Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: কিছুই বদলায়নি

দুই কিশোরের পিতামাতার কান্না মর্মবিদারক! কী করে এত দিন ধরে নিরুদ্দেশ-হওয়া দুই কিশোরের সন্ধান পাওয়া গেল না, তা বোধগম্য হয় না। এমন পুলিশি ব্যর্থতার সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে।

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৫৫
Share
Save

বাগুইআটির দুই কিশোরের অপহরণ ও মর্মান্তিক খুনের সংবাদ পড়ে আমার জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। ২০০৯-এর ৩০ অগস্ট আমার বড় ছেলে নিখোঁজ হয়ে যায়। সন্ধ্যা ৬টায় সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল, আর ফেরেনি। উনিশ বছরের অতীশ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র ছিল। পুলিশে এফআইআর, সংবাদমাধ্যমে খবর দেওয়া, সবই হয়েছিল তখনও। ২৪ দিন আমাদের পরিবারের উপর ঝড় বয়ে যাওয়ার পর ২৩ সেপ্টেম্বর আমরা জানতে পারি, ৩০ অগস্ট রাতেই যাদবপুর-ঢাকুরিয়ার মাঝে রেল লাইনে একটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। আমি আংটি দেখে শনাক্ত করি। তত দিনে দাহ হয়ে গিয়েছে, আমরা কিছুই দেখতে পাইনি। অনেক অফিসার বদলি, সাসপেন্ড হয়েছিলেন। রেল পুলিশের কর্তারা আমাদের জানিয়েছিলেন ওঁদের অনুমান, ওটা নাকি ‘সুইসাইড’ ছিল। মেনে নেওয়া ছাড়া তখন আর কিছু করার ছিল না।

সময় বদলেছে, সরকারও। ব্যবস্থা বিশেষ কিছুই বদলায়নি। এই ধরনের ঘটনা আরও ঘটেছে। দু’দিন যাওয়ার পর তদন্তকারীরা ধরে নেন, এটি মৃত্যুর ঘটনা নয় এবং সেই মতো ভুল পথে তদন্ত এগোয়। এই দু’টি সন্তানের বাবা-মায়ের জন্য আমাদের সহানুভূতি ও সান্ত্বনা ছাড়া কিছু দেওয়ার নেই। সন্তান হারানোর ক্ষত আমরা সারা জীবন বয়ে বেড়াই। ওঁরা সুস্থ থাকুন, এই কামনা করি। আর চাই, আমাদের সরকার পরিচ্ছন্ন ও মানবিক হোক।

দীপঙ্কর সেনগুপ্ত, সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

পুলিশের ব্যর্থতা

দশম শ্রেণির দুই ছাত্র প্রায় ১৫ দিন নিরুদ্দেশ থাকার পরে তাদের পচাগলা দেহ আবিষ্কৃত হল লাশ কাটা ঘরে (‘মর্গে দেহ দু’সপ্তাহ, জানতই না পুলিশ’, ৭-৯)। যদিও নিরুদ্দিষ্ট ছেলে দু’টির পিতামাতা যথা সময়ে থানায় গিয়েছিলেন, তবু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে। অপরাধ দমন বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের প্রধান কর্তব্য দু’টি। প্রথম, অপরাধ প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করা। তার জন্য দরকার অপরাধীদের খোঁজখবর রাখার একটা পরিকাঠামো, তথ্য সংগ্রহের জাল, যার মাধ্যমে অপরাধ ঘটার পূর্বেই সে বিষয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা করা যায়। দ্বিতীয়, অপরাধ ঘটার পরে তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত করা। দুর্ভাগ্য, বেশির ভাগ গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রেই তদন্তের যথেষ্ট অগ্রগতি হচ্ছে না, কেবলই রাজনৈতিক কোন্দলে পর্যবসিত হচ্ছে।

ওই দুই কিশোরের পিতামাতার কান্না মর্মবিদারক! কী করে এত দিন ধরে নিরুদ্দেশ-হওয়া দুই কিশোরের সন্ধান পাওয়া গেল না, তা বোধগম্য হয় না। এমন পুলিশি ব্যর্থতার সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। এই ব্যর্থতা পরোক্ষ ভাবে সরকারি নিষ্ক্রিয়তাকেই বোঝায়, যা কঠোর সমালোচনার যোগ্য। অথচ, আমাদের অপরাধ দমন এবং অপরাধী শনাক্তকরণের পরিকাঠামো যথেষ্ট শক্তপোক্ত, কর্মী-আধিকারিকদের যোগ্যতাও প্রশ্নাতীত। কিন্তু এই কর্মীদের রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখাই কঠিন। অপরাধে অভিযুক্ত রাজনৈতিক কেষ্টবিষ্টুদের বিচার হওয়ার আগেই ‘ক্লিন চিট’ দিচ্ছেন দলের নেতা-নেত্রীরা, এতে কি জনমানসে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে?

সুবীর ভদ্র, ডানকুনি, হুগলি

বিবেকহীন

বাগুইআটির অপহৃত দুই ছাত্র নিখোঁজ ছিল ২২ অগস্ট থেকে, ২৩ অগস্ট থানায় অভিযোগ করে পরিবার। তাদের মৃতদেহের খোঁজ পাওয়া গেল ৬ সেপ্টেম্বর। এই বারো দিনের মধ্যে অপহরণকারী তথা খুনিরা একাধিক বার ফোন করেছে, হোয়াটসঅ্যাপ-এ হুমকি দিয়েছে, পুলিশ তার পরেও ধরতে পারেনি অপরাধীকে! আজকের দিনে এটা বিশ্বাস করা শক্ত।

পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল কেন? দু’-দুটো ছেলে খুন হয়ে গেল, পুলিশের ডিজি বা পুলিশ মন্ত্রী, কেউ পদত্যাগ করলেন না কেন? ‘পদত্যাগ’ শব্দটা কি উঠেই গেল রাজ্য থেকে? আমরা সকলেই জানি, ক’দিন আগে এক অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় মহিলা পর্তুগালে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তিনি মারা যান। সেই ঘটনার দায় মাথায় নিয়ে পর্তুগালের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মার্তা টেমিডো পদত্যাগ করেন। সে দেশের এক জন মন্ত্রী কতটা দায়িত্বশীল, তিনি বুঝিয়ে দিলেন। আর এখানে মাথার উপর ব্রিজ ভেঙে পড়ুক, মানুষ মারা যাক, চাকরি দেওয়ার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যাক, কারও ঘরে টাকার পাহাড় পাওয়া যাক, ছাত্রকে অপহরণ করে খুন করে মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হোক, পদত্যাগ কেউ করবেন না। সরকারি অফিসার থেকে নেতা-মন্ত্রী, সকলে এতটাই ক্ষমতালোভী! নৈতিকতা, দায়বদ্ধতা, বিবেক দংশন— কিছুই নেই এঁদের মধ্যে।

আরও বিপজ্জনক এক প্রবণতা নজরে এল। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের সভাপতি সুকান্ত মজুমদার গিয়েছিলেন মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে, সহানুভূতি, সমবেদনা জানাতে। এটাই রাজনৈতিক শিষ্টাচার বা সৌজন্য। রাজ্যে কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে, বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সব রাজনৈতিক দল এগিয়ে আসবে, গণতন্ত্রে এটাই স্বাভাবিক। এর মধ্যে রাজনীতি খুঁজতে চাওয়া অন্যায়। এক দল মহিলা ও পুরুষ, যাঁরা নিজেদের ‘মৃতের প্রতিবেশী’ বলে দাবি করছেন, তাঁরা সুকান্তবাবুকে মৃতের বাড়িতে ঢুকতে দেননি। এমনকি ‘সুকান্ত গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়েছেন। এঁরা কারা? সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ওই ‘প্রতিবেশীরা’ বলেছেন, আমরা এর মধ্যে রাজনীতি ঢুকতে দিতে চাই না। মৃতের পরিবার কিন্তু কারও আসায় বাধা দেয়নি। তাই অনুমান হয়, ঘটনাকে চাপা দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার পক্ষ সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে বাধাদানের কাজটি করেছে। পুলিশ নিজের কর্তব্যে তৎপর নয়, কিন্তু তাদের নিষ্ক্রিয়তা চাপা দিতে দলীয় সমর্থকরা তৎপর।

এ সব দেখে মনে হচ্ছে, গোটা রাজ্যটা যেন নাৎসি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সেই কবিতার লাইন আজ সত্যি হয়ে ফিরে আসছে, “তারপর অনেক রাত্তিরে/ বারুদের গন্ধে-ভরা রাস্তা দিয়ে/ অনেক অলিগলি ঘুরে/ মৃত্যুর পাশ কাটিয়ে/ বাবা এল/ ছেলে এল না।”

মৃণাল মাইতি, মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প, বাঁকুড়া

সমন্বয় নেই

সম্প্রতি বাগুইআটির জগৎপুরে দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর নৃশংস খুনের ঘটনায় বাগুইআটি থানার বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে— থানা অভিযোগ নিতে চায়নি এবং নিখোঁজের ঘটনাটিকে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে চা জলপানির জন্য কুড়ি হাজার টাকা নিয়েছে। এমনকি এ কথাও বলেছে যে, ছেলেরা হয়তো কোথাও বেড়াতে গিয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যে ফিরে আসবে। পুলিশের এমন ব্যবহার ও সংবেদনশীলতার অভাব সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারছেন না। দুই কিশোর ২২ অগস্ট নিখোঁজ হওয়ার পর ২৩ অগস্ট ন্যাজাট থানা এলাকায় এক জন ও ২৪ অগস্ট হাড়োয়া থানা এলাকায় আরও এক জন কিশোরের দেহ উদ্ধার হয়। এর পর টানা ১৩-১৪ দিন বসিরহাট জেলা হাসপাতালের মর্গে মৃতদেহ দু’টি পড়ে থাকলেও বসিরহাট থানা তাদের পরিচয় জানতে কোনও ব্যবস্থা করেনি। থানাগুলোতে সমন্বয় না থাকার জন্যই এটা ঘটেছে।

পুলিশের গাফিলতি প্রকাশ্যে এলে তবে কেন প্রশাসন তৎপর হয়? এ-ও রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে যে, এমন ঘটনার ক্ষেত্রে ওই পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে, চাকরি দিয়ে ঘটনাকে লঘু করার চেষ্টা করছে প্রশাসন। এটা খুবই মারাত্মক ঝোঁক। পুলিশের পরিকাঠামোর গুণগত মানোন্নয়ন না করে কেবল লোকদেখানো চটকদারিতে কোনও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয় না। খুনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

অপূর্বলাল নস্কর, ভান্ডারদহ, হাওড়া

Jadavpur jadavpur police station Baguiati double murder

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}