বিভিন্ন সূত্রে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কথা শোনা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারত মিশনের অঙ্গ হিসেবে এটা প্রচারিত হচ্ছে। এই ব্যাপারে সরকারি অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বনমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর— সরকার এখনই প্লাস্টিক ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চায় না। বরং, ‘বিদায় এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক’— এই নীতি কার্যকর করতে চায়। ২ অক্টোবর থেকে সরকার বর্জ্য প্লাস্টিক সংগ্রহ অভিযান চালু করতে চায়। বর্তমানে প্রতি দিন প্রায় ১০,০০০ টন বর্জ্য প্লাস্টিক সারা দেশে সৃষ্টি হয়।
সারা বিশ্বে বর্জ্য প্লাস্টিক জমা হওয়ার ক্ষেত্রে তুলনামূলক ভাবে ভারতের অবস্থান খুব খারাপ নয়। আমেরিকা এবং চিনের তুলনায় ভারতের জনপ্রতি বর্জ্য প্লাস্টিক খুব কমই তৈরি হয়। কিন্তু, দৈনিক দশ হাজার টন বর্জ্য প্লাস্টিকের পরিমাণ বিরাট। ভারত ২০১৮ সালে ‘প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলস’ এনেছে। তার ফলে প্লাস্টিক ব্যবহারকারী শিল্পসমূহের নির্দিষ্ট অংশ বর্জ্য প্লাস্টিক প্রতি বছর সংগ্রহ করার দায় আছে। এ ছাড়া রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং পুরসভাসমূহেরও বর্জ্য প্লাস্টিক সংগ্রহের ব্যাপারে দায়িত্ব আছে।
কেন এখনই এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যাচ্ছে না, তা বুঝতে গেলে, ‘কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স’ (সিএআইটি) পরিবেশমন্ত্রীকে চিঠি লিখে কী জানিয়েছে, তা দেখা যাক। ওই সংস্থা লিখেছে, এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের শতকরা প্রায় ৯৮ ভাগ ব্যবহার করে বহুজাতিক কোম্পানি, কর্পোরেট উৎপাদক এবং বৃহৎ বিক্রেতারা। এই প্লাস্টিক সাত কোটি দোকানদারের মাধ্যমে ১৩০ কোটি দেশবাসীর কাছে পৌঁছে যায়। এই কোম্পানিগুলিকে যত ক্ষণ না এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, তত ক্ষণ পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ার নয়।
এ ছাড়া ১০,০০০ শিল্প সংস্থা এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক উৎপাদন করে থাকে এবং সেখানে তিন-চার লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়। এ ছাড়া সিএআইটি জানিয়েছে, ৫০ মাইক্রনের বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে কি না, বা পরিবর্ত হিসেবে কী কী ব্যবহার করা যাবে— এই ব্যাপারগুলো এখনও পরিষ্কার নয়। পরিবর্ত জিনিসগুলি নির্দিষ্ট হয়ে গেলে, প্লাস্টিক প্রস্তুতকারী শিল্প সংস্থাগুলি নতুন ভাবে ব্যবসা চালু রাখতে পারবে এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়বে না।
এ দিকে খাদ্য ও গ্রাহকবিষয়ক দফতরের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁর দফতরের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিভাগে এবং পাবলিক সেক্টর সংস্থায় ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপ কিন্তু পরিবেশমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপন্থী।
যা-ই হোক, প্রধানমন্ত্রীর মহাত্মার জন্মদিন থেকে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সংগ্রহ অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে বলি, সংগৃহীত প্লাস্টিককে পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা অবিলম্বে করতে হবে। এর জন্যে লগ্নি বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিতে হবে দেশ ও পৃথিবীর স্বার্থে।
পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
আনুগত্য
2 ‘নৈতিকতার সীমা’ (২১-৯) শীর্ষক সম্পাদকীয়টির পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র। এত নৈতিকতার ভাবনা ভেবে কী হবে। আমরা সাধারণ মানুষজন জানি, রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি। এক কথায় রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের জনসংযোগকারী মাধ্যম। তিনি যে কেন্দ্রীয় স্বার্থ দেখবেন, এতে আর আশ্চর্য কী! সম্মাননীয় শ্রীযুক্ত ধনখড় বোধ হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি একটু বেশি মাত্রায় সংবেদনশীল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়-কাণ্ডে মাননীয় রাজ্যপাল জনসংযোগের হাতিয়ার হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আনুগত্য রেখে অপরাধী বাবুলবাবুর রক্ষাকর্তা হয়েছিলেন। সমস্ত আইন নৈতিকতাকে পিছনে ফেলে রাজ্যপাল বাবুল সুপ্রিয়ের রাজনৈতিক অভিভাবক হয়ে সমস্যা দ্রুত সামলেছেন। এ-ও এক রাজনৈতিক আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা।
রীতা পাল
কলকাতা-২৪
রাজ্যপাল পদ
১৯৮৩ সালে ভারত সরকার কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক খতিয়ে দেখা এবং পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারিয়া কমিশন গঠন করেছিল। অজস্র তাবড়া সংবলিত বিশাল রিপোর্ট জমা দেয় রঞ্জিত সিংহ সরকারিয়ার নেতৃত্বাধীন কমিশন, যার মধ্যে চ্যাপ্টার ফোর-এ, একদম সুনির্দিষ্ট ভাবে রাজ্যপালের ভূমিকা সম্বন্ধে মতামত দেওয়া ছিল। স্বাধীন ভারতে কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজ্য দ্বারা বসানো কমিশনগুলির রিপোর্টের বেশির ভাগের যা পরিণতি হয়েছে, এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল, দিনের আলো না দেখা। রাজ্যপালের ভূমিকা আতস কাচের নীচে ফেলার কারণ, তৎকালীন বিরোধী দলের নেতৃত্বের তোলা অভিযোগ: রাজ্যপাল বিশেষ করে বিরোধী-শাসিত রাজ্যে কেন্দ্রের গুপ্তচরের ভূমিকা পালন করছেন এবং ক্ষমতার সমান্তরাল কেন্দ্র হয়ে উঠছেন, অতএব রাজ্যপাল পদের বিলুপ্তি ঘটুক।
ধান ভানতে শিবের গীত এই কারণে গাইলাম, আজও এই পরিস্থিতির ব্যত্যয় ঘটেনি; বরং বেশ কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যপালের এক্তিয়ার-বহির্ভূত কর্মকাণ্ড এই প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারকে কী ভাবে বিব্রত করতে পারেন এক জন মনোনীত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান?
সদ্য অবসৃত রাজস্থানের রাজ্যপাল, উত্তর-পূর্ব ভারতের এক বাঙালি রাজ্যপাল এবং বর্তমান রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের কর্মধারা বিচার করতে বসলে যে যে অভিযোগ বার বার উঠেছে, দেখা যাবে সেটা একেবারে নস্যাৎ করার মতো নয়।
সেই কারণে রাজ্যপালের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। হয় রাজ্যপাল পদ উঠিয়ে দেওয়া হোক, নয়তো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ধাঁচে বিধানসভা, বিধান পরিষদ (যে যে রাজ্যে এখনও রয়েছে), সেই রাজ্যের লোকসভা এবং রাজ্যসভার সদস্যদের নিয়ে গঠিত ইলেক্টোরাল কলেজ দ্বারা নির্বাচিত হয়ে আসুন রাজ্যপাল। তাতে তাঁর একটা জনভিত্তি থাকবে এবং ক্ষমতার দ্বিতীয় মেরু হয়ে ওঠার এবং কেন্দ্রের হাতের পুতুল হয়ে থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
পার্থ নন্দী
শেওড়াফুলি, হুগলি
উজ্জ্বলতা বাড়ল
সম্পাদকীয় ‘নৈতিকতার সীমা’ লেখাটিতে এটাই বোধগম্য হল— যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দাঙ্গা হোক, খুন হোক, ধর্ষণ হোক, ৩/৪ দিন ধরে উপাচার্য ঘেরাও হোক, পুলিশ কিন্তু লক্ষ্মণের গণ্ডি পার হতে পারবে না। আর যদি-বা উপাচার্য প্রাণ এবং সম্পত্তি বাঁচাতে পুলিশ ডাকেন, তিনি তথাকথিত ছাত্রদের দ্বারা আবার ঘেরাও হবেন ১০-১৫ দিনের জন্যে।
এই জটিল পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে মাননীয় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় তৎপরতার সঙ্গে যা করেছেন, তা অজস্র ধন্যবাদের যোগ্য। তিনি আচার্য, তিনি রাজ্যপাল বলে তিনি নিষ্ক্রিয়তায় নিষ্ঠাবান হয়ে উচ্চাসনে বসে থাকবেন এবং দূরভাষ যন্ত্রে মন্ত্রীকে ঘন ঘন উপদেশ দিতে থাকবেন এবং ঘটনার বিবরণ শুনতে শুনতে দূরদর্শনে চোখ রাখবেন— এই ধারণা বা চিন্তার অবসান হওয়ার আশু প্রয়োজন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতির পুরনো নিয়ম নীতি ভেঙে শ্রীযুক্ত জগদীপ ধনখড় রাজভবনের উজ্জ্বলতা বাড়ালেন।
সুভাষ কান্তি চক্রবর্তী
কলকাতা-৩৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy