‘রাজনীতির বড় বাজার’ (সম্পাদকীয়, ২২-১২) প্রসঙ্গে বলতে চাই, নীতি-আদর্শ-দায়বদ্ধতা শব্দগুলি আজ রাজনীতি থেকে অবলুপ্ত। পাল্লা যে দিকে ভারী, সেই দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা-মন্ত্রী নাকি আগামী দিনে বিজেপিতে যোগদান করবেন। প্রশ্ন জাগে, রাজনীতি মানে কি শুধুই ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করা? সাধারণ মানুষের কাছে কোনও দায়বদ্ধতা থাকতে নেই?
তিন দশকের বেশি সময় ধরে এ রাজ্যে ক্ষমতাসীন ছিল বামফ্রন্ট। বিরোধী কংগ্রেস দলের কোনও নেতা বা বিধায়ককে বামফ্রন্টে যোগদান করতে দেখা না গেলেও ‘তরমুজ নেতা’ কথাটির উদ্ভব ওই সময়েই। এর পর বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেই রেজ্জাক মোল্লার মতো হেভিওয়েট বাম নেতার হাতেও ধরিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের পতাকা। এর পর উদাহরণের তালিকা শুধু দীর্ঘ হয়েছে মাত্র। শুধু তিনি টের পাননি যে, তাঁর দলেও ভিতরে ভিতরে জন্ম নিয়েছে ঘুণপোকা। এটাই তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব। তিনি ভুলেই গেলেন, তাঁর প্রতিপক্ষ বামফ্রন্ট নয়, বরং এমন একটি রাজনৈতিক দল, যারা সর্বভারতীয় ও সংখ্যার বিচারে কম আসন পেলেও বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতাসীন থাকার কৌশল ও দক্ষতায় সিদ্ধহস্ত। গোয়া, মণিপুর, মিজোরাম তার উদাহরণ।
বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, এই রক্তক্ষরণ হয়তো আরও বাড়তেই থাকবে। শুভেন্দু, বিশ্বজিৎ, শীলভদ্রের পর আর কে— এর চেয়েও এখন প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, ভোট চাইতে গেলে জনগণ না নেতাদের প্রশ্ন করে বসেন, “কত টাকায় রফা হলে আপনি আবার বিক্রি হবেন?”
রাজা বাগচি
গুপ্তিপাড়া, হুগলি
শূন্য থাকে না
‘রাজনীতির বড় বাজার’ নিবন্ধের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলতে চাই, ২০১৬ সালে মালদহ ও জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদও যথাক্রমে কংগ্রেস ও বামেদের দখলে ছিল। বিধানসভায় জেতার পর একাধিক সদস্যকে দলবদল করিয়ে এই দুই জেলা পরিষদের দখল নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। আসলে, গণতন্ত্রে বিরোধীশূন্য বলে কিছু হয় না। আজ তাই রাজ্যকে বিরোধীশূন্য করতে গিয়ে যাঁদের উপর ভরসা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁরাই বিরোধী শিবিরে যোগ দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন। ক্রিয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়া।
তৃণমূলের ২১ জুলাই সমাবেশ এলে সবাই অপেক্ষা করত কোন কোন বিরোধী দলের নেতা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন জানতে। সভা থেকে কোনও রাজনৈতিক বার্তা পাওয়া যেত না। শিলিগুড়ি গেলেই মমতার কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইতেন, বামেদের দখলে থাকা শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ ও পুরসভা কবে দখল করা হবে। যা এই রাজ্যে বেনজির। এই ধরনের দেউলিয়া রাজনীতি সাধারণ মানুষকে রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে। দলত্যাগ নিবারণে কড়া আইন প্রয়োজন।
অভিজিৎ ঘোষ
শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
বিকিকিনি
‘রাজনীতির বড় বাজার’ বেশ উষ্ণতা দিল! আগেকার দিনে কলকাতার ময়দানে ফুটবলের দলবদলে রীতিমতো রোমাঞ্চকর কাহিনি থাকত, খেলোয়াড়-শিকারির দল একেবারে অন্দরমহলে ঢুকে হানা দিত! এখন বাংলার রাজনৈতিক বাতাবরণে সেই গন্ধ, তবে রোমাঞ্চ নেই! কেমন যেন নৈতিকতার বাঁধনছাড়া পদস্খলন! দল ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে সংসার ভেঙে যাওয়ার কান্না! রাজনৈতিক দলবদলের দু’টি ব্যাপার লক্ষণীয়। দলে কেউ এলে ‘স্বাগতম’, আর দল ছেড়ে চলে গেলে ‘বিশ্বাসঘাতক’!
বাংলায় রাজনৈতিক দলবদলের যেন উৎসব চলছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দলবদল রুখতে দফায় দফায় সমঝোতার চেষ্টা, মানে আদায় করে নেওয়ার ফর্মুলা প্রয়োগ! বলতে দ্বিধা নেই যে, এত দিন ধরে এই দলবদলের ক্ষীর খাওয়া শাসক দলের বদহজম এখন শুরু হয়েছে, অসুস্থতা বাড়ছে! আর কী কী বিকিকিনির পসরা দেখা যাবে, কে জানে!
বিশ্বজিৎ কর
কলকাতা-১০৩
প্রশ্নহীন
দলবদলের রাজনীতির কুৎসিত ছবিগুলো একের পর এক প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে। আজ শাসক দলে দুর্নীতিগ্রস্ত, অপাঙ্ক্তেয় যাঁরা, বিরোধী শিবির তাঁদেরই স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। এক দলের চোর, দাগি আসামিও অন্য দলে গিয়ে সাধু বনে যাচ্ছে রাতারাতি। পুরনোদের আড়ালে রেখে দলে বিশেষ পদও জুটে যাচ্ছে তাদের। এবং আগামী ভোটে টিকিটও মিলতে পারে।
জনগণের মুখে কোনও প্রশ্ন নেই। শুধুমাত্র নীরব দর্শকের ভূমিকায় তাঁরা। তাঁদের এই অসহায়তা কেমন করে দূর হবে, বা আদৌ কোনও দিন তা সম্ভব হবে কি না, এর উত্তর জানা নেই পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কারও!
শক্তিশঙ্কর সামন্ত
ধাড়সা, হাওড়া
সময় বুঝে
তৃণমূলের মন্ত্রী তথা বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী দলবদলের সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল বেশ কয়েক বছর কোনও কাজ করেনি, এই আমলে কোনও উন্নয়ন হয়নি, এমনকি কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির সুবিধা থেকে রাজ্যবাসীকে বঞ্চিত করেছে শাসক দল। এই অভিযোগ তিনি এত দিন পদে ও দলে থাকতে কেন করেননি? সত্যিই যদি রাজ্যে উন্নয়ন না হয়ে থাকে, তার জন্য প্রয়োজনীয় অনুরোধ কেন পেশ করেননি মন্ত্রিসভা, বা দলীয় বৈঠকে? তাঁর সঙ্গে অমিত শাহ তথা বিজেপির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল গত ৬ বছর ধরে, এ কথা প্রকাশ্যে জানানোরই বা কী দরকার ছিল? তার অর্থ, তিনিও অন্য নেতা, মন্ত্রী ও রাজনীতিকদের ন্যায় মিথ্যাচারকেই আশ্রয় করলেন। অন্য দিকে, তৃণমূলে পদস্থ নেতা-মন্ত্রীরা তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’, ‘অসৎ’ বলে দাবি করছেন। বলা হচ্ছে, তিনি অন্তর্ঘাতে জড়িত ছিলেন, দলের হয়ে কোনও কাজ করেননি। তা হলে, এই অভিযোগ তাঁরা দল ছাড়ার আগে কেন আনেননি, শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই বা কেন গ্রহণ করেননি? বোঝাই যাচ্ছে, দু’পক্ষ একই দোষে দোষী।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
বঙ্গবন্ধু
তানভীর মোকাম্মেলের ‘ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সন্ধানে’ (১৯-১২) অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের জননায়ক মুজিবুর রহমান, যিনি ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে পরিচিত, তিনি মনে করিয়েছিলেন যে, ১৬ ডিসেম্বর বিদেশি শাসন, শোষণ ও নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তিলাভ করে নতুন দেশ বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। দীর্ঘ দিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের সমাপ্তি হল, কিন্তু আরও কঠিন সংগ্রামের সূচনা হল—দেশ গড়ার কাজ।
৭ জুন ১৯৭২ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানের অসাম্প্রদায়িক দর্শনের প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বলেছিলেন যে, “বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান মুসলমানের ধর্ম পালন করবে। হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে। খ্রিষ্টান তার ধর্ম পালন করবে। বৌদ্ধও তার নিজের ধর্ম পালন করবে। এ মাটিতে ধর্মহীনতা নাই, ধর্মনিরপেক্ষতা আছে। এর একটা মানে আছে। এখানে ধর্মের নামে ব্যবসা চলবে না। ধর্মের নামে মানুষকে লুট করে খাওয়া চলবে না। ধর্মের নামে রাজনীতি করে রাজাকার, আল-বদর পয়দা করা বাংলার বুকে চলবে না, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।”
সৌপ্তিক অধিকারী
সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy