সভ্যতার সৃষ্টি এবং বিকাশে বৃষ্টির গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের পরিবেশ শ্যামল, সতেজ, শীতল রাখতে বৃষ্টি অন্যতম ভূমিকা নেয়। এ ছাড়া, পর্যাপ্ত বৃষ্টি ভারতবর্ষের মতো কৃষিপ্রধান দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য কতটা প্রয়োজনীয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
অথচ, এ-হেন জীবনদায়ী বৃষ্টিকেই পুজোর মরসুমে সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল কর্তৃক ‘অসুর বৃষ্টি’, ‘ভিলেন বৃষ্টি’ ইত্যাদি কুনামে অভিহিত করা হচ্ছে। যা খুবই শ্রুতিকটু। আদিখ্যেতা বা অসহিষ্ণুতা অথবা অন্য যে কারণেই হোক, বৃষ্টির প্রতি এই অনুপযুক্ত অলঙ্কার প্রয়োগ অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। এ এক বিশ্রী অকৃতজ্ঞতা।
অনিমেষ দেবনাথ
বেতপুকুর, পূর্ব বর্ধমান
গো-চক্রান্ত
‘চাই দুধেল গরু, ব্রাজিল থেকে আসছে ঔরস’ (৪-৯) সংবাদটি পাঠ করে প্রাকৃতিক কৃষকদের বুক ভেঙে গেল। ১৮৮৮ সালে ইংরেজ সরকারের তৈরি ভোলকার কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে, জার্সি হলস্টেন প্রভৃতি বিদেশি গরুগুলি ভারতের আবহাওয়ার পক্ষে আদৌ উপযোগী নয়। তথাপি পরিকল্পিত ভাবে ভারতের বিশ্বশ্রেষ্ঠ গোসম্পদ এবং কৃষিজমির উর্বরতা ধ্বংস করা হল। স্বাধীন ভারতে ২০-২৫ কেজি দুধ-প্রদায়ী ভারতীয় দেশি গরুর অভাব না থাকা সত্ত্বেও (যেমন গির, শাহিওয়াল অঙ্গল, কংরেজ, রাধী, বরপুর, সিন্ধ্রী প্রভৃতি) তাদের প্রসার না করে, বিদেশ থেকে এই অপ্রয়োজনীয় জার্সি হলস্টেন দুগ্ধপ্রদায়ী জন্তু আনা হল। এগুলির খরচও বেশি, রোগপ্রবণ বলে নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়, এরা দেয় স্বাদ ও পুষ্টিহীন পাতলা সাদা জলদুধ, কাঁধ উঁচু নয় বলে এরা হালচাষেরও উপযোগী নয়। কিন্তু এদের এনে, ভারতীয় দেশি গরুর সঙ্গে প্রজনন করিয়ে দেওয়া হল। এ আর কিছুই নয়, সত্তরের দশকে বিদেশি বহুজাতিক সার ও কীটনাশক কোম্পানিগুলির ষড়যন্ত্র। তার সঙ্গে অবশ্যই ছিল ভারতীয় রাজনীতিক ও আমলাদের অজ্ঞতা ও লালসা।
এটিকে ভারতের কৃষিজমি ধ্বংস করার একটি গভীর আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ভাবা যেতেই পারে, কারণ বিদেশি জার্সি হলস্টেন গরুগুলির গোবরে (অত্যধিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে) প্যাথোজেন বেশি থাকায় কৃষিজমি উর্বরতা হারাবে ও রাসায়নিক সার ছাড়া গতি থাকবে না এবং সেই সঙ্গে কীটনাশক বিক্রিও বৃদ্ধি পাবে।
ভারতে প্রায় ৬১টি তুলনাহীন ব্রিড ছিল, যেগুলি প্রতিটি প্রদেশের আলাদা আলাদা আবহাওয়ার উপযোগী এবং খরচও কম। তাদের ১০ কেজি গোবর ১০ লিটার গোমূত্র ২ কেজি গুড় ও ডালগুঁড়ো দিয়ে তৈরি জীবামৃতে এক একর জমি চাষ করা যায়। তা বহু লক্ষ একর জমিতে বিভিন্ন প্রদেশে পরীক্ষিত হয়েছে এবং এই রাজ্যেও সফল হয়েছে। এক জন জার্মান প্রাণিবিজ্ঞানী ও গবেষকের কাছে শুনে চমকে গিয়েছিলাম, ভারতীয় সম্পূর্ণ দেশি প্রজাতির গাইগরু বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ, তার মূলসম্পদ হল গোবর (যেটা মাটি ও জৈব শস্যের স্বাস্থ্য রক্ষা করে) এবং গোমূত্র (শস্য রক্ষা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন বহু ঔষধিগুণ সম্পন্ন)। দুধ সেখানে একটি বাই-প্রোডাক্ট এবং উপরি পাওনামাত্র।
কেন ভারতে সহস্র বছর ধরে পালিত ও পোষিত এই অসামান্য ব্রিডগুলির বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য কোনও নির্বাচিত প্রজনন পদ্ধতি (সিলেকটিভ ব্রিডিং) গ্রহণ করা হল না, যেখানে ব্রাজিল-সহ দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ভারতীয় গাভিতে ছয়লাপ? আমাদের দেশে ভয়ঙ্কর রোগসৃষ্টিকারী বিদেশি জন্তুগুলিকে আনা হল কেন? উত্তর কেউ দেয় না।
এ ছাড়াও দেশি গাইগরুর নিঃশব্দ ধ্বংসের অন্যতম কারণ, তাদের সমস্ত দুধ দ্রুত নিংড়ে নেওয়া— যা কিনা প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস অ্যাক্ট (সেকশন-১২) ফুড অ্যান্ড সিএসএ অ্যাক্ট এবং ড্রাগ কন্ট্রোল অ্যাক্ট অনুসারে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিষাক্ত এবং তীব্র যন্ত্রণাদায়ক সস্তার কৃত্রিম (সিন্থেটিক) অক্সিটোসিন হরমোন ইঞ্জেকশন (যেটা মানবশরীরের ও শিশুদের চোখের রেটিনার পক্ষে চরম হানিকর) প্রায় প্রতিটি বেসরকারি গোশালা ও খাটালের গরু ও মোষগুলিকে দু’বেলা দেওয়া হয়, যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে গরুরা দেহের সমস্ত দুধ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বাচ্চার জন্য কোনও দুধ ধরে রাখতে পারে না বলে খাটালে গরুর কোনও বাছুর বাঁচে না।
মায়েদের প্রসবকালীন যন্ত্রণা সকলেই জানেন, অথচ আমাদের রাজ্যের প্রতিটি খাটালে নিষ্পাপ গরুগুলি প্রত্যহ দু’বেলা এই দুঃসহ প্রসবযন্ত্রণা ভোগ করতে করতে তিনটি বাচ্চা দেওয়ার পরই বন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। এই ভাবেই দেশীয় ভারতীয় গরু নিঃশব্দে বিলুপ্ত হয়ে গেল। যারা মুসলমানদের ‘গোঘাতক’ আখ্যা দিয়ে ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে, তারা এই দিকটায় নজর দিলে পারে।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রতি দিন বহু মানুষ খাটালে নিজেদের স্বাস্থ্যধ্বংসকারী ও গোহত্যাকারী এই ইঞ্জেকশন দিতে দেখেন ও বিষ-দুধ নিয়ে চলে আসেন, যেটা নিঃশব্দে ক্যানসার সৃষ্টি করে। যদি এই চিঠি তাঁদের অসচেতন মনকে প্রতিবাদে উদ্বুদ্ধ করে তবে আমরা জৈব চাষিরা উপকৃত হব।
বিষাদ কুমার বসু
সভাপতি, পশ্চিমবঙ্গ সুস্থায়ী কৃষি বিকাশ মঞ্চ
কলকাতা-৯০
কুনাট্য
পশ্চিমবঙ্গে আমলা হিসেবে চাকরি পাওয়ার শর্ত হিসেবে কি নিজের মেরুদণ্ডটা খুলে রেখে দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে? তা না হলে, সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় যাঁরা মাইনে পান, সেই সমস্ত আমলা এতটা নির্লজ্জ ভাবে রাজনৈতিক প্রভুদের দাসত্ব করেন কী ভাবে? শিলিগুড়িতে রাজ্যপালের ডাকা সভায় শাসক দলের লোকজন না-ই থাকতে পারেন, সেটা তাঁদের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। কিন্তু তা বলে ডিএম বা পুলিশ কর্তারা যাবেন না কোন স্পর্ধায়? আর তাঁদের না যাওয়ার মধ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীই বা কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন? সবচেয়ে অবাক লাগে এ ব্যাপারে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ভূমিকা দেখে। যে ঘটনায় রাজ্য সরকারকে তুলোধনা করা উচিত ছিল সেই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট রা কাড়েনি। আর এখন রাজ্যবাসী অবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করছে এক অলীক কুনাট্য: সিবিআই-রাজীব কুমার লুকোচুরি খেলা। এক জন প্রথম সারির পুলিশ কর্তা অপরাধীর মতো পালিয়ে বেড়াচ্ছে, রাজ্য সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে তাঁকে ধরতে সিবিআইকে সাহায্য করতে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করা। রাজ্য সরকার যখন নিজে থেকে তা করছে না,
তখন কোর্টের কি উচিত নয় রাজ্য পুলিশকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে নির্দেশ দেওয়া?
সুশোভন সরকার
কলকাতা-২৫
অদক্ষ কর্মী
2 ‘অদক্ষ হলে সময়ের আগে অবসর ওড়িশায়’ (২৭-৯) শীর্ষক খবরটি নিঃসন্দেহে আলোড়ন ফেলেছে চাকরি মহলে। অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গেও এই নিয়ম কার্যকর হওয়া উচিত। অবসরের নির্দিষ্ট বয়স বেঁধে দিলেও কর্মী তাঁর দক্ষতা অনুযায়ী সেই কাজটি কতটা করতে পারছেন, তা মূল্যায়ন করার কোনও প্রক্রিয়া বা নিয়ম না থাকায়, অনেক অদক্ষ কর্মী সরকারি ক্ষেত্রে পরিষেবা দিয়েই চলেছেন। এতে সাধারণ মানুষের অসুবিধা বাড়ছে।
ওড়িশার এই নতুন ব্যবস্থায়, কোনও কর্মীর ৩০ বছর চাকরি জীবন অতিবাহিত করা বা ৫০ বছর বয়স (যেটা আগে হবে) হলে, তাঁকে ই-মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে হবে, অন্যথায় অবসর নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে।
‘সরকারি চাকরিতে এক বার ঢুকলে আর তাকে কেউ সরাতে পারবে না’— এ-হেন মানসিকতা কর্মীদের অনেক ক্ষেত্রেই অলস ও কর্মবিমুখ করে তুলছে। তাই এই ব্যবস্থা এ রাজ্যেও চালু হলে কর্মসংস্কৃতির উন্নতি অবশ্যম্ভাবী।
প্রণয় ঘোষ
কালনা, পূর্ব বর্ধমান
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy