটা জনগণ প্রত্যক্ষ করেছেন এবং যে কাজটা অভিযুক্তদের অনেকেই প্রকাশ্যে গর্বের সঙ্গে স্বীকার করেছেন?
মোহাম্মদ আবু সাঈদ, বেলডাঙা, মুর্শিদাবাদ
মূল্যায়ন হবে
পাঁচশো বছর আগে বাবর মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি করেছিলেন— এর প্রমাণ বিচারকরা খুঁজে পান, কিন্তু মাত্র ২৮ বছর আগে কয়েকশো করসেবক, বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, দেশি ও বিদেশি সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতে বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিলেন, তার প্রমাণ বিচারকরা দেখতে পেলেন না। সে দিন জঙ্গি করসেবকদের আক্রমণে প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিকের রক্তাক্ত মুখের ছবি আমি আজও যেন দেখতে পাই। এই সাংবাদিক ভারতকে স্বদেশভূমি জ্ঞানে শ্রদ্ধা করতেন। বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জমির মালিকানা-সংক্রান্ত মামলায় গত বছর নভেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তার নিরিখে দেখতে গেলে সিবিআই-এর বিশেষ আদালতের রায় উচ্চতম কোর্টের বিচারধারার পদাঙ্ক অনুসরণকারী মাত্র। এর পরে যোগ হবে কাশী, মথুরা পর্ব। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অতীতে কাশ্মীরের জনৈক হিন্দু রাজা এক হাজারেরও বেশি হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছিলেন। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদদের মতে, বাবরি মসজিদ এক সময় বৌদ্ধ স্তূপ ছিল।
সোজা কথায়, আধুনিক ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রটিকে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে বুক ফুলিয়েই। কিন্তু রামমোহন, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গাঁধীর ভারত এই কদাচারকে প্রতিহত করবে। আজ রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে যারা কালিমালিপ্ত করছে, ইতিহাস এক দিন তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করবেই।
সুদীপ সরকার, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
পরাজয়
বিশেষ সিবিআই আদালতের রায় প্রসঙ্গে সম্পাদক (‘দোষ কাহারও নহে’, ১-১০) লিখেছেন, ‘বিচারে তাই ভারত নামক বহুত্ববাদী, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পরাজয় ঘটিল।’ আরও দুর্ভাবনার বিষয় যে, এই পরাজয়ের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। ভারতের বাইরেও বিভিন্ন দেশে নানা ধর্মাবলম্বী ভারতীয় আছেন। তাঁদের আবেগ, পরম্পরা, জীবনশৈলী, পারস্পরিক সুসম্পর্কের বিষয় আছে। অর্থনীতির কথাও ভাবতে হবে। ভারতে বিনিয়োগের অনেকটা নির্ভর করে ভারতের রাজনৈতিক স্থায়িত্ব, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক দূরদর্শিতার ওপর। এই সব জায়গায় ভারতের ভাবমূর্তির পরাজয় হল।
বিশেষ করে মন্দার বাজারে এই পরাজয়ের ফলে যে ক্ষতি হল, তা সামলাতে ভরসা উচ্চতর আদালত। দীর্ঘ ২৮ বছর পর আবার যে প্রক্রিয়া শুরু হবে, তার রায় প্রকাশ যদি এমন বিলম্বিত হয়, সেও এক পরাজয়। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আবহে এই রায় ব্যতিক্রমী হবে, আশা করিনি। কিন্তু যে কারণে ব্যতিক্রমী হল না, তা নিয়ে ভাবনা বেড়ে গেল। ‘‘হিন্দুরাষ্ট্রের ভিতে কাঠামোটি আত্মবলিদানই করিয়াছিল!’’ সম্পাদকীয় মূল্যায়ন এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
স্বতঃস্ফূর্ত
যখনই কোনও আদালতের রায় সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, তখনই রাজনৈতিক দলগুলি এবং সহযোগী কিছু সংবাদপত্র বিচারব্যবস্থার প্রতি আঙুল তোলে। অবান্তর প্রশ্ন তুলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। ‘দোষ কাহার নহে’ সম্পাদকীয় প্রতিবেদন তারই দৃষ্টান্ত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘রাম নামক কোনও চরিত্র আদৌ কখনও ছিলেন কি না; থাকিলেও, অযোধ্যার বিতর্কিত পরিসরটিতেই তাঁহার জন্ম কি না; হইলেও, সেইখানেই মন্দির গড়া আবশ্যক কি না— সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে ছিল একটি সত্য: ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় একটি ঐতিহাসিক মসজিদ ধ্বংস করা হইয়াছিল।’’ কথাটা সত্যি। কিন্তু আরও বড় সত্য হল, ওই মসজিদটি কোনও একটি মন্দিরকে ধ্বংস করে তার উপর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের নীচে যে কাঠামোর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছিল, তা রামমন্দিরের না হোক, মুসলিম স্থাপত্যের কাঠামো যে নয়, তা প্রমাণিত। যার উপর ভিত্তি করে সুপ্রিম কোর্ট রামমন্দিরের পক্ষে রায় ঘোষণা করেছে। এর পর বাবরি মসজিদ ভাঙার জন্য কারা প্ররোচিত করেছিল, কে দায়ী, এই সব প্রশ্ন নিয়ে বিচারব্যবস্থার প্রতি আঙুল তোলা অনভিপ্রেত। সমাজকে নতুন করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর। বাবরি ধ্বংসের জন্য কারও প্ররোচনা বা চক্রান্তের প্রয়োজন ছিল না। পুঞ্জীভূত অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছিল মাত্র।
মিহির কানুনগো, কলকাতা-৮১
ভারতমাতার রূপ
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ছবি ভারতবাসীর চোখে আজও ভাসছে। ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতীয় সংবিধানের মূল প্রতিপাদ্য। সংবিধান-প্রণেতাগণ নিশ্চয়ই এই রকম ভবিতব্য আশা করেননি। ভারতমাতার রূপ আগে কী ছিল, এখন কী হয়েছে, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কবলে পড়ে আগামীতে কী হবে, সেই চিন্তা হচ্ছে। বিজেপির যে নেতানেত্রীরা প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন, তাঁরা আদালতের বিচারে বেকসুর খালাস পেলেন। এই বার্তা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতাকে যথেষ্ট আঘাত দিয়েছে এবং বৈষম্য তৈরি করেছে। এ এক কঠিন ব্যাধি।
মনশ্রী চৌধুরী, কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
হারানো মানুষ
মহামান্য শীর্ষ আদালতের নির্দেশে এক দিকে রামমন্দির স্থাপনে আইনত সিলমোহর পড়ল, অন্য দিকে বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় অভিযুক্তরা বেকসুর খালাসও পেলেন। এবার হয়তো তাঁদের ‘ভারতরত্ন’ পুরস্কারেও সম্মানিত করা হবে। তার পরেও কি একটা প্রশ্ন থেকে যায় না? এই মসজিদ ধ্বংসকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে দাঙ্গা ও হত্যা হয়েছিল, তার দায় কার উপর বর্তায়? সেই সব হারিয়ে-যাওয়া মানুষের জীবন ও ক্ষয়ক্ষতি কে পরিশোধ করবে?অবশ্য রাষ্ট্রনেতারা এমন ক্ষয়ক্ষতিকে ‘আনুষঙ্গিক ক্ষতি’ (কোল্যাটারাল ড্যামেজ) বলেন।
প্রসেনজিৎ সরকার, ফ্লোরিডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy