অবসর গ্রহণের পর বাড়িতেই থাকি। প্রথম দিকে আশ্চর্য লাগত, প্রতি বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে ১টায় আশপাশের বাড়ি থেকে শঙ্খ আর উলুধ্বনি কেন? সন্ধান করে জানলাম, সন্ধের সময় গেরস্ত বাড়ির লক্ষ্মীরা টিভি সিরিয়ালে মগ্ন থাকেন। তাই লক্ষ্মীবারের বন্দনাটুকু দুপুরেই সেরে নিচ্ছেন। কথাটা মনে পড়ল ‘আমাদের সন্ধেপুজো’ (৮-১১) নিবন্ধটি পড়তে পড়তে। সিরিয়াল কোন পথে ধাবিত হবে, কতগুলি প্রেম, সেমি-প্রেম, বিচ্ছেদ এবং মৃত্যু ঘটবে, সে সব সিরিয়ালের শুরুতে রচয়িতা কেন, ঈশ্বরও বলতে পারবেন না। মৃত চরিত্রকে বাঁচানো যায় না— এইটুকু মাত্র কাহিনিগুলিতে মান্য করা হয়। এখন প্রশ্ন হল, কাহিনির গতি নির্ধারণ করে কে? দর্শক, না কি সিরিয়াল নির্মাতা? নিবন্ধটিতে দর্শকের দিকে পাল্লা ভারীর ইঙ্গিত থাকলেও, ‘ঘোড়া আগে না গাড়ি’ এই বিতর্কের অবকাশ থেকেই যায়।
পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি সময় ধরে সিরিয়াল দেখেন— নিবন্ধে উল্লিখিত এই বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন। এখনও পর্যন্ত আমাদের মেয়েরাই বেশির ভাগ ঘর সামলান, অনেক বেশি সময় ঘরে থাকেন। তাই তাঁদের দেখাটাই হয়তো চোখে পড়ে বেশি করে। কিন্তু তুলনাটা ওই ভাবে করলে ভুল হবে। পুরুষ বা নারী যিনিই হন, দেখতে হবে প্রাপ্ত অবসর সময়ের কত ভাগ সময় তিনি টিভি সিরিয়ালের পিছনে ব্যয় করছেন। বাড়ির পুরুষটি হয়তো টিভি-সেটের সামনে বসেন না। তাঁর সিরিয়াল-দর্শন স্মার্টফোনে। ট্রেনে-বাসে যাত্রাকালে তিনি হয়তো শাশুড়ি-বৌমার কাজিয়ার বদলে ক্রাইম কি গোয়েন্দা সিরিয়াল দেখতে পছন্দ করেন। আসল হিসেবটা কী দাঁড়াল তা হলে? সমীক্ষাটা হোক সকলকে নিয়ে।
বিশ্বনাথ পাকড়াশি
শ্রীরামপুর, হুগলি
অবাস্তব
অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আমাদের সন্ধেপুজো’ মহিলাদের মনের কথা বলে দিয়েছে। যখন মধ্যবিত্ত পরিবারে টেলিভিশনের প্রবেশ ঘটেছিল, তখন একটা বিপ্লব হয়েছিল। এত চ্যানেল ছিল না, ছিল শুধু দূরদর্শন। সারা দিনের কাজ সেরে মা-কাকিমারা তাঁদের মনের খোরাক পেতেন। বাবা-কাকারাও গলা খাঁকারি দিয়ে, ‘‘আজকে তেরো পার্বণ আছে না?’’ বলে টিভির সামনে এসে বসতেন। কী ভাল ভাল সিরিয়াল হত তখন, বিখ্যাত সাহিত্যিকদের লেখা নিয়ে। ক্রমে সিরিয়ালগুলোর মান তলানিতে ঠেকেছে। অবাস্তব ঘটনা, চড়া মেক-আপ, অপটু অভিনয়। হাসি পায় দেখে, যে মেয়ের আইনপাঠই দেখানো হয়নি, হঠাৎ সে বিচারপতি হয়ে গেল। মানছি, শিল্পে স্বাধীনতা আছে। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে যোগ থাকবে না? প্রায়ই দেখি, কাহিনিতে এক জনের একাধিক স্ত্রী, তারা একসঙ্গেই থাকছে। আছে বশীকরণ, স্মৃতিভ্রংশ হয়ে ফিরে পাওয়ার মতো হাস্যকর উপাদান। অথচ, ঠিক ভাবে ব্যবহার করলে টিভি সিরিয়াল নারী জাগরণের মাধ্যম হতে পারত।
সর্বানী গুপ্ত
বড়জোড়া, বাঁকুড়া
সবাই তঞ্চক?
অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করেছেন ‘‘পুরুষদের যে সিরিয়ালে ঘোরতর অরুচি তা নয়, তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, সিরিয়ালের সিংহভাগ দর্শক মেয়েরাই।’’ স্মরণে থাকার কথা, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে রামায়ণ-মহাভারত সিরিয়ালের জনপ্রিয়তার ইতিহাস। বর্তমানে দু’টি ধারাবাহিকে এই বাংলার দুই প্রবাদপ্রতিম নারীর কাহিনি পুরুষ দর্শকও আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করছেন।
কিন্তু বেশির ভাগ সিরিয়ালে অতিরিক্ত নাটকীয়তা, যৌথ পরিবারের সদস্যদের অকারণ খুনসুটি, সাদামাটা ভালমানুষ গৃহকর্তা, ঠিক বিপরীত মেরুতে তাঁর স্ত্রী, যিনি বাড়ির বৌয়ের প্রতি অবিরাম কলকাঠি নেড়ে চলেছেন... উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই। দর্শকেরা বিনোদনের নামে এই কুখাদ্য নির্বিচারে গিলছেন। এই সে দিন পর্যন্ত বাড়িতে সান্ধ্য-অতিথি এলে মহিলাদের মুখ বেজার হত। কারণ, তখন জনপ্রিয় সিরিয়ালের সময়। এখন না হয় অতিমারির কারণে বাড়িতে অতিথি সমাগম শূন্য।
লেখিকার ‘ক্ষেত্রসমীক্ষা’ প্রমাণ করে, শিক্ষিতা, সুপ্রতিষ্ঠিতা মহিলারাও স্রেফ বিনোদনের জন্য এই সব সিরিয়াল দেখেন। তা দেখুন। শুধু দৈনন্দিন সংসারে তার ছাপ না পড়লেই মঙ্গল। সব স্বামীকেই তঞ্চক ভাবলে মুশকিল। বহুগামিতা, নকল বিবাহ, প্রেমহীন বিবাহ, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক অধিকাংশ পুরুষও সমর্থন করেন না। সিরিয়াল প্রযোজক এবং নির্দিষ্ট চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ভুল বার্তা প্রদানে বিরত হলে, সমাজের পক্ষে তা মঙ্গলজনক।
ধ্রুবজ্যোতি বাগচি
কলকাতা-১২৫
রুটিনের বলি
ছোটবেলায় মাছি-মারা কেরানির গল্পটা পড়েননি, এমন মানুষ কমই আছেন। আমরা হয়তো নব প্রজন্মকে সেই মাছি-মারা কেরানিই তৈরি করতে চাইছি। বাঁধাধরা রুটিনে উন্মুক্ত চিন্তার পরিসর নেই বললেই চলে। সকালে ঘুম থেকে ওঠা দিয়ে শুরু করে রাত্রিতে ঘুমোতে যাওয়া— পুরো সময়টাই যেন শিশুরা এক-একটা যন্ত্রচালিত মানব। তাদের যা করতে বলা হয়, তার বাইরে ভাবার বা করার সাহস ও ইচ্ছা, দু’টিই বিলুপ্তির পথে। বিষয়ভিত্তিক গৃহশিক্ষক, ছাত্রবন্ধু, ইন্টারনেটে নানা রকম অ্যাপ, সবই মজুত। এ যুগে নিজেকে চিন্তা করতে হয় না। কোনও প্রশ্নের উত্তর ভাবার আগেই প্লেটে সাজানো মিষ্টির মতো পরিবেশন করা হয়। এই ভাবে যদি চলতে থাকে, তা হলে সমাজ থেকে ‘বিবর্তন’ শব্দটা হারিয়ে যেতে বেশি সময় লাগবে না।
প্রদীপ কুন্ডু
বৈদ্যবাটি, হুগলি
শতবর্ষে সুবিনয়
রবীন্দ্রনাথের গান বিশুদ্ধ সুরে, ভাবসম্পদে সমৃদ্ধ করে শ্রোতার কানে ও মর্মে পৌঁছে দিতে পারেন, এমন গায়কের সংখ্যা বরাবরই বেশ কম। রবীন্দ্রনাথের কঠিন তালে বাঁধা গান, ও ব্রহ্মসঙ্গীতগুলি চর্চা এবং প্রচারের অভাবে ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই সব গান গাওয়ার মতো শিল্পীর অভাবও প্রকট। এখনকার জনপ্রিয় শিল্পীরা প্রেম ও পূজা পর্যায়ের বহুশ্রুত কিছু গানের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথের শ’তিনেক গান ঘুরে-ফিরে রেকর্ড হচ্ছে। বাকি গান গীতবিতান-এর পাতায় ‘পাঠ্যবস্তু’ হয়ে রয়ে যাচ্ছে। একমাত্র সুবিনয় রায় ব্রহ্মসঙ্গীতের প্রচারে সতত নিষ্ঠাবান ছিলেন। কঠিন আয়াসে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অবলুপ্তপ্রায় এই ধারাটিতে প্রাণসঞ্চার করেছিলেন। তাঁর শতবর্ষে স্মরণ করি, তাঁর কাছে আমাদের অশেষ ঋণ।
উৎপল মুখোপাধ্যায়
চন্দননগর, হুগলি
জনপ্রিয়?
প্যান্ডেল হোক বা অনুষ্ঠান হোক, সুবিনয় রায়ের গান বাজতে কোনও দিন কেউ শুনেছেন? ভাগ্যিস কিশোরকুমার, আশা ভোঁসলেরা ছিলেন, তাই রবীন্দ্রসঙ্গীত নিচু স্তরে পৌঁছল, জনপ্রিয় হল।
সৌগত বাগচি
ইমেল মারফত
রাধানাথের ছবি
‘পত্রিকা’ ক্রোড়পত্রে রাধানাথ শিকদারকে নিয়ে লিখেছেন আবাহন দত্ত (‘প্রথম স্বদেশি বিজ্ঞানী’, ১০-১০)। বিস্ময়কর এই যে, তার সঙ্গে ছাপা হল রাধানাথের অভিন্নহৃদয় বন্ধু প্যারীচাঁদের মিত্রের একটি যুবা বয়সের ছবি! সে নিয়ে না ছাপা হল সম্পাদকীয় সংশোধনী, না কোনও পাঠকের চিঠি! প্যারীচাঁদের এটি একটু অল্প পরিচিত ছবি বটে, কিন্তু এটি যে প্যারীচাঁদের ছবি, সেটি তো সাহিত্য পরিষৎ প্রকাশিত প্যারীচাঁদের ইংরাজি রচনাবলি-সহ প্যারীচাঁদকে নিয়ে লেখা আরও অনেক বইতেই আছে।
শ্রুত্যানন্দ ডাকুয়া
সুতাহাটা, হলদিয়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy