‘প্রচারে ঋত্বিক কেন, আপত্তি পরিবারের’ (২৫-১২) প্রতিবেদন পড়ে মনে হল, ইতিহাসের irony একেই বলে। ঋত্বিক ঘটক সারা জীবন যে-অাদর্শ, যে-মূল্যবোধের পক্ষে লড়াই করে এলেন, আজ তার একেবারে বিরোধী আদর্শ, বিরোধী মূল্যবোধের লোকেরা, তাঁরই কাজকে ব্যবহার করতে চাইছে নিজেদের স্বার্থে। বিজেপির যুব মোর্চা তাদের প্রচারে ঋত্বিকের ছবিকে কাজে লাগাবে, ভাবতেই কেমন লাগে! কিন্তু মুশকিল হল, যে কোনও মহৎ শিল্পীর কাজকেই, নিজের মতো করে বিশ্লেষণ করার পূর্ণ অধিকার শিল্প-ভোক্তার রয়েছে। যুগে যুগে ‘আইকনিক’ শিল্পকে নতুন, এমনকি বিপরীত ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যবহার করার অধিকারকে স্বীকার না করলে, তা হবে গোঁড়ামির শামিল। আর যে কোনও শিল্প-আস্বাদনের সবচেয়ে বড় শত্রু হল গোঁড়ামি।
অমিয় বসাক
কলকাতা-৩৩
যা চলছে
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে ভারতীয় জনতা পার্টি যে ডুমুরপাতার মতো টিকে থাকা সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করল, তা কি একান্তই জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজনীয় ছিল? তার ফলে চার মাস ধরে যে অচলাবস্থা কাশ্মীর উপত্যকায় চলছে, তাতে কাশ্মীরের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অপূরণীয় ক্ষতি হল। কাশ্মীর চেম্বার অব কমার্সের আনুমানিক হিসেবে, ইতিমধ্যে ১.৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন যোগাযোগের মাধ্যম কিছুটা স্বাভাবিক হলেও, ইন্টারনেট এখনও স্তব্ধ। ফলে, অর্থনীতি ও জনসমাজ দুইই বিপন্ন।
শ্রীনগরের অধিবাসীকে ১০৭ কিলোমিটার দূরে জম্মুর বানিহালে যেতে হচ্ছে বিশেষ প্রয়োজনীয় কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য। জম্মু ও কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার গবেষক মুহম্মদ শুনেদকে ৩০০ মাইল দূরে লাদাখে যেতে হয়েছে গবেষণাপত্র আপলোড করার জন্য। কিন্তু দেখা যায়, যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে গবেষণাপত্রটি লেখা হয়েছে, তার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। পুনর্নবীকরণের নির্দেশ শুনেদের ইমেল অ্যাকাউন্টে এসেছে। কিন্তু, তাঁর মেল খোলা যাচ্ছে না সরকারি বদান্যতায়।
ক্যানসারের রোগী, মুম্বইয়ের বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে, সেখানে চিকিৎসার জন্য যেতে পারেননি। শ্রীনগরের এক বিখ্যাত মূত্ররোগ বিশেষজ্ঞের চিকিৎসাধীন এই রোগী উন্নততর চিকিৎসার অভাবে মারা যান।
চার মাসের উপর ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকার ঘটনা কোনও গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘকালীন। একমাত্র স্বৈরতন্ত্রী চিন ও মায়ানমার সরকার অধিকতর সময় ইন্টারনেট বন্ধ রেখেছিল। উগ্র জাতীয়তাবাদের ফলে কাশ্মীরের জনসমাজ আজ চরম বিপন্ন।
অযোধ্যার রামমন্দির বিতর্ক নিয়ে দীর্ঘ কাল ঝুলে থাকা মামলার রায়ে উগ্র জাতীয়তাবাদ আরও শক্তি সঞ্চয় করে নতুন আর একটি বিতর্কের অবতারণা করল। এনআরসি সম্পন্ন হয় শুধুমাত্র অসমের জন্য এবং তা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। এর পিছনে বর্তমান সরকারের কোনও ভূমিকা ছিল না। কিন্তু, যখন অসমের এনআরসি তৈরি হল, দেখা গেল হিন্দুরা মুসলমানদের থেকে বেশি সংখ্যায় বাদ পড়েছেন। উগ্র জাতীয়তাবাদ আবার চালিকাশক্তিতে পরিণত হল। এনআরসি-চ্যুত হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিতে ধর্মনির্ভর সিএএ নিয়ে আসা হল তাড়াহুড়ো করে। অনিরপেক্ষ এই আইনের বিরুদ্ধে সারা দেশেই জনসমাজ চিন্তিত ও ক্ষিপ্ত। অশান্তি দমন
করার সঙ্গে সঙ্গে সরকার পক্ষের নেতারা অসহিষ্ণু বক্তব্য রেখে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য মিলছে না। এটাও পরিষ্কার, দলীয় নেতাদের উপর প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ নেই।
পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
বাংলায় লিখুন
আসানসোলের সমস্ত সাইনবোর্ডে বাংলায় লিখতে হবে— এই নির্দেশ দিয়েছে আসানসোল পুর নিগম, যা কার্যকর হবে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষা ব্যবহার না করলে ট্রেড লাইসেন্স পেতে অসুবিধা হবে বলেও পুরসভা জানিয়েছে। সিদ্ধান্তটি ঠিক।
আসানসোল রাজ্যের প্রান্তিক শহর। অনেক ব্যবসায়ীই এখানে দোকানের সাইনবোর্ডে কোথাও শুধু হিন্দি, কোথাও হিন্দি ও ইংরেজি ব্যবহার করেন। ১৯৬১ সালের ‘অফিশিয়াল ল্যাঙ্গোয়েজ অ্যাক্ট’ অনুযায়ী রাজ্যের সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও, তা কার্যকর হয়নি সরকারি গাফিলতির কারণে। বাংলাকে ব্রাত্য করার খেলা রাজ্যের সর্বত্র। আসানসোলেও বাংলা ভাষার বঞ্চনার ইতিহাস সুদীর্ঘ। এই প্রেক্ষিতে, এই সিদ্ধান্ত স্বাগত।
তাপস কুমার দাস
আসানসোল
বৃত্তিকর কেন?
প্রয়াত অশোক মিত্র অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৭৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে বৃত্তিকর (ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাক্ট-VI-১৯৭৯) চালু করেছিলেন একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে। তা হল, বেকারভাতা-র প্রচলন। পরে এই বেকারভাতা প্রদান উঠে যায় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে। তাই বর্তমান বৃত্তিকর নেওয়া প্রাসঙ্গিক নয়। সরকারি কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছে বৃত্তিকর আদায়ের প্রথা তুলে দেওয়া আবশ্যক। পশ্চিমবঙ্গের মতো বৃত্তিকর আর কোনও রাজ্যেই নেই।
এর পরিবর্তে, রাজ্য সরকার যদি জিএসটি-র মতো, আয়কর (আদায়ীকৃত) থেকে পঞ্চাশ শতাংশ টাকা দাবি করে, তা হলে যথার্থ হতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারেরও উচিত, যে-রাজ্য থেকে আয়কর বাবদ যত টাকা আদায় হয়, তার অর্ধেক অংশ রাজ্যকে দেওয়া।
তুষার ভট্টাচার্য
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
দ্বিচারিতা
‘কলেজ শিক্ষকেরা রাস্তায় নামুন: পার্থ’ (২৩-১২) শীর্ষক সংবাদে প্রকাশ, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আন্দোলনে নামতে বলেছেন, অর্থাৎ অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সংগঠিত হতে বলেছেন। ভাল কথা। আবার অন্য দিকে, পার্শ্ব শিক্ষকেরা যখন তাঁদের অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করেন, তখন পার্থবাবুই তাঁদের কটাক্ষ করেন, কাজে যোগ দেওয়ার জন্য হুমকি দেন। পার্থবাবুর এমন দ্বিচারিতা কেন?
গোপাল সাহা চৌধুরী
পানুহাট, কাটোয়া
এ কী হল
সিএবি পাশ হল, নির্বাধে নির্ভয়ে বাংলা জুড়ে বিদ্রোহের আগুন জ্বলল। অ্যাম্বুল্যান্স ভাঙল। বাস জ্বলল। ট্রেন জ্বলল। স্টেশন জ্বলল। ট্রেনের চাকা স্তব্ধ হল।
টায়ার জ্বেলে রাস্তা অবরোধ হল। যাত্রীরা পদে পদে বিপাকে পতিত হলেন। জাতীয় সম্পত্তি বিনষ্ট হল। এ কোন পরিবর্তিত রঙের অসহিষ্ণু হিংসাত্মক বাংলা!
আমাদের সুবিবেচক মুখ্যমন্ত্রীর বিক্রমশালী পুলিশের লাঠি, কাঁদানে গ্যাস আর কামানের জলে যেন অকস্মাৎ বিপুল ভাটা! অথচ এগুলি শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের বিরুদ্ধে সগৌরবে সহজে যথেচ্ছ ব্যবহার হয়। তবে কি মুখ্যমন্ত্রী এই সর্বাত্মক ধ্বংসলীলা পরোক্ষে সমর্থন করছেন? সম্প্রতি দিঘায় তাঁর অতি উৎসাহে উৎসাহিত দেশ-বিদেশের শিল্পপতিরা কি এতে নিরাশ হবেন না? এত শ্রম ও সাধের মউ স্বাক্ষর কি ‘মধুদান’-এ বিরত হবে না?
প্রতিবাদের নামে এই ভয়ঙ্কর দিশাহীন আবিল অশনি সঙ্কেত থেকে কি আমরা মুক্তি পাব? আমরা কি কেবল জড় যান্ত্রিক ভোটার হয়েই বাঁচব? না কি সুনাগরিকেরও বিশেষ মর্যাদা পাব?
মলয় দত্ত
কলকাতা-৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy